somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকার সরণী ধরে শেষ হবে এ পথচলা

০১ লা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার রূপবতী স্ত্রীকে পরপুরুষের সাথে সময় কাটানো অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলার মাস্টার প্লানটা অবশেষে করেই ফেললাম। অফিসের কাজে দুদিনের জন্য চিটাগাং যাচ্ছি বলে গিয়ে উঠলাম পাশেই একটা হোটেলে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটাতে হোটেলে না উঠলেও পারতাম। কিন্তু বাইরে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সময় কাটাতে গেলে নীলার আত্মীয় স্বজন কারো চোখে পরে যেতে পারি। তাছাড়া নীলার সাথে যার পরকীয়া চলছে সেও তো দেখে ফেলতে পারে। এটা ভেবে কোন রিস্ক নিতে চাইলাম না বলেই হোটেলের বন্দোবস্ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলেই হলো। আমি নিশ্চিত আজ সন্ধ্যাতেই নীলা খালি বাসায় ছেলেটিকে ইনভাইট করবে। আর ঠিক তখনই আমি বাসায় ফিরে গিয়ে হাতে নাতে পাকড়াও করবো সেই অসৎ নষ্ট ছেলেটিকে।
নীলা অসাধারন রূপবতী। গল্প উপন্যাসের নায়িকারাই কেবল অতোটা সুন্দরী হতে পারে। আরো ভয়ের কথা যতো দিন যচ্ছে নীলা আরো সুন্দরী হয়ে উঠছে। নীলাকে যে দেখে সেই নীলার রূপে মুগ্ধ হয়ে যায় এ আমি ঢের বুঝতে পারি। বিয়ের পরে আমার বাসায় বন্ধুমহলের সবার যাতায়াত বেড়ে যায়। আমি বুঝতে পারি এখন তারা আর আগের মতো আমাকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে না। যখন তখন তারা আমার খোঁজে বাসায় চলে আসে। আমি খুব বুঝতে পারি আমার সাথে আসলে তাদের কোন দরকার নাই। তাদের সব দরকার নীলার সাথে। প্রথম দিকে বেশ কয়েকদিন ব্যাপারটাকে বেশ এনজয় করছিলাম। কিন্তু একদিন, হঠাৎ করে একদিন, কথা প্রসঙ্গে সুমন যখন বলে উঠল, ভাবী, আপনি যেমন সুন্দর, আপনার হাতের চা ও খুব মজার। হতে পারে চা মজার, এটা মানা গেল। কিন্তু শারীরিক সৌন্দর্য্যরে কথা কেন? বন্ধু-বউকে এভাবে কি বলা যায়? সেদিন থেকে বাসায় বন্ধুদের আনাগোনা আর পছন্দ হচ্ছিল না মোটেও। আমার সহ্য ক্ষমতা তার সীমানা অতিক্রম করল যেদিন অফিস থেকে ফিরে শুনলাম দুপুর বেলা কবির ফ্লাটে এসেছিল। সে নাকি তার গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমাদের জন্য পুকুরের মাছ নিয়ে এসেছে। নীলা হাসি হাসি মুখ করে খবরটা দিলেও আমার মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল চট করেই। মাছ দিবি ভাল কথা। দুপুরে ক্যান? সন্ধ্যায় আমি আসার পর দিতে পারতি। তোর তো আমার অফিস টাইম খুব ভাল করেই জানা। নীলা দেখি কবিরের পক্ষেই সাফাই গাইল। সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ টিকে থাকতো কি? তার প্রশ্ন শুনেও মেজাজ আরো গরম হয়ে গেল। তাকে বললাম দুনিয়াকে অতো সহজে নিলে হবে না। পুরুষরাতো আরো জটিল! সে আমার কথা হেসেই উড়িয়ে দিল। এতোদিন জানতাম মেয়েরা জটিল আজ তোমার কাছ থেকে নতুন করে জানলাম জটিল আসলে ছেলেরা। হিহিহি। কিন্নর