somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক যে ছিল নিক | The Cat of Kanak

০৮ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
আমি কনক, পরিচয় হিসেবে বলতে পারেন, আমি একজন বিড়াল প্রেমী। শুধু যে বিড়াল ভালোবাসি তা কিন্তু নয়, যে কোন জীব জন্তুই আমার অনেক ভালো লাগে, তবে আজকে আমি আপনাদের বলবো একটা গল্প… একটা সত্যিকারের গল্প, যে গল্পটা একটি বিড়ালের … আমার বিড়াল নিকের।

পরে পড়তে চাইলে লেখাটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারেনঃ এখান থেকে (গুগল ড্রাইভ লিংক)

ছোট বেলাতে একটা কুকুর পুষেছিলাম তার নাম টাইগার, কিন্তু সেটা পরবর্তিতে কোন ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। একবার ৮ মাস ধরে একটা ছাগল পুষেছিলাম, নাম দিয়েছিলাম পুটু, কিন্তু ৮ মাস পরে তাকে কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম, সেই ঈদটা আমার কাঁদতে কাঁদতেই পার হয়েছিল। তারপরেও মাঝে মাঝে বাসাতে কোরবানির জন্য ছাগল নিয়ে আসা হতো তবে সেদিকে আমি নজর দিতাম না, যাতে কোন ভাবেই তাদের উপরে মায়া পড়ে না যায়। এভাবেই কেটে গেল অনেক বছর।

মূল ঘটনার শুরু আজ থেকে ৬ মাস আগে… হঠাৎ আমার একটি বিড়াল পালনের ইচ্ছা জাগে।
বিভিন্ন ভাবে একটি বিড়ালের বাচ্চা সংগ্রহের চেষ্টা করছিলাম। কারণ আমি জানতাম যে বিড়াল পোষা জায়েজ হলেও কেনা বেচা করাটা আমাদের ধর্ম ইসলাম সমর্থন করে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই চাচ্ছিলাম না কিনে যেন একটা বিড়াল সংগ্রহ করতে পারি। এর জন্য কয়েকজন কে বলেছিলাম আমার জন্য যেন একটা বিড়ালের বাচ্চা সংগ্রহ করে দেয়, আমার মামাদের বাসা গ্রামে, সেখানে বিড়ালের অভাব নেই, ছোট ছোট বাচ্চা বিড়াল চোখের সামনে ঘুরে বেড়াতে দেখে আমি মামীকে বললাম, আমার একটা বিড়ালের বাচ্চা লাগবে, মামী বললো এটা তো কোন ব্যপারই না, বললো কাল বা পরশু দিন এসে নিয়ে যেতে। কাল গেল, পরশুদিন গেল কিন্তু আমার বিড়াল আর পেলাম না। পরে মামী ফোন দিয়ে বললো অনেক দৌড়াদৌড়ি করেও একটা বিড়ালের বাচ্চা ধরতে পারেননি তিনি, বিড়ালের বাচ্চা গুলো নাকি বড় হয়ে গেছে, পায়ে অনেক দৌড়। কয়েক মাস পরে আবার বাচ্চা হবে, তখন তিনি আমাকে একটা বাচ্চা ধরে নিয়ে এসে দেবেন। কিন্তু সে তো অনেক দেরী, কবে হবে সেটার কোন ঠিক নেই। এদিকে উপায় না দেখে আমার এক বন্ধু কে বললাম, দোস্ত আমার বিড়ালের বাচ্চা লাগবেই, তার বাসাও গ্রামের মধ্যে ছিল। সে বললো, আমার বাসাতেই তো একটা বাচ্চা বিড়াল এসে সারা দিন বসে থাকে, কালকেই আমি তোকে নিয়ে এসে দেবো। তারপরে কি ভাবে সেটা ধরবে সেই প্ল্যান করতে করতে সে চলে গেল। যাক, তার মানে আমি একটা বিড়াল কালকে পাচ্ছি তাহলে…

পরদিন সকালে বন্ধুর ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙলো, ফোনের মধ্যেই সে অনেক হাপিয়ে হাপিয়ে কথা বলছে, মনে হলো অনেকক্ষণ যাবত সে দৌড়িয়েছে।
- দোস্ত, অনেক চেষ্টা করলাম, শালার বিড়াল, খুবই পাজী, ধরায় যায় না, সেই সকাল থেকে আমার এলাকার ছেলেদের নিয়ে একটা বিড়ালের পিছনে ধাওয়া করছি, কিছুতেই ধরতে পারলাম না দোস্ত। মনে হয় তোকে আর বিড়াল দিতে পারবো না।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে আবার হাপানো শুরু করলো সে। ফোনটা রেখে দিয়ে আমি বুঝতে পারলাম, এতো সহজে বিড়াল তো আমি পাবো না। তাহলে কি করা যায়?

আমার বাসা বাংলাদেশের সব চেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরে। কিন্তু পড়াশোনার জন্য আমাকে মাসের বেশ খানিকটা সময় ঢাকাতে থাকতে হয় আর বাকী সময়টা ব্যবসার জন্য মেহেরপুরেও থাকা লাগে। এর জন্য মাসে বেশ কয়েকবার আমি ঢাকাতে আসা যাওয়া করি।

কয়েক দিন পরেই যখন ঢাকা চলে আসলাম ঠিক করলাম এবার একটা বিড়াল কিনবো। কারন কেনা ছাড়া আমার সামনে তো আর কোন উপায় নেই। আর আমি তো ফেসবুকে কোন ক্যাট গ্রুপের সদস্যও ছিলাম না, যেখানে প্রতিদিন কতোশত বিড়াল বিনামূল্যে অ্যাডপশনে দেওয়া হয়। এমনকি জানতামও না এমন কোন ফেসবুক গ্রুপ বাংলাদেশে আছে।

সপ্তাহ খানেক পরে, ঢাকাতে কাজ প্রায় শেষের দিকে, বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ত ফিরে যাবো মেহেরপুর। অগ্যতা দেরী না করে একদিন চলে গেলাম কাটাবন মার্কেটে। ঢাকা শহরের পশুপাখি ক্রয় বিক্রয়ের অন্যতম মার্কেট কাটাবন যেটা আমরা সবাই জানি। সেখানে গিয়ে আমি সারাটা মার্কেট কয়েকবার ঘুরলাম, শুধু একটি বিড়াল কেনার জন্য কিন্তু সহজে সেভাবে কোন বিড়াল পছন্দ করতেই পারলাম না। কারণ বিড়াল পছন্দের ক্ষেত্রে গায়ের রং, বয়স থেকে শুরু করে বিড়ালের জাত বিভিন্ন কিছু পছন্দ না হওয়ার কারনে সেদিন আমি ফিরে এলাম।

পরবর্তিতে দুই দিন পরে যেদিন রাত্রে আমার বাসাতে ফেরার গাড়ি, সেদিন বিকালেই আমি আবার কাটাবনে গেলাম। গিয়ে আমার প্রথমেই একটা দোকানে দুইটা মিক্স ব্রিড বাচ্চা বিড়াল চোখে পড়লো। তার পরে একে একে সব দোকান আবার ঘুরে দেখলাম, কিন্তু না, প্রথম দোকানের ঐ বিড়ালটিই আমার কাছে যেন বেশী সুন্দর মনে হচ্ছিল। আবার সেই দোকানেই ফিরে এলাম, নিষ্পাপ চেহারার ছোট ছোট দুইটি একই রংয়ের বিড়াল, দোকানী বয়স বললো ২ মাস, দুটিই ছেলে বিড়াল। ঐ দুটোর মধ্যে যেটা বেশী সুন্দর ছিল, সেই বিড়ালটা নিয়ে নিলাম। দোকানী সাথে করে ৩০০ টাকা দামের এক প্যাকেট বিড়ালের খাবার ধরিয়ে দিয়ে বললো, এটা খাওয়াবেন। ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের খাঁচাও কিনলাম, কারণ অনেকটা পথ নিয়ে যেতে হবে, খাঁচা তো লাগবেই। দোকানীকে সব কিছুর মূল্য পরিশোধ করে খুশী মনে বাচ্চা বিড়ালটাকে নিয়ে চলে এলাম কাটাবন থেকে। এটুকুতো আমি বলতেই পারি যে, বিড়ালটি ছিল কাটাবনের সেদিনের সব চেয়ে সুন্দর বিড়াল। কারণ তার চেহারার মধ্যে এক রকমের মায়া আছে, দেখেই ভালো লাগছিল।

সেদিন রাতেই বাসে করে ছোট্ট সেই খাঁচার মধ্যে সুন্দর একটি ছোট্ট বিড়াল ছানা নিয়ে আমি রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভয় পেয়ে সেদিন সারা রাত বাসের মধ্যে মিউ মিউ আওয়াজ করছে সে, আর আমি বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছি তাকে ভুলিয়ে রাখার, যেন কোন রকম কান্না না করে। কিন্তু কিসের কি? সে তার সব শক্তি দিয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিচ্ছে। হয়ত বিড়ালের ভাষায় বলছে বলে আসে পাশের কেউ বুঝতে পারছে না, তারপরেও আশেপাশের আসন গুলোর মানুষ জন কেমন যেন আড় চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। পিছনের আসনের কয়েকজন তো রীতিমত চমকে উঠেছে, বাসে বিড়াল ঢুকলো কোথা দিয়ে? কখন থেকে যেন একটা বিড়াল মিউ মিউ করে ডেকে চলেছে। ‍ুকিন্তু বুঝে উঠতে পারছে আসলে বিড়ালটা কোথায়, আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে আছি বাসের সব চেয়ে সামনের আসনে। তিন-চার ঘন্টা জ্যাম পার করে গাড়ি যখন ফেরীতে উঠলো, মাঝ নদীতে খাঁচাটা নিয়ে নিচে নামলাম, বিড়ালটাকে বের করে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু না , কিছুতেই কিছু খাচ্ছে না। অনেক ভয়ে আছে, আশে পাশে অনেক মানুষ… বিড়ালটা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে, আর মানুষ গুলো আমার দিকে। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে বিড়ালটাকে আবার খাঁচায় ঢুকিয়ে বাসে উঠে বসলাম।



২.

