somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

---বিবর্তনবাদ ও কোরআন---- ---- ইসলামে বিবর্তনবাদ---

২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রায়ই বিবর্তনবাদ নিয়ে পোস্ট দেখা যায় , যেখানে জেনে হোক আর না জেনেই হোক মুসলমান ভাইয়েরা বিবর্তনবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। আসুন তো দেখা যাক কোরান কি বলে!!
ইসলামের ইতিহাস বলে হাজার বছর আগেই মুসলমান বিজ্ঞানীরা , যেমন ইবনে খালদুন , ইবনে কাথির , ইবনে সীনা , ইবনে আরাবী ও ইখওয়ান স্কুলের চিন্তাধারার অনুসারী বিজ্ঞানীরা ডারউইনের মতোই বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে প্রমানসহ একি মত পোষন করতেন। কয়েকশ বছর আগে পর্যন্ত প্রতিটি স্কুল ও মসজিদে বিবর্তনবাদ পড়ানো হতো। কিছু কিছু পশ্চিমারা , এমনকি ডারউইনের সমসাময়িক স্যার উইলিয়াম ড্রেপার ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্বের নামকরন করেছিলেন – মহামেডান থিওরী অফ এভোলুশন। ড্রেপার স্বীকার করেছিলেন যে , মহামেডান থিওরী অফ এভোলুশন ডারউইনের থিওরী অফ এভোলুশনের থেকে উন্নততর , কারন মুসলিম বর্ননা অনুযায়ী বিবর্তন শুরু হয়েছে খনিজ পদার্থ থেকে। মুসলিম বিজ্ঞানিরা তাদের দিগনির্দেশনা কোরান থেকেই নিয়েছিলেন। দেখিতো মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে কোরান কি বলে -
৭:১১"আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি।…."
'We initiated your creation (khalaqa), and then we shaped you…' (7:11)
(খালাকা মানে সৃষ্টি করা যেমন হয় , তেমনি বিকশিত হওয়া (evolve) ও হয়।)
দেখুন এই আয়াতে একটি time gap আছে। সৃষ্টি শুরুর পরে ধাপে ধাপে আকার-অবয়ব দেয়া হয়েছে। এমন না যে রেডিমেড মানুষ তৈরী হলো। এই আয়াত নিয়ে যদি একটু গভিরভাবে চিন্তা করি , তাহলে দেখি , মানুষের যখন আকার-অবয়ব দেয়া হচ্ছিল তখন তারা জীবিত ছিল। এটা এই ইঙ্গিত করে যে প্রথম জীবন (first life) কাদামাটি (খনিজ পদার্থ) থেকে শুরু হওয়ার পরে এইযে আকার-অবয়ব দেয়া , এটাই বিবর্তন।
মানুষকে যে একেবারে রেডিমেড তৈরি করা হয়নি , একটা time gap যে ছিল তা কোরানের নিম্নের আয়াতে আরো পরিস্কার।
১৫:২৮,২৯ "আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব। অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো।"
'And lo! Thy Sustainer said unto the angels: "Behold, I am about to khalaq mortal human out of sounding clay, out of dark slim transmuted; (time lapse) and when I have fully formed and breathed into him of My Spirit, fall prostrate before him!"' (15:28-29)
মানুষের সৃষ্টি ও সময় নিয়ে আরো একটি আয়াত -
৭৬:১-২"মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।"
"Has there not been an endless time span when humans were not even a thing thought of? Verily, it is We who have khalaqed man out of a drop of sperm intermingled (with the female ovum)…We made him a being endowed with hearing and sight (ie; wisdom and reason)." (76:1-2)
মুসলমান বিবর্তনবাদীদের মতে "উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না" দিয়ে সেই সময়টাকেই বোঝানো হয়েছে , যখন মানুষ অন্য রূপে ছিল।
মানুষ সৃষ্টি যে ধাপে ধাপে করা হয়েছে তার বর্ননা -
৭১:১৪অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন রকমে সৃষ্টি করেছেন।
He has khalaqed you in successive stages.' (71-14)
৭১:১৭ আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন।
'And God has caused you to grow out of the earth in (gradual) growth.' (71-17)
১৮:৩৭তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?
