যাচ্ছে বদলে যাচ্ছে আমার শহর
কত চেনা চেনা হয়ে যাচ্ছে অচেনা
তাই ফুরিয়ে যেতে হবে আমাদেরও
সব কিছুরই আছে সময়সীমা
তাই অনেক যন্ত্রনাও যাবে ফুরিয়ে একদিন
কতো ভারাক্রান্ত মন যাবে জুরিয়ে বকেদিন
কেউ হঠ্যাৎ শান্তি খুজে পাবে ফুরিয়ে একদিন
সময়...
হারিয়ে আমারা সবাই যাবো জানি
তবু হারিয়ে যেতে ভয় কেবল ভয়
যতই আকড়ে থাকি আমার সময়
তবু হাতের মুঠো খুলে দিতে হয়.......
গানটা একটা ভারতীয় বাংলা ফিল্মের। নাম ওর ম্যাডলি বাঙালি। জানিনা ঠিক, হয়তো রিভিউর মতো করে বলা হয়ে যাচ্ছে কথাগুলো। কিন্তু সত্যি বলছি আমি কোনো রিভিউ বা প্রচার চালাচ্ছিনা। শুধু আমার উপলব্ধি আর আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন ও আমাদের ফিল্মমেকারদের কথাগুলোই মনে হলো আমার। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে মূলত বাংলা ফিল্মের নাম নিলেই ঋত্তিক,সত্যজিত,মৃনাল,ঋতুপর্নসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম চলে আসে। এরা যার যার জায়গায় দুর্দান্ত সব দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে গেছেন। যা আজো আমাদের ভাবায়। এরা একেক জন যে শুধু ফিল্মমেকার ছিলেন তা কিন্তু না, এরা একাধারে ছিলেন সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নদ্রষ্টাও। যাকে আমরা শুদ্ধ পরিশীলিত ভাষায় দার্শনিক বলতে পারি। সেই যে ঋত্তিকের নাগরিক বা সত্যজিতের মহানগর, এইসব ফিল্মগুলো একাধারে ছিল সমাজপরিবর্তনের পাথেয় এবং একই সঙ্গে ব্যাবসা সফল।
এতো গেলো সদা নবীন পুরোতনদের কথা। এবার আসা যাক ওখানকার নবীন ফিল্মমেকারদের কথাতে। যেমন ধরা যাক অঞ্জন দত্ত। ফিল্মে একেবারেই নতুন সে, আদতে তিনি একজন গায়ক। পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোড়া করে দেবো ও এরকম অনেক জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। তার এই নতুন আসার ভেতর দিয়েও সে বেশ কিছু ভালো ফিল্ম তৈরী করে বসলেন। এইতো ম্যাডলি বাঙালি ফিল্মটাতে তিনি দেখালেন, একটা প্রজন্মের সাথে আরেকটি প্রজন্মের গ্যাপ,গানের জেনার পরিবর্তন, সমাজ সচেতনতা। আবার অন্যদিকে এই ফিল্মেই তিনি দেখালেন, সেই জার্মান দার্শনিক নীটশের নৈরাশ্যবাদিতার মূর্তায়ন রূপ। মানুষের একাকীত্বও যে তার ভেতর কি পরিমান শক্তি এবং নতুন আশাজাগানিয়া স্বপ্নের বীজ বপন করতে পারে। সাথে সাথে তার এই ফিল্মে যে ভয়ংকর ব্যাপারটা উঠে আসলো, তাহলো যৌথ পরিবারের বন্ধন ও একক পরিবারের মধ্যকার শূণ্যতার দ্বান্দিক ভাবনা। আমাদের গোটা বাঙালি পরিমন্ডলই একসময় গড়ে উঠেছিলো যৌথায়নের ভিত্তিতে। যা ছিল পাশ্চাত্যের ঈর্শার বিষয়। যখন আমরা বিশ্বায়নের প্রভাবে খন্ডাতে খন্ডাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম সব প্রানের বন্ধন থেকে ঠিক তখনই অঞ্জন দত্ত তার এই ফিল্ম দিয়ে মনের কোনে ক্যামন যেন একটা নাড়া দিয়ে গেলো।
এতক্ষন ধরে বলে গেলাম শুধু ওপারের কথা। আমাদেরও বেশ ভালো কজন ফিল্মমেকার আছে। যেমন ধরা যাক নতুনদের মধ্যে তারেক মাসুদ। কিন্তু আর কই? তারেক ভাইতো একটা বিশেষ দিক নিয়ে কাজ করছেন যাকিনা ইতিহাসের অংশ। কিন্তু এই সময়,এই সময়ের ভাবনা,এই সময়ে আমাদের চারপাশের পরিবর্তন এগুলো নিয়ে কে কাজ করছে? আমি দেখিনা। না হবার কারন কি নেই? আছে অবশ্যই আছে। আমাদের মেধা আছে কিন্তু মননের অভাব আছে। আর যে মহান দোষে দুষ্ট আমরা সেটা হলো অল্প পরিশ্রমে ব্যাপকভাবে লাভবান হবার ভাবনা। ছবির হাটে বসে টোকন ঠাকুর বানাতে পারেন ডকুমেন্টরী বা আশরাফ শিশির বানাতে পারেন আমরা একটা ছিনেমা বানাবো। কিন্তু আদতে কি হচ্ছে? এর কোনো কিছুতেই তো আমি আমার আমিকে খুজে পাইনা। আমার জীবন মানে তো হিমু বা মিসির আলীর চরিত্র নয়। আমার জীবন মানে একাবোরেই বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তের জীবন। যারা এখন নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমিতো এভাবে বলিনা ( হ্যালো... দোস্ত। হোয়াট আর ইউ ডুয়িং নাও। বিকেলে ছবিরহাটে আয়, আড্ডা দেয়া যাবে।) আমি বলি( হ্যালো মানিক, কইরে তুই। ভালো আছোস তো?)। নিজের সমাজকে চিনতে না পারলে আর যাই হওয়া যাক না অন্তত ফিল্মমেকার হওয়া যায় না। আবার কিছু আজিয়িয় পন্ডিতদের দেখা যায় ফিল্ম নিয়ে বিশদ বিশদ বই লিখে বই মেলায় ছাপানোর ব্যাপারে। যেমন এবারের বইমেলায় দেখলাম রুদ্র আরিফ নামের এক বেমালা পন্ডিতের এক বই। হ্যা অবশ্যই আমরা বাইরের ফিল্ম দেখবো, তাদের ফিল্ম সম্পর্কে জানবো। কিন্তু আগে কতোটা বাইরের ফিল্ম বা ফিল্মমেকারদের জানা দরকার। আগেতো সত্যজিৎ/ঋত্তিক জানি তারপর নাহয় অন্যান্য।
যাই হোক, অনেক গ্যাজিয়ে ফেললাম।...অন্য একদিন..