পুরো বারো ঘন্টার ভ্রমন শেষ করে সকাল দশটার দিকে গিয়ে বাসায় পৌছালাম। গেট খুলে মা দেখলো আমার হাতে একটা ছোট খাঁচা, আর তার ভিতরে একটা ছোট বিড়াল ছানা। বিড়াল দেখে অবশ্য খুব বেশী অবাক হয়নি, কারণ জানে আমার যেটা করতে মন চায় আমি তাই করি। অগ্যতা কথা না বাড়িয়ে আমাকে খেতে দিল। বিড়ালটিও অনেক কষ্টের পরে ছোট্ট ঐ খাঁচার মধ্যে থেকে ছাড়া পেয়ে মহা খুশী। সে সারা বাড়ি দৌড়াদৌড়ি আর খেলা করা শুরু করলো। আমি শুধু দেখছি সে কি করছে। কোন নতুন যায়গাতে গিয়ে পরিবেশটা মানিয়ে নিতে তো কিছু সময় লাগে, কিন্তু বিড়ালটির এমন আচরণ যেন সে এ বাড়িরই একজন। তার কোন সময়ই লাগলো না মানিয়ে নিতে।

প্রথম দিনই ওকে রাখার জন্য একটা বড় খাঁচা কিনে নিয়ে এলাম। কারণ রাতে তাকে খাঁচায় রাখতে হবে। আবার আমি যখন বাসাতে থাকবো না, তখনও তাকে খাঁচায় ভরে রাখতে হবে। সারা দিন বাইরে খেলা ধুলা করে রাতে খাঁচাতে ঢুকানোর পরেই শুরু হলো তার মিউ মিউ ডাক। কিছুতেই সে খাঁচাতে থাকবে না। কিন্তু কি করার, বাইরেও ছেড়ে রাখারও সাহস পেলাম না, যদি হারিয়ে যায় এই ভেবে। কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরে যখন দেখলো কোন লাভ হচ্ছে না, চুপ করে গিয়ে খাঁচার এক কোনায় গিয়ে বসে ঘুমিয়ে গেল। ঢাকা থেকে যে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে এসেছিলাম সেখান থেকে কিছু খাবার তাকে খাঁচার মধ্যে দিয়ে রাখলাম, রাতে যদি ক্ষুধা পায় তখন খাবে।

খাওয়া দাওয়া খুবই অল্প পরিমানে করছিল সে, ভাবলাম বিড়াল তো দুধ খায়, তাকে দুধ খাওয়ালে কেমন হবে? যেই ভাবা সেই কাজ, দিলাম বাটি ভরে এক বাটি গরুর দুধ। খুব মজা করে খেয়েও নিলো অনেকটা। আর তারপরে শুরু হলো তার লুজ-মোশন, মানে ডাইরিয়া। আমিও আমার ভুলটা বুঝতে পারলাম। বাংলা সাহিত্যে- গল্পে- কবিতায় বিড়াল যে দুধ খায় সেটা খুব সুন্দর ভাবে বলা আছে কিন্তু বিড়াল যে দুধ খেয়ে হজম করতে পারে না সেটা তো কোথাও লেখা নেই।

ঘর-বাড়ি, বিছানাপত্র সব ভরিয়ে ফেললো আমার বিড়াল। আর আমার দিন রাত গেল শুধু সেগুলো পরিষ্কার করতে করতে। মাফ চেয়ে নিলাম আর জীবনেও বিড়ালকে দুধ খাওয়াবো না। সেই ডাইরিয়া তার সারলো পুরো সাত দিন পরে। আর এই সাত দিনে আমাকে যে কতোবার বিছানার চাদর আর কাথা পরিষ্কার করতে হলো সেটার কথা নাই বা বললাম।

আমার বিড়ালের তো একটা নাম রাখতে হবে। কতো দিন আর বিড়াল বিড়াল করে ডাকবো?
তার নাম দিলাম নিক (Nick) - নামটা দিয়েছিলাম আমার সাথে মিল করে, আমার নাম কনক আর তার নাম নিক, অবশ্য শুধু আমার নামের সাথে মিল করেই যে দিয়েছি সেটা বললে ভুল হবে, বিখ্যাত অ্যানিমেশন মুভি Zootopia যারা দেখেছেন তাদের অবশ্যই সেই শেয়ালটার কথা মনে আছে, যার নাম ছিল Nick Wilde, আমার অন্যতম পছন্দের একটি ক্যারেক্টার। এটাও একটা কারণ আমার বিড়ালের Nick নামের পিছনে। কিন্তু কিসের নিক? আমার বাবা তাকে ডাকা শুরু করলো মিনি বলে, আর ওদিকে মা ডাকা শুরু করলো বিলি বলে। তার মানে তার অনেক গুলো নাম।



৩.

আমার নিক কে প্রথম দিকে সেভাবে কেউ পাত্তা না দিলেও ধীরে ধীরে আমার বাবা-মায়ের মন জয় করে নিলো আমার সেই ছোট্ট বিড়াল নিক। বিড়ালটিকে আমার বাড়ির সবাই খুব স্নেহ করতো। খুব ভালোবাসতে শুরু করলো। বাসাতে কোন ছোট বাচ্চা কাচ্চা নেই, এই সুযোগে বিড়ালটি সবার কাছে হয়ে উঠলো চোখের মনি। সে যেহেতু কেনা খাবার ছাড়া আর কিছুই খেতে চায়না না তাই সবাই তাকে ক্যাটফুডই খাওয়াতো। আমি ঢাকা থেকে অনেক গুলো করে প্যাকেট খাবার চালডাল ডট কম থেকে অনলাইনে কিনতাম আর সেগুলো বাসাতে নিয়ে যেতাম, বোতলে ভরে রেখে দিতাম। আর আমার বাবা মা সেগুলো আমার রুমে থেকে নিয়ে গিয়ে তাদের রুমে রেখে দিত, একটা বাবার কাছে, একটা মায়ের কাছে। আর সুযোগ পেলেই নিককে ডেকে ডেকে প্রতিবেলায় দুইজন দুইবার করে খাওয়ানো শুরু করলো। এভাবে ভালোই দিন কাটতে লাগলো আমাদের।

কয়েক দিন পরে শুরু হলো একটা বিশাল কনফিউশনের ব্যপার… একদিন সকালে মা আমাকে ডেকে বললো, বিড়াল টা তো ছেলে না, এটা তো মেয়ে বিড়াল। - বলো কি? - হ্যা, আমি আর তোমার বাবা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখেছি এটা তো মেয়ে বিড়াল। কয়েক মাস পরে বাচ্চা দিয়ে বাড়ি ভরিয়ে ফেলবে। আমি তো মানতে চাইলাম না। আমি জানি এটা তো ছেলে বিড়াল, কিন্তু তাদের কথা শুনে আমার মনেও সন্দেহ শুরু হলো, তার মানে এটা কি সত্যি সত্যি মেয়ে বিড়াল? নিক কি তাহলে একটা মেয়ে? আমি মেনেই নিলাম, এটা একটা মেয়ে বিড়াল। ছোট বাচ্চা বিড়াল ছেলে না মেয়ে সেটার তেমন কোন পার্থক্য থাকে না। আর আমার যেহেতু এই বিষয়ে তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না তাই আমি ২য় কোন কথা বলিনি। তারা আমার নিক কে এতোদিন আমার ছেলে ছেলে করতো, হঠাত করে তাকে আমার মেয়ে বানিয়ে দিল। সান থেকে সরাসরি ডটার। আমিও খুশী মনেই মেনে নিলাম। কারণ আমি প্রথম দিকে মেয়ে বিড়াল সংগ্রহ করার চেষ্টায় করেছিলাম। কিন্তু কাটাবন থেকে যখন নিক কে নিয়ে এসেছিলাম তখন তারা ছেলে বলেই চালিয়ে দিয়েছিল। তার মানে তারা মিথ্যা কথা বলেছিল? হতে পারে। তবে আমার কাছে ছেলে বিড়াল বা মেয়ে বিড়াল কোন পার্থক্য ছিল না। আমি যেমন আগে নিক কে ভালোবাসতাম, মেয়ে বিড়াল বোঝার পরেও আমার ভালোবাসা কমেনি, বরং আরো বেড়ে গেছে। কিন্তু তাকে আমি আর নিক বলে ডাকতাম না, কারণ নিক ছিল ছেলেদের নাম। আমার বিড়াল যেহেতু মেয়ে তার মানে তার নাম পাল্টাতে হবে। কিন্তু কি নাম দেবো? যেহেতু এক এক জন এক এক নামে আমার বিড়ালকে ডাকতো তাই অত কিছু না ভেবে আর কোন নাম দিলাম না। আমার মা তাকে বিলি বলে, বাবা বলে মিনি, আমার যখন যে নামে ডাকতে ইচ্ছা করে আমি তাই ডাকি। এতে আমার বিড়ালের অবশ্য কিছুই আসে যায় না, সে দিব্যি বহাল তব্যিয়াতেই আছে।

আমার বিড়ালের বয়স প্রায় ৪ মাস হয়ে গেল। ও অনেক টা বড় হয়ে গেছে। আসে সেই ছোট্ট যে বিড়ালটা নিয়ে এসেছিলাম সেইটুকু আর নেই। আমি ওকে রেখে যখন ঢাকাতে আসি, দুই সপ্তাহ পরে ফিরে গিয়ে দেখি সে অনেক বড় হয়ে গেছে, ওর বড় হওয়াটা আমি তাই প্রতিবার বুঝতে পারি। মাস খানিক পরে হঠাত একদিন সকালে তার ভাবখানা দেখে আমার মনে খটকা লাগলো, মনে হলো, এটা তো মেয়ে না, এটা একটা ছেলে বিড়াল, এটা মেয়ে বিড়াল হতেই পারে না। আমি এবার ইন্টারনেট ঘেঁটে সব তথ্য যোগাড় করলাম এবং আমি শিওর হলাম, আমার বিড়াল মেয়ে বিড়াল না, নিক আসলে ছেলে। আমি তখন এই কথা গিয়ে মাকে বললাম। আমাদের বিড়ালটা মেয়ে না এটা একটা ছেলে বিড়াল। তিনি তো শুনে হেসেই উড়িয়ে দিলো। আর আমাকে বললো আমি যেন এই কথা আমার বাবাকে না বলি। না হলে আমার বাবাও হাসবে। আমাকে আরো শুনতে হলো আমি এতোবড় ছেলে হয়েও বিড়াল মেয়ে না ছেলে সেটা চিনিনা। সত্যিই লজ্জার একটা বিষয়। আমাকে বলতে মানা করে মা নিজেই আমার বাবাকে গিয়ে গল্প করেছে, এই কথা শুনে আমার বাবা বললো, দুনিয়া উল্টে গেলেও এটা একটা মেয়ে বিড়াল, এটা ছেলে বিড়াল নয়। পরদিন আমি মাকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না যে নিক একটা ছেলে বিড়াল, ঘটনা সুবিধার না ভেবে আমি পরে আর কোন কথা বললাম না, বললাম ঠিক আছে আর একটু বড় হোক তারপরেই বুঝতে পারবে।

