somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলে যাওয়া দিন ( ছবি গল্প)

৩০ শে আগস্ট, ২০২১ ভোর ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চল কোথাও বেড়িয়ে আসি- একথা বলে সুমন হাসল। হাসলে সুমনকে সুন্দর দেখায়। বীথি মনে মনে খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করল না।
করোনার মধ্যে কোথায় যাবে? চারিদিকে কত খারাপ খবর পাই- বীথি কিচেনে চলে গেল।
সুমন অনুসরন করল। শোন , আমাদেরতো টিকা দেয়াই আছে? চল চাঁদের দেশে থেকে বেড়িয়ে আসি। ওখানে কেউ নেই- সুমন রহস্য ভরা মুখে তাকিয়ে রইল।

বীথি আসুখে পরেছে এক বছর হল। তার আজকাল কিছু মনে থাকে না। ওর ডিমনেশিয়া হয়েছে। সে সারাদিন বাসায়ই থাকে। আজ সোমবার । সুমন কাজে ব্যস্ত । আসেপাশের হাসপাতালে রোগীদের জন্য কোন সীটই নেই। অথচ সে এর মধ্যে বেড়াতে যেতে চাচ্ছে। আজ কয়েক দিন বাজার হয়নি। ছাদ থেকে কিছু সবজী ও পাশের বাসা থেকে কিছু চাল ডাল ধার করে চলছে। আর কতদিন চলবে সে জানে না। এগুলো ভাবতে ভাল লাগছে না। সে বিছানাতে হেলে ফেসবুকে মন দিল।

সুমনের চাকরী চলে গেছে সে কয়েক মাস হয়েছে। কোথাও আর কেউ কাজ দিচ্ছে না। বীথিকে খবরটি সে পুরোপুরী চেপে গেছে। হ্যাকিংয়ের কাজটি সে শিখেছে এক বন্ধুর কাছ থেকে। সুমন আজকাল সে কাজ করেই চলছে। সাধারনভাবে মনে হতে পারে সে সারাদিন কম্পিউটারে বসে একমনে খবরের কাজ পড়ছে। মানুষ আজকাল অনলাইনে অনেক অর্ডার দিচ্ছে। "ফিসিং" করে প্রচুর "স্কোর" করা যায়। দুসপ্তাহ চেস্টা করে গতকাল রাতে একটি বড় দাও মেরেছে সে। সে জানে এই কাজটি করা ঠিক হচ্ছে না। গতবছর থেকে সব ওলট পালট হয়ে গেল।

একটু পড়ে ওরা বের হয়ে গেল।অগাস্টের গরম পরেছে। তবে তেমন বেশী না। পরিবেশবাদীরা আজকাল আর তেমন কথা বলছে না। আতি গরম, অতি বৃস্টি এগুলো আজকাল সাধারন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। হেইতিতে নাকি একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। রেডিওর খবরটি বন্ধ করে বীথি গাড়ির মিররটি নামিয়ে ঠোটে লিপিস্টিক লাগাতে লাগলো। সুমন বলেছে গাড়িটি সে নাকি ভাড়া করেছে। সে সুমনের সব কথাই বিশ্বাস করে।



দুঘন্টা চালিয়ে ওরা একটি বীচে এসে গেল। সূর্য একরার মেঘের আড়ালে যাচ্ছে, আবার বের হচ্ছে। জানালার কাঁচ নামানো। বীথির একটা অভ্যাস আছে। গাড়িতে উঠলেই ঘুমিয়ে পড়ে। ঢেউয়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ডাকতে ইচ্ছে করছে না। বেচারীকে খুব কাহিল দেখাচ্ছে । এখানটায় মানুষ তেমন নেই। সুমনের খুব চায়ের তৃষ্না পেয়েছে। সে চায়ের খোঁজে গেল।



বীথির ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখে কেউ নেই। সে সুমনকে খুঁজতে সৈকতে চলে গেল। বালিতে পা ডুবে যাচ্ছে, বেশ ভাল লাগছে। ফেনিল জলে বালুর জমিন অদ্ভুদ লাগছে। বীথির চোখে খুশীতে পানি চলে এল। আবার কোথায় যেন একটি শুন্যতাও অনুভব করল। কি যেন একটা কথা মনে এসে আবার হারিয়ে যাচ্ছে। কোথায় যেন এরকম একটি বালুর স্তুপ দেখেছিল। কিন্তু এরপরে আর কিচ্ছু মনে নেই। একথা মনে পড়লেই কোথাও থেকে যেন একটি শুন্যতা চলে আসে। মনে হচ্ছে বালুর স্তুপটি ওর জীবনের কোথাও জড়িয়ে আছে।



