আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কত ঘটনাই না ঘটে আর এই সমস্ত ঘটনা কখনো সখনো ছাপ রেখে যায় আলাদা করে। একটা সতন্ত্র ছাপ। কখনো আমরা একটা স্মৃতিকে বিসৃত হওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হই বারেবারে। যেন কেউ তাড়া করে বেড়াচ্ছে সারাটা সময়। ঘটনার ঘনঘটায় কিছুতেই না ভুলতে পারা একটা স্মৃতি খোঁচা দিয়ে যায় প্রতি নিয়ত। সবসময় একটা আতঙ্ক। আতঙ্ক পুনরাবৃত্তির বা সেই দগদগে স্মৃতি বার বার চোখের সামনে ভেসে ওঠার। যদি একই ঘটনা আবারও ঘটে,- এই আতঙ্কটাই সব থেকে বেশি দেখা যায়। এর থেকে মুক্তির পথ খুবই জটিল, অনেকেই এই প্যানিক সমস্যায় ভোগেন। মেডিকেলের ভাষায় এই রকম সমস্যাকে বলা হয় পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডার। এই ধরনের আতঙ্ক অ্যাংসাইটির সুত্রপাত ঘটায়। এমনকি এর থেকে প্যানিক অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি এর থেকে কোনো নিস্তার নেই? কে বলেছে নেই - বাংলায় একটা পুরানো প্রবাদ আছে "ভয়কে করেছি জয়"। কিন্তু ঘটনা হল জ্ঞান দেওয়ার সময় বলতে যতটা না ভালো লাগে নিজের মধ্যে আতঙ্ক বাসা বাঁধলে তখন এই প্রবাদ আদতে তেমন কোনো অ্যান্টিঅ্যাংসাইটিক ড্রাগের ধর্ম পালনই করেনা। তাহলে কি করবেন। আমি বলব নিজের মধ্যে চেপে না রেখে অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দিন গল্পের ছলে বা আড্ডার ছলে কিংবা লিখে ফেলুন খাতায়। যদি এই দাওয়াইও কাজে না আসে কোনো ভালো সাইক্রিয়াটিকের সাথে কনসাল্ট করুন। আতঙ্ক পিছু ছাড়তে না চাইলেও তাকে কিন্তু পিছু ছাড়াতেই হবে কারণ আমি আপনি আমরা সবাই চাই একটা সুস্থ জীবন।
এতখানি পড়ে নিশ্চয় পাঠক ভাবছেন কি হোলোরে বাবা, কালপুরুষ কবিতা ছেড়ে আবার আতঙ্ক ছড়ায় কেন। না না ঘাবড়াবেন না। এবার সরাসরি আসল কথায় আসছি। আসলে আজকে আমি একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। একটা সত্যি ঘটনা যার থেকে আমার মনে দানা বেঁধেছিল একটা আতঙ্ক। আতঙ্ক পুনরাবৃত্তির।
আমার বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথটা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস বরাবর। এই পথেই ঘটেছিলো একটা ঘটনা। খুব বড় না হলেও খুব ছোটখাটোও নয়। বৃষ্টির রাস্তায় দুটো বাসের মধ্যে রেষারেষি আর তারপর যা হয় সোজা গিয়ে ধাক্কা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো কালভার্টের দেওয়ালে। খুব ক্ষতি কারো তেমন হয়নি পড়ে গিয়ে একটু আদটু চোট বড়জোর। একটা দাদুর লেগেছিল পায়ে তাকে ধরাধরি করে নামাতে হয়েছিল। আর আমি, আমিতো দিব্যি ছিলাম, কিছুই হয়নি। কি হয়েছে বুঝলাম পরের দিন যখন বাসটা আবার জোরে চালানো শুরু করল। টের পেলাম মনের মধ্যে দানা বেঁধেছে একটা আতঙ্ক। আতঙ্ক পুনরাবৃত্তির।
এই আতঙ্ক কিন্তু আমি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি তাই এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথেও শেয়ার করলাম। হয়তো আপনারাও নিজেদের পছন্দের কোনো উপায় খুঁজে পাবেন আতঙ্ককে মুক্তি দেওয়ার। আমার দুঃখ রাগ দ্রোহ প্রেম যে পথে মুক্তি পায় আমার মনের আতঙ্ককেও আমি সেই পথেই মুক্তি দিয়েছি - কবিতায়।
আমার সেই কবিতার সাথেই আজকের মতন আতঙ্ককে মুক্তি দিলাম।।
আতঙ্ক
কয়েক পশলা বৃষ্টি পড়েছিলো
ভেজা কংক্রিট;
বাসটা সাইন্স-সিটী ছাড়ালো -
উদ্দাম গতি;
মাঠপুকুর, মেট্রোপলিটন
দুমড়েমুষড়ে মাড়িয়ে গেল।
সহযাত্রীদের উত্কণ্ঠার পারদ -
দাদা আসতে চালাননা করছেনটা কি?
এটা কি রেসকোর্সের মাঠ?
ছেলেটা নিশ্চুপ।
খুব ছোট বেলায় ঠাকুমা
একটা গল্প শোনাতো,-
দেখতে হ্যায় আউর কেয়া হোতা হ্যায়!
আরে কি করছেনটা কি,
দেখে চালান না, আরে...
একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি -
বিকট শব্দ।-
সবাই সামনে ছিটকে ইতস্তত।
কোনো আঘাত বা অঘটন অবশ্যি ঘটেনি,
শুধু একটা ভয়ের ক্ষত -
বাসটা আজকেও খুব জোরে চালাচ্ছে,
আবার ধাক্কা মারবে নাতো?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