মাঝখানে কিছুদিন পরে আমি আবার ঢাকাতে চলে আসলাম, তার সপ্তাহ দুয়েক পর যখন আবার বাসাতে ফিরলাম, সেদিন মা ডেকে আস্তে করে বললো, আসলে আমাদেরই চিনতে ভুল হয়েছে, বিলি আসলে মেয়ে না, ছেলে বিড়ালই। এ কথা শুনে আমি আর কি বলবো, তারা নিজেরাই ভুল স্বীকার করে নিলো। আর আমিতো সেই এক মাস আগে থেকেই জানি যে নিক ছেলে। আমি আর তেমন কিছুই বললাম না। কিন্তু খুশী হলাম যে তারা শেষ অবধি বুঝতে তো পারলো, এতোদিন আমার ছেলে বিড়ালকে মেয়ে বানিয়ে রেখেছিল। তবে এতে নিকের কিছুই এসে যেত না, তাকে একবার ছেলে, তারপরে মেয়ে এবং শেষে আবার ছেলে হিসেবে ভাবা হলেও তার কাজ ছিল খাওয়া আর ঘুমানো। সে ছেলে না মেয়ে তাতে তার কোন আগ্রহ ছিল না। আমার বাবা ধীরে ধীরে আমার বিড়ালকে নিজের বিড়াল মনে করে পালন শুরু করলো।



৪.

বারান্দাতে একটা ডবল সাইজের বিছানা ছিল, সেখানে মা একটা বালিস আর ফোম থাকার পরেও এর উপরে ছোট সাইজের একটা তোশক বানিয়ে দিয়েছে সেই কবে, সেখানে আমার বাবা বিড়ালটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে লেপ গায়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আমি যখন ঢাকাতে থাকি তখন নিক নিচের ঘরে বারান্দাতে সেই বিছানার উপরেই ঘুমায়, রাতে দিনে সব সময় সেটা তার পারসোনাল বিছানা হলো ওটা। আর আমি বাসাতে থাকলে দোতলাতে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে রাখি। নিক ভোর হলেই, যখনই আমার বাবার দরজা খোলার শব্দ পায়, ওমনি আমার রুম থেকে জানালা দিয়ে বের হয়ে বাবার কাছে গিয়ে মিউ মিউ শব্দে জানায় তার ক্ষুধা পাওয়ার কথা। আব্বু তখন তাকে বোতল থেকে ক্যাটফুড তার বাটিতে ঢেলে দেয়, সে সব গুলো খাওয়া শেষ করে আব্বু বাড়ির যেখানে যেখানে যায়, যা যা কাজ করে, নিক গিয়ে সামনে বসে থাকে। এটা প্রতিদিনের সকালের রুটিনে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। আমার বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে নিকের সাথে খেলা করতো দুপুরে, তাকে খাওয়াতো, উঠানে শীতের সময় যেখানে একটু রোদ পড়ত, সেখানে কাপড় পেতে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত, আর নিকও আমার বাবার কথা খুব শুনতো, ঘুম পাড়িয়ে দিলে সেখানেই চুপ করে ঘুমিয়ে পড়তো, মাঝে মাঝে ঘুম না আসলে বসে থাকতো, কিন্তু সেখান থেকে উঠতো না। নিকের কাজ ছিল সারা বাড়ি মাথায় করে রাখা, তাকে সব খানেই সমান ভাবে পাওয়া যেত, আমার বাবা মায়ের বিড়ালের প্রতি এত আগ্রহ দেখে আমার নিকের প্রতি খেয়াল রাখার দায়িত্বটা ধীরে ধীরে কমে গেল। আমি যখন ঢাকাতে থাকি, তখন তো তারাই পুরোটা দেখাশোনা করে, তাকে খাওয়ায়, খেলা করে, আদর করে। আবার আমি যখন বাসাতে থাকি তখনও আমার বাবা-মা তার সব খেয়াল রাখে। সে সারাদিন সারা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, ক্ষুধা পেলে হয় আমার বাবার আর না হয় মায়ের পা জড়িয়ে ধরে, কোন কাজ করতে দেয় না, তাকে ক্যাটফুড দেওয়া হয়, সে খেয়ে আবার খেলা করে। তাকে পোষা কোন ঝামেলার কাজই না। নিক নিজেই যেন চায়না আমাদের কারো তাকে নিয়ে কোনরকম কষ্ট হোক। সে তাই খুবই সামান্য যত্নে সবাইকে অনেক বেশী মাতিয়ে রেখেছে। আমি নিককে মাসে একবার গোসল করিয়ে দিতাম। তবে সে গোসল করা খুবই অপছন্দ করতো, তাকে ধরে বেধে আমি গোসল করাতাম। একবার শীতের দিনে বিকালে তাকে গরম পানি করে গোসল করিয়েছি, তবে রোদ না থাকায় সেদিন বিকালে তার আর গা-শুকায় না, হেয়ার ড্রায়ারটা সারা বাড়ি খুজেও আমি পাচ্ছি না, অগ্যতা তাকে ছাদে ছেড়ে দিলাম, সন্ধ্যা পর্যন্ত সে তার দেহ চেটে চেটে পানি শুকিয়েছিল সেদিন আর শীতে থর থর করে কাঁপছিল। আমার সেদিন কষ্টই হয়েছিল, ভেবেছিলাম বিকালে গোসল করানোটা ভুলই হয়েছে, ভাবলাম আবার ঠান্ডা লেগে যাবে কিনা, কিন্তু আমার নিকের অসম্ভব রকমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল, তাই আল্লাহর রহমতে তার সেদিন কিছুই হয়নি। সেই ছোট বেলায় দুধ খেয়ে একবার ডাইরিয়া হয়েছিল আর কখনই তার কোন রোগ হয়নি। একদিন তাকে আমাদের সরকারী পশু হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, টিকা দেবো বলে, কিন্তু তার এক মাস আগে হাসপাতালে এসে বলে গিয়েছিলাম র‌্যাবিস ভাইরাসের টিকা নিয়ে আসার জন্য, যেহেতু সচারচর কেউ বিড়ালের টিকা দিতে আসে না তাই তাদের কাছে বিড়ালের কোন টিকা নেই। আমি বলে যাওয়ার পরে নিয়ে এসেছে। ডাক্তারও ভয় পায় বিড়ালকে টিকা দিতে গিয়ে, যদি আচঁড় লাগায়, আর আমি এ পর্যন্ত কতোগুলো আচঁড় খেয়েছি তার কোন ঠিক নেই। আমি জানি বিড়ালে আচঁড় দিলে তেমন কিছুই হয়না, তারপরেও বাড়তি নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে টিকা দিতে নিয়ে আসলাম কারণ অন্য কোন বিড়াল বা কুকুর থেকে যেন তার শরীরে জলাতংক না হতে পারে সেটার জন্য। র‌্যাবিস এর টিকা খুবই কমন বিড়ালের জন্য। টিকা দিয়ে ডাক্তার আবার কৃমির জন্য একটা মেডিসিনও লিখে দিলো। সেটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নিক কে সিরিঞ্জ দিয়ে খাওয়ানোর ট্রাই করলাম, অল্প একটু একবার মুখে নেওয়ার পরে আর কোন ভাবেই তাকে খাওয়াতে পারলাম না। তারপরে খাওয়ানোর চেষ্টা বাদ দিলাম, ও যখন খেতে চাইছে না, তখন থাক দরকার নেই।



৫.

