আফ্রো-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার আদায়ের আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং আফ্রো-আমেরিকান মুসলিম রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতা ম্যালকম এক্সের বায়োগ্রাফি নিয়েই মুভির গল্প। জন্মগ্রহণের প্রথমদিকে তাঁর নাম ছিলো ‘ম্যালকম লিট্ল’ এবং ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর ম্যালকম এক্স নামে অধিক পরিচিতি পান। বিভিন্ন সময়ে তিনি আল-হাজ্জ মালিক, আল-শাব্বাজ নামেও পরিচিত ছিলেন। মূলত কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনের প্রধান নেতা এলিজা মুহাম্মদের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি ইসলামি ও কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সাথে নিজেকে যুক্ত করেন।
এলিজা মুহাম্মাদ এবং ম্যালকম এক্স সম্পর্ক কিছু ধারণা থাকায় মুভিতে তাঁদের রিপ্রেজেন্ট ছিলো অনেকটাই সাংঘর্ষিক, তাই মুভি উপভোগের চেয়ে অনেকটাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আর অস্বস্তিতে ভুগেছি। ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ বা ম্যালকম এক্স’এর কার্যক্রম কিছুটা বিতর্কিত উপস্থাপন করা হয়েছে। অবশ্য আমেরিকায় তাঁকে বিতর্কিত ও ইনফ্লুয়েন্সাল ধর্মীয় নেতা হিসেবেই অনেকে এখনও মনে করে থাকেন।
***** স্পয়লার অ্যালার্ট *****
ছোটবেলা থেকেই শৃঙ্খলাবিহীন জীবন-যাপন করতেন ম্যালকম লিটল। একটি মামলায় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় মুসলিমদের সংস্পর্শে এসে ইসলামের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে শিয়া মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ এর সদস্য নির্বাচিত হন। অবশেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের নামের পদবি পরিবর্তন করে রাখেন ‘ম্যালকম এক্স’, এবং এই নামেই অধিক পরিচিত পান। নিজের নিষ্ঠা-আত্মত্যাগ এবং পরিশ্রমে ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ এর অন্যতম প্রভাবশালি নেতা এবং মুখপাত্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্ত দলীয় প্রধান এলিজা মুহাম্মাদের সাথে অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দীর্ঘ বারো বছর জড়িয়ে থেকেও ন্যাশন অব ইসলাম ত্যাগ করেন।
‘ন্যাশন অব ইসলাম’ ত্যাগ করে নিজেই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সুন্নি মুসলিম তরিকায় দীক্ষিত হন। অতঃপর পবিত্র হজ্জ পালন করার জন্য মুসলমানদের অতি পবিত্র স্থান সৌদি আরবের মক্কায় গমন করেন। পবিত্র হজ্জব্রত পালন করে ‘ম্যালকম এক্স’ আফ্রিকা মহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক স্থানে ভ্রমণ করেন। ফলে তাঁর মাঝে বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানুষের মাঝে এতো জাতিভেদ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
অতঃপর আমেরিকায় প্রত্যাবর্তন করে আবারো ধর্মীয় কার্যক্রমে নিজেকে নিযুক্ত করেন। বিভিন্ন ইসলামী দল, মুসলিম মস্ক, ইনকর্পোরেটেড এবং সকল আফ্রো-আমেরিকানদের নিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠন ”অরগানাইজেশন অব আফ্রো-আমেরিকান ইউনিটি” প্রতিষ্ঠা করেন। নেশন অব ইসলাম ত্যাগ করার এক বছর পার হওয়ার আগেই ১৯৬৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে ম্যালকম এক্স জনতার সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। কিন্তু কিছু গুপ্তঘাতক এবং আততায়ী বক্তৃতা মঞ্চেই তাঁকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।
মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ম্যালকম এক্স’ চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন হলিউডের শক্তিমান অভিনেতা ‘ডেনজেল ওয়াশিংটন’ এবং এলিজা মুহাম্মাদ চরিত্রে অভিনয় করেন অ্যাল ফ্রিম্যান জুনিয়র। বিভিন্ন সময়ে তাঁর সমর্থনে উৎসাহ ও সাহস যুগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী ‘ব্যাটি শাবাজ’ এবং এই চরিত্র রূপদান করেন অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেট। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুভিটি দুইটি বিভাগে অস্কার নমিনেশন পায় এবং ১৬টি পুরস্কার অর্জন করে। ডেনজেল ওয়াশিংটনের দুর্দান্ত অভিনয় আপনাকে আঁকড়ে ধরে রাখবে মনিটরের সামনে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০০