somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লবণাক্ত কফি (একটি বিদেশি গল্প পড়ার পর অনুবাদ করার নিজস্ব চেষ্টা)

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক চামচ লবন দেয়া যাবে?
এতোটাই অবাক হলাম যে ওয়েইটার লবন এনে কফিতে তা মিশিয়ে দেয়া পর্যন্ত গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না।
কী ব্যাপার, আপনার কি ডায়াবেটিস নাকি? অবশ্য ডায়াবেটিস হলেও কেউ কফিতে লবন খায় বলে আমার জানা নাই।
উত্তর না দিয়ে সে প্রথমে কফির কাপে চুমুক দিল। তারপর বলল, এটা আমাকে আমার ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।
লবন মেশানো কফি আপনাকে আপনার ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়! কিন্তু কিভাবে?
আমি আসলে সমুদ্র তীরে বড় হয়েছি। প্রতিদিন বাবার সাথে সমুদ্রে স্নান করতে যেতাম। সেখানে ঘন্টা দুই সাঁতার কাটতাম। সাতার শেষে আমরা যখন বাড়ি ফিরতাম, তখন আমাদের রক্ত-মাংসে লবন মিশে থাকতো। তারপর বাবা যখন কফি বানিয়ে দিতো, সেই কফির লবনাক্ত স্বাদ ও গন্ধ আমার শ্রান্ত দেহে অবারিত শান্তি এনে দিতো। ওটা ছিল পৃথিবীর সুন্দরতম গন্ধ। লবন মেশানো কফি আমাকে আমার দেশের কথা, আমার বাবা-মার কথা মনে করিয়ে দেয়।
আমি মুগ্ধ হলাম। যে ছেলেটি এতো বছর পরেও বাড়ির কথা মনে করতে চায়, বাবার সাথে সময় কাটানোর কথা বলে, সে নির্ঘাত একজন ভালো মানুষ। হ্যা, আমার সেদিনকার সে ধারনা সঠিক ছিল। আমাদের বিবাহিত জীবনের বিশটি বছর খুবই আনন্দে কেটেছিল। তার মতো একজন সৎ-সজ্জন ব্যক্তি খুব কম আছে। সে আমাকে ভালোও বাসতো ভীষণ। আমিও চাইতাম তাকে সবসময় সুখে রাখতে, আনন্দে রাখতে। তার প্রিয় সব কাজ করতে পারলে আমার আনন্দ আর ধরতো না। প্রতিদিন ভোরে সে ঘুমে থাকতেই কম্পিউটারে তার প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গিত ধরিয়ে দেয়া, ঘুম ভাঙতেই তার সামনে তার প্রিয় লোনা জলের কফি ধরিয়ে দেয়া, রাতে ঘুমুতে যাবার আগে তার সাথে তার বই-পাঠ শুনা- সবগুলো কাজই করতাম খুব আনন্দের সাথে। তার জন্য কিছু একটা করতে পারার সে আনন্দ। সে আনন্দ, তাকে খুশি করতে পারার। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ এমন একটা মানুষকে আমার জীবনসঙ্গী করে দিয়েছিলেন বলে।
সৃষ্টিকর্তার উপর রাগও আছে বটে। ক্যান্সার নামক এক মরন ঘাতক তাকে আক্রমন করে বসলো তার বয়েস যখন মাত্র ৫০। তাকে সুস্থ করে তোলার কম চেষ্টা করিনি। জায়গা জমি বিক্রি করে দেশের সবচে নামী মেডিকেলে তার চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। তারপর একদিন, হুট করে একদিন সে আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেল। আমার জন্য রেখে গেল সুখের অজস্র টুকরো টুকরো স্মৃতি আর একটা চিঠি- যা তার মৃত্যুর পর ডাক্তারের কাছ থেকে পেয়েছিলাম।
হাতে পাওয়া মাত্রই চিঠিটি পড়লাম।
‘ক্ষমা করো আমায়। তোমার সাথে আমার শুরুটাই ছিল মিথ্যা দিয়ে। সারা জীবন সেই মিথ্যা লালন করেছি বলেও ক্ষমা চাই। তোমার কি মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখা হবার কথা? সেদিন এতোটাই নার্ভাস ছিলাম যে চিনি বলতে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম লবন। ভুলটা করার পরই বুঝতে পারি ব্যাপারটা। কিন্তু তখন হঠাৎ মনে হল ঠিক ঐ মুহুর্তে ভুলটা স্বীকার করে নেয়াটা হাস্যকর শুনাবে। আর কেইবা চায় প্রিয় মানুষটার কাছে নিজেকে হাস্যকর প্রতিপন্ন করতে। তাই ভুলটাকে শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত করতে তোমাকে নিজের সম্পর্কে এক গাদা মিথ্যে বলেছিলাম। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি সত্যিটা জানানোর। কিন্তু পারিনি, তুমি কষ্ট পাবে ভেবে। আজ আমি যখন মারা যাচ্ছি, তখন নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হচ্ছে। তাই বলছি, সত্যি কথাটা হলো, আমি লবন মেশানো কফি মোটেও পছন্দ করি না। কী যে এক অদ্ভুত বাজে স্বাদ! কিন্তু সারা জীবন সেই বিদঘুটে তেতো স্বাদের কফিটাই পান করতে হয়েছে। তুমি যদি আমায় জিজ্ঞেস করো, তোমার মুখের মিষ্টি হাসি দেখার জন্য এক বসাতে লক্ষবার ওমন কফি খেতে পারবো।
তোমার কাছে আমার একমাত্র সেই মিথ্যেটির জন্য ক্ষমা করো আমায়...’
পরদিন আমি নিজে সেই কফি বানালাম যা আমার স্বামীকে খেতে দিতাম। অ্যাহ! প্রথম চুমুকেই বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হল। চাইলাম, তবু কাপটা শেষ করতে পারলাম না। অথচ তাকে কিনা দেখেছি মুখে প্রশান্তির ভাব নিয়ে কফিটা খেতে!
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×