somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইকের অপব্যবহার

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো সম্পত্তি আত্নসাত করা বা কাউকে দৈহিক কষ্ট দেওয়াই শুধু জুলুম নয়, বরং আরবী ভাষায় ‘জুলুমের’ সংজ্ঞা এই দেয়া হয়েছে যে, “কোন জিনিসকে অনুপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করাই জুলুম”। কোন জিনিসের অপব্যবহার যেহেতু নিশ্চই কারো না কারো কষ্টের কারণ হয়, তাই এমন যে কোন ব্যবহারই ‘জুলুমের’ আওতায় পড়বে যা অন্যের কষ্টের কারণ হয়। আর যে ব্যবহার দ্বারা অন্যে কষ্ট পায়, শরীয়তের বিধানে তা কবীরাহ গোনাহ। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক কবীরা গোনাহ এত বহুল প্রচলিত যে, এখন সচরাচর তা’ গোনাহ হওয়ার অনুভূতিও আর অবশিষ্ট নেই।

কষ্টদায়ক এরুপ অসংখ্যা পন্থার মধ্য থেকে অত্যন্ত কষ্টদায়ক একটি পন্থা হল মাইকের অপব্যবহার। এই অল্প কিছুদিন পূর্বে একটি ইংরেজি দৈনিকে জনৈক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন যে, কোন কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে রাত তিনটা পর্যন্ত মাইকে গান বাদ্য চলতে থাকে। ফলে আশেপাশের অধিবাসীরা অস্থিরভাবে এপাশ ওপাশ করে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করেন। এ সমস্যা শুধু বিবাহ অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সব জায়গায় এরুপ দেখা যায় যে, কেউ মাইক চালু করলে সে তার শব্দকে প্রয়োজনের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং আশেপাশের দুর্বল, অসুস্থ লোকদের প্রতি এবং যারা এই শব্দ শুনতে চায় না তাদের প্রতি আদৌ ভ্রুক্ষেপ করেনা।

গান-বাদ্যের বিষয় না হয় বাদই দিলাম, কারন উচ্চ শব্দে এগুলো বাজানোতে দ্বিগুন গোনাহ রয়েছে। নিখাঁদ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে লোকজনকে জোর-জবরদস্তি শুনতে বাধ্য করা শরীয়তে কোনক্রমেই যায়েজ নেই। কিন্ত আফসোসের ব্যাপার এই যে, আমাদের সমাজে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজকগণ শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ এই বিধানটির প্রতি একেবারেই মনোযোগ দেন না। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ সমূহের মাইকের আওয়াজও বহুদূর পর্যন্ত আঘাত করতে থাকে। যতক্ষণ তা’ চলতে থাকে, ততক্ষণ কোন মানুষ নিজ গৃহে না আরামে ঘুমাতে পারে, না একাগ্রমনে কোন কাজ করতে পারে। মাইকযোগে আযানের শব্দ দূরে পৌছানো তো যথার্থ, কিন্ত মসজিদে যে ওয়াজ, বক্তৃতা, যিকির বা তেলাওয়াত মাইকে করা হয়, তার শব্দ অনেক দূরে পৌছানো জায়েজ নেই। প্রায়শই দেখা যায় যে, মসজিদে অল্প কিছু লোক ওয়াজ বা শিক্ষা দান মজলিসে বসেছে, যাদের নিকট শব্দ পৌছানোর জন্য মাইকের আদৌ প্রয়োজন নেই কিংবা শুধুমাত্র ভিতরের মাইক দ্বারা সুন্দরভাবে কাজ চলতে পারে, কিন্তু তার পরও বাইরের মাইক ফুল স্পীডে চলতে থাকে। ফলে এর শব্দ মহল্লার প্রত্যেকটি ঘরে এমনভাবে পৌছে যে, কেউ এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।

