আজ এক যুগান্তকারী চিকিৎসার উদ্ভাবন হল যেটা অনেক জন্মান্ধ লোকজন কে আশার আলো দেখাবে। যদিও এই চিকিৎসা অন্ধ লোকজনকে নিজ চোখে পৃথিবীকে দেখার আশা জাগিয়েছে, এই একই পদ্ধতি ভবিষ্যতে আরো অনেক রোগকেও কিউর করার কাজে ব্যবহার করা হবে। Leber Congenital Amaurosis type 10 (LCA10) রোগে আক্রান্ত লোকেরা জন্মান্ধ। LCA10 নিয়ে জন্ম হওয়া বাচ্চাদের চোখের রেটিনার মাঝে কিছু কোষ (যেটা আলোকে ছবিতে পরিনত করে ব্রেনে পাঠায়) , সেই কোষ গুলির কিছু অংশ মরে যায়...তাই তারা চোখে দেখে না.. ২০০৬ সনে প্রথম দেখা যায় যে CEP290 নামে একটা জিন এর mutation হওয়াতে কোষগুলি উপরের অংশ টা মরে যায়। তার মানে কোন ভাবে যদি CEP290 mutation কে repair করা যায়, তাহলে হয়ত কোষগুলি আবার নরমাল হয়ে উঠবে আর অন্ধ লোক ও চোখে দেখা আরম্ভ করবে। আজকে সেই কাজটাই করা হল কিন্তু রেজাল্ট জানতে আরো কিছু মাস অপেক্ষা করতে হবে। এত সহজ জিনিস কেন এতদিন লাগল???
আপনার একটা কোষে, প্রায় ৩০,০০০ জিন আছে যেগুলি ৩,০০০,০০০,০০০ ডিএনএ ক্যামিক্যাল এর মাঝে বিন্যস্হ। ডিএনএ হল চারটা ক্যামিক্যাল দিয়ে গঠিত আর সংক্ষেপে এদের কে বলা হয় A, T, G, C. তার মানে হল হল এই চার টা ক্যামিকেল ৩ বিলিয়ন বার একটার পর একটা বিভিন্ন সিকোয়েন্সে সাজানো থাকে ডিএনএ এর মাঝে। আর এই তিন বিলিয়ন A, T, G, C এর মাঝে মাত্র একটা জায়গায় A বদলে G হয়ে গেছে (মিউটেশন) আর এই মিউটেশন হওয়াতে CEP290 জিন কাজ করে না ..তাই LCA10 রোগ হচ্ছে...আপনার শরীরে এভারেজে ৪০,০০০,০০০,০০০,০০০ (৪০ ট্রিলিয়ন কোষ) আছে....এমন কোন টেকনোলজি নাই যে প্রতি কোষের ৩,০০০,০০০,০০০ A, T, G, C এর মাঝে খুজে খুজে যে এক জায়গায় A বদলে G হয়েছে সেখানে G বদলে আবার A করা (রিপেয়ার) আর এই কাজটা ৪০ ট্রিলিয়ন এর প্রত্যেক কোষে যেয়ে repair করা।
কিন্তু CRISPR টেকনোলজি আশার আলো দেখাচ্ছে যেহেতু এই টেকনোলজি দ্বারা ৩ বিলিয়ন ডিএনএ যে জায়গায় মিউটেশন টা সেটা কে ডিটেক্ট করা যায় এবং repair ও করা যায়...তায় আশার কথা হচ্ছে যে অন্নান্য রোগ যেগুলি এরকম 'সিম্পল' মিউটেশন এর জন্য হচ্ছে সেটা কে কারেক্ট করার ক্ষেত্র তৈরী হল। আজ প্রথম মানুষের শরীরে (চোখে) এই CRISPR 'ঔষুধ' সরাসরি ইনজেক্ট করা হয়েছে যাতে CEP290 জিনের মিউটেশন টা কে রিপেয়ার করা যায় (নরমাল করা)। বিস্তারিত এখানে
CRISPR
CRISPR দিয়ে মানুষের নানান রোগ কে ভাল করার কাজ হয়েছে তবে সেটা মানুষের শরীরের বাইরে ডিএনএ এডিট করে। তবে আজই প্রথম সরাসরি মানুষের শরীরে CRISPR ইনজেক্ট করা হল (আইন মেনে)।
আবার একই টেকনোলজি দ্বারা নরমাল জিনকে মিউটেশন করা যাচ্ছে, যাতে ওভার এক্টিভ জিনকে নিস্ক্রিয় করা যায়... CRISPR টেকনোলজি এখন অনেক সহজলভ্য তাই প্রায় সকল ল্যাবে যেখানে ডিএনএ নিয়ে কাজ হয়, সেখানে ইউজ হচ্ছে...আর এখন আমরা আমাদের নিজেদের ল্যাবে এটা ইউজ করছি...একটা প্রোটিন আছে যেটা বিভিন্ন ক্যান্সার টিউমারে অনেক বেশী পরিমানে পাওয়া যায়ওভার এক্টিভ), আর এই প্রোটিন টা ক্যান্সার কোষ কে মুভ করতে সাহায্য করে (metastasis)....তাহলে যে জিনটা এই প্রোটিন বানায় তার মাঝে যদি আমরা CRISPR দিয়ে মিউটেশন করে দেই (সকল কোষে), তাহলে ঐ জিনটা টা ও নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে আর তাতে সেই প্রোটিন টা আর তৈরী হবে না ------ ফলাফল metastasis টা কমানো যাবে...আর আমরা সেই কাজটাই করছি ....
CRISPR টেকনোলজি যারা আবিস্কার করল, তাদের জন্য আমার সকল শ্রদ্ধা...আশা করছি উনারা আগামি বছরের নোবেল পুরস্কার টা পাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:০৫