কণ্ঠের হাসি শুনে মন থেকে রাগ পরে গেল। সেদিনকার মতো ব্যাপারটা ভুলতে পারলেও আরেকদিন সায়েম যখন ক্যারাম বোর্ড নিয়ে বাসায় আসল, যখন জানতে পারলাম, নীলা ক্যারাম পছন্দ করে বলেই সে এ কাজ করেছে তখন আসলেই মাথায় রক্ত চড়ে গেল। কিন্তু ভদ্র নিপাট মানুষ হওয়াতে মনের কথা মনেই রেখে জ্বলতে থাকলাম। এরপর থেকে নিয়ম করে প্রতি সন্ধ্যায় সায়েম, কবির, সুমন সবাই চলে আসতো ক্যারাম খেলার জন্য। আর নীলাও যে কি! সে হাসি মুখে তাদের সাথে খেলতে থাকতো, খেলতেই থাকতো। স্বামী হিসেবে যথেষ্ট ভাল থাকতে চাই নীলার কাছে। তাই বিভিন্ন সময়ে আমার খারাপ লাগার কথাটা তাকে বলতে গিয়েও পারিনি। ভয় হয় সে যদি রাগ করে চলে যায়। সে যে আমার মতো এক ছাপোষা কেরানীকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে এটাইতো অনেক। তাই মনের কষ্ট মনেই চেপে রাখলাম। মাঝে মাঝে খেলা বাদ দিয়ে দূরে বসে হাস্যোজ্জল নীলাকে দেখতাম। মনে প্রশ্ন জাগতো, সে কি আমাকে আদৌ ভালবাসে? যদি ভালোই বাসে তবে আমার মনের কষ্টগুলো কেনো বুঝে না সে। আমাকে কেন মুখ খুলে বলতে হবে সবকিছু? সে তো নিজেই পারে পৃথিবীর সব পুরুষদের থেকে দূরে থাকতে। সে কেন পারে না সবার থেকে দূরে থেকে আমাকে একটুখানি শান্তি দিতে? সারাক্ষণ মাথার মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা করে আমার। যখনই আমার কোন বন্ধু অথবা তার দূর সম্পর্কের কোন ভাই অথবা তার ছেলেবেলার কোন ছেলে-বন্ধু বাসায় বেড়াতে আসে আমার মাথায় তীব্র একটা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তখন সবাইকেই সন্দেহ হয় আমার। এটা ঠিক যে কারু না কারু সাথে তার একটা অনৈতিক সম্পর্ক চলছে বেশ কিছু দিন। আমি খুব ভাল করে বুঝতে পারি ইদানিং সে কিছু একটা আমার থেকে লুকাচ্ছে। সেদিন বাসায় ফিরে কলিং বেলে চাপ দিয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল। দরজা খুলতে এতোটা দেরী কখনো করে না নীলা। দরজা খোলা মাত্র তাই কারন জিজ্ঞেস কররলাম। বুঝলাম বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সে। গোপন কিছু একটা করছিল সে নির্ঘাৎ। কি করছিল সে? কেউ কি আমার অবর্তমানে তার সাথে দেখা করতে এসেছিল? কিন্তু বের হবার রাস্তা তো একটাই। তবে নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে। সুযোগ পেলে বের হয়ে যাবে। সন্দেহ মনে রেখে আসলে কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। রাতে খেতে বসলাম ঠিকই কিন্তু খাওয়া হল না। লোকটি কে হতে পারে? কোথায় লুকিয়ে গেল চট করে? রান্নাঘরে গিয়ে খুঁজব নাকি একবার? নাকি ওয়াড্রোবের ভেতরটা দেখব? কিন্তু তাহলে তো নীলার কাছে আমার সন্দেহের ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন খামাখা লজ্জা পাবো। পরে দেখা যাবে তবে। