somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা বানান স্টেশন

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা! অতুলপ্রসাদ সেনের এই গানটা বাঙ্গালি মুখে মুখে গাইলেও বাস্তবে বাংলা ভাষার পরিচর্যা আমরা খুব কমই করি। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা হলেও কয়জনই আমরা এই ভাষা সম্পর্কে সচেতেন! কয়জনই আমরা শুদ্ধ উচ্চারণ করি, শুদ্ধ বানান লেখি! আমাদের ভাব দেখে মনে হয় যেনতেনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলেই হলো। তাহলে কী দরকার ছিল ফেব্রুয়ারি ২১, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করার? কী দরকার পড়েছিল আমাদের ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, অহীউল্লাহ ও শফিউর ভাইদের রক্ত দেওয়ার? কারণ একটাই, আমরা বাঙালি, আমাদের ভাষা বাংলা। এটা আমাদের গৌরব, আমাদের জাতিসত্বার পরিচয়। যেভাবে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর পবিত্রগ্রন্থ আল-কুরআনে বলেছেন;

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ ١٣

' হে মানবজাতি ।এক জোড়া নর ও নারী হইতে আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরষ্পর পরিচিত হতে পার । আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই অধিক মর্যাদার অধিকারী যে অধিক মুত্তাকী । [সূরা হুজরাত-১৩]

যারা আরবি লাইনে পড়েন এবং সচেতন, তারা ঠিকই আরবি মাখরাজ সম্পর্কে ভাল করেই অভিহিত আছেন এবং সেভাবেই উচ্চারণ করেন। ইংরেজিও আমরা অনেকটা শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানানে লিখি। কিন্তু আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলায় আমরা প্রচুর অবহেলা করি। তাই আমরা উচ্চারণে ও বানানে প্রচুর ভুল করি। যার প্রমাণ হচ্ছে, রাস্তা-ঘাটে বিভিন্ন সাইনবোর্ডে, বিভিন্ন পোস্টার ফ্লায়ারে, বিভিন্ন স্টেশনারি কাগজপত্রে আমরা দেখতে পায়। বিশেষ করে গ্রামের ছেলে-মেয়েদের কিছু লেখতে দিলেই প্রথম লাইনেই ২০% ভুল তো পাবই। তো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে; আজকে আমার লেখার শিরোনাম হচ্ছে ’বাংলা বানান স্টেশন’। আমরা আজকে বাংলা বানানের বেশ কিছু নিয়ম শিখব যা শিখলে পরে আপনার বাংলা বানানের ভিত্তি অনেক বেশি মজবুত হবে বলে আমি মনে করি। প্রমিত বাংলা বানানের সাইফুল বিন আ কালামের ভিডিও টিউটরিয়াল দেখতে এখানে ক্লিক করুনএখানে

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

ইংরেজিতে ‘S’এর প্রতিবর্ণ ’স’ হলেও ‘Sh, sion, tion’এর পরিবর্তে ’শ’ ব্যবহার হবে। যেমন: কমিশন, অ্যাডুকেশন,এপ্লিকেশন, শিট, মিশন, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি।