আমার মনে আছে যে, আমি একবার লাহোর গিয়েছিলাম। যে বাড়ীতে আমি অবস্থান করছিলাম, তার তিনদিকে অল্প অল্প ব্যবধানে তিনটি মসজিদ ছিল। দিনটি ছিল জুমার দিন। ফজর নামাজের পর অনতিবিলম্বে তিনটি মসজিদেরই লাউড স্পীকার ফুল ভলিউমে অন করা হয়। প্রথমে শিক্ষাদান (দরস) চলতে থাকে, তারপর ছোটরা তেলাওয়াত আরাম্ভ করে। তারপর হামদ, নাআত ও গজল পাঠের ধারাবাহিকতা আরাম্ভ হয়। এমনকি ফযর থেকে নিয়ে জুমার নামাজ পর্যন্ত এই ধর্মীয় প্রোগ্রাম এমন নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে যে, বাড়ীর মধ্যে কান পেতেও কথা শোনা যাচ্ছিল না। আল্লাহর শোকর যে, তখন সে বাড়ীতে কোন অসুস্থ ব্যক্তি ছিল না। কিন্তু আমি ভাবছিলাম যে, আল্লাহ না করুন, কোন লোক অসুস্থ হয়ে পড়লে তার শান্তিতে ঘুমানোর জন্য তো এই পরিবেশে কোন পথই খোলা নেই।

কোন কোন মসজিদের ব্যপারে এরুপও শুনেছি যে, সেখানে খালি মসজিদেই মাইকে টেপ চালানো হয়। তখন মসজিদে কোন শ্রোতা থাকেনা। কিন্তু পুরো মহল্লাবাসীকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় এই টেপ শুনতে হয়।

যাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ রয়েছে, তারা যে দল বা মতেরই হোক না কেন, এমন কাজ কখনই করতে পারেনা। এ জাতীয় অনিয়ম ঐ সমস্ত মসজিদেই হয়ে থাকে, যেগুলোর ব্যবস্থাপনা থাকে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের হাতে। অনেক সময় তারা এই কাজটিকে ভাল নিয়তেই করে থাকে। তারা একে দ্বীন প্রচারের একটি মাধ্যম এবং দ্বীনের খেদমত বলে মনে করে। কিন্ত আমাদের সমাজে এ ভ্রান্ত ধারনাটিও অত্যন্ত ব্যপক যে, ভাল নিয়তে কোন অন্যায় কাজ করলেও তা বৈধ ও দুরস্ত হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে কোন কাজ বৈধ হওয়ার জন্য শুধু নিয়্যাত ভালো হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং তার পদ্ধতিও সঠিক হওয়া জরুরী। মাইকের এমন অন্যায় ব্যবহার দাওয়াত ও তাবলীগের মূলনীতির পরিপন্থীই শুধু নয় বরং এর দ্বারা বিরুপ ফলাফলও প্রকাশ পেয়ে থাকে।

যারা এ ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার তাদের সমীপে নিখাঁদ সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার সাথে নিম্নে কয়েকটি বিষয় পেশ করছি-

১. প্রখ্যাত মুহাদ্দিস উমর ইবনে শাব্বা পবিত্র মদীনার ইতিহাস সম্পর্কে চার ভলিউমে বিশাল এক গ্রন্থ রচনা করেছেন। বড় বড় আলিম ও মুহাদ্দিসগণ সবসময় এই কিতাবের উদ্বৃতি দিয়ে থাকেন। এই কিতাবে তিনি তাঁর নিজস্ব ‘সনদে’ একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, “একজন বক্তা হযরত আয়েশা রাঃ এর গৃহের ঠিক সন্মুখে অত্যন্ত উচুঁ আওয়াজে ওয়াজ করতেন। সে যুগে যে মাইক ছিল না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তার আওয়াজ ছিল খুব উচুঁ। ফলে হযরত আয়েশা রাঃ এর একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটতো। তখন ছিল হযরত উমর রাঃ এর খেলাফত কাল। হযরত আয়েশা রাঃ হযরত উমর রাঃ এর নিকট অভিযোগ করেন যে, এই ব্যক্তি উচ্চ স্বরে আমার ঘরের সামনে ওয়াজ করে এতে আমার কষ্ট হয়। এর আওয়াজের কারনে আমি অন্যের কথা শুনতে পাই না। হযরত উমর রাঃ লোকটির কাছে পয়গাম পাঠিয়ে সেখানে ওয়াজ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর সেই বক্তা পুনরায় সেখানে ওয়াজ করতে আরাম্ভ করেন। হযরত উমর রাঃ জানতে পেরে নিজে গিয়ে তাকে পাকড়াও করেন এবং শাস্তি প্রদান করেন"। (আখবারুল মদীনা, উমর ইবনে শাব্বা প্রণিত, ১৫/১)

(আগামী পর্বে সমাপ্য)
লেখক- মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী
অনুবাদ- মাওলানা জালাল উদ্দিন

মাইকের অপব্যবহার ২
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×