somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

24/12/14

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমায় আর কোনো প্রশ্ন করতে বোলো না, কোনও উত্তরও আর আমার লাগবে না। আসলে এখানে আমার এখন স্পষ্ট গৃহযুদ্ধ বেঁধে গেছে, অনিরুদ্ধ আর রামগরুতে।

কাল ওখানে কে গিয়েছিল জানি না। বোধায় রামগরুই হবে, নাহলে এমন আহাম্মকের মত কর্ম আর কার হবে? গিয়েই বাসস্ট্যান্ডটা এলোপাথাড়ি খোঁজা হল।তারপর যুব কম্পিউটারের সামনের গলিতে । কটি ছেলে একটি বাড়ির বারান্দায় বসে চাকরির কি একটা ফর্ম ফিল আপ করছিল।সেখানেও কিছুক্ষন বসা হল। তখন ১১ টা ২৫ কী ৩০ হবে। রামগরু বলল, - চল, একবার উকি দিয়ে আসি। গেলাম। বাইরে ও ভিতরে বেশ কটা সাইকেল, ছেলেদের বেশ কিছু জুতো, এক জোড়া শাদা রঙের মেয়েদেরও। ভাবলাম হয়ত তোমার। থাক, তাহলে আর ভিতরে ঢুকে কী করব? এইতো, এইবার ছুটি হলেই তুমি বেরিয়ে আসবে..

যুব কম্পিউটার টা পেরিয়ে কী একটা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার আছে না? তার সামনে দিয়ে গিয়ে ঘুরপথে আবার বাসস্ট্যান্ডে ঢুকলাম পিছনের মাঠ দিয়ে। খিদে পেয়েছিল। বাস বেরোনোর মুখটাতে এক জায়গায় গরম সিঙ্গারা ভাজা হচ্ছিল। সাইজ বেশ বড়। দাম মাত্র তিন টাকা। দুটো সিঙ্গারা কিনে আবার বাসস্ট্যান্ডের পিছনে এলাম। ওখানে একটা চাপ কল আছে দেখে এসছি। একটা কুকুর ও আমার পিছন পিছন এসে হাজির। এমনিতে আমি কুকুর একদম সহ্য করতে পারি না। ব্যাটারা রাস্তায় হাঁটবে এমন ভাবে যেন রাস্তাটা ওর বাপের সম্পত্তি। একবার বাইক নিয়ে আসছি আর একটা কুকুর হেলতেদুলতে রাস্তা পার হচ্ছে। হর্ন দিয়ে যাচ্ছি ক্রামাগত তবু বেটার কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। আমিও ত্যাঁদড়। পিকাপ বাড়িয়ে দিলাম উপর দিয়ে চালিয়ে। কুকুর টা কেউমেউ করতে করতে ছুটে পালাল। আর আমি বাইক সমেত আছড়ে পড়লাম পিচ রাস্তায়। প্যান্ট ছিঁড়ে গেলো, হাঁটু ছড়ে গেল।আর একবার সাইকেল নিয়ে পড়েছিলাম কুকুরদের দঙ্গলে। তখন আমি পাঠানগ্রামের স্কুলে, সাইকেল নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরছি, ট্রেন ধরতে হবে। একদল কুকুর রাস্তা জুড়ে ঝগড়া করছিল। আমার কোনো দোষ ছিল না, আমি পাশ কাটিয়েই আসছিলাম। কিন্তু তাদের ঝগড়া টা তখন মারামারি কামড়াকামড়ির পর্যায়ে চলে গেছে, সেই অবস্থায় একটা কুকুর এসে পড়ল আমার সাইকেলের উপর আর আমি টাল সামলাতে না পেরে হুরমুরিয়ে পড়লাম ওদের ওপর। ওমনি একটা কুকুর ঘ্যাক করে আমার কাধে দাঁত বসিয়ে দিল।শাদা জামা চুইয়ে রক্ত বেরুতে শুরু করল। আশ পাশের বারি থেকে লোকজন ছুটে এল। একজন মাসিমা আঁশবঁটি গরম করে ছেঁকা দিয়ে দিলেন। কাছেই একজন ডাক্তার বসতেন। তার কাছে নিয়ে গিয়ে টিটেনাস নেওয়া করাল ওনারাই।পরদিন আব্বা গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটে এল।হাঁসপাতালে নিয়ে গিয়ে জোর করে অ্যান্টি র‍্যাবিস নেওয়া করাল।আনোয়ার বাবু বলল সি.এল নিয়ে বাড়িতে রেস্ট নিতে। শেখরদা বলল পারলে গ্রামের লোকেদের যেন বলি কুকুরটার আচরণের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কী দেখতে। কিন্তু তখন কুকুর জাতটা নিয়ে এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে আর সেই ইচ্ছা হয়নি।কুকুরদের প্রতি সেই বিতৃষ্ণা আমার আজও যায়নি।কালকেও এই কুকুরটিকেও খেঁদিয়ে দিচ্ছিলাম। কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল। তোমার ভজুর কথা মনে হতে একটা সিঙ্গারার টুকরো ওর দিকে ছুড়ে দিলাম।তারপর ঘুর পথে আবার যুব কম্পিউটারে সামনে।