বিদেশি বাঁকা শব্দের উচ্চারনে ”অ্যা” লেখতে হবে। যেমন: অ্যাকাউন্ট, অ্যাড, অ্যাম্বুলেন্স, অ্যাকাডেমিক ইত্যাদি।
বিদেশি শব্দে æণ, ছ, এবং ষ’ ব্যবহার হবে না। যেমন: হর্ন, কর্নার, সমিল (করাতকল), সালাম, স্টার, ইনসান ইত্যাদি।
প্রশ্ন করা বোঝায় না এমন শব্দে ’কে’ আলাদা করে লেখা যাবে না। যেমন: দেলোয়ারকে আসতে বলো, মঈন উদ্দিনকে খবরটা দিও ইত্যাদি।
প্রশ্ন বোধক বাক্যে ‘কে’ আলাদা করে লেখতে হয়। যেমন: সাইফুল বিন আ. কালাম কে? Who is Saiful bin A. Kalam?, ইমতিয়াজ উদ্দিন কে? আব্দুল আহাদ কে? দেলোয়ার কে? ইত্যাদি।
দূরত্ব বোঝায় না এমন শব্দে ’দ’ বর্ণে ‘ু’ বা উ-কার হবে।
যেমন: দুরবস্থা, দুরন্ত, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুরারোগ্য, দুরূহ, দুর্গা, দুর্গতি, দুর্গ, দুর্দান্ত, দুর্নীতি, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্নাম, দুর্ভোগ, দুর্দিন, দুর্বল, দুর্জয় ইত্যাদি।
কারণ এ শব্দুগুলোর একটিতেও দুর দ্বারা দূরে নির্দেশ করে নি, তাই এগুলোতে ‍ু হবে।
যদি দূরত্ব বোঝায় তাহলে অবশ্যই ূ বা ঊ-কার হবে।
যেমন: দূর, দূরবর্তী, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ, অদূর, দূরত্ব, দূরবীক্ষণ ইত্যাদি।
যে কোন পদের শেষে ‘জীবী’ থাকলে দুটি বর্ণেই ঈ-কার হবে।
যেমন: চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী ইত্যাদি
পদের শেষে ’বলি বা আবলি’ থাকলে ই-কার হবে।
যেমন: শর্তাবলি, কার্যাবলি, ব্যাখ্যাবলি, নিয়মাবলি, পদাবলি, তথ্যাবলি ইত্যাদি
পদের শেষে ’অঞ্জলি’ থাকলে ’ল’ তে বা শব্দের শেষে সবসময় ই-কার হবে।
যেমন: শ্রদ্ধাঞ্জলি, ‍পুষ্পাঞ্জলি, গীতাঞ্জলি ইত্যাদি।
পদের শেষে গ্রস্থ না হয়ে গ্রস্ত হবে। যেমন: বাধাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ইত্যাদি।
আমরা জানি বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারের উৎপত্তি পাঁচ প্রকার; ১) তৎসম বা সংস্কৃত, ২) অর্ধ-তৎসম বা আধা-সংস্কৃত, ৩) দেশি, ৪) বিদেশি, ৫) তদ্ভব।
যে সকল যুক্তবর্ণওয়ালা বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলোতে অবশ্যই যুক্তবর্ণে ’ষ ও ণ’ হবে না বরং ’স ও ন’ হবে।
যেমন: স্টেশন, স্টোর, স্টাফ, স্ট্যান্ডার্ড, পোস্ট, স্টার, বাসস্ট্যান্ড, স্ট্যাটাস, মাস্টার, ডাস্টার, পোস্টার, স্টুডিও, লাস্ট, বেস্ট ইত্যাদি।
যদি সম্পূর্ণ বা ইংরেজিতে complete অর্থ বুঝায় তাহলে প বর্ণে ঊ-কার হবে। যেমন: পূর্ণরূপ, পূর্ণমান, সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ, অপূর্ণ ইত্যাদি।
আর যদি বারবার বা ইংরেজিতে Re অর্থে ব্যবহার হয় তাহলে প বর্ণে উ-কার হবে। যেমন: পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পুনর্জীবিত, পুনর্নিয়োগ, পুননির্মান, পুনর্মিলন, পুনর্লাভ, পুনমুদ্রিত, পুনরূদ্ধার, পুনর্বিচার, পুনর্বিবেচনা, পুনর্গঠন, পুনর্বাসন ইত্যাদি।