…will you blaspheme against Him who has khalaqed you out of dust and then out of a drop of sperm and in the end has fashioned you into a human?' (18:37)
৭৬:২৮আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং মজবুত করেছি তাদের গঠন।
'It is We who have khalaqed them (time lapse) and strengthened their make…' (76:28).
৬৪:৩ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি।
'He…designed you and (time lapse) perfected your design…' (64:3)
আদম ও হাওয়া কোথায় সৃষ্টি হয়েছিল , বেহেশ্তে নাকি পৃথিবীতে? একারনে বহু মুসলমান মনে হয় বিবর্তনবাদের বিরোধী।
বিবর্তনবাদ সত্য নাকি মিথ্যা এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কোরানে বিবর্তন নিয়ে সরাসরি কোন আয়াত ও নেই। কোরানেই বলা আছে সৃষ্টি বা সৃষ্টি প্রক্রিয়ার কোন সাক্ষী ও নেই। তা সত্বেও মুসলমান ভাইয়েরা বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করে কোরান বিরোধীদের হাতে কোরানের বিরুদ্ধে প্রচারনার সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয়েছেন। অন্যথায় কোরান বিবর্তনবাদ তথা বিজ্ঞান বিরোধী , এ প্রচারনা ধোঁপে টিকত না।
অনেক মুসলমানের মনেই এমন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক , যেহেতু আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি ও জীবনের প্রথমাংশ বেহেশ্তেই ঘটেছে , তাই বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির দাবী কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক। আসলেই কি তাই?
২০:১২০ "অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?"
'Oh Adam! Shall I lead you to the Tree of Eternal Life, and to a kingdom of that will never decay?'" (20:120)
আমরা জানি বেহেশ্তে রোগ শোক নেই , বয়োবৃদ্ধ বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না বা মৃত্যুও হয় না। তাহলে শয়তান যে আদমকে অমর ও অবিনশ্বর (বয়োবৃদ্ধ বা ক্ষয়প্রাপ্ত না হওয়া) হওয়ার লোভ দেখালো , তাতে তো আদমের ভোলার কথা নয়। এর একটিই অর্থ হয় যে আদম জানতেন , তিনি মৃত্যুবরন করবেন এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন , যেটা কেবল এই পৃথিবীতে জন্ম নিলেই সম্ভব। তারা যদি বেহেশ্তেই থাকবেন , তাহলে তো তাদের কোন ফল খাওয়ার দরকার নেই কারন তারা তখনি অমর ও অবিনশ্বর ছিলেন। বেহেশ্তের চেয়ে ভালো কোন রাজত্ব কি হতে পারে? তাহলে শয়তান কোন রাজত্বের কথা বল্লো? সুতরাং পরোক্ষভাবে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে , আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি ও জীবনের প্রথমাংশ এই পৃথিবীতেই ঘটেছে , তাহলেই কেবল আরো ভালো রাজত্বের (বেহেশ্তের) লোভ দেখানো সম্ভব।
২০:১১৯ "এবং তোমার পিপাসাও হবে না এবং রৌদ্রেও কষ্ট পাবে না।"
and thou shalt not thirst here or suffer from the heat of the sun.' (20:119)
এর অর্থ দাড়ায় , আদম ও হাওয়া যেখানে বাস করতেন সেখানে রোদ ছিল , সূর্য ছিল। সূর্য একটাই এবং এই সৌরজগতে আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া আর কোন বসবাসযোগ্য গ্রহ বা স্থান যেহেতু নেই , আমরা আবারো এই উপসংহারে আসতে পারি যে , আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি ও জীবনের প্রথমাংশ এই পৃথিবীতেই ঘটেছে।
মুসলমানেরা বিশ্বাস করে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের পাজড়াকাঠি থেকে। তাহলে তো বিবর্তনবাদের সাথে একে মেলানো সম্ভব না। কোরানের কোথাও কি একথা বলা আছে?