নিক আস্তে আস্তে বড় হয়ে চলেছে ওর বয়স ৬ মাসের মতো। ওর শরীরের ডোরা কাটা দাগ গুলো আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ও যখন বসে থাকে দেখে মনে হয় একটা ছোট খাটো বাঘ বসে আছে। ধুসর রঙ এর টেবি ক্যাট, বাঘের মতোই দেখতে। আমি ঢাকা থেকে ফিরে এলাম বেশ কয়েকদিন পরে। দেখি আমার বিড়ালটা ছাদের উপরে চুপ চাপ বসে রোদ পোহাচ্ছে। আমাকে দেখে উঠে এলো আমার কাছে। বেশ কয়েক দিন পরে আমার সাথে দেখা হলো তার। তাকে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে আসলাম। ঢাকা থেকে বাসাতে আসার পরেই আমার প্রথম কাজ নিক কে কোলে নেওয়া। মাঝখানে একবার একদিন বাসাতে ফিরে দেখি নিক বাড়িতে কোথাও নেই। সব যায়গায় খুজে কোথাও না পেয়ে বুঝলাম বাইরে কোথাও গেছে, আমি তো ব্যাগ রেখেই পাগলের মতো খুজতে বের হয়েছিলাম, কোথাও নেই, অনেক খোজার পরে আমাদের পাশের বাসার মেইন গেটের সামনে গিয়ে দেখি তাদের বাড়ির উঠানে লেবু গাছের নিচে চুপ করে বসে আছে। আমি একটি ডাক দিতেই সে দৌড়ে দরজার গ্রিল পেরিয়ে আমার কাছে চলে এলো। আমি তাকে কোলে নিয়ে বাসাতে এসেছিলাম সেদিন। কিন্তু আজকে তাকে বাসাতেই পেয়ে ভালো লাগলো। অনেক গুলো ক্যাটফুডের প্যাকেট নিয়ে এসেছি, তার প্রিয় ক্যাটফুড। সে ক্যাটফুড ছাড়া কিছুই খায় না, মাছও না, মুরগীও না, কিছুই না। তাকে অনেকবার মাছের কাটা বেছে বেছে মাছ খাওয়ানোর চেষ্টা করে আমার বাবা ব্যর্থ হয়েছে, সে ক্যাটফুড ছাড়া কিছুই মুখে তোলে না। তাই প্রতিবার ঢাকা থেকে ফেরার পথে ৬-৭ প্যাকেট করে ক্যাটফুড আমি কিনে নিয়ে আসি। আর সেগুলো একটা একটা করে বোতলে ভরে রাখি আর ওকে খাওয়াই। আমার ঘরে একটা লিটার বক্স আছে, নিক যখন আমার ঘরে থাকে তখন সে লিটার বক্স ব্যবহার করে কিন্তু বাইরে বা উঠানে থাকলে তার প্রিয় বেলতলা আর কাঁঠাল গাছ তলা। সেখানেই সে সুন্দর ভাবে তার প্রাকৃতিক কাজ কর্ম সেরে সেগুলো মাটি চাপা দিয়ে দেয়, যেন তার কৃত কর্মের কোন প্রমাণই নেই। আমি জানি এটা সব বিড়ালেরই স্বভাব, বাথরুম করার পরে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া, কতো ভদ্র আর বুদ্ধিমান একটা প্রাণি, অপরদিকে গ্রাম অঞ্চলে দেখবেন যেখানে টয়লেটের ব্যবস্থা নেই সেখানে কিছু মানুষজন মাঠে বা ঝোপে ঝাড়ে গিয়ে মনের সুখে খোলা আকাশের নিচে তাদের প্রাকৃতিক কাজ কর্ম সারে আর তারপরে সেটা ওভাবেই রেখে চলে আসে। পর দিন গিয়ে তার নিজের কর্মের উপরেই আবার পা মাড়ায়। বিড়ালের যে বুদ্ধিটুকু আছে মানুষ হয়েও তাদের এই বুদ্ধিটুকু নেই। সত্যিই অবাক করার মতো একটা বিষয়।

আমি প্রায় দুই সপ্তাহ পরে আবার ঢাকা চলে আসলাম, বেশ কিছু দিন থাকতে হবে আমাকে এখানে, আমার বিড়ালটাকে আমি খুব মিস করি মাঝে মাঝে। কিন্তু কি করার, বাসায় না গেলে তো আর দেখতে পাবো না। হঠাত শুনলাম আমার বিড়ালের ক্যাটফুড শেষ হয়ে গেছে। আমি মাকে বললাম আমার যেতে ২-৩ দিন দেরী হবে, নিক কে বাসার খাবার, মাছ এই সব খাওয়াও। তারপর দিন রাতে শুনলাম সারা দিন সে না খেয়ে আছে। কিন্তু অন্য কোন খাবারই সে খায়নি। তাকে মাছের কাটা বেছে আমার বাবা অনেকবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে, ভাত দিয়ে মাখিয়ে দিয়েছে। কিছুতেই সে কিছু খায় না। তার জন্য স্পেশালভাবে মাছ ভাজি করে দেওয়া হয়েছে তাও সে খায় না। ক্যাটফুড ছাড়া সে কিছুই খাবে না। আমি দেরী না করে তাড়াতাড়ি কুরিয়ার করে ২ কেজির এক প্যাকেট ক্যাটফুড পাঠিয়ে দিলাম, আরো একদিন পরে সেটা বাসাতে পৌছালো। দুই দিন প্রায় না খাওয়া অবস্থায় সামান্য পানি খেয়ে পার করেছে আমার বিড়াল। কিন্তু অন্য কোন খাবারে সে মুখ দেয়নি। শুনলাম ক্যাটফুড পাওয়ার পরে সে বেশ খানিকটা খেয়েছে। যাক, টেনশন মুক্ত হলাম। তার কয়েক দিন পরে আমি আরো ২ কেজির দুই প্যাকেট ক্যাটফুড নিয়ে বাসাতে গেলাম। দেখলাম আমার বিড়াল বসে আছে বারান্দায়। তাকে একটু আদর করে কোলে নিলাম। বাসাতে বললাম তাকে আসলে বাসার খাবার খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে। এভাবে আর কতো দিন ক্যাট ফুড খাবে? কিন্তু মা বললো তাকে আর কোন খাবারই তো খাওয়ানো যায় না, অন্য খাবার কি করে খাওয়ানো অভ্যাস করাবো? আসলেই তো, এটা তো চেষ্টা করা হয়েছেই। তাই সেটা নিয়ে আর না ভেবে বাদ দিলাম, তার যেহেতু ক্যাটফুড এতই প্রিয় তাহলে তাকে তাই খাওয়াবো, যত টাকা খরচ হয় হোক, কোন সমস্যা নেই। এবার এসে দেখলাম আমার বিড়ালটা অনেক সাস্থবান আর নাদুস নুদুস টাইপের হয়েছে। আর আগের মতো অত চঞ্চলতা নেই। বেশীর ভাগ সময় সে শুয়ে বসেই কাটায়। তার জন্য ঢাকা থেকে একটা রাবারের বল নিয়ে এসেছিলাম, সে যেভাবে সব কিছু নিয়ে খেলা করে, বলটি পেয়েও খুব খেলবে, খুশী হবে অনেক, কিন্তু একি? বল পেয়েও সেভাবে সে খেলাতে আগ্রহী না। অনেক জোরাজুরি করার পরে বল নিয়ে একটু দৌড়াদৌড়ি করে, আবার হঠাত খেলতে খেলতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। যেন অলসতা তাকে পেয়ে বসেছে। নড়তে ইচ্ছা করছে না। বুঝলাম সে বড় হয়েছে, ম্যাচিউড যাকে বলে। ছোট বেলায় তো আমিও অনেক দৌড়াদৌড়ি করতাম, লাফালাফি করতাম, কিন্তু এখন কি করি? ঠিক তেমন আমার বিড়ালও বড় হয়েছে ৭ মাস হয়ে গেল বয়স, সে এখন যুবক, তার ওসব খেলা মানায় না। সে আয়েসি ভঙ্গিতে শুয়ে বসে দিন কাটায়। বেশীর ভাগ সময় ঘুমায় আর জেগে থাকা কালিন চুপ চাপ বসে থাকে। মাঝে মাঝে একটু হাটাহাটি করে। তার একটা বান্ধবী হয়েছে। প্রথমে অবশ্য এত ভাব ছিল না। পাশের বাসার ছাদে অনেক গুলো বাচ্চা তুলেছে একটা কমলা রঙের মেয়ে বিড়াল, নিক কে দেখে এক দিন এক তাড়া মেরে গাছে তুলে দিয়েছিল। পরে নিক তার সাথে ক্যাটফুড শেয়ার করে ধীরে ধীরে দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। নিক সেই বিড়ালের বাচ্চা গুলোকে মাঝে দেখতে যেত পাশের বাড়ির ছাদে, আবার চুপ চাপ বসে মা বিড়ালটার সাথে গল্প করতো বাড়ির প্রাচীরের উপরে বসে। উঠানে ক্যাটফুড রাখা থাকতো নিকের বাটিতে, দুজন এসে মাঝে মাঝে খেয়ে যেত। আমি ভাবলাম আমার বিড়াল মনে হয় প্রেম করা শুরু করেছে, তাই বলে এতো গুলো বাচ্চার মায়ের সাথে? অন্য কোন মেয়ে পেল না? ওই বিড়ালটা নিকের থেকে কম করেও ৩-৪ মাসের বড় হবে। কিন্তু না তারা প্রেম করে না, তারা শুধু জাস্ট ফ্রেইন্ড, মাঝে মাঝে গল্প করতো রান্নাঘরের টিনের উপরে বা প্রাচীরের উপরে বসে। মাঝে মাঝে আমাদের বাসাতে দলবেঁধে হুনুমান আসতো, হুনুমান দেখলে এক দৌড়ে ঘরের খাটের তলে। নিক কে আর খুঁজে পাওয়াই যাবে না, হুনুমান খুব ভয় পেত সে। অনেকক্ষণ পরে চুপ চুপ করে গলাটা বের করে আসে পাশের পরিবেশ দেখতো। তারপরে বের হতো বাইরে। এসব নিয়ে খুব হাসাহাসি করতাম আমরা, একটা ছেলে বিড়াল হয়ে তার এত ভয় কেন হুনুমান দেখে?



৬.

দেখতে দেখতে দশ দিন মতো পার হয়ে গেল। এই সময়টাতে আমি নিকের সাথে খুব অল্প সময় কাটিয়েছি, বেশীর ভাগ সময় আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু অপর দিকে আমার বাবা মা নিকের আরো বেশী যত্ন নেওয়া শুরু করেছে। কয়েক দিন রাতে দোতলাতে আমার ঘরে সোফার উপরে সে ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু বেশীর ভাগই রাতে সে নিচেরতলায় বারান্দায় তার বিছানাতে ঘুমায়। কখনও কখনও কোন দিন রাতে সে বাইরে কোথাও ঘুরতে বের হয়, বাসার কোথাও খুজে বা ডাকাডাকি করে তাকে পাওয়া যায় না। রাত ১টা বা দেড়টার দিকে আবার হঠাৎ করে আমার জানলা দিয়ে ঘরের ভিতর এসে পড়ে। এসেই বাটিতে রাখা ক্যাটফুড গুলো গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করে। মনে হয় বাইরে ঘুরে ঘুরে ক্ষুধা পেয়ে যেত ওর। আর ক্ষুধা পেলেই তার আমার রুমের কথা মনে হতো, কারণ ও জানতো এখানে আসলেই সে খাবার পাবে। আমার প্রথম দিকে টেনশন হলেও পরে আর টেনশন হতো না, কারণ আমি জানি সে ঠিক সময় হলে চলে আসবে। কিন্তু ও কোথায় যায়? এটা আমার জানার খুব ইচ্ছা ছিল। ভাবলাম বিড়ালের ট্র্যাকিং ডিভাইস কিনে ওর গলায় ঝুলিয়ে দেবো। তারপরে তাকে ট্র্যাক করবো মাঝে মাঝে সে কোথায় যায় তা জানা যাবে।
হঠাত আমার জরূরী ভিত্তিতে ঢাকা আসতে হবে, সিদ্ধান্ত নিলাম আজ রাতেই চলে যাবো আর এবার গিয়ে মাস খানিক এর আগে আর বাসাতে ফিরতে পারবো না। যেতে ইচ্ছা করছে না কিন্তু কিছুই করার নেই, যেতেই হবে। ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে বের হবো, দেখি নিক সিঁড়ির উপরে লেজ ঝুলিয়ে বসে আছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে ট্রলি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।

