somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যালেন্ডার

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসে থমথমে অবস্থা! শহরে কারফিউ জারি হলেও বোধ করি এরকম অবস্থা হয় না কখনো। ম্যানেজার স্যার এতোটাই উত্তেজিত হয়ে আছেন যে আমরা কেউ তার সামনে যাবার সাহস পাচ্ছি না। দোষটা আসলে কারু না। মতলিব সাহেব নামে আমাদের ব্যাংকের একজন বড় ডিপোজিটর আছেন। ৫-৬ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট আছে বোধ হয়। তিনি নাকি ক্যালেন্ডার পাননি। একটু আগে ম্যানেজারকে কল দিয়ে হুমকি দিয়েছেন ডিপোজিট তুলে নেবেন। ক্যালেন্ডার দিতে এতো দেরী হল কেন? আজকেই তার ক্যালেন্ডার চাই।

আজ জানুয়ারী মাসের ১০ তারিখ। তার ক্যালেন্ডার আমার কাছেই আছে। মতলিব সাহেবের বাসায় গিয়ে ক্যালেন্ডারটি আমারই দেয়ার কথা। আমি পেয়েছি গত পরশুদিন। যাচ্ছি, যাব করে যেতে পারিনি। ভেবেছিলাম ক্যালেন্ডার তো আমার কাছেই আছে, মতলিব সাহেবও পালিয়ে যাচ্ছেন না। একদিন গেলেই হবে। আজকেই যেতাম। কিন্তু তার আগেই স্যারকে কল দিয়ে দিলেন তিনি। স্যার তো আমার উপর খেপেছেন বটেই, পাশাপাশি সবাইকে বকাঝকা করছেন।তাই আমরা সবাই তার সামনে যেতে ভয় পাচ্ছি। যার যার ডেস্কে চুপচাপ বসে কাজ করছি। এমন সময় স্যার আমাকে ডাকলেন।
রাজিক, এদিকে আসো।
ভয়ে ভয়ে ম্যানেজারস চেম্বারে ঢুকলাম।
- জ্বি স্যার?
- ক্যালেন্ডার নিয়ে আসো। মতলিব সাহেবের বাসায় এখনই যেতে হবে। কি যে কর না তোমরা! স্যারের কন্ঠে বিরক্তি ও রাগ।
- স্যার, এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
- চট করে কই যাও? আগে তো কথা শেষ করতে দেবে! স্যারের হিসহিসে কণ্ঠ শুনলেই দম বন্ধ হয়ে যায়।
- জ্বি .. জ্বি স্যার?
- একটা ক্যালেন্ডারে হবে না। তিনি দুটা চেয়েছেন।
- ওকে স্যার। বের হব রুম থেকে, এমন সময় একজন লোক আসল।
- স্যার, একটা ক্যালেন্ডার দিবেন? ম্যানেজার স্যারের প্রতি তার প্রশ্ন শুনেই আমার হার্টবিট আরো বেড়ে গেল। না জানি আজ কি হয়!
- ক্যালেন্ডার? তা আমাদের ব্যাংকে কত ডিপোজিট আছে আপনার?
- ডিপোজিট?
- ডিপোজিট মানে ব্যাংক ব্যালেন্স। লোকটাকে বুঝিয়ে দিলাম আমি।
- একটা সেভিং একাউন্ট আছে।
- একাউন্ট নাম্বার বলেন।
লোকটি একাউন্ট নাম্বার বলল। স্যার ব্যালেন্স দেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন- মাত্র চারশত দশ টাকা!
- স্যার, দিন আনি দিন খাই স্যার। টাকা পয়সা জমানোর মতো টাকা কোথায় পাব?
স্যার কোন কথা না বলে সি সি টিভির দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে আছেন দেখে লোকটা মনে হয় কিছুটা লজ্জা পেল। সে বলে উঠল,
- ক্লাস টেইনে পড়া মেয়েটা আমার শখ করে বলল স্যার, তার একটা ক্যালেন্ডার চাই, ব্যাংকের ক্যালেন্ডার। বাজারের ক্যালেন্ডার থেকে নাকি ব্যাংকের ক্যালেন্ডার দেয়ালে টানালে অনেক সুন্দর লাগে।
লোকটার কথায় এতোটা অসহায়ত্ব ছিল যে আমার বেশ করুনা হল। স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার একটা ক্যালেন্ডার এনে দিব স্যার?