আরবি বর্ণ ش এর বাংলা প্রতিবর্ণ হবে শ, আর ث, س ,ص এর বাংলা প্রতিবর্ণ হবে স। যেমন: সালাম, শাহাদত, শামস, ইনসান ইত্যাদি।
সমাসবদ্ধ পদ বা বহুবচন নির্দেশক শব্দগুলোর মাঝে ফাঁক রাখা যাবে না। যেমন: চিঠিপত্র, আবেদনপত্র, ছাড়পত্র (পত্র), বিপদগ্রস্ত, হতাসাগ্রস্ত (গ্রস্ত), গ্রামগুলি, গ্রামগুলো (গুলি,গুলো), রচনামূলক, সেবামূলক (মূলক), বইসমূহ, সেবাসমূহ (সমূহ), যত্নসহ, পরিমাপসহ (সহ), ত্রুটিজনিত (জনিত), আশঙ্কাজনক, বিপদজনক (জনক), অনুগ্রহপূর্বক, উল্লেখপূর্বক (পূর্বক), প্রতিষ্ঠানভুক্ত, এমপিওভুক্তি (ভু্ক্ত,ভুক্তি), গ্রামভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক, রোলভিত্তিক (ভিত্তিক), অন্তর্ভুক্তকরণ, এমপিওভুক্তকরণ, প্রর্তিবর্ণীকরণ (করণ), আমদানিকরক, রফতানিকরাক (কারক), কষ্টদায়ক, আরামদায়ক (দায়ক), স্ত্রীবাচক (বাচক), দেশবাসী, এলাকাবাসী, গ্রামবাসী (বাসী), সুন্দরভাবে, ভালোভাবে (ভাবে), চাকরিজীবী, শ্রমজীবী (জীবী), সদস্যগণ, মুরব্বিগণ (গণ), সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী (কারী), সন্ধ্যাকালীন, শীতকালীন (কালীন), জ্ঞানহীন, দয়াহীন (হীন), দিবব্যাপী, মাসব্যাপী, বছরব্যাপী (ব্যাপী) ইত্যাদি। এ ছাড়াও যথাবিহীত, যথসময়, যথাযথ, যথাক্রমে, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহিঃপ্রকাশ শব্দগুলো এক সাথে ব্যবহার হবে।
বিদেশি শব্দে সমসময় ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন: আইসক্রিম, অ্যাকাডেমি, আরবি, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, স্টিমার, ডিগ্রি, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, স্ক্রিন, পার্টনারশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, প্রাইমারি ইত্যাদি।
’ঙ’ এবং ’ং – অনুস্বর‘ কাছাকছি হলেও এক নয়। যেখানে ঙ ব্যবহার করতে হবে সেখানে অনুস্বর ব্যবহার করা যাবে না অর্থাৎ একটির স্থলে অন্যটি ব্যবহার করা যাবে না যেটাকে বংলা ব্যকরণে বলে ধ্বনি বিপর্যয়। যেমন ঙ যোগে কিছু উদাহরণ: অঙ্ক, অঙ্কন, অঙ্কুর, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, আঙ্গুল / আঙুল, আশঙ্কা, ইঙ্গিত, উলঙ্গ, কঙ্কর, কঙ্কাল, গঙ্গা, চোঙ্গা, পঙ্কজ, পতঙ্গ, প্রাঙ্গণ, বাঙালি, ভঙ্গ, মঙ্গল, রঙ্গিন/রঙিন, লঙ্ঘন, লিঙ্গ, শঙ্কা, শঙ্খ, শৃঙ্খল, সঙ্গী, সঙ্গে, হাঙ্গাম, হুঙ্কার ইত্যাদি।
অনুস্বর যোগে কিছু উদাহরণ: কিংবদন্তি, সংজ্ঞা, সংক্রামণ, সংক্রান্ত, সংক্ষিপ্ত, সংখ্যা, সংগঠন, সংগ্রাম, সংগ্রহ, সংগৃহীত ইত্যদি।
উল্লেখ্য যে, বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি সমসময় অনুস্বর যোগে লেখতে হবে কারণ এ দুটি সংবিধানে এভাবেই লেখা আছে।