মুসলমানেরা বিশ্বাস করে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের পাজড়াকাঠি থেকে। কোরানে তো আমরা এমন কোন তথ্য পাই না। আমাদের অনেক বিশ্বাসের মতৈ , এটাও ইহুদী খৃষ্টানদের থেকে ধার করা। বাইবেলে এমন তথ্য আছে , কিন্তু কোরানের কোথাও এমন তথ্য নেই। আমি বলছিনা বাইবেলে আছে বলে এটা মিথ্যা। কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী , বাইবেলে অনেক কথাই ঢুকে গেছে , যা মানুষের বানানো কথা। এই কথাটা যে বানানো না , তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়? না। কোরানে যদি বলা থাকত হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের পাজড়াকাঠি থেকে , তাহলে তখন নিশ্চিতভাবে এটা মেনে নিতে আমি সহ সকল মুসলমানের কোন আপত্তি থাকত না।
কোরানের কোথাও কিন্তু বলা নেই , কাকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে? আদমকে নাকি হাওয়াকে?
4:1 O mankind, be aware of your Lord who has created you from one soul (نفس) and He created from it its mate and sent forth from it many men and women;
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (ভুল অনুবাদ। আত্মা হবে। نفس মনে আত্মা) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গী(নী)কে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।
নাফ্‌স স্ত্রীলিঙ্গ। তাই সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছেনা কাকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে , আদমকে নাকি হাওয়াকে। কোরানে বলা হয়েছে সঙ্গী(নী)কে প্রথম নাফ্‌স থেকে সৃষ্টিকরা হয়েছে কিন্তু কি প্রক্রিয়ায় (পাজড়াকাঠি থেকে কিনা) তৈরি করা হয়েছে , তা কিন্তু বলা হয়নি। মুহম্মদ আসাদের কমেন্টারি তাৎপর্যপূর্ন -
"Muhammad Asad – (4:1)
Out of the many meanings attributable to the term nafs – soul, spirit, mind, animate being, living entity, human being, person, self (in the sense of a personal identity), humankind, life-essence, vital principle, and so forth – most of the classical commentators choose "human being", and assume that it refers here to Adam. Muhammad 'Abduh, however, rejects this interpretation (Manar IV, 323 ff.) and gives, instead, his preference to "humankind" inasmuch as this term stresses the common origin and brotherhood of the human race (which, undoubtedly, is the purport of the above verse), without, at the same time, unwarrantably tying it to the Biblical account of the creation of Adam and Eve. My rendering of nafs, in this context, as "living entity" follows the same reasoning – As regards the expression zawjaha ("its mate"), it is to be noted that, with reference to animate beings, the term zawj ("a pair", "one of a pair" or "a mate") applies to the male as well as to the female component of a pair or couple; hence, with reference to human beings, it signifies a woman's mate (husband) as well as a man's mate (wife). Abu Muslim – as quoted by Razi – interprets the phrase "He created out of it (minha) its mate" as meaning "He created its mate [i.e., its sexual counterpart] out of its own kind (min jinsiha)", thus supporting the view of Muhammad 'Abduh referred to above. The literal translation of minha as "out of it" clearly alludes, in conformity with the text, to the biological fact that both sexes have originated from "one living entity".
আদম ও ইভ (হাওয়া) নাম দুটি হিব্রু বাইবেলে আছে। হিব্রু ভাষায় আদমের অর্থ – কালো লোকটি বা মানবজাতি('the dark-colored one' or 'humankind' ) এবং ইভ অর্থ – লোকজনের মা (mother of the people)। জানেন কি ইভ বা হাওয়া নামটি কোরানের কোথাও নেই।
২৯:২০ বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।
'Say: Go all over Earth and observe how He has created (man) in the first instance.' (29:20)
বিবর্তনবাদীরা সেই কাজটিই করছে। পৃ্থিবী ঘুরে ঘুরে সৃষ্টির নমূনা সংগ্রহ করছে। তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিৎ , বিরোধীতা নয়।
২:১৭০ "আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথ
---বিবর্তনবাদ ও কোরান----
প্রায়ই বিবর্তনবাদ নিয়ে পোস্ট দেখা যায় , যেখানে জেনে হোক আর না জেনেই হোক মুসলমান ভাইয়েরা বিবর্তনবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। আসুন তো দেখা যাক কোরান কি বলে!!