তখন বোধায় ১১টা ৪৫। শাদা জুতো জোড়া বোধায় তখনও ছিল। কিন্তু এই রকম এই ভাবে একা অচেনা মুখ নিয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়? তাই পোস্ট অফিসের সামনে চলে এলাম। SBI এর help center এ ঢুকে দেখলাম জেরক্স করানো হয়। কিছু কাগজ জেরক্স করাবো ভাবলাম।সময়টা তো কাটাতে হবে। এখানে আবার প্রচণ্ড ভিড়। প্রচুর account opening এর কাজ চলছে। বাইরে একটা সিমেন্টের বেঞ্চ আছে। সেখানে গিয়ে বসলাম। একজন ভদ্রলোক গুটি গুটি আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তার হাতে একটা ফর্ম। ফিল আপ করবেন। সাথে পেন নেই। আমার পেন টা বার করে দিতে ফর্মটাও ফিল আপ করে দিতে বললেন, উনি চশমা আনতে ভুলে গেছেন।অগত্যা ফর্ম নিয়েই বসলাম। সময়টা তো কাটাতে হবে।

কিচুক্ষন পর খেয়াল করলাম কয়েকটি অল্প বয়েসি ছেলে সাইকেল নিয়ে ফিরছে তোমাদের যুব কম্পিউটারের দিক থেকে। ফোন টা জ্বালিয়ে দেখলাম ১১টা ৫৫ । তাহলে তোমাদের ছুটি হল?এবার তাহলে তুমিও হয়ত হাটতে হাটতে আসবে। আসতে আসতে ত্রস্ত চোখ বোলাবে রাস্তার আনাচে কানাচে, কোথায় ব্যাটা অনিরুদ্ধ?
কিন্তু অনিরুদ্ধ তো আজ আসেনি। বদলে এসেছে এই গরুটা। হয়ত চোখ পড়ল আমার উপর। পড়নের জামাটা কেমন চেনা চেনা না? এই তাহলে অনিরুদ্ধ? তোমার ভুরূ হয়ত কোঁচকাবে। ইস, ছেলেটা কেমন বুরো হয়ে গেছে, গাল গুলো কেমন ফুলো ফুলো, একেই তো মাথার চুল কম, তারপর কেমন ঝোড়ো কাকের মত চেহারা বানিয়েছে দেখেছো?
ধুর, যা ভাবো ভাববে। আমি থোড়ায় এসেছি এখানে মডেলিং করতে? আমি এসেছি তোমাকে একবার দেখতে।আর গল্পের গরুটাকে গাছ থেকে নামিয়ে তোমার সামনে হাজির করে দেখতে সে ব্যাটা তোমার স্বপ্ন পুরন করতে পারবে কি। এখানে তো দেখতে ভালো অথবা খারাপ হওয়া টা , লম্বা অথবা বেটে হওয়াটা, খুব একটা ম্যাটার করে না। আর যদি বল করে, তাহলে একদম তোমার হাতে নিজেকে ছেড়ে দেব, বলব নাও এবার যা পারো করো।

এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফর্মটা ফিল আপ করছিলাম আর লক্ষ্য রাখছিলাম সামনে কোনো উৎসুক অবগুণ্ঠিতা নারী দাড়িয়ে আছে কী অথবা মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে কী। শেষে ফর্মটাও ফিল আপ হয়ে গেল ১২টা ১৫ নাগাদ।তোখনো তোমার দেখা নেই। আমি ভদ্রলোকটিকে সই করবার জায়গা গুলো দেখিয়ে দিয়ে ফোন খুলে দেখে নিলাম তোমার প্রান্ত থেকে কোনো মেসেজ অথবা কোনও খেয়ালি স্ট্যাটাস এলো কি।নাহ, কিস্যু নেই।বাধ্য হয়ে আমিই স্ট্যাটাস দিলাম, “নাহ, বারোটাই বাজল”। তাতেও লাভ হল না। মেসেজ করলাম “koy?” যেন তুমি এখুনি রিপ্লাই করবে ‘খুজে দেখো’ বা ‘বলব না’ গোছের কিছু একটা।কিন্তু না আমার বসে বসে অপেক্ষা করাটায় সার হল। বুঝলুম তুমি চলে গেছ নিশ্চয়। সামনের মেন রোড দিয়ে যাওয়া প্রত্যেক বাসের দিকে চেয়ে রইলাম চাতকের মত।বাসের জানালায় কোনো মুখ ঢাকা মেয়ের সাথে চোখাচোখি হলেই বুঝতে চেষ্টা করি তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে পালাচ্ছ কি না।এইভাবে বসে থাকতে থাকতে বুঝলাম তোমার সাথে আজ আর দেখা হচ্ছে না।
পরাজিত সৈন্যর মত মাথা নিচু করে বাসস্ট্যান্ডর দিকে এগুতে থাকলাম।হটাত কি মনে হতে আবার ফিরে এলাম।চলে এলাম যুব কম্পিউটারের সাম্নে।যদি কোনও কারনে তখনো তুমি সেখানে থেকে থাকো। গত বৃহস্পতিবার যখন এসেছিলাম তখনও ভিতরে ঢুকেছিলাম, তবে অফিসের দিকে নয়, পাস দিয়ে বাড়ির ভিতরে, ফুলের বাগান খুজতে। পরে অবশ্য বুঝেছিলাম গেটের পাশের সামান্য একটা গাছের ফুলই তোমার ফটোগ্রাফির গুনে মস্ত বাগান ওয়ালা কিছুএকটা ভেবে বসেছিলাম।
আজকে আমার লক্ষ্য বাগান নয়, এই বাগানের ফুল গুলিকে যে স্পর্শ করেছিল সে। গেটের কাছে এসে কী করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় হটাত রামগরু এসে আমাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে চলে এল একদম অফিসে। ভিতরে যেতেই কাঁচের পার্টিশন দেওয়া রুম থেকে তোমাদের সেন্টারের চালক ভদ্রলোক , বোধায় আমাদেরি বয়সী হবেন, হেঁসে ভিতরে ডাকলেন, ভর্তি চলছে কী জানতে চাইতেই আমাকে বসিয়ে দিলেন ওনার সামনে। জিজ্জাসা করলেন কোথায় থাকি। আমি ডাহা বলে দিলাম ‘কাটোয়া’। শেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার সংশোধন করে নিলাম
–‘না এই কাঁদরার কাছে’।
-‘কাঁদরার কোথায়?’ হাসি হাসি মুখে উনি ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলেন।
প্রশ্ন শুনেই বুঝেগেলুম এলাকাটা ভদ্রলোকের নখদর্পণে।তাই নির্দিষ্ট কোনও জায়গার নাম না বলে (মনেও আসছিলনা ছাই) কি ভাবে যেন ওকে কনভিন্স করিয়ে ফেললাম যে আমি একজন টিচার, আছি কাঁদরার কাছে এক প্রাইমারি স্কুলে, বাড়ি অনেক দূর, থাকি কাঁদরার কাছে কোনও এক জায়গায়, কম্পিউটারের ক জানি না, স্কুলের রেশাল্ট ফেজাল্ট বানাতে হবে, তাই ওয়ার্ড আর এক্সেলের কাজ শিখতে চাই।ভদ্রলোক বোধায় সরল মনে আমার কথা বিশ্বাস করে নিলেন।তারপর একটা ক্যাটালগ বার করে আমায় গোটা স্কিমটা গড় গড় করে মুখস্থ বলে দিলেন, কোথায় কি খরচ, কন কোর্সের পর কোনটা করলে সুবিধা হবে, আমার যেহেতু স্কুল আছে তাই কোন ফাঁকে ক্লাস করতে পারব ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মুখ চোখে কি ছিল কি জানি। ভদ্রলোক বোধায় ধরেই নিয়েছিলেন আমি ভর্তি হব। একটা অ্যাডমিশন ফর্ম ও দিয়ে বসলেন।নেব কি নেব না ভাবতে ভাবতেই নিয়েই ফেল্লাম। শেষে উনি ফোন নম্বর চাইতে আমার নম্বর বলে দিলাম একটু পালটে।নাম বললাম মুকুল রহমান ।অন্তত এই টুকু সত্যি থাক। ওদিকে বাইরে দেওয়ালের গায়ে একটা অ্যাটেন্ডেস খাতা মত আছে বলে মনে হল। ওখানে কী তোমরা অ্যাটেন্ডেস দাও? খুব দেখে আসার ইচ্ছা হল ওখানে তোমার অ্যাটেন্ডেস আছে কী।কিন্তু ওটা বিশ্রী রকম বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।তাই ওনাদের বিদায় জানিয়ে চলে এলাম।
তোমাদের সেন্টার থেকে বেরিয়ে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। শাক দিয়ে আর কতক্ষণ মাছ ঢেকে রাখতাম? শেষে যদি কোনোরকম ধরা পড়ে যেতাম কী কেলেঙ্কারিটাই না হত।এখন দেখছ তো একটা মেয়েকে শুধু একবার দেখার জন্য কি কাণ্ডটাই না করতে হল? এসব তোমার অনিরুদ্ধের দ্বারা হত? এখন বুঝলে তো কেন রামগরুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম? ব্যাটার বুদ্ধি না থাক, যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সাহস আছে।