ঢাকাতে আসা ৪-৫ দিন হয়ে গেল। নিকের কথা খুব মনে পড়ছে, আর তাকে আদর করতে ইচ্ছা করছে আমার। এবার বাসাতে গিয়ে তাকে সেভাবে সময় দিতেই পারিনি। কিন্তু কি করার, কবে বাসায় যাবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আজ ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখ, হয়ত এ মাসটা পার না হলে আমার বাসাতে যাওয়া হবে না। সন্ধ্যায় আম্মুর ফোন পেয়ে জানতে পারলাম, নিক নাকি খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়েছে, একেবারেই কম খাবার খাচ্ছে। আর এমনটা শুরু করেছে আমি চলে আসার পরের দিন থেকেই। প্রথমে মা ভেবেছিল আমি চলে এসেছি, আমার জন্য মন খারাপ করে বসে থাকে সারাদিন। আর এর জন্য আমাকে কিছু বলেওনি। কিন্তু একেবারেই খাওয়া বাদ দেওয়াতে কেমন যেন শুকিয়ে গেছে সে, কয়েক দিন যাবত ক্যাটফুড দিলেও তার খাওয়ার প্রতি কোন আগ্রহ নেই, বরং খাবার দেখলেই সে উঠে অন্য দিকে চলে যায়। আমি ভাবলাম এমন কেনই বা হতে পারে? হয়ত বয়সের কারণে বা অন্য কোন কারণে খাবার চাহিদা কম। পরে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে, খাবে না কতোদিন? খেতে তো হবেই। আমি আম্মুকে টেনশন করতে মানা করলাম, সামনেই খাবার দিয়ে রাখতে বললাম সময় হলে ঠিকই খাবে। তারপরের দিন ১৩ তারিখ, শুনলাম নিক কোন কিছুই খায়নি এখনও পর্যন্ত। সারা দিন চুপ চাপ বসে থাকে, মনমরা, মাঝে মাঝে মিউ মিউ করে ডাকে। ক্ষুধা পেলে যেমন ডাকতো, কিন্তু খাবার দিলে সে খাচ্ছে না। আব্বু তাকে আমাদের সরকারী পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল নাকি, ডাক্তার তাকে দেখে কৃমির আর খাবারের রুচি বাড়ানোর জন্য সিরাপ দিয়েছে। বাসাতে নিয়ে এসে, সে তো খাবে না কোন ভাবেই, সিরিঞ্জ দিয়ে জোর করে একবার খাইয়ে দেওয়া হয়েছে সেই সিরাপ দুইটা। কিন্তু না, সে কোন খাবার কিছুতেই খাচ্ছে না। শরীর একেবারে ভেঙে গেছে, ৩ দিনের উপরে না খাওয়া। সাথে নতুন যোগ হয়েছে বমি। তাকে যা ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে সবই সে বমি করে তুলে দিচ্ছে। আমি আম্মুকে বললাম তাকে কোন খাবার দিও না, স্যালাইন খাওয়াও শুধু। দেখো ঠিক হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। কয়েক ঘন্টা পর পর আমি মায়ের কাছে ফোন দিচ্ছি, নিকের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য। ও কি সুস্থ হলো কিছুটা? না অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। তাকে স্যালাইন খাওয়ানোর পরে সেটাও সে বমি করে তুলে দিয়েছে। বেশ কয়েকবার। পেটে কিছু নেই তারপরেও কিছুক্ষণ পর পর বমি করছে। আর বমি করার সময় শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে পেট থেকে যা কিছু সামান্য পানির মতো আছে সেটাও তুলে দিচ্ছে। মা বললো, তার বমি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার কষ্ট আমার বাবা-মা কেউই দেখতে পারছে না। কি করবে এখন? আমার কাছে জানতে চাইছে। আমি ইন্টারনেট ঘেটে তেমন কিছুই বের করতে পারলাম না, কোন রোগ তার হলো। বমি তো অনেক কারণেই হয়, ফুড পয়জনিং হলেও হয় তবে সেটা বমি করে তুলে দিলে ঠিক হয়ে যায়, আর নিক তো ৩-৪ দিন থেকে না খাওয়া, তার ফুড পয়জনিং হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না, আবার সে অসুস্থ হওয়ার আগেও ক্যাট ফুড ছাড়া কিছুই খায়নি, তবে কি ক্যাট ফুডেই সমস্যা??? কিন্তু এই ক্যাট ফুড খেয়েই তো ও দিব্যি এতোদিন কাটিয়েছে। না, কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না আমি। আমার কি করা উচিত? আমি কি বাসাতে চলে যাবো? বাসায় গিয়ে নিক কে ঢাকাতে নিয়ে এসে চিকিৎসা করালে কেমন হয়? আবার বাবা আবার আজও নিক কে কোলে নিয়ে পশু হাসপাতালে গেছে। রুগ্ন অসহায় নিক, তাকে ডাক্তার দেখে কয়েকটা ইংজেকশন দিয়েছে। তারপরে সন্ধ্যায় বাসাতে নিয়ে এসে তাকে সিরিঞ্জে করে স্যালাইন পানি খাওয়ানো হয়েছে, সে কিছুতেই খাবে না। তাকে জোর করে ধরে বেধে খাওয়ানো হয়েছে, না হলে তো বাচানোই যাবে না। মা বললো, ওকে কিছুটা স্যালাইন পানি খাওয়ানো হয়েছে, এখন চুপ করে বসে আছে উঠানের উপরে। হাটা চলার শক্তি নেই। কোথাও উঠে যেতে গেলেও চলতে চলতে যেন পড়ে যাচ্ছে, হাটতে পারছে না। আমার মা জানে আমার ঢাকাতে কাজ আছে অনেক, আমাকে বাসাতে যেতে নিষেধ করলো, আর তা ছাড়া সবাই তো আছে বাসাতে, তার খেয়াল রাখার জন্য। কোন সমস্যা নেই। ঠিক হয়ে যাবে হয়ত। আমাকেও চিন্তা করতে মানা করলো। থাক তাহলে আমি আর যাচ্ছি না, পরদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারী। সকাল ৯টা থেকে ১ টা পর্যন্ত আমার একটা ক্লাস আছে। পরের তিন দিন ছুটি, কোন কাজ নেই। রাতেও ঠিক মত ঘুমাতে পারিনি, নিক কেমন আছে সেই চিন্তায়। ক্লাস থেকে ফিরে এসেই দুপুরে আম্মুর সাথে কথা বললাম। কি অবস্থা নিকের? – আগের মতোই। - কিছু কি খেয়েছে? – না – বমি করছে এখনো? – সকাল থেকে এক বার করেছে, পেটে কিছু নেই, বমি করতেও কষ্ট হচ্ছে ওর। মায়ের কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম আমার মা’ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে, তার মন খারাপ নিকের জন্য। অনেক ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তার অবস্থার কোন উন্নতি নেই। আমি ঠিক করলাম আমি বাড়ি যাবো। আমি গিয়ে চেষ্টা করলে নিশ্চয় সে সুস্থ হয়ে উঠবে। সব কাজ শেষ করে ঐ দিন রাতেই সাড়ে দশটার গাড়িতে উঠে পড়লাম। সময় কাটতেই চাইছে না, কখন পৌছাবো আমি? রাতে আম্মুর সাথে আমার গাড়িতে ওঠার পরে রাত ১২টার দিকে একবার কথা হয়েছিল, বললো নিককে কিছুটা তরল খাবার খাইয়ে তার সেই বড় খাঁচার মধ্যে কাপড় বিছিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে বিছানার পাশেই। বমি করবে ভেবে আর বিছানাতে তোলেনি, এমনিতেই বেশ কয়েকবার বিছানাতে বমিও করেছে এই কয়দিনে। তবে খাওয়ানোর পরে ঘন্টা দুয়েক হয়ে গেল, এখনো বমি করেনি। খাঁচার দরজাটা খোলায় আছে। সে শুয়ে আছে চুপ চাপ, মাঝে মাঝে খুব নিচু স্বরে মিউ মিউ আওয়াজ করে ডাকছে। ফোন রেখে দিয়ে আমি বাড়ির পথ ধরে এগিয়ে আসছি। ফেরী ঘাটে এসে পুরো ৬ ঘন্টার জ্যাম। রাত একটায় ফেরী ঘাটে পৌছে সকাল সাতটায় আমার গাড়ি ফেরীতে উঠলো। এই সময়ের মধ্যে আমার কখন বাসায় পৌছে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি মাত্র ফেরীতে। এখনও ৪ ঘন্টা লাগবে বাসাতে যেতে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমি ৬ ঘন্টার রাস্তা পুরো ১৩ ঘন্টায় শেষ করে মেহেরপুর বাসস্ট্যান্ড এ এসে নামলাম। আমি রিক্সা নিয়ে বাসায় যাচ্ছি, মনে মনে একটু খুশীই কাজ করছে আমার ভিতরে, আমার নিক’কে অনেক দিন পরে দেখবো। বেচারা হয়ত খুব কষ্টে আছে, ওর চিকিৎসা নতুন করে শুরু করতে হবে। আর হ্যা, ওকে ভাতের মাড় খাওয়াতে হবে, কে যেন আমাকে বলেছিল ভাতের মাড় খাওয়ানো হজমের জন্য ভালো। আমি রিক্সা থেকে নামলাম। নেমে দেখি বাসার মেইন দরজা খুলে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। হয়ত আমার জন্যই আমি ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলাম…


৭.