ইসলামের ইতিহাস বলে হাজার বছর আগেই মুসলমান বিজ্ঞানীরা , যেমন ইবনে খালদুন , ইবনে কাথির , ইবনে সীনা , ইবনে আরাবী ও ইখওয়ান স্কুলের চিন্তাধারার অনুসারী বিজ্ঞানীরা ডারউইনের মতোই বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে প্রমানসহ একি মত পোষন করতেন। কয়েকশ বছর আগে পর্যন্ত প্রতিটি স্কুল ও মসজিদে বিবর্তনবাদ পড়ানো হতো। কিছু কিছু পশ্চিমারা , এমনকি ডারউইনের সমসাময়িক স্যার উইলিয়াম ড্রেপার ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্বের নামকরন করেছিলেন – মহামেডান থিওরী অফ এভোলুশন। ড্রেপার স্বীকার করেছিলেন যে , মহামেডান থিওরী অফ এভোলুশন ডারউইনের থিওরী অফ এভোলুশনের থেকে উন্নততর , কারন মুসলিম বর্ননা অনুযায়ী বিবর্তন শুরু হয়েছে খনিজ পদার্থ থেকে। মুসলিম বিজ্ঞানিরা তাদের দিগনির্দেশনা কোরান থেকেই নিয়েছিলেন। দেখিতো মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে কোরান কি বলে -
৭:১১"আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি।…."
'We initiated your creation (khalaqa), and then we shaped you…' (7:11)
(খালাকা মানে সৃষ্টি করা যেমন হয় , তেমনি বিকশিত হওয়া (evolve) ও হয়।)
দেখুন এই আয়াতে একটি time gap আছে। সৃষ্টি শুরুর পরে ধাপে ধাপে আকার-অবয়ব দেয়া হয়েছে। এমন না যে রেডিমেড মানুষ তৈরী হলো। এই আয়াত নিয়ে যদি একটু গভিরভাবে চিন্তা করি , তাহলে দেখি , মানুষের যখন আকার-অবয়ব দেয়া হচ্ছিল তখন তারা জীবিত ছিল। এটা এই ইঙ্গিত করে যে প্রথম জীবন (first life) কাদামাটি (খনিজ পদার্থ) থেকে শুরু হওয়ার পরে এইযে আকার-অবয়ব দেয়া , এটাই বিবর্তন।
মানুষকে যে একেবারে রেডিমেড তৈরি করা হয়নি , একটা time gap যে ছিল তা কোরানের নিম্নের আয়াতে আরো পরিস্কার।
১৫:২৮,২৯ "আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব। অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো।"
'And lo! Thy Sustainer said unto the angels: "Behold, I am about to khalaq mortal human out of sounding clay, out of dark slim transmuted; (time lapse) and when I have fully formed and breathed into him of My Spirit, fall prostrate before him!"' (15:28-29)
মানুষের সৃষ্টি ও সময় নিয়ে আরো একটি আয়াত -
৭৬:১-২"মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।"
"Has there not been an endless time span when humans were not even a thing thought of? Verily, it is We who have khalaqed man out of a drop of sperm intermingled (with the female ovum)…We made him a being endowed with hearing and sight (ie; wisdom and reason)." (76:1-2)
মুসলমান বিবর্তনবাদীদের মতে "উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না" দিয়ে সেই সময়টাকেই বোঝানো হয়েছে , যখন মানুষ অন্য রূপে ছিল।
মানুষ সৃষ্টি যে ধাপে ধাপে করা হয়েছে তার বর্ননা -
৭১:১৪অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন রকমে সৃষ্টি করেছেন।
He has khalaqed you in successive stages.' (71-14)
৭১:১৭ আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন।
'And God has caused you to grow out of the earth in (gradual) growth.' (71-17)
১৮:৩৭তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?
