সরকার মনে হয় ব্লগার গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। আজকে (২.৪.২০১৩) তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। সাধুবাদ জানাবো নাকি নিন্দাবাদ জানাবো- এখনো বুঝতে পারছি না। চলুন একটু কথা বলি...
ইন্টারনেট জিনিসটা আবিস্কারের মূলমন্ত্রই ছিলো অবাধ তথ্যের ভাণ্ডার মানুষকে জানানো। এই মূলমন্ত্রের হাত ধরেই পর্যায়ক্রমে জন্ম নিয়েছে ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো ফ্রি সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো। যেহেতু এসব সামাজিক সাইটগুলো পুরোটাই মুফতে ব্যবহার করা যায়, সে কারণে পত্রিকা, পোস্টার, লিফলেটের চেয়ে এগুলোতে প্রচারনা চালানো অনেক সহজসাধ্য। আরেকটি বড় অনুঘটক হচ্ছে, এসব ইন্টারনেটকেন্দ্রিক সাইটগুলোর ব্যবহারকারী অধিকাংশই তরুণ এবং নবীনরা। যাদেরকে সহজেই আবেগ দিয়ে, সস্তা শ্লোগান দিয়ে, মিথ্যাযুক্তি দিয়ে উত্তেজিত করা যায়, মোটিভেট করা যায়। আবার নাস্তিক সেজে অনেকেই নিজেকে উল্টোস্রোতের একজন হিসেবে জাহির করে। কার্ল মার্ক্স, ট্রটস্কি, চে, মাও, ক্যাস্ত্রোর মতো একটা ভাবসাব ধারণ করে ইন্টারনেট দাপিয়ে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ভাববাদী বা সাম্যবাদী বাণী বা লেখা পোস্ট করে অপেক্ষাকৃত তরুণদের কাছ থেকে বিস্ময়বোধক বাহবা কুড়ায়। দেখা যায় এভাবেই নাস্তিক, ভণ্ড, প্রতারকরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তরুণদের মগজ ধোলাই করছে। যেহেতু আমরা বাকস্বাধীনতার স্বর্গরাজ্যে (!) বাস করছি, সুতরাং যে কেউ যেকোনো মতবাদ, মতাদর্শ প্রচার করতে পারে।
একজন নাস্তিক মানে ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করা। ঈশ্বর বলতে কিছু নেই- এই অপ্তবাক্যকে নিজের বিশ্বাসে ধারণ করা। মূলত এটাও একটা মতবাদ বা ধর্মের মতোই, নাস্তিক ধর্ম। যেখানে কোনো ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা যাবে না। সবকিছু প্রকৃতির খেয়ালে হচ্ছে। হোক, সবকিছু প্রকৃতি থেকেই হলে আমাদের কী করার আছে? তবে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, নাস্তিক হলেই যে আমাকে অন্যান্য ধর্মের ব্যাপারে কটাক্ষ করতে হবে এটা কিন্তু একজন সাচ্চা নাস্তিকের ব্যকরণে পড়ে না। মুসলিম হলেই যেমন হিন্দুদের দেব-দেবী নিয়ে কটাক্ষ করা যাবে না তেমনি খ্রিস্টান হলেই কিন্তু মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না। এটা যার যার ধর্ম যেমন নিষেধ করেছে তেমনি মানবপ্রজাতির স্বাভাবিক ভব্যতাও।
আপনার সঙ্গে, আপনার লালিত বিশ্বাসের সঙ্গে ইসলামের বা অন্য যে কোনো ধর্মের আদর্শিক বা বিশ্বাসিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। তাদের ধর্মীয় উপাসনা, আচার-সংস্কৃতি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, আপনার কাছে সেগুলো নিপাট অর্থহীন এবং পাগলামি আচরণ মনে হতে পারে; তাই বলে সেসব উপাসনা, আচারকে তো আপনি গালাগাল করতে পারেন না। সেগুলো লিখে জনতার মাঝে বিতরণ করাটাও তো আপনার উচিত নয়। বাকস্বাধীনতা মানেই তো এই নয় যে, আপনি এমন কোনো কথা বলবেন যা শুনে অন্যান্য মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে। যে বাক (কথা) মানুষকে বাকস্বাধীনতার বদলে বাকরুদ্ধ করে ফেলে সেটা আসলে কোন ধরনের বাক-বাকুম সেটা ভাববার বিষয়।
এখন সরকার যে তাদের পিছনে লেগেছে এটা নিতান্তই অজ্ঞতাপ্রসূতে এবং অবিবেচনাসুলভ একটি কাজ। এর দ্বারা কী লাভ হচ্ছে? যে সরকার নাস্তিক ব্লগারদের আন্দোলনে প্রথম থেকেই আহ্লাদিত, সেই সরকার আবার নাস্তিকদের ধরে জেলে পুড়ছে। একেই বলে- ‘সাপ হইয়া দংশন ওঝা হয়ে ঝাড়া’।
এর ভেতরে রাজনীতির ভেলকিও আছে। সরকার জামায়াত-শিবির নিয়া এমনিতেই লেজে গোবরে অবস্থায় আছে। এর মধ্যে আবার আল্লামা শফী সাহেবের লংমার্চ। সরকার এই সতঃস্ফূর্ত লংমার্চ থামানোর জন্য নানন দেন-দরবার শুরু করেছে। কিন্তু হেফজতের নেতারা সিদ্ধান্তে অনড়। তাদের ১৩ দফা দাবি মানা হলেই কেবল তারা লংমার্চ প্রত্যাহার করবে। সরকার সম্ভবত সেই ১৩ দফার পোশাকি বাস্তবায়ন শুরু করছে। হেফাজতে ইসলামকে থামানোর একটা কৌশলি অভিযান। এটাকে সরকারের বোধোদয় ভাববার মতো কোনো ঘটনা ভাবাটা নিতান্ত বোকামিই হবে। এরকম আরো কিছু গ্রেফতার নাটক হয়তো হবে। শুধু শুধু গ্রেফতার হবে তারা। তারপর জামাই আদরে থাকবে। যেমন থেকেছে শাহবাগে।