somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাগ্য

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(গল্পটি লেখার পর কেমন জানি কনফিউশন হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কেমন হয়েছে। আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট পেয়ে এডিট করবো অথবা ডিলিট করে দেবো।গল্পটা তবে শুরু করা যাক।)
১.
‘এক্সকিউজ মি ভাইয়া! আমার বিড়ালটা দেখেছেন!’
মেয়েটির চমৎকার মিষ্টি কন্ঠে বাকরুদ্ধ সঞ্জিত কোনরকমে মাথা নাড়ল।
‘দেখেননি! আমার এত্তো প্রিয় একটা বিড়াল, আমার জান! হারিয়ে গেলো বুঝি!’ মেয়েটি কাঁদতে থাকলো!
‘তোমার নাম কী?’ মেয়েটির সৌন্দর্য্যে থতমত সঞ্জিত তার নাম জানতে চাইলো।
‘কিটি।’
‘এত্তো সুন্দর একটা মেয়ের নাম কি না কিটি!’
‘আমার না, আমার বিড়ালের নাম। আমার বিড়ালটা আমার থেকেও সুন্দর!’
‘আমি তো তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম বোধহয়!’
‘আমার নাম বর্নালী। সবাই আদর করে বর্ণ বলে ডাকে। এসেছিলাম আপনাদের পাশের বাসায়। উনি আমার পিসি হন। কত্তো করে বললাম, আমি একা যাই। পিটিও বারন করলো। নাহ! উনি গোঁ ধরলেন। আমার সাথেই তাকে আসতে হবে।’
‘পিটি কে?’
‘কিটির মা। পিটির দুই সন্তান। কিটি আর মিটি। নামগুলো মিলিয়ে রেখেছি। সুন্দর না?’
‘খুব সুন্দর।’
কথপোকথনের এ পর্যায়ে বিড়ালটি চলে আসলে মেয়েটি খুশিতে আত্মহারা হয়ে কিটিকে পরম মমতায় কোলে নিয়ে চলে গেল। রেখে গেল সঞ্জিতের বুকে সৃষ্টি হওয়া এক রাশ ভাললাগা। পুঁজিবাদী সমাজের শোষন যাঁতাকলে পিষ্ট সঞ্জিতের সাথে এর আগে কোন মেয়ে কখনো এমন মিষ্টি করে কথা বলে নি। তাই খুব সহজেই সমাজ ব্যবস্থার পক্ষপাতমূলক রীতিনীতি ভুলে গিয়ে সে বর্ণের পেছনে ছুটতে থাকলো। বর্ণের বয়েসটাও তখন ছিল না সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থার জটিলতা বুঝার জন্য যথেষ্ট। তাই সেও তার বুকের এক কোনায় বিড়ালগুলোর সাথে সঞ্জিতকেও জায়গা দিয়ে দিল এক নিমিষে। কিন্তু ধর্ম, সমাজ, পরিবার, পারিবারিক রাজনীতি এসবের গ্যাড়াকলে পড়ে সঞ্জিত বুঝতে পারলো এ জীবনে নিজের জীবনের চাইতে বেশি ভালোবেসেও কাউকে কাউকে কখনোই পাওয়া যায় না। তাই সে সৃষ্টিকর্তার কাছে পরজন্মে বিড়াল হতে চেয়ে ইহজনম ত্যাগ করলো।
২.
সাদা রঙের বিড়ালটা মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলল। কি আনন্দ! কি আনন্দ! ম্যাও ম্যাও ডাকতে ডাকতে সে দৌড়ে বর্ণের কাছে ছুটে গেলো। বর্ণও হাত বাড়িয়ে বিড়ালটিকে কোলে নিতে গেলেই পেছন থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসল। ‘তোমাকে কতো বার বলেছি এখানে থাকতে হলে বিড়াল পালা চলবে না।’
বর্ণ পিছু হটে গেল।
পাষন্ড টাইপের একটা লোক এসে বিড়ালটিকে কষে একটা লাথি দিল। বিড়ালটি উড়ে গিয়ে পড়লো, তিন হাত দূরে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে লোকটির দিকে বিষাক্ত একটা চাহনি দিয়ে সে আশ্রয় নিল বর্ণদের পাশের বাসায়।
দুটি বাড়ির মধ্যবর্তী দেয়ালে উঠে বসে সে প্রতিদিন বর্ণকে নিয়ম করে দেখতো। দেখতো, বর্ণদের ছোট্ট সংসারের কীর্তিকলাপ। বর্ণের সাথে তার স্বামীর খুনসুটি ও পারিবারিক প্রেম দেখে সে এক সময় বুঝতে পারলো, বর্ণ এতোদিনে সঞ্জিত নামের কোন এক প্রেমিক ছেলের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। তার খুব রাগ হল। না, বর্ণকে সে এতোটাই ভালোবাসতো যে সে তার উপর রাগ করতে পালো না। সে রাগ করলো সৃষ্টিকর্তার উপর। কী এমন ক্ষতি হতো যদি তিনি তার বর্ণকে পাইয়ে দিতেন। বিড়াল হয়েও সে বর্ণের কাছে যেতে পারছে না। মানুষের সাথে পশু প্রেমে তো সামাজিক বা রাষ্টীয় কোন বাঁধা নাই, থাকার কথা না। সে সৃষ্টিকর্তার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নটা করতে চাইল।