…will you blaspheme against Him who has khalaqed you out of dust and then out of a drop of sperm and in the end has fashioned you into a human?' (18:37)
৭৬:২৮আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং মজবুত করেছি তাদের গঠন।
'It is We who have khalaqed them (time lapse) and strengthened their make…' (76:28).
৬৪:৩ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি।
'He…designed you and (time lapse) perfected your design…' (64:3)
আদম ও হাওয়া কোথায় সৃষ্টি হয়েছিল , বেহেশ্তে নাকি পৃথিবীতে? একারনে বহু মুসলমান মনে হয় বিবর্তনবাদের বিরোধী।
বিবর্তনবাদ সত্য নাকি মিথ্যা এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কোরানে বিবর্তন নিয়ে সরাসরি কোন আয়াত ও নেই। কোরানেই বলা আছে সৃষ্টি বা সৃষ্টি প্রক্রিয়ার কোন সাক্ষী ও নেই। তা সত্বেও মুসলমান ভাইয়েরা বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করে কোরান বিরোধীদের হাতে কোরানের বিরুদ্ধে প্রচারনার সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয়েছেন। অন্যথায় কোরান বিবর্তনবাদ তথা বিজ্ঞান বিরোধী , এ প্রচারনা ধোঁপে টিকত না।
অনেক মুসলমানের মনেই এমন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক , যেহেতু আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি ও জীবনের প্রথমাংশ বেহেশ্তেই ঘটেছে , তাই বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির দাবী কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক। আসলেই কি তাই?
২০:১২০ "অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?"
'Oh Adam! Shall I lead you to the Tree of Eternal Life, and to a kingdom of that will never decay?'" (20:120)
আমরা জানি বেহেশ্তে রোগ শোক নেই , বয়োবৃদ্ধ বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না বা মৃত্যুও হয় না। তাহলে শয়তান যে আদমকে অমর ও অবিনশ্বর (বয়োবৃদ্ধ বা ক্ষয়প্রাপ্ত না হওয়া) হওয়ার লোভ দেখালো , তাতে তো আদমের ভোলার কথা নয়। এর একটিই অর্থ হয় যে আদম জানতেন , তিনি মৃত্যুবরন করবেন এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন , যেটা কেবল এই পৃথিবীতে জন্ম নিলেই সম্ভব। তারা যদি বেহেশ্তেই থাকবেন , তাহলে তো তাদের কোন ফল খাওয়ার দরকার নেই কারন তারা তখনি অমর ও অবিনশ্বর ছিলেন। বেহেশ্তের চেয়ে ভালো কোন রাজত্ব কি হতে পারে? তাহলে শয়তান কোন রাজত্বের কথা বল্লো? সুতরাং পরোক্ষভাবে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে , আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি ও জীবনের প্রথমাংশ এই পৃথিবীতেই ঘটেছে , তাহলেই কেবল আরো ভালো রাজত্বের (বেহেশ্তের) লোভ দেখানো সম্ভব।
২০:১১৯ "এবং তোমার পিপাসাও হবে না এবং রৌদ্রেও কষ্ট পাবে না।"
and thou shalt not thirst here or suffer from the heat of the sun.' (20:119)
এর অর্থ দাড়ায় , আদম ও হাওয়া যেখানে বাস করতেন সেখানে রোদ ছিল , সূর্য ছিল। সূর্য একটাই এবং এই সৌরজগতে আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া আর কোন বসবাসযোগ্য গ্রহ বা স্থান যেহেতু নেই , আমরা আবারো এই উপসংহারে আসতে পারি যে , আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি ও জীবনের প্রথমাংশ এই পৃথিবীতেই ঘটেছে।
মুসলমানেরা বিশ্বাস করে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের পাজড়াকাঠি থেকে। তাহলে তো বিবর্তনবাদের সাথে একে মেলানো সম্ভব না। কোরানের কোথাও কি একথা বলা আছে?
