somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

দ্যা কুরবানি কাউ এন্ড পাঠা

০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোট্ট আইমিন পিচ্চি একটা গল্প দিয়ে লেখাটি শুরু করি। অজোপাড়া গাঁয়ের ছোট্ট একটি গ্রাম মুকুটপুর। বছরের নয় মাসই গ্রামটি পানির নীচে থাকে। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলো নৌকা। যখন পানি নেমে যায় তখন বিদ্যালয়ের আঙিনা হয়ে উঠে গরু ছাগল চরানোর উপযুক্ত জায়গা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় না হওয়ায় গ্রামের লোকজন তার কোন বাধা নিষেধকে পাত্তা দেয় না। তিনিও হাওয়া বুঝে চলেন। একদিন তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসে একজন শিক্ষক ছাত্রদের একটি ছড়া কবিতা পড়ে শুনাচ্ছেন;

গুরুজনে করিও নমো
মানুষ যদি হইতে চাও
পড়াশুনা করতে সবে
দৌড়ে পাঠশালায় আও।

স্কুলের আঙিনায় তিনটি গরু আর দু'টি পাঠা চরাতে চরাতে সুর করে ক্লাসের ছাত্রদের সাথে শিক্ষকের মুখে ছড়াটি শুনে দারুন পুলকিত হলেন জব্বর শেখ। যেহেতু বেশ কয়েকবার ছড়াটি শুনেছেন সেহেতু তার শানে নযুল বুঝতে অসুবিধে হয়নি। দেরী না করে তিনটি গরু আর দু'টি পাঠা ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দিলেন।

এইবার গরু আর পাঠা মানুষ না হয়ে যাবে কই!

আমার লেখার বিষয়বস্তু যেহেতু উপরের ছবিটি সেহেতু গল্পটি আর কন্টিনিউ করা সমিচীন নয় বলে মনে করি। তবে ছবিতে কোরবানির গরু আর খাসিটি যিনি সামিয়ানা টাঙিয়ে রাস্তা দখল করে রেখেছেন তিনি জব্বর শেখ কিনা তা গল্পের বাকি অংশ থেকে জানা যায়নি। তবে, গরু আর পাঠাগুলো সেদিন মানুষ হইয়া ঢাকায় এসে বিরাট বিদ্বান সেজে কোরবানির জন্য স্ব-জাতির এই দু'জনকে কিনে থাকতে পারেন। এটা স্রেফ অনুমান; সিরয়াসলি নিলে লেখকের কোন দায় নেই!

এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যিনি রাস্তা দখল করে জমিদারী স্টাইলে কোরবানির পশুদের বাড়ির সামনে খুঁটিতে বেঁধে রেখেছেন তার হাত অ-নে-ক লম্বা; তার বুকের ছাতি বি-রা-ট বড়। তিনি গরু হলে গরুদের মধ্যে উৎকৃষ্ট; পাঠা হলে পাঠাদের মধ্যে সবচেয়ে তেজী। তার আশপাশে কুয়েশ্চন করার মতো কোন পাঠার বুকের পাটা নেই এটা স্পষ্ট।

তিনি কী রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী?

না, সে সম্ভাবনা নেই। কারণ, গণভবন আর বঙ্গভবনের আকার-বিকার-শান-শওকত এমন নয়। সো, তিনারা বাদ। তবে উনাদের শুভদৃষ্টি পাওয়া কেউ একজন হলেও হতে পারেন; এটা অনুমান মাত্র।

মনে আছে একবার কোরবানির ঈদের দিন ভোরবেলা হঠাৎ মনে হলো; আচ্ছা, পাড়ার কে কত বড় গরু কোরবানি দিচ্ছেন একবার দেখে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। বের হয়ে প্রতিবেশী পাড়া-মহল্লা ঘুরে সবচেয়ে দামি দু'টি গরু আর গোটা চারেক খাসি যার উঠানে বাঁধা দেখলাম তিনি আদতে একজন বেকার মানুষ; দৃশ্যমান কোন পেশা নেই। ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতা!

আচ্ছা, তাহলে তিনি কী রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন ঠিকাদার? নির্বাচন কমিশনার? কারা পরিদর্শক? দুদকের পরিচালক? ডিসি-মিসি? বড় পুকুরিয়ার কয়লা হাওয়া করে দেওয়া কেউকেটা? নাকি........................!!!!

নাকি নতুন হাজার কোটির মালিক হওয়া কোন পাঠা থুক্কু টাইকুন? যিনি টাকার জোরে মিনিস্টার, সচিব, পাবলিকদের নিজের মুরিদ করে রেখেছেন? তিনি চাইলেই এমপি/মিনিস্টার হতে পারেন; প্রয়োজন মনে করলে যে কাউকে পৃথিবী ছাড়া করতে পারেন। এমনও হতে পারে তিনি যখন গরু আর খাসির গলায় ফুলের মালা ঝুলিয়ে তাদের কপালে ক্রয়মূল্য লিখে বাড়ি ফিরছিলেন তখন কেউ একজন (একাধিকও হতে পারে) গরুর দাম বেশি হয়ে গেছে বলে মুচকি হাঁসি দেওয়ায় অপমানে গরুটি বাড়ির সামনে বেঁধে রেখেছেন; আবার এমনও হতে পারে খাসিটাকে পাঠা বলায় এটি সত্যিকারের খাসি তা প্রমাণ করতে ফুটপাতে বেঁধে রেখেছেন।

লেখতে লেখতে হঠাৎ মনে হলো, আরে তিনি তো পশুপ্রেমীও হতে পারেন! এই বিষয়টি আগে খেয়াল হলো না কেন? রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করে গরু-পাঠাদের চলাচলা/বাসস্থান করার নাগরিক অধিকার আছে তা-ই তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া তাদের আত্মা শীতল রাখতে ফ্যানের বন্দবস্ত করা উচিৎ; পুরাতন নয় নতুন সামিয়ানা টাঙানো উচিৎ তা পাবলিককে দেখিয়ে দেওয়া; গরু আর পাঠা নেহায়েত পশু নয় এজন্য পায়ের তলায় মখমলের কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া। তিনি হয়তো বিশ্বাস করেন, "জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।"

তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের কোন ব্যবস্থা আছে বলে চোখে পড়ছে না; তবে বিশ্বাস করি, প্রয়োজনে রাস্তার মাঝখানে গর্ত করে হলেও তা কার্যকর করা হবে। হাজার হোক বিবেক বলেও তো একটা বিষয় আছে, তাই না?


আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিরাট বড় বুকের পাটার এই পাঠা ঈদের আগে কোনভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন না; এমন মহান ব্যক্তিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এডিস মশার কোন ক্ষমতা নেই তার ত্রিসীমানায় ভেতরে প্রবেশ করার।

জয়হোক, পাঠাদের।।





















ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ২:৪১
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×