somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা”

০১ লা মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের আগে : [দৃশ্য : ১]
.
– ‘এই...’
– ‘বলো।’
– ‘আরে শুনো-না!’
– ‘আরে শুনছি তো। কি বলবা বলো।’
– ‘কী করছো?’
– ‘যুহরের নামাজ পড়ে কুর‌আন তেলাওয়াত করছিলাম। আর এখন তোমার সাথে কথা বলছি। আর তুমি নামাজ পড়ছো তো?’
– ‘না এখনও পড়িনি।’
– ‘কেন? নামাজ পড়া লাগবে না? রমজান মাসেও এত অবহেলা!’
– ‘আরে পড়বো তো।’
– ‘কখন? নামাজের ওয়াক্ত শেষ হলে?’
– ‘আরে না, এখন‌ই পড়ব।’
– ‘আচ্ছা, নামাজ পড়ো আগে। তারপর কথা হবে।’
– ‘ঠিক আছে।’

২০-২৫ মিনিট পর সেই চেংড়া (ছেলে) আবার তার জিএফকে ফোন দেয়– ‘হ্যাঁ বাবু, নামাজ শেষ।’
– ‘ভালো ছেলে! উমম্মা...’
– ‘এই থামো! রমজান মাসে উমম্মা যায়েজ নয়।’
– ‘এ হ‌ইছে! আইছে আমার মুফতি-সাব রে! আরে বাবা, ফোনে-ফোনে উমম্মা দিলে রোযার কিচ্ছু হবে না। উপরন্তু, ইন রিয়্যালিটি, ইভেন ইফ ইউ কিস, নাথিং উইল হ্যাপেন, যদি না...’
– ‘যদি-না কি?’
– ‘কিছু না।’
– ‘হুঁ, বুঝেছি।’
– ‘হিহিহি, দুষ্টু ছেলে!’
– ‘তোমার মতো এরকম পরহেজগার দ্বীনদার জিএফ পেয়ে সত্যিই আমি গর্বিত।’
– ‘এ হ‌ইছে! থামো তো।’
– ‘আচ্ছা, একটা কথা বলি?’
– ‘হুম, সিউর।’
– ‘তুমি আমাকে কুরআন পড়া শেখাবে?’
– ‘হোয়াই নট, কিন্তু কীভাবে সম্ভব?’
– ‘কেন, যখন আমরা দেখা করি তখন শিখিয়ে দিবা। ফোনে তো কুরআন এপ আছেই।’
– ‘আমার কুরআন শিখতে মক্তবে এক বছর লেগেছে। আর তোমাকে একটু দেখিয়ে দিলেই পারবে? তা-ও আবার তোমার মতো ছেলে, হাহা!’
– ‘সব সময় মজা করো না তো। আমি মক্তবে অনেকটাই শিখেছিলাম, আর কিছুদিন গেলেই হুজুর আমার হাতে কুরআন তুলে দিত। কিন্তু আমার ফ্যামিলি গ্রাম ছেড়ে শহরে আসাতে আর পড়া হয়নি।’
– ‘ও আচ্ছা। তাহলে ঠিক আছে। তুমি টেনশন ক‌ইরো না। আমি তোমার টুনটুনি তো আছিই। সময় সুযোগে দেখা করিও। অথবা রাতে ভিডিও কল দিও। তখন না-হয় শেখাবো।’
– ‘আহা, এরকম জিএফ কয় জনের ভাগ্যে জোটে। সত্যিই আমি তোমাকে আমার জীবনে পেয়ে নিজেকে মহা ভাগ্যবান মনে করি।’
– ‘হ, এজন্যই তো রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় অন্য মেয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকো। তখন মেজাজটা যা খারাপ হয় না! ইচ্ছে করে, তোমার চোখ দুটোই উপড়ে ফেলি।’
– ‘তাদের দিকে চোখ গেলে আমি কি করবো, বলো? আর একটু আধটু দেখলে সমস্যা নাই, বুঝছো? তুমি অগত্যা টেনশন করো কেন? তোমাকে ছেড়ে কখন‌ই চলে যাবো না। আমাদের এই পবিত্র ভালোবাসা বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।’
– ‘একটু আধটু মানে? বেগানা নারীর দিকে তাকিয়ে থাকা যায়েজ নাই। সো, তুমি দেখবা না, দেখবা না, দেখবা না! বাস, আর কিছু শুনতে চাই না।’
– ‘আরে বাবু রাগ করো কেন? ঠিক আছে দেখবো না। এবার খুশি তো?’
– ‘উমম্মা...’
– ‘উম্মা!’
– ‘ঠিক আছে। রাখলাম ফোন। আম্মু ডাকছে। আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ।’
– ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম। ওকে বায়...’
.
[দৃশ্য : ২]

