মতিঝিলে যে গণহত্যা ঘটেছে, সেটা নিয়ে কারো দ্বিমত থাকা উচিত নয়। কতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কতোজনের লাশ গুম করা হয়েছে- সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকতে পারে, তবে সেখানে অবস্থানরত হেফাজতকর্মীদের যে গণহারে হত্যা করা হয়েছে, এটা নেটকেন্দ্রিক সবাই বুঝেছেন। যদিও আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো কাল থেকে যে নিদারুণ মিথ্যাচার চালাচ্ছে- আমি এককথায় অভিভূত। বিস্ময়াভিভূত! এতোদিন কেবল নানা ঘটনায় শুনতাম যে মিডিয়া মিথ্যাচার করে। কিন্তু কাল আমি নিজের চোখে দেখলাম আমাদের মিডিয়ার মিথ্যার কারসাজি কতোটা নগ্ন হয়।
৬ মে রাত পরবর্তী কাচপুর-মাতুয়াইলে যে সংঘর্ষ হয়, সেখানে যে দুজন বিজিবি আর একজন পুলিশ মারা গেছে- এই সংবাদ বার বার তারা দেখাচ্ছে। হেডলাইনে, স্ক্রলে, নিউজে... সবখানে। কিন্তু একবারের জন্যও উচ্চারণ করছে না, মতিঝিলে ওইদিন রাতে ঠিক কতোজন নিহত হয়েছে। বরং মিডিয়া খুব রগরগে ভাষায় প্রচার করছে- কীভাবে হেফাজতের নেতারা শাপলা চত্বর ছেড়ে গেলো, কীভাবে তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেলো, মাত্র ১০ মিনিটে অবস্থান ছেড়ে দিলো... এইসব। বাস্তবতা কি আসলে তাই? রাত পৌনে তিনটায় শুরু হয়ে সাড়ে চারটা পর্যন্ত যে হত্যাকাণ্ড চললো, তাকে ১০ মিনিটের উচ্ছেদ অভিযান কীভাবে বলবেন আপনি? যারা ওইরাতে এলাকার বাসিন্দা ছিলেন, তাদের কাছে জানুন যে, এই হত্যাকাণ্ড কতোক্ষণ ধরে চলেছে! মাত্র ১০ মিনিটে কি সারা মতিঝিল এলাকাজুড়ে এতো কিছু ভাংচুর হওয়া সম্ভব? ১০ মিনিটের জন্য কি দশ হাজারী বাহিনীর প্রয়োজন হয়েছিলো?
আমার এক পরিচিতজনের চারজন আত্মীয় ছিলেন ওইরাতে মতিঝিলে। তাদের তিনজন আহত অবস্থায় ফিরে এসেছেন, কিন্তু একজনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। যারা আহত হয়ে ফিরে এসেছেন সবাই মোটামুটি আহত । একজনের চেহারা ঝলসে গেছে বারুদে । একজনের
হাতে ছড়ড়া লেগেছে । আরেকজন হাটতে গেলেই পায়ের নিচের ক্ষত থেকে রক্ত বেরোয়।
এই তথ্য আমাকে ওই পরিচিতজনই জানালেন। তার নিখোঁজ খালাতো ভাই মাদানী নগর মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। যেখানে কাল সকালে ছাত্রলীগ এবং র্যাব-পুলিশ একযোগে আক্রমণ চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাকে ওই রাতের পর থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ নিখোঁজ।
কী বলবেন একে আপনি? কোন একটা পোস্টে যেনো একজনকে মন্তব্য করতে দেখলাম, ... তারা শহিদ হওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছিলো। এখন তারা শহিদ হয়েছে, তাদের জন্য এতো কান্নাকাটি আর চিৎকার কেনো?
জনাবকে বলছি, আপনি যদি নিশ্চয়তা দেন যে, আমার পরিচিতজনের আত্মীয়টি শহিদ হয়েছে, তার লাশ পড়ে আছে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে, তাহলে তার পরিবার কোনোদিনই চিৎকার করে কাঁদবে না। কিন্তু আপনি যদি তার লাশটি না দেখাতে পারেন, তার খোঁজ না দিতে পারেন তাহলে তারা কিসের সান্ত্বনা নেবেন? কিসের নিশ্চয়তা পাবেন? শহিদ নাকি নিখোঁজ?
এমন আরো অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছেন ওই রাতে। কোথায় তারা কেউ জানে না। বেঁচে আছে না মরে গেছে, সেই খবরও কেউ দিতে পারছে ন। প্রত্যক্ষদর্শী যারা বেঁচে ফিরতে পেরেছেন তারা শুধু বলছেন, চারদিকে কেবল লাশ আর লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। কিন্তু এতো লাশ কই গেলো? দিগন্ত টিভি আর ইসলামিক টিভি কি জানে, কোথায় আছে লাশগুলো?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