কিছুদিন ধরে আবহাওয়ায় আর্দ্রতার মাত্রা বেশী। এই আবহাওয়ায় প্রচুর Swaeting হয় তার মানে আমরা প্রচুর ঘামি। শরীর থেকে প্রচুর পানি আর লবন বের হয়ে গেলে আমরা সাধারনত স্বাভাবিক আচরন করি না। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক আর গন্য মান্য ব্যাক্তিরা এসি গাড়ীতে চড়েন, এসি বাড়িতে থাকেন, অফিস আদালত ও পার্লামেন্টেও এসির হাওয়া খান। তারা খুব বেশী ঘামেন না তাই অস্বাভাবিক আচরনের কোন কারন-ও নেই যদি না খাইচ্যতের দোষ থাকে, বংশের ধারায় কোন সমস্যা থেকে থাকে !!!
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ওপর আলোচনায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তাদের পাশে থাকবেন বলে পার্লামেন্টে জানিয়েছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী ওসমান পরিবার এখন চরম অসহায় অবস্থায় আছে। দেশের মানুষ, নারায়নগঞ্জবাসী এবং উনি ওই পরিবারের সুযোগ্য, সুন্দরী, অবলা আর উঠতি বয়সের বালিকাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে, যাদের ভরা যৌবন এখন বিভিন্ন প্রশাসন এবং জনসাধারনের লোভের বস্তু এবং যে কোন সময়ে তারা আক্রান্ত, ইভ টিজিং, ধর্ষন অথবা হত্যার শিকার হতে পারেন। তাই তাদের পাশে তিনি স্বয়ং দাড়ানোর ঘোষনা দিয়েছেন। কথিত এই অসহায় আর নিরীহ বালিকারা হচ্ছেন-
১. সেলিম ওসমান (অবধারিতভাবে হবু এম পি)
২. শামীম ওসমান ( বর্তমান এম পি)
৩. নাসিম ওসমান (সদ্য এম পি ছিলেন কিন্তু এখন মরহুম। সকল পাপ-পূন্য আর ভয়-ভীতির উর্ধে। ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউওন)
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, রাজনৈতিকভাবে ‘হেয়’ করা হচ্ছে ওসমান পরিবারকে। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে দাবি করে সে বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান-ও জানান মহান পার্লামেন্টে। পয়েন্ট টু বি নোটেড, "জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান-ও জানান মহান পার্লামেন্টে" কারন তাদের দুশ্চিন্তায় গদিতে দেবীর ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু পার্লামেন্ট সব রাজনীতিবিদের খামাড় সেহেতু সেখান থেকে বললে আম জনতার কানে পৌছানো বিটিভির কল্যানে এখন সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। তাছাড়া বার্তা বাহক অথবা তল্পিবাহক হিসেবে সব মন্ত্রী ও পার্লামেন্টারিয়ানরা তাদের দেবীর হুকুম শুনতেও বাধ্য থাকে। যারা এই মুহুর্তে এর বিরোধীতা করত তারা এই খামাড়ের সদস্যপদ হারিয়েছেন এবং তাদের স্থলাবিসিক্ত হয়েছে স্ত্রৈন গোছের একটা পার্টী যে কিনা ওই বিতর্কিত পরিবারের-ই আরেক সদস্যকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এবং সঙ-সদে যেহেতু দল ও তথাকথিত বিরোধী দল এখন একই কনডমের শুক্রানু সেহেতু সেলিম ওসমান নামক বালিকার এই পার্লামেন্টের কর্নধার হওয়া কিছু সময়ের ব্যাবধান মাত্র।