যখন বাড়িতে ঢুকলাম, উঠানটা পার করে বারান্দাতে গিয়ে সবার সামনে আব্বুকে দেখতে পেয়ে হাসি মুখে সালাম দিলাম আমি, আর আবার বাবা সালামের উত্তরটা কোন রকমে দিয়ে ঘরের মধ্যেই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাতে ভেঙে পড়লো।

বুঝতে বাকি রইলো না, আমার বিড়ালটা আর বেঁচে নেই। আমার নিক মারা গেছে।

আমার হাসি মুখটার উপর দিয়েই চোঁখের পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। নির্বাক আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আমার আম্মুও ওদিকে আমাকে দেখে আবার নতুন করে কেঁদে উঠলো।

বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল, আমি এখনো আমার নিক কে দেখিনি, ও নাকি রাতেই মারা গেছে, আনুমানিক ২-৩ টার দিকে, ভোরের আজানের সময় আমার বাবা উঠে তাড়াতাড়ি করে তাকে দেখতে বের হয়েছিল ঘর থেকে, কিন্তু নিক তার খাঁচাতে নেই। তাকে খুঁজতে খুঁজতে বারান্দার সাথে বাথরুমের মধ্যে মেঝেতে একপাশে কাত হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে আমার বাবা, কাছে গিয়ে দেখে সে আর বেঁচে নেই। তার নিথর দেহ পড়ে আছে সেখানে। তাকে হাতে করে তুলে নিয়ে বাইরে আসে আমার বাবা।
আমি কান্না থামিয়ে কোন মতে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু ওদিকে আমার বাবাও সমান তালে আমার সাথে কাঁদছেন। এই কয়দিন তাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, খাওয়ানো সবই তিনি করেছেন। হাতে করে খাইয়ে গত রাতেও ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিড়ালটাকে, কিন্তু এখন সেটা আর বেঁচে নেই।

আমি রুম থেকে বের হয়ে চোঁখ মুছতে মুছতে উঠানের পাশের একটা টিনের রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একটা সাদা কাপড়ে জড়ানো আছে আমার বিড়ালটার দেহ। আমি কোন রকম কাপড় টা সরিয়ে তার মুখখানা দেখলাম, সেই যে সপ্তাহ খানিক আগে তাকে যেরকম দেখে গিয়েছিলাম, সেরকমটা আর সে ছিল না, শুকিয়ে শরীরের হাড় বের হয়ে গিয়েছিল। পা গুলো চিকন হয়ে গিয়েছে, পেট বসে গেছে, অনেক কষ্টে আমার বিড়ালটা মারা গেছে। আমি কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে দিলাম। আমি মানতে পারছি না, আমার আদরের বিড়ালটা আর নেই। সে আমাকে ছেড়ে, আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে।

সেই বেল গাছটার নিচে একটা ছোট কবর খোঁড়া হয়েছে। আমার বাবা সকালে বাজার থেকে কাফনের কাপড় কিনে নিয়ে এসেছে, বিড়ালটাকে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড়ের মধ্যে সুন্দর করে মুড়িয়ে রেখে দিয়েছে ঠিক যেন কোন ছোট বাচ্চা মারা গেছে। আর সবাই আমার আসার জন্য অপেক্ষা করছিল কখন আমি আসবো, কখন তার দাফন হবে। তাকে ঐ বেল গাছটার নিচেই কবরে চির শান্তিতে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, আব্বু সুন্দর করে কবরে ধীরে ধীরে মাটি দিয়ে সমান করে দিল। আমিও কয়েকবার মাটি ফেললাম আমার বিড়ালের কবরে। এখন ঘুমাক, এই ৪-৫ দিন তো অনেক ধকল গেল, অনেক কষ্ট হলো তার, এখন তো শান্তির পালা, আর কোন কষ্ট নেই তার। সে এখন ঘুমাবে, হয়ত আমি এসে তার রোগা মুখটার মিউ মিউ ডাক শুনে কষ্ট পাবো বলে আমি আসার আগেই সে চলে গেল। ও চায় না, যেন আমার কোন কষ্ট হোক, আমি জানি আমার বিড়াল আমাকে অনেক ভালোবাসতো। আমাদের ছেড়ে থাকতে তার হয়ত কিছু কষ্ট হবে, কিন্তু আমাদের বাড়িতেই তো সে থাকবে, ঘুমিয়ে থাকবে চির শান্তিতে উঠানের ঐ কোনায়… বেল গাছটার নিচে।








মূল ঘটনার সমাপ্তি, এবার আসি আসল কথায়…


একটা বিড়াল কে নিয়ে এতকিছু? অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতেই পারে কিন্তু আমার পুরো গল্পটা পড়লে অবশ্যই বুঝবেন, বিড়ালটা মোটেও আমাদের পরিবারের কাছে শুধু সামান্য একটা বিড়াল ছিল না। ছিল আমাদের পরিবারের একটা সদস্য। ছোট একটা প্রাণী হয়ে সে যেভাবে সবার মন জয় করে নিয়েছিল সেটা অনেক মানুষের পক্ষেও সম্ভব হয় না। তাকে হারানোর পরে তার মূল্যটা আমরা বুঝতে পেরেছি। তাকে সুস্থ করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করার দরকার হলেও আমরা করতে প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু সে সুযোগটাই তো দিল না সে। সে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিল কিন্তু কিছুই খেতে পারছিল না।

কিন্তু কেন?

কেন মারা গেল আমার সুস্থ সবল বিড়াল? কেউ কি বলতে পারবেন?

মাত্র ৭ মাস বয়সে একটা সুস্থ সবল বিড়াল মাত্র ৫ দিনের অসুখে এভাবে কেন মারা গেল?

তার মৃত্যুর পরে আমি বুঝতে পারলাম কেন সে এভাবে ধুকে ধুকে মারা গেল…

তার মারা যাওয়ার কারণ হলোঃ তার পাকস্থলী সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু কেন? তার কারণটা হলো ক্যাটফুড.... যে ক্যাটফুডগুলো আমি অনলাইন থেকে হাজার হাজার টাকা ব্যায় করে কিনে কিনে আমার বিড়ালকে খেতে দিতাম সেই ক্যাট ফুড ধীরে ধীরে তার পাকস্থলী নষ্ট করে দিয়েছিল।

তার অসুস্থতা প্রকাশ পাওয়া মানে তার পাকস্থলী ৯০% পর্যন্ত বিকল হয়ে গিয়েছিল। কারণ মানুষ বা যে কোন পশুর কিডনী অথবা পাকস্থলী ১০% ভালো থাকলেও সেটা কাজ করে। কিন্তু ৯০% এর উপরে নষ্ট হয়ে গেলে তখন সমস্যা শুরু হয়।


কিন্তু সরাসরি আমি ক্যাটফুডকে দোষ দিই কিভাবে??

বাংলাদেশে এই ক্যাট ফুড বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে আছেন যারা সরাসরি ক্যাটফুড বিক্রির সাথে জড়িত, গ্রুপে গ্রুপে ক্যাটফুডের বিজ্ঞাপন দিয়ে দিয়ে তারা ক্যাটফুড বিক্রি করে। চালডাল.কম, পেট.কম.বিডি, পোষাপ্রাণী.কম, দারাজ সহ আরো অনেক অনলাইন বিভিন্ন পোর্টাল আর ই-কমার্স সাইট আছে যারা ক্যাটফুড বিক্রি করে। প্রতিদিন হাজার হাজার প্যাকেট ক্যাটফুড সেল হয় শুধু এই ঢাকাতেই। তাদের এই কথাটা শুনলে গায়ে আগুন ধরে যেতেই পারে যে কেন আমি ক্যাটফুডের দোষ দিচ্ছি। তাই এখন থেকে সব তথ্য প্রমাণ দিয়েই কথা বলবো।

ক্যাটফুড তৈরী করা হয় এমন কিছু বাড়তি ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে যেটার কোন তথ্য প্যাকেটের গায়ে নেই। দির্ঘ্যদিন প্যাকেটে ক্যাটফুড ভালো রাখার জন্য তাতে মেশানো হয় বাড়তি কেমিকেল। কি কেমিকেল মেশানো হয়? Chemical in cat food লিখে গুগল করে আসুন পেয়ে যাবেন।

কিন্তু ক্যাটফুড কিভাবে ক্ষতি করে?
ক্যাটফুডকে আমি নাম দিয়েছি, বিড়ালের স্লো-পয়জন। স্লো-পয়জন জিনিসটা তো সবাই বোঝেন? এক ধরণের বিষ যেটা ধীরে ধীরে শরীরে ক্ষতি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের জন্য একটা স্লো-পয়জন হলো আর্সেনিক। যেটা আপনি কয়েকবার খেলে বা কয়েক বছর ধরে খেলেও কিছু হবে না, কিন্তু একটানা ১০-১২ বছর আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে আপনি মারা যাবেন। এই ক্যাটফুডও ঠিক তেমনই, আপনার বিড়ালকে খাওয়াচ্ছেন, কোন সমস্যা হবে না, কিন্তু একটানা ৫-৬ মাস বিড়ালকে ক্যাড ফুড খাওয়ালে সে মারা পড়বেই। খুবই নির্মম ভাবে ধুকে ধুকে মরবে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। বিড়াল পানি কম খায়, এটা বিড়ালের সৃষ্টিগত স্বভাব, তাই তার অন্যান্য খাবারের মধ্যে ৫০-৬০% পানি থাকে, যেগুলো মাছ, ভাত বা অন্যান্য খাবার গুলো খাওয়ার মাধ্যমে বিড়ালের শরীরের পানির শুন্যতা পূরণ হয়। আর ড্রাই ক্যাটফুডের মাত্র ১০-১২% পানি থাকে, অর্থাত ক্যাটফুড গুলো খেয়ে বিড়াল পানি শুন্যতাতে পড়ে কিন্তু সেভাবে বুঝতে পারে না যে তার শরীরে পানি শুন্যতা তৈরী হয়েছে।