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। চোখ কান খোলা রেখেও কোন লাভ হল না। কোথা থেকে কাউকে বের হতে দেখলাম না। এমনকি নীলা ঘুমিয়ে পড়লে রান্না ঘরে ঢুঁ মেরেও কাউকে পেলাম না। তবে এটা কিন্তু ঠিক বুঝতে পারলাম, নীলা কিছু একটা লুকাচ্ছে আমার থেকে। তার চোখে মুখে অপরাধী অপরাধী একটা ভাব আমার চোখ এড়াতে পারেনি। ব্যাপারটা না বুঝলেই বরং ভাল ছিল। একটুখানি ঘুমাতে পারতাম। নীলা কি লুকাচ্ছে আমার থেকে? নীলার মধ্যে একটা চোর চোর ভাব লক্ষ করছি সবসময়। তাই ঘুম হল না সে রাতে। আসলে রাতের ঘুম আমার একেবারেই হারাম হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে জগতের সব পুরুষ মানুষদের উৎপাত। ঘুমালেও স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নের মধ্যেও পুরুষদের আনাগোনা! সেদিন দেখি আমার অফিসের বস আমাকে বলছে তোমার বউটা কিন্তু খাসা। ওকে একবার পাঠাবে? চিৎকার দিয়ে বসকে চড় মারলাম। মেরেই বুঝতে পারলাম ওটা একটা স্বপ্ন। ওহ শিট! গোটা পৃথিবীটাকে যদি পুরুষশূণ্য করা যেতো! এই জ্বালাটা যে কতোটা ভয়ানক তা আমার মতো অবস্থায় যারা পড়েছেন তারাই কেবল বুঝতে পারবেন। তাই আর এ জ্বালা সইতে পারব না আমি। আজকেই হবে এর দফা রফা। এতোটা উত্তেজিত ছিলাম যে খেয়ালই করিনি কখন বাসার সামনে চলে এসেছি। দরজায় হাত রেখেই বুঝতে পারলাম ভেতর থেকে আটকানো না সেটা। কি ব্যাপার। নিশ্চয়ই কেউ এসেছে। আমি শব্দ না করে ভেতরে ঢুকে গেলাম। না, ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। আশ্চর্য! ভেতরে ঢুকলাম। কেউ নেই। দুজন কি আগেই আমাকে দেখে ফেলল। ব্যালকনিতে গেলাম। না। কেউ নেই। ব্যালকনির পাশেই বাথরুম। ভেতরে শাওয়ার থেকে পানি পড়ার শব্দ। ও! তাহলে এই অবস্থা। আমি বাথরুমে নক করলাম। এতোদিন লজ্জায় মনের মধ্যে চেপে রেখেছিলাম সবকিছু। আর না। আর পারব না। এনাফ ইজ এনাফ। নীলা, বের হও। বের হও বলছি।
আমার কণ্ঠ শুনতে পেয়ে নীলা দরজা খুলে উঁকি দিল। কি আশ্চর্য। তোমার না আজ ফেরার কথা ছিল না।
হ্যা ছিল না। ফিরলাম। কোন সমস্যা আছে তোমার?
না সমস্যা থাকবে কেন? নীলা কিন্তু ভেতর থেকেই কথা বলছিল।
বললাম, বের হয়ে আসো। দরকার আছে।
বেরুচ্ছি বাবা! একটু ওয়েইট করো। নীলা দরজা লাগিয়ে ফেলছে! না দরজা লাগালে হাতে নাতে ধরতে পারব না তাদের। লোকটাকে লুকিয়ে ফেলতে পারে। সানশেড দিয়ে কি বের হওয়া যাবে? ওটা তো বেশ বড়।
তাড়াতাড়ি হাত লাগালাম। না দরজা লাগাতে পারবা না। বের হও। এক্ষুনি বের হও।
কি আশ্চর্য ! আমি ঠিক অবস্থায় নাইরে বাবা। নীলা দরজা লাগাতে চাচ্ছে।
আমার মাথায় রক্ত চড়ে বেসেছে ততোক্ষনে। বললাম, বেঠিক অবস্থায় ধরার জন্যই আমি হঠাৎ আসলাম। বলতে বলতেই প্রবল শক্তি দিয়ে ঢুকে গেলাম বাথরুমের ভেতর। চারদিকে তাকালাম। না কেউ নেই। সানশেডেও পলায়নরত কাউকে দেখা গেল না। চলে গেল কি? ভাল করে উঁকি দিলাম। নাহ, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঘুরে নীলার দিকে তাকালাম। ভয় আর বিষ্ময় মেশানো চোখ দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। এভাবে পরাজিত হওয়া যায় না। আজ এস্পার-ওস্পার করতেই হ্েব। আর না। আর আমি পারছি না। বললাম,
কই পালাইসে?