ইংরেজিতে angle, corner ( সহকারিগণ, কর্মচারী > কর্মচারিগণ, কর্মী > কর্মীগণ, আবেদনকারী > আবেদনকারিগণ ইত্যাদি।
বেশি’ এবং ‘বেশী’ ব্যবহার: ‘বহু’, ‘অনেক’ অর্থে ব্যবহার হবে ‘বেশি’। শব্দের শেষে যেমন: ছদ্মবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘বেশী’ ব্যবহার হবে।
‘ৎ’-এর সাথে স্বরচিহ্ন যোগ হলে ‘ত’ হবে। যেমন: জগৎ>জগতে জাগতিক, বিদ্যুৎ>বিদ্যুতে বৈদ্যুতিক, ভবিষ্যৎ>ভবিষ্যতে, আত্মসাৎ>আত্মসাতে, সাক্ষাৎ>সাক্ষাতে ইত্যাদি।
ইক প্রত্যয় যুক্ত হলে যদি শব্দের প্রথমে অ-কার থাকে তা পরিবর্তন হয়ে আ-কার হবে। যেমন: অঙ্গ>আঙ্গিক, বর্ষ>বার্ষিক, পরস্পর>পারস্পরিক, সংস্কৃত>সাংস্কৃতিক, অর্থ>আর্থিক, পরলোক>পারলৌকিক, প্রকৃত>প্রাকৃতিক, প্রসঙ্গ>প্রাসঙ্গিক, সংসার>সাংসারিক, সপ্তাহ>সাপ্তাহিক, সময়>সাময়িক, সংবাদ>সাংবাদিক, প্রদেশ>প্রাদেশিক, সম্প্রদায়>সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি।
সাধু থেকে চলিত রূপের শব্দসমূহ যথাক্রমে দেখানো হলো: আঙ্গিনা>আঙিনা, আঙ্গুল>আঙুল, ভাঙ্গা>ভাঙা, রাঙ্গা>রাঙা, রঙ্গিন>রঙিন, বাঙ্গালি>বাঙালি, লাঙ্গল>লাঙল, হউক>হোক, যাউক>যাক, থাউক>থাক, লিখ>লেখ, গুলি>গুলো, শুন>শোন, শুকনা>শুকনো, ভিজা>ভেজা, ভিতর>ভেতর, দিয়া>দিয়ে, গিয়া>গিয়ে, হইল>হলো, হইত>হতো, খাইয়া>খেয়ে, থাকিয়া>থেকে, উল্টা>উল্টো, বুঝা>বোঝা, পূজা>পুজো, বুড়া>বুড়ো, সুতা>সুতো, তুলা>তুলো, নাই>নেই, নহে>নয়, নিয়া>নিয়ে, ইচ্ছা>ইচ্ছে ইত্যাদি।
হয়তো, নয়তো বাদে সকল তো আলাদা হবে। যেমনÍ আমি তো যাই নি, সে তো আসে নি ইত্যাদি।
[দ্রষ্টব্য: মূল শব্দের শেষে আলাদা তো ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে।]
ঙ, ঞ, ণ, ন, ং বর্ণের পূর্বে ঁ হবে না। যেমন: খান (খাঁ), চান, চন্দ (চাঁদ), পঞ্চ, পঞ্চাশ (পাঁচ) ইত্যাদি।
“-এর”,æ -এ” ব্যবহার:
বিদেশি শব্দ অর্থাৎ বাংলায় প্রতিবর্ণীকরণ নয় এমন শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রূপ। যেমনÍ ঝগঝ-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে।
গাণিতিক শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রূপ। যেমনÍ ৫-এর চেয়ে ২ কম।
সংক্ষিপ্ত শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রূপ। যেমনÍ অ্যাগ্রো কোম্পানি লি.-এর সাথে চুক্তি।
এ ছাড়া পৃথক রূপে ব্যবহার করা যাবে না। যেমনÍ বাংলাদেশ-এর না লিখে বাংলাদেশের, কোম্পানি-এর না লিখে কোম্পানির, শিক্ষক-এর না লিখে শিক্ষকের, স্টেডিয়াম-এ না লিখে স্টেডিয়ামে, অফিস-এ না লিখে অফিসে লিখতে হবে।
