somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তবের মুগলী বা টারজান :)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনীতির কঠিন সব কথা বাদ দিয়ে এবার অন্যরকম এক খবর পড়ুন



চলতি বছর মার্চে প্রকাশিত হওয়ার পর সাহিত্যের বাজারে হইচই ফেলে দিয়েছিল সাদা মুখো কাপুচিন বাঁদরের রাজত্বে একরত্তি এক ব্রিটিশ মেয়ের বেড়ে ওঠার কাহিনি ‘দ্য গার্ল উইথ নো নেম।’ এমনকী ‘বেস্ট সেলার’ খেতাবও জিতেছিল বইটি।
এখন প্রশ্ন উঠছে সেই গল্পের সত্যতা নিয়েই।
পঞ্চাশের দশকে কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ঘরছাড়া হয়েছিল ‘মাঙ্কি উইমেন’ ওরফে ম্যারিনা চ্যাপম্যানের পরিবারটিও । অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বছর পাঁচেকের ম্যারিনা। অপহরণের পর পালানোর সময় পুলিশের তাড়া খেয়ে ম্যারিনাকে কলম্বিয়ার জঙ্গলেই ফেলে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের দুর্ভেদ্য বৃষ্টিঅরণ্যে ঢুকে পড়েন ম্যারিনা। জঙ্গলেই ছোট্ট ম্যারিনার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিল এক বৃদ্ধ কাপুচিন বাঁদর, ম্যারিনার ‘গ্র্যান্ড পা।’ কাপুচিন বাঁদরের রাজত্বে থাকতেই তাদের আদব কায়দা শিখতে থাকেন ম্যারিনা।
পাঁচ-পাঁচটা বছর জঙ্গলে কাটানোর পর অবশেষে কাঠুড়িয়াদের হাতে পড়েন ‘মাঙ্কি উইমেন।’ তারাই কলম্বিয়ার উত্তর-পূর্বে কুকুটায় এক পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেয় ম্যারিনাকে। সেখানেই দীর্ঘদিন ন্যানি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেই পরিবারের সঙ্গেই ইংল্যান্ডে আসার পর স্বামী জন চ্যাপম্যানের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। আজ ম্যারিনা ষাটোর্দ্ধ। দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। মেয়ে ভ্যানেসা জেমসের উৎসাহেই কাপুচিন বাঁদরের রাজত্বে ছেলেবেলা কাটানোর অভিজ্ঞতা ‘দ্য গার্ল উইথ নো নেম’ বইটির সাহায্যে প্রকাশ্যে আনেন তিনি। জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছয় ‘মাঙ্কি উইমেন।’ টারজান, মোগলির মতোই শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন।
‘দ্য গার্ল উইথ নো নেম’-কাহিনিটি অবলম্বনেই একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল। গল্পের সত্যতা যাচাই করে নিতে একটি বিশেষজ্ঞ দল নিয়োগ করা হয়। ম্যারিনার হাড়ের গঠন পরীক্ষা করে দেখা যায় ছয় থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত অপুষ্টিতে ভুগেছেন তিনি। ম্যারিনার গল্প অনুযায়ী, জীবনের এই সময়টাই কাপুচিন বাঁদরের রাজত্বে কাটিয়েছিলেন তিনি। লাই ডিটেক্টর টেস্টেও ধরা পড়ে ম্যারিনা যা বলছেন তা পুরোটাই সত্যি। স্বামী ও দুই কন্যার পাশাপাশিই তাঁর স্মৃতিতে সমান ভাবে উজ্জ্বল বাঁদর পরিবার।
তা হলে ‘মাঙ্কি উইমেন’-এর গল্প নিয়ে প্রশ্ন কীসের?
সম্প্রতি প্রস্তাবিত তথ্যচিত্রটির শ্যুটিং করতে ম্যারিনাকে নিয়ে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের উদ্দেশে রওনা হয় ফিল্ম ক্রু। ঘন, স্যাঁতস্যাঁতে বৃষ্টি অরণ্যে ম্যারিনার অবাধ হাঁটাচলা ছবির পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়, ভুল বলেননি ম্যারিনা। ঘন জঙ্গলে একটানা হেঁটে সবাই যখন ক্লান্ত, তখন ম্যারিনা পাম গাছের ছাল ছিঁড়ে বসার জায়গা করে দিলেন। তড়তড়িয়ে উঠে গেলেন নারকেল গাছে, খালি মুখে নারকেল ছাড়িয়ে খেতে দিলেন সহযাত্রীদের।
দীর্ঘদিনের যাত্রা শেষে সকলে যখন কাপুচিন বাঁদরের ডেরায় পৌঁছলেন বিশ্বাসে চিড় ধরা শুরু ঠিক তখনই। যে ম্যারিনা কাপুচিন বাঁদরদের নিজের পরিবারের সদস্য বলে বর্ণনা করে এসেছেন এত দিন সেই ম্যারিনাই একটি বারও তাঁর ছেলেবেলার সঙ্গীদের কাছে গেলেন না। তাদের ছুঁয়ে দেখা তো দূরের কথা, ডেকে খাবার দিতেও পা কেঁপে উঠল তাঁর। ম্যারিনার শিষেও কোনও জবাব দিল না কাপুচিন বাঁদরেরা। ম্যারিনা বলছেন, যে কাপুচিন বাঁদর দল তাঁকে বড় করে তুলেছিল এরা তারা নয়।
বৃষ্টিঅরণ্যে ফিল্ম ক্রুর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এখন দাবি করছেন ম্যারিনা আদতে ‘ফল্স মেমোরি সিনড্রোমের শিকার।’ ছোটবেলার কোনও অভিজ্ঞতা ভুলে থাকতেই মনে মনে এই গল্পের জন্ম দিয়েছেন তিনি। বাঁদরের রাজত্বে তাঁর বড় হয়ে ওঠার কাহিনি আর পাঁচটা রুপকথার গল্পের মতোই ভিত্তিহীন। ম্যারিনা এখনও বলে চলেছেন, “আমি জানি, আমি সত্যি বলছি।”

Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×