somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের কাশ্মীর দেখা -( পর্ব - ২)

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বরফের রাজ্য গুলমার্গ



গুলমার্গ, জম্মু এন্ড কাশ্মীর উপত্যাকার বরমুলা জেলার অন্তর্গত, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ৮ কিঃ মিঃ দূরে। শ্রীনগর থেকে গুলমার্গের দূরত্ব ৫৬ কিঃ মিঃ। পাহাড়ী আঁকা- বাঁকা পথ ধরে গুলমার্গ যেতে সময় লাগে ১.৩০ ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা। সারা বছর বরফ দেখার জন্য গুলমার্গ বিখ্যাত।
৮৮২৫ ফুট উপরে এই হিল স্টেশনে গেলে দ্বিধা সৃষ্টি হবেই, স্থানটি ইন্ডিয়ার গুলমার্গ নাকি সুইজারল্যান্ডের কোনো বরফ ঢাকা শহর। জম্মু ও কাশ্মীরের পীরপাঞ্জাল রেঞ্জে অবস্থিত এই হিল স্টেশনে সারাবছর পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে। গরমের সময়ে যেমন ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানুষ ছুটি কাটাতে আসেন, তেমনই শীতের সময়ে আসেন বরফ দেখতে।  এখানকার মূল আকর্ষণ দু'টি, একটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাবল কার, অন্যটি এশিয়ার চতুর্থ স্কিং অঞ্চল। ক্যাবল কার গন্ডোলার প্রথম ধাপঃ গন্ডোলা টু কুংডুরে, যা প্রায় ১০,০০০ হাজার ফিট উচুতে এবং দ্বিতীয় ধাপঃ কুংডুরে টু আফারওয়াত যা প্রায় ১৩,৭৮০ ফিট উচুতে। যাবার পথে দেখা যাবে শুধু পথটাই। আর চারিপাশ বরফে ঢাকা। শীতের সময়ে নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে গেলে একধাপ উঠলেই বরফ দেখা যায়, আর বাকি সময়ে গেলে দ্বিতীয় ধাপে উঠলে বরফ মেলে। আমি এপ্রিলে গিয়েছি, তাই প্রথম ধাপেই বরফের রাজ্য পেয়েছি। দ্বিতীয় ধাপে যেতে খরচটাও বেশী।

আমরা সকালেই বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু আকাশ মেঘলা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। কিছুদূর না যেতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির শুরু, চারিদিকে ঘোলাটে অন্ধকার । যত এগিয়ে চলেছি আশেপাশে গাছের মাঝে মাঝে বরফের দেখা পাচ্ছিলাম, জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করেছে। এগিয়ে চলেছি আমরা, বরফ বাড়ছে, ঠান্ডা বাড়ছে, বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। ড্রাইভার বললো," আমাদের দেশে আবহাওয়া নিয়ে একটা প্রবাদ আছে, মুম্বাইয়ের ফ্যাশন আর কাশ্মীরের মওসম এর উপর কোন ভরসা নেই।" যে কোন সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। শেষে গুলমার্গের হোটেলে গিয়ে উঠলাম, বৃষ্টিটা তখন ধরে এসেছে। প্রচন্ড ঠান্ডা, রুমে হিটার চলছে, সাহেব বাইরে গেলেন কিভাবে ক্যাবল কার এর ওখানে যাওয়া যায়, আবহাওয়ার মতিগতি কেমন। ফিরে এলেন, মোটামুটি পজেটিভ খবর নিয়ে। ওখানে হেঁটে যেতে হয়, আমাকে হাঁটতে হবে না। আমি ওদের হাতে বানানো স্লেজ এ বসবো। ওরা টেনে নিয়ে যাবে। মন না মানলেও, রাজি হয়ে গেলাম। বেরিয়ে পড়লাম হোটেল থেকে, চারিদিকে মেঘলা অন্ধকার, সাথে কুয়াশাও আছে। কিছুদূর পরে আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হলো এক গাইডের তত্বাবধানে। দোকান থেকে ভাড়া নেয়া হলো হেভিওয়েট ওভারকোট কাম রেইনকোট আর হাঁটু পর্যন্ত লম্বা বুট। বরফে হাঁটতে যেন সমস্যা না হয়।

ওখান থেকেই নেমে পড়লাম ঘন বরফের মাঝে। সাথে আমাদের গাইড, আমরা দু'জন উঠে বসলাম পৃথক দু'টো স্লেজ এ। টেনে নিয়ে চলছে ওরা। ছেলেবেলার কথা মনে পড়ছিলো, দাদাবাড়ী গেলে খেজুরের ডাগর / সুপারির ডাগরে বসতাম, ২/৩ জন কাজিন টেনে নিয়ে যেতো। এখন এই দেড়মন ওজনের ওভারকোটের মাঝে নিজের অস্তিত্ব যেন হারিয়ে ফেলেছি আমি। বুঝলাম তখন, যখন বুঝতে পারলাম আমার পা দু'টোয় ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে। কিছুক্ষণ থেমে আবার চললাম, এভাবেই একসময় পৌঁছে গেলাম। কর্তাবাবু একটু ভয়ে ছিলেন, আমি নেমেই চিল্লাপাল্লা শুরু করবো। কিন্তু, আমি হালকা সুরেই বললাম," ফেরার পথে আমি আর এই জিনিসে উঠবো না! প্রয়োজনে হেঁটেই যাবো।"

আরো খানিকটা হেঁটে গিয়ে ক্যাবল কার-এর লাইনে দাঁড়ালাম আমরা। ক্যাবল কার-এ চড়ে চলেছি উঁচু পাহাড়ে, নিচে শুধু শ্বেতশুভ্র বরফ আর বরফ। মাঝে মাঝে একটা করে পাইন গাছ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মেঘলা আবহাওয়ার কারণে সব কিছুই ঝাপসা। ওপরে পৌঁছে বরফে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে, ফিরে এলাম। রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারটা সেরে নিয়ে, ক্যাবল কার এ আবার ফিরে এলাম। এবার গাইড দয়া করে একটা গাড়ী ম্যানেজ করে দিলো যেটা আমাদের হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। পথে ভাড়া করা পোশাক ফিরিয়ে দিয়ে চলে এলাম হোটেলে। বিকেলে আর কোথাও যাবো না, দিলাম লম্বা ঘুম। রাতের খাবার ওই হোটেলেই। কাশ্মীরীরা প্রচন্ড মশলা দেয় তরকারিতে। তাই আমরা খাবার হিসেবে রুটি-কাবাব, আর ফলমূলেই আছি।

পরদিন সকালে জানালার পর্দা সরাতেই চমৎকার ঝকঝকে একটা দিনের শুরুর দেখা পেলাম। বেশ মোটাতাজা কিছু বানর ঘোরাঘুরি করছে ছাদে, গাছে গাছে। সূর্য্য উঠেছে, কিন্তু পাহাড়ের আড়ালে। একবারে তৈরী হয়ে, বাইরে বেরিয়ে দু' চারটে ছবি তুললাম। আজকের দিনটা দেখে গত কালটার জন্য খুব আফসোস হচ্ছিলো। কেন যে গতকালটা এমন হলো না! সব ভুলে একসময় এগিয়ে চললাম আমরা সামনে দিকে, সেদিনের গন্তব্য পেহেলগাম। --------

★★★★★★★★★★★★★★★★★★




সকালে পর্দা সরাতেই পেলাম ঝকঝকে দিনের শুরু।















সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×