কে পালাবে?
না বুঝার ভান করো না।
কে পালাবে? নীলা এবার চিৎকার করে উঠল? বড় বড় চোখে তাকাচ্ছে সে।
তোমার প্রেমিক? কোথায় লুকিয়ে রেখেছো ? বাথরুম থেকে বের হয়ে মূল দরজার দিকে চলে গেলাম। অন্য কোথাও লুকোলে বের হয়ে যেতে পারে। পেছন পেছন নীলা চিৎকার দিচ্ছে, কি হইসে তোমার? পাগল হয়ে গেসো নাকি?
দরজা লাগিয়ে বললাম. দরজা খোলা কেন? বলি দরজা খোলা কেন? কে ঢুকসে এই দরজা দিয়ে?
নীলা কাঁদতে শুরু করেছে। একা একা বাসায় আছি। তাই বুয়াকে যেতে দেইনি আজ। বলসিলাম সামনের দোকান থেকে চা-পাতা নিয়ে আসতে। ভুলে বোধ হয় দরজা লাগায়নি।
ভাওতাবাজি। সব ভাওতাবাজি! আমার হাত থেকে লাগাম ছুটে যাচ্ছে দেখে চিৎকার করে উঠলাম আমি। বলো, তোমার প্রেমিককে কোথায় লুকাইসো। আজই সব কিছুর শেষ হবে। সব কিছুর। কার সাথে প্রেম করছ আজ আমি বের করবই। দৌড়ে রান্না ঘরে গেলাম। না কেউ নেই।
থামোতো, পাগলামি করো না।
পাগলামি আমি করছি না। পাগলামি করছো তুমি। বিবাহিত হয়ে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখাটাই হচ্ছে বড় পাগলামি। আজ আমি তাকে খোঁজে বের করবই করবো।
কাকে বের করবে তুমি? তুমি এমন কথা ভাবতে পারলে কিভাবে। অঝোরে কাঁদছে নীলা। মেয়েদেরর মেকি কান্না আমার জানা আছে। আজ কোন কান্নাই আমাকে রুখতে পারবে না । আমি সব বের করব। ওয়াড্রোব খুললাম। নীলা, এখনো সময় আছে। হারামজাদাটা কই লুকাইসে, বলো।
বিশ্বাস করো সবুজ, আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি আমার হাসব্যান্ড। তুমি থাকতে আর কাউকে আমার কোন দরকার। নীলার কণ্ঠে তীব্র আকুতি।
দরকার কেন হবে সেটা তুমিই জানো। ডাইনীদের একটাতে হয় না। অনেকগুলা লাগে।
এই কথা তুমি কিভাবে বলতে পারলে, সবুজ?
সত্যি কথা বলসি। সত্যি কথা বলা কি অন্যায়? রায়হান আসে না তোমার কাছে? সুমন আসে না বাসায়? তাদের সাথে ক্যারাম খেলো না তুমি? তোমার স্কুল ফ্রেন্ড তানিম আসে না? তুমি তো সারাক্ষণ তাদের নিয়েই থাকো। শ্লেষ ভরা কণ্ঠে একটানে বললাম কথাগুলা।
ওরা তো তোমার ও বন্ধু। আর তানিম তো আমার ছেলেবেলার বন্ধু? তাদের নিয়ে একথা ভাবলে কি করে?