মুসলমানেরা বিশ্বাস করে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের পাজড়াকাঠি থেকে। কোরানে তো আমরা এমন কোন তথ্য পাই না। আমাদের অনেক বিশ্বাসের মতৈ , এটাও ইহুদী খৃষ্টানদের থেকে ধার করা। বাইবেলে এমন তথ্য আছে , কিন্তু কোরানের কোথাও এমন তথ্য নেই। আমি বলছিনা বাইবেলে আছে বলে এটা মিথ্যা। কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী , বাইবেলে অনেক কথাই ঢুকে গেছে , যা মানুষের বানানো কথা। এই কথাটা যে বানানো না , তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়? না। কোরানে যদি বলা থাকত হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের পাজড়াকাঠি থেকে , তাহলে তখন নিশ্চিতভাবে এটা মেনে নিতে আমি সহ সকল মুসলমানের কোন আপত্তি থাকত না।
কোরানের কোথাও কিন্তু বলা নেই , কাকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে? আদমকে নাকি হাওয়াকে?
4:1 O mankind, be aware of your Lord who has created you from one soul (نفس) and He created from it its mate and sent forth from it many men and women;
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (ভুল অনুবাদ। আত্মা হবে। نفس মনে আত্মা) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গী(নী)কে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।
নাফ্‌স স্ত্রীলিঙ্গ। তাই সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছেনা কাকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে , আদমকে নাকি হাওয়াকে। কোরানে বলা হয়েছে সঙ্গী(নী)কে প্রথম নাফ্‌স থেকে সৃষ্টিকরা হয়েছে কিন্তু কি প্রক্রিয়ায় (পাজড়াকাঠি থেকে কিনা) তৈরি করা হয়েছে , তা কিন্তু বলা হয়নি। মুহম্মদ আসাদের কমেন্টারি তাৎপর্যপূর্ন -
"Muhammad Asad – (4:1)
Out of the many meanings attributable to the term nafs – soul, spirit, mind, animate being, living entity, human being, person, self (in the sense of a personal identity), humankind, life-essence, vital principle, and so forth – most of the classical commentators choose "human being", and assume that it refers here to Adam. Muhammad 'Abduh, however, rejects this interpretation (Manar IV, 323 ff.) and gives, instead, his preference to "humankind" inasmuch as this term stresses the common origin and brotherhood of the human race (which, undoubtedly, is the purport of the above verse), without, at the same time, unwarrantably tying it to the Biblical account of the creation of Adam and Eve. My rendering of nafs, in this context, as "living entity" follows the same reasoning – As regards the expression zawjaha ("its mate"), it is to be noted that, with reference to animate beings, the term zawj ("a pair", "one of a pair" or "a mate") applies to the male as well as to the female component of a pair or couple; hence, with reference to human beings, it signifies a woman's mate (husband) as well as a man's mate (wife). Abu Muslim – as quoted by Razi – interprets the phrase "He created out of it (minha) its mate" as meaning "He created its mate [i.e., its sexual counterpart] out of its own kind (min jinsiha)", thus supporting the view of Muhammad 'Abduh referred to above. The literal translation of minha as "out of it" clearly alludes, in conformity with the text, to the biological fact that both sexes have originated from "one living entity".
আদম ও ইভ (হাওয়া) নাম দুটি হিব্রু বাইবেলে আছে। হিব্রু ভাষায় আদমের অর্থ – কালো লোকটি বা মানবজাতি('the dark-colored one' or 'humankind' ) এবং ইভ অর্থ – লোকজনের মা (mother of the people)। জানেন কি ইভ বা হাওয়া নামটি কোরানের কোথাও নেই।
২৯:২০ বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।
'Say: Go all over Earth and observe how He has created (man) in the first instance.' (29:20)
বিবর্তনবাদীরা সেই কাজটিই করছে। পৃ্থিবী ঘুরে ঘুরে সৃষ্টির নমূনা সংগ্রহ করছে। তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিৎ , বিরোধীতা নয়।
২:১৭০ "আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:২২
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×