নারায়নগঞ্জের সেই স্বনামধন্য ওসমান পরিবারের বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য-এ পরিবারটি বারবার আঘাতের শিকার হয়েছে। আইয়ুব-ইয়াহিয়ার শাসনামলে ও মুক্তিযুদ্ধের সময়, পঁচাত্তর পরবর্তীতে এ পরিবারের ওপর আঘাত হয়েছে। যখন যে সরকার এসেছে কখনো না কখনো এ পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “অনেকে থাকে, যারা বারবার আঘাতের লক্ষ্যে পরিণত হয়। অনেকে অনেক অপরাধ করে-তা কেউ দেখে না। কিন্তু, তার থেকে ঘটনাচক্রে কম অপরাধ করেও ঘটনার শিকার হয়। ক্ষেত্র বিশেষে সামান্য কিছু হলে বড় করে লেখা হয়।"
তাহলে মনে প্রশ্ন এসেই যায়, এই পরিবারের মত এত অসহায় আর দ্বীন হীন পরিবার নারায়নগঞ্জে আর নেই। তাদের ওপর খালি অত্যাচার আর অবিচার-ই করা হচ্ছে। ন্যায় বিচারের জন্য এই তিন কন্যার পরিবার ঢুকরে ঢুকরে কেদেছে। আহাঃরে কি কষ্ট কি দুঃখ!!! প্রধানমন্ত্রীর এই মায়া আর মমতা ওই সাত খুনের ব্যাপারে অন্য কোন ইঙ্গিত দেয় কিনা সে ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে আঁদার ব্যপারীর জাহাজের খবর নেয়ার মত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই বাদ-ই দিলাম। কিন্তু প্রশ্ন এসেই যায়, কি তাদের মহা রহস্য আর কি তাদের বৈশিষ্ট যে কারনে তাদের ওপর আঘাতের ওপর আঘাত এসেছে? কেন তারা আলাদা অন্যদের চেয়ে? কি চায় খারাপ মানুষগুলো তাদের কাছে? নাকি এই বালিকাদের ভরা যৌবন-ই ছিল ছোটলোক নারায়নগঞ্জবাসীর লোভের আর হিংসার আতুর ঘর !!!?
এবার আসি ব্যাক্তিগত পরিচিতি আর পারিবারিক সহমর্মিতা কিভাবে দেশের আইনের শাসন আর সুশীল বোদ্ধাদের চোখ কানা করে দেবীর পুজায় নিজেকে লুটিয়ে দিতে পারে তার সমীকরনে। নারায়নগঞ্জ-এর প্রখ্যাত পরিবার শামীম ওসমানের বাবা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একেএম শামসুজ্জোহা বাংলাদেশের প্রথম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। ৭৫-এ শেখ মুজিব পরিবারের প্রতি শামসুজ্জোহার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যখন অসহায় অবস্থায়, আমরা যখন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিই। ৭৮ সালে জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে জোহা কাকা কাকীকে আর পরিবারের সদস্যকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন। অল্প যে কয়েকজন আমাদের খবর নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জোহা কাকা একজন।”
শামসুজ্জোহার ৭১-এর স্মৃতি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে চলে এসেছিলেন ১৮ নম্বরের ওই বাড়িতে, যে বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল। জোহা কাকাসহ কয়েকজন ১৮ নম্বর রোডে যান। বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। জোহা কাকা গুলিতে আহত হন।”