৩.
দেখো হে, তুমি আমাকে এককভাবে কোন দোষ দিতে পারো না। তোমার জন্য নির্ধারিত কার্ডগুলো দেখলেই তুমি বুঝতে পারবে ব্যাপারগুলো। তোমার জন্য, মানে সঞ্জিতের জন্য বরাদ্দ প্রথম কার্ড ছিল এটা। নাও, হাতে নাও। হ্যা ঠিক আছে। এবার জোরে জোরে পড়।
কার্ড নং-১.
সঞ্জিত বর্ণের প্রেমে হাবুডুব খাবে। কিন্তু বাঁধ সাধবেন তাদের বাবা-মা। এক পর্যায়ে সঞ্জিতের মনে হবে না, বর্ণকে পাওয়া এ জীবনে তার হবে না। বর্ণকে পেতে গেলে বিড়াল হতে হবে। সে আত্মহত্যা করবে। এবং পরজন্মে বিড়াল হয়ে জন্ম নেবে। কিন্তু তবু বর্ণকে পাবে না। দূরে থেকেই দিন কাটাতে হবে।
ওকে। এবার দ্বিতীয় কার্ডটি তুলো।
কার্ড নং- ২.
সঞ্জিত বর্ণকে পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হবে, তখন সে তার কাজে মনোনিবেশ করবে। কাজে-কর্মে ব্যস্ত থেকে বর্ণকে ভুলে যাবার চ্ষ্টো করবে। তারপর এক সময় তার জীবনে দেখা হবে শ্রেয়া নামের এক মেয়ের সঙ্গে। সে কি না সব দিক থেকেই বর্ণের থেকে শ্রেয়তর। শ্রেয়া এসে সঞ্জিতের মন থেকে বর্ণকে তড়িয়ে দেবে চিরতরে। কিন্তু জটিলতা এসে দেখা দেবে যখন শ্রেয়াকে এসিড ছুঁড়ে মারবে তার প্রেমে ব্যর্থ হওয়া আবীর। সঞ্জিত শ্রেয়াকে ছেড়ে বিয়ে করবে অজানা একটা রূপসী মেয়েকে যার সাথে তার বিবাহিত জীবন ততোটা সুখের হবে না।
এটা তৃতীয় কার্ড। নাও পড়ো।
কার্ড নং- ৩.
শ্রেয়ার এসিড পুড়ানো মুখমন্ডল দেখে সঞ্জিতের ভীষন মায়া হবে। সে শ্রেয়াকেই বিয়ে করবে। এবং একদিন একটা লটারীতে সে অনেক টাকা জিতে যাবে যে টাকা দিয়ে সঞ্জিত শ্রেয়াকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পারবে। তাদের বিবাহিত জীবন বেশ সুখে কাটবে।
নাও এটা পড়ো।
কার্ড নং- ৪.
আবীর যদি এসিড ছুঁড়ে মারতে ব্যর্থ হয় অথবা শ্রেয়াকে না পাওয়ার বেদনা সহ্য করে নেয়, তবে শ্রেয়া আর সঞ্জিতের প্রেম পরিপূর্ণ হবার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াবে এসে বর্ণ। হঠাৎ একদিন কাকতালীয়ভাবে বর্ণের সাথে দেখা হয়ে যাবে সঞ্জিতের। সঞ্জিত যখন জানবে বর্ণ তখনো কাউকে বিয়ে করেনি,তারই অপেক্ষায় আছে, তখন পুরোনো দিনের সেই ভালবাসা সঞ্জিতের মনে জেগে উঠবে আবার। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারবে না সে কি করবে- বর্ণ না শ্রেয়া। শ্রেয়া না বর্ণ? এই রকম দুটানা অবস্থার মধ্যে শ্রেয়া জেনে যাবে বর্ণ আবার ফিরে এসেছে সঞ্জিতের জীবনে। তখন শ্রেয়া চলে যাবে আবীরের কাছে। বর্ণ সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে থাকবে।
পড়েছো?
হু।
দেখো তোমার জন্য ভাল ভাল অনেক অপশনই ছিল। ৪ নং কার্ডে তোমার ভাগ্যে বর্ণই লেখা ছিল। কিন্তু তোমার লাভ লাইফের কার্ডটা যখন আমি বাছাই করলাম তখন প্রথম কার্ডটাই পড়ল আমার হাতে। তোমার জীবনের সাথে নির্ধারিত বাকিদের কার্ডগুলোও একই ধারায় মিলে গেল। এটা আসলে একটা জটিল খেলা। একটা কার্ডের সাথে অন্যজনের আরেকটা কার্ডের হুবুহু মিল হতে হয়। তাই আমাকে দোষ না দিয়ে তুমি তোমার ভাগ্যকেই দোষারোপ করতে পারো। বুঝতে পেরেছো?