যাক, এ যাত্রায় তো পার পেয়ে গেলাম। কিন্তু রামগরু রেগে টং।ও আর কোনও দিন ও মুখো হবে বলে মনে হয় না।
তারপর ভগ্নমনোরথে বাসস্ট্যান্ডে ফিরে এলাম।প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা কাটোয়ার বাস ঢুকল।তাড়াহুড়োর কিছু ছিল না। ধিরে সুস্থে বাসে উঠে অদ্ভুতভাবে একটা জায়গাও পেয়ে গেলাম।
তারপর চুপচাপ চলতে থাকলাম।কোথা থেকে একদল মেয়ে উঠল কলকল করতে করতে। আমার পাশে দাড়িয়ে ওরা অনর্গল বকে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে হেঁসে উঠছে।জানি ওদের ভিড়ে তুমি নেই ,তবু মুখ তুলে দেখলাম, একটি মেয়ে ঈষৎ লজ্জিত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। অন্যদিন হলে ওদের সান্যিধ্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতাম। কিন্তু কাল পারছিলাম না।আমি সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।আজ আর আমার বাইরের কিছুই দেখার নেই, কিছুই চেনার নেই, বিভিন্ন জায়গা গুলোর নাম মুখস্থ করার নেই, কাঁদরা যাওয়ার পথে তুমি কোথায় কিসের ছবি তুলেছিলে তা বোঝবার নেই।আর কী মুশকিল, সাথে একটা হেডফোনও নেই। এই মুডে গান শুনতে কিন্তু ব্যাপক লাগত। আহা, দুঃখই যখন দিয়েছ তখন তা উপভোগ করব না কেন?
প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়েছে ফোন হটাত কেঁপে উঠল। দেখি তুমি আমার ‘koy?’ এর রিপ্লাই পাঠিয়েছ- ‘Pukure’। রামগরু চেঁচিয়ে উঠল- সে তো থাকবেই, আমাকে ডোবানোর জন্য তো তুমি পুকুরেই থাকবে।ওকে কোনরকমে চুপ করিয়ে তোমাকে আবার শুধলাম – ‘jubo computer e aso ni?’। উত্তর পাওয়া গেল না। রামগরু আবার তেড়ে এল, যেন পারলে এখনি বাস থেকে নেমে তোমাকে পুকুরপাড়ে গিয়ে চেপে ধরে। বাস তখন নিরোল পেরুচ্ছে, ও প্রশ্ন করে বসল, ‘tomader bari nirol periye?’ কিচুক্ষন পর তোমার ধীরস্থির শান্ত জবাব এল ‘na’। উত্তরটা কার প্রশ্নের ছিল? আমার না রামগরুর? বোঝা গেল না। যারই হোক তাতে আমারা কেউই প্রসন্ন হতে পারলাম না।