– ‘রোজা আছো?’
– ‘দেখে কি মনে হচ্ছে?’
– ‘তুমি রোজা আছো কি-না, সেটা জিজ্ঞেস করেছি?’
– ‘এত রেগে যাচ্ছ কেন?’
– ‘আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি।’
– ‘না মানে, আজকে রোজা রাখতে পারি নাই।’
– ‘কেন? সমস্যা কী? ঋতুস্রাব হয়েছে নাকি?’
– ‘তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কি বলো এসব! আমি ছেলে মানুষ!’
– ‘এবং তুমি সুস্থ-সবল ইয়ং ম্যান! তবুও রোজা রাখোনি। তাই তোমার সাথে আজ থেকেই ব্রেকাপ।’
– ‘কী বলো এসব? প্লিজ, এভাবে বলো না। আজ সাহরীর সঠিক সময়ে জাগতে পারিনি। এজন্য সাহরী খেতে পারি নাই।’
– ‘সাহরীর সময় টের পাওনি মানে? কীসের ঘুম ঘুমাও! আম্মায় কি জেগে দেয় না?’
– ‘জেগে দেয় তো। কিন্তু কালকে যে কীভাবে ডেকেছে আল্লাহ‌ই ভালো জানেন। তুমি পাশে থাকলে তা-ও চিন্তা করতে হতো না।’
– ‘খবরদার শাশু-আম্মার ঘাড়ে দোষ দিবা না। আমি ছেলেদের খুব ভালো করেই চিনি। আমাদের বাসাতেও তোমার মতো একটা গরু আছে। সাহরীর সময় সাব্বির ভাইয়াকে আব্বু-আম্মু ডাকে এবং আমিও ডাকি! উহু, তবুও ওর ঘুম ভাঙে না।’
– ‘কী? আমরা ছেলেরা গরু!’
– ‘তো কি? গরুও তোমার থেকে অনেক গুণে ভালো আছে।’
– ‘তাহলে আমাকে নিয়ে পড়ে আছো কেন? যাও গরুর সাথে গিয়ে প্রেম করো।’
– ‘যাবো চলে?’
– ‘বেঁধে রখছি নাকি?’
– ‘আর ফিরে আসবো না কিন্তু।’
– ‘নিশ্চুপ...’
কথিত দ্বীনদার জিএফ সিনেম্যাটিক স্টাইলে স্লো মোশনে চলে যেতে লাগলো। এবার পেছন থেকে ছেলেটা নায়কের মতো করে তার হাতটা খপ করে ধরে ইমোশনাল হয়ে বলতে লাগলো,– ‘এই যে কান ধরছি...। প্লিজ, এবারের জন্য মাফ করে দাও। কালকে থেকে আর একটা রোজাও বাদ যাবে না। ’
– ‘আমি না হয় ছেড় দিলাম, কিন্তু আল্লাহ কি ছেড়ে দিবে? আল্লাহর আদালতে ছাড় পাবে?’
– ‘হয়তো ছেড়ে দিবে না। কিন্তু তিনি তো পরম ক্ষমাশীল। আমি অনুতপ্ত। আমি আশাবাদী, তিনি ক্ষমা করবেন।’
– ‘হ্যাঁ, তিনি ক্ষমাশীল। তবে রাগীও বটে।’
– ‘তোমার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সত্যিই তুমি অনেক ভালো মেয়ে। তোমার মতো মেয়েকে জীবনসঙ্গী বানানো সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।’

কথিত দ্বীনদার জিএফ মুচকি (সুন্নতি হাসি) হাসলেন। হয়তো ছেলেটার মুখে এমন প্রশংসা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। বক্ষে শান্তির প্রসন্ন হিমবাহ বাতাস বইছে। চক্ষু দিয়ে আনন্দাস্রু বেরুচ্ছে। নীরবতা ভেঙে শেষান্তে আবার একটা মুচকি হাসলেন। এবং ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বলতে লাগলেন,– ‘পাগল একটা!’
– ‘শুধু তোমার জন্য।’
মেয়েটা আবার মৃদু হাসলেন। আর বলতে লাগলেন,– ‘তোমার জন্য নিজ হস্তে আজ বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে এসেছিলাম। যেগুলো দিয়ে আজ সন্ধ্যায় ইফতার করতে। কিন্তু তুমি তো রোজা-ই নাই...’
– ‘এই যে, কানে ধরছি। আর মিসড যাবে না। তবুও তোমার হাতে রান্না করা এই বিরিয়ানি থেকে বঞ্চিত করিও না।’
– ‘ঠিক আছে বাবু। এখন তবে যাই। টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফেজ।’
– ‘আল্লাহ হাফেজ।’

কথিত দ্বীনদার জিএফ সিনেম্যাটিক স্টাইলে অবিক্ষুব্ধ ধীরপায়ে আপনালয়ে প্রত্যাবর্তন করিতে লাগিলো। এদিকে ভৃত্য (ছেলে) পশ্চাদবিমুখ থাকিয়া অপলক ঠাহরে চাহিয়া চাহিয়া প্রমত্ততার সাগরে স্নান করিতে লাগিলো।
.
“নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা”
–‘কাওছার হাবীব’ (আজাদ)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×