- চুপ! যে কাজ দিয়েছি সেটা কর। লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন, একাউন্টে টাকা না থাকলে তো ক্যালেন্ডার পাবেন না। আমরা কেবল এক লাখ টাকার উপর ব্যাংক ব্যালেন্স যাদের আছে তাদের ক্যালেন্ডার দিচ্ছি। আপনি পরে আসুন।
লোকটি চলে যাবার সময় নিজের মনেই বলে উঠল, তবে কি আমাদের মতো গরীবদের দিন গুনতে হবে না? তার কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগল আমার। জানিনা তার মেয়েকে গিয়ে সে কি জবাব দেবে। খারাপ লাগা ভাবটাকে দমিয়ে রেখে দুটি ক্যালেন্ডার নিয়ে স্যারের পিছু পিছু গিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
অফিস থেকে মতলিব সাহেবের বাসা ততোটা দূরে না। ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা মতলিব সাহেবের ঝকঝকে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলাম। অনেকক্ষন বসার পর কেউ একজন এসে জিজ্ঞেস করল কাকে চাই। আরো আধা ঘন্টা পর মতলিব সাহেব আসলেন। তাকে আমি এর আগে কখনো দেখিনি। এতো টাকা যে লোকের তাকে দেখার আগ্রহ ব্যাংকে জয়েন করার পর থেকেই। তাকে দেখলাম। সাদা রঙের পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি পরিহিত লোকটাকে দেখে কেন জানি আমার মোটেও ভাল লাগল না। বয়েস অনুমান করে বুঝলাম চল্লিশের খুব একটা বেশী হবে না। আমাদের দেখেই বলে উঠলেন- ম্যানেজার আসছ নাকি? হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি। ম্যানেজার স্যার ভাবলেন হাত বাড়ানো হয়েছে হাত মেলানোর জন্য। কিন্তু না, হাত বাড়তে গিয়ে যখন শুনলেন, কই, আমার ক্যালেন্ডার কই? তখন বুঝলেন এ হাত ক্যালেন্ডারের জন্য বাড়ানো হয়েছে। স্যার তড়িঘড়ি আমার হাত থেকে ক্যালেন্ডার দুটি নিয়ে বললেন, এই যে স্যার, দুইটা ক্যালেন্ডার।
দুইটা আনছ? ভাল করছ। এই জুলেখা, রুবিনা। এই! আয়তো এদিকে! হাঁক ছাড়লেন তিনি।
জুলেখা, রুবিনা নামের দুটি মেয়ে মিনিট খানেকের মধ্যে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল।
মতলিব সাহেব পরিচয় করিয়ে দিলেন, এরা আমার মেয়ে। একজন ক্লাস সেভেনে, আরেকজন নাইনে।
তারপর তাদের হাতে ক্যালেন্ডার দুটি তুলে দিতে দিতে বললেন, এই নে। ঝটঁপট বইয়ে মলাট লাগিয়ে নে।
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লাইকা লেন্সে তোলা ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একরকম আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কার গল্প জানেন ও শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৩১



গতকাল সন্ধ্যায়, আমরা কিছু বাংগালী ঈদের বিকালে একসাথে বসে গল্পগুজব করছিলাম, সাথে খাওয়াদাওয়া চলছিলো; শুরুতে আলোচনা চলছিলো বাইডেন ও ট্রাম্পের পোল পজিশন নিয়ে ও ডিবেইট নিয়ে; আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবাকে আমার পড়ে মনে!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

বাবাকে আমার পড়ে মনে
ঈদের রাতে ঈদের দিনে
কেনা কাটায় চলার পথে
ঈদগাহে প্রার্থনায় ..
বাবা হীন পৃথিবী আমার
নিষ্ঠুর যে লাগে প্রাণে।
কেন চলে গেলো বাবা
কোথায় যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×