কাটোয়াতে ৩ টের ট্রেন ধরে পৌনে ৫ টায় বাড়ি পৌঁছে গেলাম।ঘরের দরজা বন্ধ করতেই রামগরু রাগে গর্জে উঠল,
-ফের যদি আমাকে ও দিকে নিয়ে গেছিস তো তোর ঠ্যাং আমি খোঁড়া করে দেব।আর বলিহরি ওই মেয়ে আলিসা,তখন বেশ বলল যে মঙ্গলবার আসবে, আর কাল যখন বুঝল যে আজ তুই আসবিই, অমনি হাওয়া।
-তুই কি করে জানলি ও আজ আসে নি, ও তো বলেইছিল যে বারোটার আগেই ও চলে যায়। হয়ত তুই আসার আগেই ও চলে গেছে।
কথা গুলো বলতে বলতে ঢুকল অনিরুদ্ধ।আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। রামগরুকে সামলে রাখা ক্রমশ আমার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। হটাত ক্ষেপে গেলে ও আবার খুব ভয়ংকর। দিকবিদিক ঞ্জান থাকে না, আঁচড়ে কামড়ে তোমাকে শেষ করে দিতে পারে। এখন অনিরুদ্ধই ওকে আটকালে আটকাতে পারবে। আমি ব্যপারটা তাই অনিরুদ্ধের উপর ছেড়ে দিয়ে কী হয় দেখতে থাকলাম
- ফালতু কথা বলিস না, ও আজ আসেই নি। দেখলিনা রিপ্লাই পাঠিয়েছে ‘na’।
- সে হয়ত ওদের বাড়ি নিরোলের কাছে না, সে কথা বলতে চেয়েছে।
- যাই হোক, ও কাজ টা ভালো করল না। আগের দিন রাতে আমি মেসেজ করলাম asi? ঔ তো দিব্যি মেসেজ করল aso। এটাও কী ও বুঝতে পারেনি। কচি খুকি নাকি? তারপর অত রাতে হটাত করে ওর প্রেম পায় কেন? কেন বলে মন জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে তোর সাথে গল্প করবে?
- সে আর তোর মত গরুরা কি বুঝবে?
- হাঁ, যত বুঝনেওয়ালা তো কেবল তুই।যত্ত সব চামচার দল।
- দ্যাখ, একটা কথা স্পষ্ট করে বোঝ, ও কিন্তু কক্ষনই বলে নি যে ও তোর সাথে দেখা করতে চায়।বরং তুইই একরকম গায়ের জোর দেখিয়ে বলেছিস তুই নিজের ইচ্ছায় আসবি। আর এখন ও আসেনি বলে বা এসে তোরসাথে দেখা করেনি বলে সব দোষ ওর? আর আসবি বলে আসলি কবে? তিন মাস পর। একটা কথা বলে কথা রাখতে পারিস না? আবার বড় বড় কথা বলিস? লজ্জা করে না?
- সে তো আমি বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলাম।তখন দুম করে D.O র ডিউটি দিয়ে দেবে পুজোর ছুটিতে কে জানত?
- হাঁ, ব্যাস্ত থাকার অধিকার তো কেবল তোরই। শুনলি তো ওর সুমন ভাই এসেছে । হয়ত সবাই মিলে বাড়িতে একসাথে সময় কাটাচ্ছে। সেখানে তুই তো মামুলি থার্ড পারশন সিঙ্গুলার নাম্বার ।সামান্য কিরানহার আসতে যে তিন মাস সময় লাগিয়ে দেয় সে অত গুরুত্ব আশা করে কী ভাবে?
- আরে বাবা আমি তো আগেই আসতে চেয়েছি। কিন্তু ও কবে কবে আসবে সেটা তো আগে জানতে হবে। প্রশ্ন করলে তো মহারানী একটা উত্তরও ঠিকমত দেন না। এখন রোজ রোজ তো আর ১২০ কিমি রাস্তা উজিয়ে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা সম্ভব নয়। তারপর তো দেখলিই, খগরাগড় কাণ্ড নিয়ে কিরনাহার তখন খবরের কাগজে। তখন ওখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে বা ইতস্তত উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানোটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ ছিল কী? আর নামের শেষে রহমান টা যে কোনো উটকো ঝামালায় ফেলতে পারত। আর আমি বাপ মায়ের এক মাত্র ছেলে। আমার কিছু হলে তাদের কী হাল হবে সে তো বুঝতেই পারছিস?
- তাহলে বাবা, তুমি প্রেমও করবে অথচ বিপদের ঝুকিও নেবে না, অতই সস্তা? বাপ-মায়ের একমাত্র আদরে বাঁদর হওয়া ছেলে হয়েছ বলে কী আলিসার মাথা কিনে নিয়েছ নাকি?
- তুই আলিসার হয়ে সাফাই গাওয়াটা বন্ধ করবি?
- তুই একটা ...
-