বিসর্গ (ঃ ) ব্যবহার: বিসর্গ একটি বাংলা বর্ণ এটি কোনো চিহ্ন নয়। বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বিসর্গ (ঃ) হলো অঘোষ ‘হ্’-এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি। ‘হ’-এর উচ্চারণ ঘোষ কিন্তু বিসর্গ (ঃ)-এর উচ্চারণ অঘোষ। বাংলায় ভাষায় বিস্ময়াদি প্রকাশে বিসর্গ (ঃ )-এর উচ্চারণ প্রকাশ পায়। যেমনÍ আঃ, উঃ, ওঃ, ছিঃ, বাঃ । পদের শেষে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার হবে না। যেমনÍ ধর্মত, কার্যত, আইনত, ন্যায়ত, করত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদি। পদমধ্যস্থে বিসর্গ ব্যবহার হবে। যেমন: অতঃপর, দুঃখ, স্বতঃস্ফূর্ত, অন্তঃস্থল, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। অর্ধ শব্দকে পূর্ণতা দানে অর্থাৎ পূর্ণ শব্দকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশে বিসর্গ ব্যবহার করা হলেও আধুনিক বানানে ডট ( . ) ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন: ডাক্তার>ডা. (ডাঃ), ডক্টর>ড. (ডঃ), লিমিটেড> লি. (লিঃ) ইত্যাদি। বিসর্গ যেহেতু বাংলা বর্ণ এবং এর নিজস্ব ব্যবহার বিধি আছে তাই এ ধরনের বানানে (ডাক্তার>ডা., ডক্টর>ড., লিমিটেড> লি.) বিসর্গ ব্যবহার বর্জন করা হয়েছে। কারণ বিসর্গ যতিচিহ্ন নয়
[সতর্কীকরণ: বিসর্গ (ঃ)-এর স্থলে কোলন ( : ) কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। যেমন: অত:পর, দু:খ ইত্যাদি। কারণ কোলন ( : ) কোনো বর্ণ নয়, চিহ্ন। যতিচিহ্ন হিসেবে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার যাবে না। যেমন: নামঃ রেজা, থানাঃ লাকসাম, জেলাঃ কুমিল্লা, ১ঃ৯ ইত্যাদি।]
জাতিবাচক শব্দে “ ি ” হবে। যেমন: বাঙালি, মারাটি, ফরাসি ইত্যাদি।
সন্ধির কারণে ‘ ি ’ বা ‘ ী ’ হতে পারে। যেমন: রবি + ঈন্দ্র = রবীন্দ্র, যতি+ঈন্দ্র = যতীন্দ্র, কাঠ + ই = কাঠি ইত্যাদি। এভাবে আরো আছে যেমন: কঠূক্তি, মরূদ্ধান ইত্যাদি।
সংস্কৃত শব্দে ‘ ী ’ থাকলে বাংলায় তা ‘ি ’ হবে। যেমন: পক্ষী- পাখি, হস্তী- হাতি, কুম্ভীর- কুমির, গৃহিনী- গিন্নি ইত্যাদি।
সংস্কৃত নারীবাচক শব্দে ‘ ী ’ হবে। যেমন: গৃহিনী, কল্যাণী, নেত্রী, পাত্রী, গর্বধাররিণী ও ভিখারিণী ইত্যাদি।
বিস্বয় প্রকাশ করতে যে ‘কী!’ ব্যবহার সেটি অবশ্যই ‘ ী ’ হবে। যেমন রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বলেন- কী! শোভা কী! মায়াগো, কী! ¯েœহ কী! মায়াগো, তুমি কী! সুন্দুর গো! ইত্যাদি। আর এ ধরণের ‘কী’র সাথে অবশ্যই একটা বিস্বয়সূচক চিহ্ন হবে।
‘কি’ দিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর যদি হ্যাঁ বা না হয় তাহলে ‘ ি ’ হবে অন্যথায় ‘ ী ’ হবে।

তো এই ছিল আমার আমার টোটাল প্রমিত বাংলা বানানের ধারণা। হুবুহু ভিডিও টিউটরিয়াল দেখুন এখানে- ভিডিও এক, ভিডিও দুই
লেখাটা আমার ফেইসবুক ওয়ালে প্রকাশিত হয়েছে যা এখানে]

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×