বুঝলাম। কিন্তু কার্ডগুলোর গল্প তো সব আপনার হাতেই লেখা, তাই না?

দেখো বাবা, ৪ নং কার্ডটাও আমার হাতেই লেখা।

কেবল একটা কার্ড লিখে রাখতে পারলেন না? কী দরকার ছিল এতোগুলো কার্ডের? অথবা অন্যভাবেও কোন জটিলতায় না গিয়ে লিখে দিতে পারতেন ঘটনাগুলো। তবে হয়তো আমি আমার বর্ণকে পেতাম।

বৎস। আমি একক একটা সত্বা। আমার সমকক্ষ কেউ নেই যার সাথে কিছু একটা করে আনন্দ পাবো। তাই তোমাদের নিয়ে খেলাতেই আমার সবটুকু আনন্দ। তোমাদের সবার জীবনের সবগুলো দিক নিয়ে আমি ৪ টা করে কার্ড তৈরী করে রেখেছি। এ কার্ডগুলো হাতে নিয়ে তোমাদের ভাগ্য গড়ে দেয়াটাই আমার খেলা। এভাবেই আমার আনন্দ। কিছু না করে তো আনন্দ পাওয়া যায় না, কী বল তুমি?

আপনার হাতে যেটা খেলা সেটাই যে আমাদের জন্য কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আপনি কী করে আপনার সৃষ্টিকে এতো কষ্ট দেন? মায়া হয় না আপনার?

রাগ করেছো আমার উপর? যাও। তোমাকে একটা সুযোগ দিলাম। এই চারটা কার্ডের মধ্যে যে কোন একটা বেছে নাও।

সঞ্জিত দেখলো আগের মতোই এ চারটা কার্ডের একই রঙ, একই আকার। কিছুই বুঝা যাচ্ছে না কোনটাতে কি লেখা। সে কিছু না ভেবেই একটা কার্ড তুললো।

সৃষ্টিকর্তা বললেন, পড়ো এবার।
কার্ড নং-৩
বর্ণের স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা যাবে। বর্ণের খুব মন খারাপ দেখে সাদা বিড়ালটি দেয়াল থেকে লাফ দিয়ে নেমে বর্ণের কাছে যাবে। বর্ণ গভীর মমতায় বিড়ালটি কোলে তুলে নেবে।

সঞ্জিত সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকালো। তার চোখে গভীর আনন্দ দেখে তিনি মৃদু হাসলেন। বললেন, যাও। তোমার জায়গায় যাও।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৭
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×