এবার দেখলে তো আমার পরিস্থিতিটা? থাক , ওদের আর থামানোর দরকার নেই। ঝগড়া করতে করতে ওরা ক্লান্ত হয়ে আর আপনা থেকেই ঘুমিয়ে পড়বে এক সময়।আপাতত আর কিরনাহার যাচ্ছি না। যে কোনো কারনেই হোক তুমি যখন চাইছই না তখন জোর করে আর কতটা পারা যায়? যাক, ভালোই হল। রামগরু আর অনিরুদ্ধ দুটোই একটু বেশি রকম বার বেরেছিল। এবার ওদের উচিত শিক্ষা হয়েছে।
আর এই ফাঁকে আমি আমার ঘরটা একটু গুছিয়ে নিই। আসলে আমার শাপে বরই হল। মাথার উপর এখন সত্যিই বড় চাপ রয়েছে। এই জানুয়ারিতেই D.EL.ED এর ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। এখন ওগুলির ওয়ার্কশপ চলছে। খাতা লিখিয়ে লিখিয়ে হাত ব্যাথা করে দিয়েছে হতচ্ছাড়ারা। তারপর এইতো সেদিন IGNOU র B.Ed এ ভর্তি হয়ে এলাম। জানুয়ারি থেকে বোধায় তারও ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। আবার NSOU এর M.A সেকন্ড ইয়ারটাও আছে।একগাদা অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে দিয়েছে। জানুয়ারির ১৫ তারিখ না কতোয় জমা নেবে। ও হাঁ, তোমাকে বলায় হয় নি, গত রবিবার M.A এর পার্ট ওয়ানের রেসাল্ট পেয়েছি। ৫৫.৫৩ % মার্ক্স এসেছে। আমি খুব খুশি। এর জন্য একটা বড় মাপের ক্রেডিট তোমারও প্রাপ্য। যেহেতু তোমায় বলে এসেছিলাম ছুটি দাও, পড়ব। তারপর আর না পড়ে পারা যায়? জান লড়িয়ে দিয়েছিলাম ওই এক মাস।নাহ, ধন্যবাদ দেব না, তোমার কাছ থেকে পাওয়া এই উপহার টুকু আমার হকের মনে করে গচ্ছিত রাখলাম।
কিরনাহার যাবো না বলেছি। তার মানে এই নয় যে আমি আবার পালিয়ে যাবো, আমাকে আর খুজে পাবে না।আমি কোথাও যাচ্ছি না। আমি এখনো তোমার স্ট্যাটাসে কোনও কবিতা (অনিরুদ্ধের না হলেও চলবে) অথবা তোমার চোখ দিয়ে দেখা প্রকৃতি কে দেখার জন্য রাত জেগে বসে রইব।একান্তই হাত নিস পিস করলে লাইকও ঠুকে দেব, স্ট্যাটাস পড়ে খুব আহ্লাদ হলে আলটপকা কমেন্টও করতে পারি, আর মাঝে মাঝে হটাত মন আনচান করলে না বলে ঢুকে পড়ব ইনবক্সে। তবে তোমাকে ছোঁয়ার দুঃসাহস দেখিয়ে আর ফালতু বিরক্ত করব না। তাছাড়া অনেক ভেবে দেখলাম তোমার আমার মধ্যে একটা রিলেশন তৈরি হয়ে গেলে একটা ভালো বন্ধুত্বের অপমৃত্যু হত। আর তাছাড়া যাই বলো, একটা খাটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক একটা প্রেমের সম্পর্ক থেকে অনেক সৎ ও সুন্দর।এই গানটা শোনো, ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।


http://28.webmusic.asia/music/bengali/artist/a/anjan_dutta/kolkata_16/(webmusic.in)_Bandhu-Tomar.mp3
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×