তুমি ভাবাইসো বলেই ভাবসি। একটু নরমাল হলাম। এতোদিনের কথাগুলি মন খুলে বলতে পেরে দম ছেড়ে বাঁচলাম বলে মনে হল।
নীলা মাথা নুইয়ে চোখের পানি ফেলছে।
তুমি আমার একটা কথার জবাব দাও। সেদিন যখন কবির মাছ নিয়ে আসল, তোমাদের মধ্যে আর কিছু হয়নি তো? সে কি মাছ দিয়েই চলে গেছে?
নীলা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে গেছে।
কি হল? কিছু বলছো না কেন? অভিজ্ঞতা থেকে জানি, রেগে গেলে মানুষ ভুল করে সত্যি কথাটি বলে দেয়। তাই তাকে আরো রাগানোর চেষ্টা আমার।
আমার কিছু বলার রুচি হচ্ছে না।
রুচি হচ্ছে না? ওওও.. তুমি তো আবার কাজ করতে ভালবাসো। সব করার রুচি থাকবে, আর সেগুলি বলতে পারবে না? দাঁতে দাঁত চেপে বললাম কথাটা।
ইউ স্টপ।
তুমি স্টপ কর। তোমাকে আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কার সাথে তোমার প্রেম চলছে বলো।
স্টপ। ইউ স্টপ।
না, আমি স্টপ করব না। তুমি আমাকে বল, সেদিন সুমন কেন বলসিল তুমি দেখতে সুন্দর?
নীলা চুপ।
ধরা পরলে ওমন চুপ করেই থাাকতে হয়। তা সুমনের সাথেই তোমার সম্পর্ক তাই না?
নীলা কোন কথা বলছে না।
সুমনের সাথে কি কি করসো শুনি? লং ড্রাইভে গেসিলা কোথাও? সেদিন তুমি বলেসিলা তোমার খুব লং ড্রাইভে যাবার ইচ্ছে করছে? সেদিন আমি পারিনি। বন্ধের দিন, তবু অফিসে যেতে হল। তখন কি তুমি সুমনকে কল দিয়ে আসতে বলেছিলে? সুমন কি এসেছিল? সুমন তোমাকে সুন্দর বলেছে। তার মানে সে তোমাকে ভালবাসে। তুমি একবার বললেই সে দৌড়ে চলে আসবে, এ আমি ঠিক জানি। কোথায় গিয়েছিলে তুমি? তোমার সেই প্রিয় জায়গা বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়। নীলা, তোমার কি মনে পড়ে আমাদের আক্দ হবার পরের দিনই লুকিয়ে তুমি আর আমি বুড়িগঙ্গার পাড়ে গিয়েছিলাম? কতো ভালবাসা ছিল আমাদের মধ্যে। তোমাকে পেয়ে আমি ভেবেছিলাম সারা জীবনের সততার পুরস্কার পেয়েছি। সেই পুরস্কার আজ কেন তুমি অভিশাপে পরিণত করলে হলে, নীলা? বলো, জবাব দাও। ইদানিং তুমি কি লুকাচ্ছো আমার থেকে? তোমাকে দেখলেই বুঝতে পারি তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছো। বলো নীলা। আমাকে বলো তুমি। তুমি যাকে ভালবাসো, তার কাছে চলে যাবে তুমি। আমি আটকাবো না। আমি জানি কাউকে জোর করে ধরে রাখার মধ্যে কোন সার্থকতা নেই। খাঁচার পাখিকে ছেড়ে দিলে যদি সে যায় না তবেই তা পরম পাওয়া। আমি কথা দিচ্ছি, চলে যেতে দেব তোমাকে। আমাকে সব খুলে বলো। সেদিন অফিস থেকে আমি ফিরে আসার পর বুঝলাম এতো তাড়াতাড়ি আমি চলে আসবো এ তুমি আশা করোনি। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমার তাড়াতাড়ি চলে আশায় তোমার মন খারাপ হয়েছে। কী করছিলে তখন? কারু সাথে মোবাইলে কথা বলছিলে? কার সাথে? সুমনের সাথে? কি বলছিল সে? কী স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সে তোমাকে? বলো নীলা সবকিছু খুলে বলো। আমি কথা দিলাম কিচ্ছু বলব না আমি।