এখন ব্যাপার হচ্ছে আযাযীল একসময় ফেরেস্তা ছিল। পরে তার কান্ড কীর্তি আর অবাধ্যতার কারনে তাকে ইবলিশ করা হল। এক সময় ফেরেস্তা ছিল বলে ইবলিশ হওয়ার পরো ফেরেশ্তা সুরূপ কাজ করা কি সে চালিয়ে গেছে? নাকি ইবলিশ ইবলিশের মতই আচরন করছে? আর ইবলিশের শাস্তি কি হওয়া উচিৎ না? নাকি সে একসময় ফেরেস্তা ছিল দেখে তার সব খুন মাফ হয়ে যাবে আর দেবী তাকে আশীর্বাদে পুষ্ট করবে? এটাই কি নিয়ম হওয়া উচিত? এটাই কি কাম্য একটা দেশের প্রধানের কাছ থেকে? স্বজ্ঞানে উনি আশ্রয় প্রস্রয় দিয়ে যাচ্ছেন বিতর্কিত এক বিভিষীকাকে। ওই পরিবার অথবা ঐ পরিবারের নির্দিষ্ট কেউ বিভীষিকাময় কিনা সেটা অবশ্যই তথ্যনির্ভর কিন্তু যেহেতু দেশের ৯৫ ভাগ লোক ভাবছে বিভীষিকাময়, সেহেতু আরেকটু মার্জিত ভাবে ওকালতি করলে জনগন ব্যাপারটা সমীহের সাথে নিত বলেই ধারনা করা যায়।
দেশের প্রধান হয়ে বসে থাকা এই দেবীর আশীর্বাদের টাইমিং আবার কড়া। সে সময়মত আর জায়গামত তার ওকালতি করতে পিছপা হলেন না। তিনি যদি এইরকম টাইমিং আর সহমর্মিতা আগে থেকেই দেখাতেন-
১. সাগর রুনীর ক্ষেত্রে, তাদের মৃত্যুর পূর্বে তাদের প্রতি,
২. নারায়নগঞ্জের সাত গুম ও খুনের ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর পূর্বে তাদের পরিবারের প্রতি,
৩. ফেনীর আর লক্ষীপুরের দুর্ধর্ষ হত্যাকান্ডে তাদের হত্যাকান্ডের পূর্বে,
৪. রানা প্লাজায় আর তাজরিনে অপঘাত ঘটার আগে,
৫. গুম হওয়া শত শত পরিবারের সদস্যদের প্রতি,
৬. বর্ডার কিলিং-এর আগে, ভিকটিমদের প্রতি.........
তাহলে এতগুলো ঘটনা ঘটত না। ওই ওসমান পরিবারের প্রতি সহমর্মিতায় উথলে উঠা এই দেবীর কোন গুরু দ্বায়িত্বের মধ্যে পরে কি? অথচ উপরোক্ত ঘটনা গুলোতে যারা বলি হয়েছেন তাদের বলি না হওয়াটা ছিল অধিকতর গুরুত্বপূর্ন। সাধারন মানুষ হিসেবে তাদের সহমর্মিতা প্রাপ্তির অধিকার থেকেই যায় অথচ তারা না পেয়ে পাচ্ছে ওসমান পরিবার !!!? সত্যিই স্যালুকাস, কি বিচিত্র আমরা আর কি বিচিত্র আমাদের দেশের মাথা আর মুন্ডুরা ??? !!!!!
সাধারন একজন মানুষের দৃষ্টিকোন থেকে যদি বলি, যে মানুষ কোন দেব দেবীর তোয়াক্বা করে না, শুধু মাত্র শান্তিতে থাকতে চায়, তাহলে তার পরিভাষায় এটা কি বলা যায় না যে, "তোমারে আর তোমার পরিবাররে একসময় হেল্প করছে তো আমার বাপের কি? প্রাপ্তির খাতায় তোমার নাম নইলে তোমার বাপের নাম আসছে আর দেশ স্বাধীনতার জায়গির তোমার একার না যে দেশটারে ছিড়া খুইড়া খাবা। আমার বাপ চাচা ভাই পাড়া প্রতিবেশী আর দেশের সাধারন মানুষ যে পোন মারা খাচ্ছে সেটা কি তোমার চোখে পরে না? নাকি কানের লাহান চোখ-ও গেছে?"
যেই পরিবারের জন্য এত মায়া মমতা তাদের বৈশিষ্ট, সংস্কার আর আগ্রাসনের কথা নাই বললাম, বলার প্রয়োজন-ও নেই। রাস্তার মানুষ থেকে শুরু করে কুকুর বিড়াল-ও জানে ওই পরিবারের কীর্তি। কিন্তু এখন এক দেবী আর তার দু চারটা চেলা ছাড়া সব্বাই একদম সব্বাই নিরীহ ছাগলের মত আচরন করবে কারন ওই পরিবার দেবীর আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে নবুয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছে। আইন আদালত, থানা পুলিশ, দুদক অনেক খুজেও ওই বালিকা অথবা বালিকাদের অথবা বালিকা পরিবারের কোন দোষ এখন আর উদঘাটন করতে পারবে না। দেবীর বানী পৌছে গেছে এখন দুয়ারে দুয়ারে। খামাড়ের ভেতরে আর বাইরে কোন ছাগলের-ই আর কিছু করার নেই। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া।
তথ্য সূত্রঃ
৩রা জুন, বিডিনিউওজ২৪.কম