বিড়ালের ক্যাটফুড খাওয়ার শব্দ শুনলে আপনারা মনে করে থাকবেন, বিড়াল মনে হয়ে চাবিয়ে চাবিয়ে খাচ্ছে, কিন্তু অনেকে জানেই না যে বিড়াল ক্যাটফুড চাবিয়ে খায় না, সেটা মুখে নিয়ে দাঁতের মাধ্যমে সরাসরি গিলে ফেলে, দাঁতের মাধ্যমে নিয়ে গিলে ফেলার কারণে কড়মড় শব্দ হয় যেটাতে অনেকের মনে হয় বিড়াল চাবিয়ে গুড়ো করে খাচ্ছে কিন্তু আসলে সরাসরি গোটা অবস্থায় পেটে পাঠিয়ে দেয়। আপনি কোন একটা ক্যাটফুডের দানা হাতে নিয়ে চাপ দিয়ে দেখতে পারেন যে ওটা কতোটা শক্ত, ঐ শক্ত জিনিস বিড়ালের দাঁত দিয়ে ভাঙার ক্ষমতা নেই। বিড়াল সেটা মুখে নিয়ে গিলে ফেলে, একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন। আর তার পাকস্থলী সেটাকে হজম করে। একবার চিন্তা করে দেখুন পাকস্থলীর কতোটা পরিশ্রম হয় কেমিকেল যুক্ত ঐ পানি বিহীন ক্যাটফুড গুলোকে হজম করতে। আর এটা যদি প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে তবে পাকস্থলী কেন নষ্ট হবে না? হিসেব খুব সিম্পল। একটু বোঝার চেষ্টা করলে নিজেই বুঝে যাবেন।

আমার বিড়ালের খাদ্যাভাসের উপরে রিসার্চ করে আমার এটাও মনে হয়েছে যে, ক্যাটফুড গুলোতে এমন কোন কেমিকেল আরো মেশানো হয় যেটা বিড়ালের জন্য নেশা জাতীয় দ্রব্যের মতো কাজ করে। যার কারণে নিয়মিত একটা বিড়ালকে ক্যাডফুড দিলে সে কিছু দিনের মধ্যেই এর উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন ক্যাটফুড ছাড়া আর অন্য কোন খাবার সে চাইলেও খেতে পারে না। যেমন টা আমার বিড়াল নিকের বেলাতে হয়েছিল। সে দুই দিন না খেয়ে ছিল তবুও ক্যাটফুড না দেওয়া অবধি অন্য কোন খাবার গ্রহণ করেনি।

এছাড়াও আর একটা জিনিস, ক্যাটফুড খোলা যায়গাতে রাখলে এর কেমিকেল গুলোর জন্য সেটা খুব দ্রুত বাতাসের সাথে বিক্রিয়া করে ধীরে ধীরে বিষাক্ত হতে থাকে, পরে বিড়াল তা খেলে স্লো-পয়জনিং এর গতি আরো বেড়ে যায়। এর রেফারেন্স সামনে দেবো।
তাই ক্যাটফুড কিভাবে বিড়ালের ক্ষতি করে সেটা নিজেই একটু বোঝার চেষ্টা করুন।

প্রথমত, আমি যে তথ্যগুলো দিচ্ছি সবই বাস্তবিক, অর্থাত আমার সাথে যেটা বাস্তবে ঘটেছে সেই সব কিছুর উপরে ভিত্তি করে আমি বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করছি, এবং কথা গুলো যে সত্যি সেটাও আপনাকে প্রমাণ সহ দেওয়ার চেষ্টা করবো।

দ্বিতীয়ত আমার এই সব কিছু করার পেছনে একটাই কারণ, বাংলাদেশে ক্যাটফুড কতোটা ক্ষতিকর সেটা নিয়ে তেমন কোন তথ্য নেই। যদি থাকতো তবে আমি আমার বিড়াল মারা যাওয়ার আগে অবশ্যই সে তথ্য আমি পেতাম। কারণ আমি প্রথম থেকেই বিড়াল পোষা শুরু করার আগে বিড়ালের আদ্যপ্রান্ত নিয়ে রিসার্চ করেছি, কোথাও ক্যাটফুডের বিপক্ষে কোন বাংলা তথ্য দেখিনি। যার কারণে আমার নিক আজ এই দুনিয়াতে নেই। তাই আমি চাই বাংলাদেশের অনলাইনে এই ক্যাটফুডের ভয়াবহতাটা তুলে ধরতে, অন্তত যারা বিড়াল পোষে সেই সব মানুষ জানুক, ক্যাটফুড কতোটা ক্ষতিকর বিড়ালের জন্য। আমার মতো ক্ষতিকর দিকটা না জানার কারণে যেন কারো কোন ক্ষতি না হয় তাই শুধুমাত্র বিড়াল গুলোর কথা ভেবে আমি বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কন্টেন্ট তৈরী করে প্রচার করবো। যদি এক জনের বিড়ালও বাঁচে তবে আমার নিক অনেক শান্তি পাবে বলে আমি মনে করি। কারণ সে মরে গিয়েই তো আমার চোঁখ খুলে দিয়ে গিয়েছে। বিড়াল যেহেতু কথা বলতে পারে না, তাই তারা এর প্রতিবাদ করবে কি করে? আপনি যা খাওয়াবেন সেটাই তো ওই প্রাণীগুলো আপনার উপরে বিশ্বাস করে খেয়ে নেবে। তাই ওদের হয়ে আমিই এই দায়িত্বটা নিয়েছি। অন্তত বাংলাদেশে যারা বিড়াল পালনের জন্য প্রতিমাসে প্যাকেট প্যাকেট এই সব বিষ কেনেন, কিনে গর্বের সাথে আবার সেগুলো সোস্যাল মিডিয়াতে, গ্রুপে শেয়ার করেন, তাদের সবাইকে আমি জানিয়ে দেবো। তার পরে মানা না মানা সেটা আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয়।



আমি জানি আপনাদের অনেক প্রশ্ন আছে, আমার পক্ষে বিপক্ষে অনেক প্রশ্ন। এবার আমি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবো। সবার বিভিন্ন প্রশ্নের… আপনার প্রশ্নটির উত্তর এখান থেকে খুঁজে নিন…


প্রশ্নঃ ১ – আপনি কিভাবে বলেন ক্যাটফুড ক্ষতিকর? আপনি কি ভেট?

উত্তরঃ না আমি কোন ভেট নই। আমার চৌদ্দগুষ্টির মধ্যেও কোন ভেট নেই। কিন্তু আমার বিড়ালটা মারা যাওয়ার পরে আল্লাহ্ আমাকে বিড়াল বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দিয়েছেন। আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করেছেন যে সব জ্ঞান হয়ত অনেক ভেটের কাছেও নেই। তাই কোন ভেট কি বললো না বললো সেটাতে আমার কিছু যায় আসে না। আর ক্যাট ফুড কেন ক্ষতিকর সেটা আমি অলরেডি উপরে বলে দিয়েছি।

প্রশ্নঃ ২ – আমার ভেট আমাকে ক্যাটফুড খাওয়াতে বলে, আর আপনি বলেন এটা ক্ষতিকর, আপনি কি ভেটের থেকেও বেশী জানেন?
উত্তরঃ ভেটের থেকে বেশী জানি কি না সেটা কোন বিষয় না, আর ভেটই যে সব কিছু জানে পশুপাখির বিষয়ে এ কথাটাও সত্যি না। আপনাদের অনেকের বিড়ালের ভুল ট্রিটমেন্ট এর কারণে মারা গেছে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে, তাহলে ভেট সব সময় ঠিক সেটা আপনি কিভাবে বলেন? দেশে অবশ্যই অনেক ভালো ভেট আছে, কিন্তু কিছু ভেট এমনও আছে যারা পেটের দায়ে ভেট হয়েছে, পশুপাখির প্রতি কোন ভালোবাসা নেই। আর জ্ঞানের অভাবও আছে অনেকের, তাই যে দেশে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারা যায়, সে দেশে আপনি একটা পশু চিকিৎসকের কথা বিশ্বাস করবেন? বিশ্বাস করা ভালো তবে অন্ধ বিশ্বাস করা ভালো না। আপনার ভেট যদি ক্যাটফুডের পক্ষে কথা বলে তাহলে বুঝতে হবে হয় তিনি এ বিষয়ে জানেন না, জ্ঞানের অভাব রয়েছে তার, আর না হয় সে কোন ক্যাটফুড বিক্রির দালাল। এছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

প্রশ্নঃ ৩ – আপনি আপনার বিড়ালের মৃত্যুর জন্য পাকস্থলী নষ্টের কথা বলেছেন, আপনি কি তার পোষ্টমর্টেম করিয়েছিলেন? না হলে কিভাবে জানলেন?
উত্তরঃ না, আমি আমার বিড়ালের কোন পোষ্টমর্টেম করাইনি। আপনার কোন কমন সেন্স না থাকতে পারে, কিন্তু আমার আছে। আমার বিড়াল মারা যাওয়ার সব কিছুই আমাদের পরিবারের চোখের সামনেই হয়েছে। তার মারা যাওয়ার লক্ষণ থেকে খুব সহজেই কমনসেন্স ব্যবহার করে আমি বুঝেছি যে আমার বিড়ালের পাকস্থলী নষ্ট হয়েছিল। সাথে কিডনীরও সমস্যা থাকতে পারে তবে সেটা আমি শিওর না।


প্রশ্নঃ ৪ – আপনার বিড়াল কি ব্র্যান্ডের ক্যাটফুড খেত?
উত্তরঃ ভার্সেলে লাগা লারা ব্র্যান্ডের জুনিয়র ক্যাটফুড সব চেয়ে বেশী খেয়েছে। এছাড়াও স্মার্ট হার্ট নামের আর একটা ব্র্যান্ডেরও বেশ কয়েক প্যাকেট খেয়েছিল। হুইস্কাস এর কয়েক প্যাকেট ওয়েট ক্যাটফুডও খাইয়েছিলাম অনেক আগে একবার। তবে সবই এক, আপনি যেটাই খাওয়ান তা ক্ষতিকর।


প্রশ্নঃ ৫ – আপনার বিড়ালের জাত কি এবং ওজন কেমন ছিল?
উত্তরঃ বিড়ালের ব্রিড – ট্যাবি (Tabby) এবং অসুস্থ্য হওয়ার আগে সাড়ে তিন কেজির ওপরে ওজন ছিল।