রোবটটা এবার দাড়ালো। নীলা কে তখন রোবট বলেই মনে হচ্ছিল আমার। জীবনের স্পন্দন তার ভেতর ছিল না। ওয়ার্ডরোব খুলল। কি যেন বের করল। হাতে দিলে বুঝলাম ওটা একটা সুয়েটার। উলের সুয়েটার।
অনেকক্ষণ পর নীলা মুখ খুলল, শখ করে তোমার জন্য একটা সুয়েটার বানাচ্ছিলাম। এই শীতে তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে। মাথা ব্যাথার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারি না। সেদিন মাথা ব্যাথা হচ্ছিল না। তাই সেদিনই কাজটা শেষ করে ফেলব ভেবেছিলাাম। তাই তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসায় মন খারাপ হয়েছিল। যন্ত্রের মতো কথাগুলি বলল নীলা।
মেঝেতে বসে পড়লাম আমি। নীলার কথা শুনে আমার আর কোন শক্তি থাকল না শরীরে। নীলার চোখে একিউট কনজাস্টিভ গ্লুকোমা। ডাক্তারের সাবধানবাণী, চোখে প্রেশার পরে এমন কাজ করলে ধীরে ধীরে নীলার চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। চোখের তোয়াক্কা না করে নীলা আমার জন্য সুয়েটার বানাচ্ছিল! এ আমি কি শুনলাম! আর আমি কি না মিছে সন্দেহে এতোকিছু! নীলা আমাকে এতো ভালবাসে! কি করব এখন? নীলার কাছে মুখ দেখাবো কিভাবে আর!
আমি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলাম মেঝেতে।
ছিঃ সবুজ, ছিঃ! তুমি আমাকে কতোটা ছোট করলে আজ! তোমার বিশ্বাস এতোটা ঠুনকো। তুমি কিভাবে এতোসব ভাবতে পারলে?
আমার আসলেই তখন বলার কিছু ছিল না। চুপ করে থাকলাম।
তুমি আমাকে সন্দেহ করলে সবুজ! এবার তবে আমার প্রশ্নের জবাব দাও। তোমার পেছনে ওটা কি? শার্ট তুলো।
মরি! মরি! রাগের মাথায় একটা ছুরি লুকিয়ে রেখেছিলাম।
দেখো সবুজ, তুমি আমাকে সন্দেহ করেই কেবল ক্ষান্ত হওনি। আমাকে মারার জন্য ছুরি নিয়ে এসেছো। ছিঃ! তোমার মুখে থুতু দিতে ইচ্ছে করছে। নাহ! থুতু না। তোমার ছুরি দিয়ে তোমাকেই মারবো আমি। তবেই তোমার উচিত শাস্তি হবে। ছুরিটা আমার হাতে দাও।
ছুরিটা নীলার হাতে দিলাম। ওটার আর আমার কোন দরকার নাই। নীলা ক্ষীপ্র গতিতে ছুরিটা নিয়ে আমার গলায় ছুঁয়ালো।