দুর থেকে দেখে একটি গাঙ্গ চিলের মত লাগছে বিথীকে। একা একা দাড়িয়ে আছে। অথচ এমন চুপচাপ স্বভাবের ছিল না ও। সারাদিন ব্যস্ত থাকত বাচ্চাদের নিয়ে। সুমন চা হাতে বীথির দিকে হন হন করে হাঁটতে লাগল। ওকে একা রেখে এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। ওরা সারা বিকেল একসাথে বালু চড়ে কাটাল।

আচ্ছা গাঙ্গ চিলের ডাকের সাথে ছোট বাচ্চাদের কন্ঠের কি মিল আছে? -বীথি ভাবছে। দুরে একদল বাচ্চা ছোটোছুটি করছে। সবাই মাস্ক পরা। করোনা আমাদের সবার জীবন কেমন করে দিয়েছে। সমুদ্র পাড়ে এসে, বাচ্চারা একটু নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না। আচ্ছা সুমনের কি হয়েছে। ওর অনেকদিন ধরে মনে হচ্ছে সুমন কিছু একটা বলতে যেয়ে বলছে না। ওর কি কোন সমস্যা? ওর অফিসে কি কিছু হয়েছে? আজ ভাল করে জিজ্ঞাসা করবে ঠিক করে রেখেছে।

সূর্য ডোবার পড়েই ওরা ছোট্ট করে একটু আগুন ধরাল। বাতাসে ঠান্ডা আমেজ। বেশ ভাল লাগছে এখানে বসে থাকতে। বীথির কেন যেন শুধু ছোট বাচ্চাদের কথা মনে আসছে।

সুমন ভাবছে এভাবে কতদিন চলবে। ডিমনেশিয়ার জন্য বীথি সব ভুলে গেছে। এবছর ওদের একটি মহাবিপদ গেছে। ভুলে থাকতে পারাই আসলে ভাল। তাহলে সব ঠিক ঠাক থাকবে।

-আচ্ছা আমাদের বিয়ের কত বছর হল? - সরু চোখে বীথি তাকাল।
-প্রায় ১০ বছর- সুমন ফিরে তাকাল।
-তাহলে আমাদের বাচ্চরা কোথায়? তুমি ভাল করে জান আমার অসুখটা কি।
-আমাদের কোন বেবি নেই, তোমার অসুখটা বেড়েছে। ডাক্তারে কাছে আবার যেতে হবে। - সুমনের গলা কেপে গেল। সে হাসার চেস্টা করল।
অন্ধকারে বুঝা গেল না বীথি কি ভাবছে।
-আচ্ছা তোমার অফিসে কি কোন সমস্যা যাচ্ছে?
-আচ্ছা কি শুরু করলে? সব ঠিকই আছে। কোথাও কোন অসুবিধা নেই। সুমন চুপ করে গেল।
চারদিকে বিরক্তিকর নীরবতা নেমে এল।



সমুদ্রের বাতাস ঠান্ডা এখন। কোথাও হয়তো বৃষ্টি হয়েছে। দূরের মাছ ধরার ঘাটে লাইট জ্বলছে। নিশ্চয়ই জেলেরা মাছের জন্য অপেক্ষা করছে। সারা রাতই মাছ ধরবে ওরা। একটি জাহাজকে দেখা যাচ্ছে দুরে - দিগন্তে । বালুতে ঢেউরা আছড়ে পড়ছে - যেন কি এক গভীর ভালবাসায় জল ডাঙ্গার মেলামেশা। আজ নীল আকাশে একটি চাঁদও উঠেছে। এখন আর মেঘ নেই। এমন রাতে শুধু মন ভাল হওয়ারই কথা। এত সুন্দর রাতে কেউ ভয়ংকর অতীত নিয়ে ভাবতে চায় না। তবু কিছু কিছু অতীত- স্বচ্ছ নীল আকাশে স্মৃতি হয়ে ফিরে আসে। তারা একেবারে চাঁদের মত স্পষ্ট এবং দৃশ্যমান।

পাশের চেয়ারে বীথিকে দেখা যাচ্ছে না। সুমন দ্রুত পায়ে সমুদ্রের দিকে আগাল। ও আর কাউকে হারাতে চায় না।


--------
কিছু ছবি তুলেছিলাম। ভাবলাম ছবি গুলোর সাথে হয়ত একটি গল্প হলেই ভাল হায়। এগল্পের সব চরিত্র ও কাহিনী কাল্পনিক। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:২৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×