প্রশ্নঃ ৬ – আপনার বিড়ালের পাকস্থলী নষ্টের জন্য যে ক্যাটফুডই দায়ি সেটা আপনাকে কোন ডাক্তার কি বলেছে না হলে আপনি কি করে বুঝলেন?
উত্তরঃ না কোন ডাক্তার বলেনি, আমি বলেছি… কেন? কোন সমস্যা? ডাক্তার ছাড়া এটা কি বলা সম্ভব নয়? একজন মানুষ যে মদ পান করতো, সে যদি কিডনী নষ্ট হয়ে মারা যায় তবে কেন তার কিডনী নষ্ট হলো এটার জন্য কি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে? কমন সেন্স কাজে লাগান। বুঝতে পারবেন। আর বিড়ালের জন্য ক্যাটফুড কতোটা ক্ষতিকর তা নিয়ে আরো তথ্য এই লেখার সামনে পেয়ে যাবেন, দেখতে থাকুন।

প্রশ্নঃ ৭ – আমি আমার বিড়ালকে অনেক দিন ক্যাটফুড খাওয়াচ্ছি, কই আমার বিড়াল তো মরেনি? ও তো সুস্থ্য আছে?
উত্তরঃ হ্যা আপনার বিড়াল মরেনি, কিন্তু আপনার বিড়াল যে সুস্থ্য আছে সেটা আপনি কিভাবে বলেন? আমার বিড়াল মারা যাওয়ার আগেও একেবারে সুস্থই ছিল, কিন্তু হঠাত করে অসুস্থ্য হয়ে ৫ দিনের মাথায় মারা গেল। এখন আপনার বিড়াল এর কিডনী বা পাকস্থলী কতো ভাগ ভালো আছে সেটা তো আর আপনি বাইরে থেকে বলে দিতে পারেন না, এমনকি কোন ভেট দেখেও বলতে পারবে না, এর জন্য বিভিন্ন টেস্ট করা প্রয়োজন। তাই হয়ত আপনি ভাবছেন আপনার বিড়াল ভালো আছে, কারণ কিডনী ও পাকস্থলী শতকরা ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেলেও কাজ করে, এটা না জেনে থাকলে গুগলে সার্চ করে জেনে আসুন। কিন্তু যখনই ৯০% পার হয়ে যাবে নষ্টের মাত্রা তখন তো আর তাকে বাচানো যাবে না। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান, বিড়ালের ক্যাটফুড পরিহার করুন যদি আপনি আপনার বিড়ালকে ভালোবেসে থাকেন।

প্রশ্নঃ ৮ – আপনার বিড়াল তো ৭ মাসে মারা গেল, আমি আমার বিড়ালকে ৩ বছর যাবত ক্যাটফুড খাওয়াচ্ছি, সে এখনো ভালো আছে।
উত্তরঃ আমার বিড়াল ৭ মাসে মারা গেছে কারণ আমি তাকে শুধুই ক্যাট ফুড খাইয়েছি, অন্য কোন খাবার না, ড্রাই ক্যাট ফুড। কিন্তু অনেকে আছে যারা প্রতিবেলায় ক্যাটফুড খাওয়ায় না, হয়ত ১ বেলা বা ২ বেলা, আবার পরিমানে অল্প খাওয়ায়। আবার অনেকে ক্যাটফুডের সাথে অন্য খাবার মিশিয়ে খাওয়ায়। তাদের ক্ষেত্রে ক্ষতিটা তুলনামূলক ভাবে কম হবে। এর জন্য বেশী দিন বেঁচে থাকতে পারে বিড়াল, কিন্তু তার পাকস্থলী কতো ভাগ ভালো আছে সেটা তো আপনি বলতে পারবেন না। আল্লাহ না করুক, যদি কিছুদিন পরেই আপনার বিড়াল সিরিয়াস ড্যামেজের সম্মুক্ষিন হয় তখন কি করবেন? তখন কিন্তু কোন ভেট কেন? ভেটের বাবা আসলেও আপনার বিড়াল বাচঁবে না, পাকস্থলী বা কিডনীর নষ্ট হওয়া রোগের কোন চিকিৎসা নেই বিড়ালের জন্য।


প্রশ্নঃ ৯ – আমার বিড়াল তো ক্যাটফুড ছাড়া আর কিছু খায়না, তাকে আমি অন্য খাবার কিভাবে অভ্যাস করাবো?

উত্তরঃ আপনার বিড়াল যদি ক্যাটফুড ছাড়া আর অন্য কোন খাবার খেতে না চায় তার মানে তার অবস্থাও আমার বিড়ালের মতোই। আমার বিড়াল নিকও তো অন্য কিছু খেতে চাইতো না। আর এর জন্য আমি চেষ্টাও করিনি অন্য কিছু খাওয়ানোর, কিন্তু আমি যদি জানতাম যে তার জন্য ঐ ক্যাটফুড ক্ষতিকর তাহলে তাকে আমি ক্যাটফুড না দিয়ে জোর করে অন্য খাবার দিতাম। সিরিঞ্জ দিয়ে খাবার নরম করে মুখে ঢুকিয়ে দিতাম। কয়েকবার এমন করলে সে ধীরে ধীরে স্বাদ পাওয়ার পরে নিজে থেকেই অন্য খাবার খাওয়া শুরু করতো।

প্রশ্নঃ ১০ – কখনও তো শুনিনি ক্যাটফুডের জন্য বিড়াল মারা যায়…
উত্তরঃ বিড়াল মারা গেলে সবাই তো মাইকিং করে বেড়ায় না, আমি না হয় সবাইকে বলছি আমার বিড়াল মারা গেছে, কারণ সেটাতে সবার ভালোর কথা ভেবে। যেন অন্যরা সাবধান হতে পারে। কিন্তু সবাই তো সেটা নাও করতে পারে। এমনকি অনেকে জানেও না তার বিড়াল হঠাত কেন মারা গেল। মরে গেলে ফেলে দেয় বা মাটি চাপা দিয়ে দেয়। অতকিছু গবেষণা করে কতোজন যে কেন মারা গেল? তাই না শুনেই থাকতে পারেন। তবে কোন দিন শোনেন নাই বলে যে সেটা ঘটবে না বা ঘটতে পারে না এটা তো নাস্তিকের মতো কথা। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

প্রশ্নঃ ১১ – বিড়ালকে ক্যাটফুড খাওয়াবো না তো কি খাওয়াবো? আমার তো সময় নেই আমি অফিস করি। ক্যাটফুড আছে বলেই বিড়াল পালছি, না হলে পালতাম না…
উত্তরঃ এটাই যদি কারণ হয় তবে আপনার বিড়াল পোষাটা উচিতও না। আপনি আপনার বিড়ালকে সময় দিতে না পারলে সেটা কাউকে অ্যাডাপশনে দিয়ে দেন, একটা বিড়ালের জীবন নষ্ট করার কোন অধিকার আপনার নেই। আর কি খাওয়াবেন? হালকা লবন হলুদ দিয়ে মাছ বয়েল করে ভাত দিয়ে মাখিয়ে দেন, আপনার বিড়ালের জন্য এটাই সব চেয়ে নিরাপদ খাবার, তাছাড়া আরো খাবার আছে। ইন্টারনেট সার্চ করে রেসিপি খুজে নিতে পারেন। আর যদি এতটুকুও না পারেন, ভদ্র ভাবে বলছি, বিড়ালটাকে অ্যাডাপশনে দিয়ে দেন। কিন্তু ক্যাটফুড খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন না।

প্রশ্নঃ ১২ – আমি আমার বিড়ালকে ক্যাটফুডই খাওয়াবো, আপনার কোন সমস্যা?
উত্তরঃ জ্বী না, আমার কোন সমস্যা নেই। আমার কাজ ছিল আপনাকে জানানো, আমি আমার কাজ কমপ্লিট করেছি। আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন মানা না মানা আপনার ব্যাপার।

তবে আপনারা যারা আমার এই লেখাটা পড়ছেন তারা অনেক ভাগ্যবান, আমি আপনাদের মতো এত ভাগ্যবান ছিলাম না, আমার বিড়ালটা মারা যাওয়ার আগে এরকম কোন লেখা পড়তে পারলে হয়ত আমার বিড়ালটা আজ বেঁচে থাকতো। আমার বিড়ালের জন্য দোয়া চেয়ে তো লাভ নেই, কারণ পশুপাখির কোন হিসেব নেবেন না আল্লাহ্ । তাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন বাংলাদেশের সব বিড়ালপ্রেমীদের ক্যাটফুডের ব্যপারে সচেতন করে তুলতে পারি।


সব শেষে আপনাদের আবার বলবো, আপনার বিড়ালকে যেকোন ধরনের ড্রাই বা ওয়েট ক্যাটফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ সব কেমিকেল দেওয়া খাবার। মানুষ এতটাই খারাপ এই দুনিয়াতে যে মানুষ হয়ে আর একটা মানুষকে ভেজাল খাবার দেয়, খাবারে কেমিকেল দেয়, রং মেশায় আর বিড়ালের খাবারে যে মিশাবে না এটা কি ভাবা যায়? ওটাতে তো আরো বেশী মেশাবে, বিড়াল তো প্রতিবাদ করতে পারবে না। তাই, কখনও টাকা খরচ করে আপনার অদরের বিড়ালের জন্য বিষ কিনবেন না যেটা ধীরে ধীরে আপনার বিড়ালকে মৃত্যুর দিকেই নিয়ে যাবে। মানুষ কে এটা জানান, ক্যাটফুড পরিহার করুন।

এছাড়াও আরো অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে আপনাদের কাছে! কমেন্টস করতে পারেন আমার লেখার নিচে। অথবা মেইল করতে পারেন আমাকে [email protected] ঠিকানায় অথবা ফেসবুকে আমাকে পেতে পারেনঃ http://facebook.com/KanakTheBoss


এবং শেষে একটি অনুরোধ… লেখাটি সব বিড়ালপ্রেমীদের মাঝে শেয়ার করুন,
কপি করুন, রি-পোষ্ট করুন, কিন্তু সবাইকে সাবধান করুন।


ভালো থাকুক সব বিড়াল, ভালো থাকুক সব বিড়ালপ্রেমী…











এছাড়াও আরো প্রচুর তথ্য পাবেন ইন্টারনেটে, সার্চ করুন, আর আপনার বিড়ালকে ক্যাটফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।



লেখাটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারেনঃ এখান থেকে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:১০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×