এ ছুরি দিয়ে আমি তোমাকে মারবো। আমি তোমাকে মারবো এখন। পুরুষ হয়েছো বলে শুধু তুমিই অভিযোগ করবে, শুধু তোমার চাওয়া পাওয়ার হিসেব হবে- এটা হতে পারে না।,গোপন সম্পর্ক আমার থাকলে সমস্যা, তোমার থাকলে কোন সমস্যা নাই- এটাও হবে না। আমি যা যা বলব সব প্রশ্নের জবাবা সত্যি করে দিবা। নয়তো এক টান দিয়ে কল্লা ফেলে দেবো তোমার। কি পাইসো তমি আমাকে? মেয়ে বলে শরীরে কোন শক্তি নাই আমার? তোমার সব ধারণা যে ভুল তা আজ একে একে প্রমাণ হবে। তুমি আমাকে বলো, সারাক্ষণ তোমার ফেসবুকে কার সাথে চ্যাট করো তুমি? তুমিই তো বলছিল তোমার ক্লাসমেট ফারিয়ার সাথে ফেসবুকের মাধমে আবার দেখা হয়েছে। তুমি কি তার সাথে স্কাইপেতে ভিডিও চ্যাট করো না? রাত জেগে কি চ্যাট করো তার সাথে? তোমার অফিসের রিসিপসনিস্ট পারমিতার নাম্বার তেমার মোবাইলে কেন? সে তোমার জন্মদিনে মেসেজ দিয়ে উইশ করবে কেন? তোমার অফিসে কি আর কোন কলিগ নেই, কোন পুরুষ কলিগ? তাদের কেউ তো উইশ করল না, পারমিতা কেন করবে? পারমিতা কেন আমাদের গত মেরেজ ডে তে ফুল নিয়ে আসবে? পারমিতা তোমার কে? স্রেফ কলিগ, নাকি অন্য কিছু?
নীলার কথা শুনে আমি তো থান্ডার্ড। এতো ভালবাসি, এতো ভালবাসি তাকে। অথচ সে এমন করে ভাবতে পারলো! অপমানে ঘৃণায় বিষিয়ে যাচ্ছিল পুরোটা জগত।
চুপ করে থেকো না। আমি আজ সবকিছুর জবাব চাই। বলো, কয়টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক রেখেছো তুমি। আমাকে আজ সব বলতে হবে। নইলে আজই হবে তোমার জীবনের শেষ দিন। দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলি বলল নীলা।
মেরে ফেলো নীলা। মেরে ফেলো আমাকে। তোমার মনে এমন সন্দেহ থাকলে আমি বাঁচতে চাইনা।
মারবো তো অবশ্যই। তোমার এইসব রমনীরা আমার জীবনটা বিষিয়ে তুলেছে। কতো ভালবাসি তোমাকে। তুমি কি করে পারো অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতে, আড্ডা দিতে। খবর রাখো আমার মনের নিয়মিত দহনের? তোমার কি একবারো মনে হয় না, তোমার বন্ধুদের সাথে আমার গল্প দেখলে তোমার যেমন খারাপ লাগে, তেমনি আমারো খারাপ লাগা থাকতে পারে। সারক্ষণ শুধু মিথ্যা আর মিথ্যা। কি মনে করো আমি তোমার অফিসের খবর রাখি না? এবার ঈদে, হ্যা, এবার ঈদে তুমি বোনাস পাইসো দুইটা। অথচ আমারে বলসো একটা। কি করসো তুমি, আরেকটা বোনাসের টাকা কোন খাতে খরচ করসো? পারমিতা? নাকি ফারিয়া? সত্যি করে বলবা। আমি জবাব চাই। নয়তো ঘ্যাচ করে গলা ফেলে দেবো বললাম।
অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম। রিডিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নেকলেসের বাক্সটা বের করলাম। নীলা হাতে দিতে দিতে বললাম, এটা হীরার। তাই দাম অনেক বেশি পড়লো। বোনাস পেয়ে এটা কিনে রেখেছিলাম, তোমার জন্মদিনে গিফট দেবার জন্য।
ঠিক তখনি কলিং বেলের শব্দ। নীলা ঝটপট ছুরিটা লুকিয়ে ফেলে বলল, যাও বুয়া এসেছে। দরজা খুলে দাও। আমি বাথরুমে গেলাম।
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×