ছোট্ট আইমিন পিচ্চি একটা গল্প দিয়ে লেখাটি শুরু করি। অজোপাড়া গাঁয়ের ছোট্ট একটি গ্রাম মুকুটপুর। বছরের নয় মাসই গ্রামটি পানির নীচে থাকে। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলো নৌকা। যখন পানি নেমে যায় তখন বিদ্যালয়ের আঙিনা হয়ে উঠে গরু ছাগল চরানোর উপযুক্ত জায়গা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় না হওয়ায় গ্রামের লোকজন তার কোন বাধা নিষেধকে পাত্তা দেয় না। তিনিও হাওয়া বুঝে চলেন। একদিন তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসে একজন শিক্ষক ছাত্রদের একটি ছড়া কবিতা পড়ে শুনাচ্ছেন;
গুরুজনে করিও নমো
মানুষ যদি হইতে চাও
পড়াশুনা করতে সবে
দৌড়ে পাঠশালায় আও।
স্কুলের আঙিনায় তিনটি গরু আর দু'টি পাঠা চরাতে চরাতে সুর করে ক্লাসের ছাত্রদের সাথে শিক্ষকের মুখে ছড়াটি শুনে দারুন পুলকিত হলেন জব্বর শেখ। যেহেতু বেশ কয়েকবার ছড়াটি শুনেছেন সেহেতু তার শানে নযুল বুঝতে অসুবিধে হয়নি। দেরী না করে তিনটি গরু আর দু'টি পাঠা ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দিলেন।
এইবার গরু আর পাঠা মানুষ না হয়ে যাবে কই!
আমার লেখার বিষয়বস্তু যেহেতু উপরের ছবিটি সেহেতু গল্পটি আর কন্টিনিউ করা সমিচীন নয় বলে মনে করি। তবে ছবিতে কোরবানির গরু আর খাসিটি যিনি সামিয়ানা টাঙিয়ে রাস্তা দখল করে রেখেছেন তিনি জব্বর শেখ কিনা তা গল্পের বাকি অংশ থেকে জানা যায়নি। তবে, গরু আর পাঠাগুলো সেদিন মানুষ হইয়া ঢাকায় এসে বিরাট বিদ্বান সেজে কোরবানির জন্য স্ব-জাতির এই দু'জনকে কিনে থাকতে পারেন। এটা স্রেফ অনুমান; সিরয়াসলি নিলে লেখকের কোন দায় নেই!
এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যিনি রাস্তা দখল করে জমিদারী স্টাইলে কোরবানির পশুদের বাড়ির সামনে খুঁটিতে বেঁধে রেখেছেন তার হাত অ-নে-ক লম্বা; তার বুকের ছাতি বি-রা-ট বড়। তিনি গরু হলে গরুদের মধ্যে উৎকৃষ্ট; পাঠা হলে পাঠাদের মধ্যে সবচেয়ে তেজী। তার আশপাশে কুয়েশ্চন করার মতো কোন পাঠার বুকের পাটা নেই এটা স্পষ্ট।
তিনি কী রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী?
না, সে সম্ভাবনা নেই। কারণ, গণভবন আর বঙ্গভবনের আকার-বিকার-শান-শওকত এমন নয়। সো, তিনারা বাদ। তবে উনাদের শুভদৃষ্টি পাওয়া কেউ একজন হলেও হতে পারেন; এটা অনুমান মাত্র।
মনে আছে একবার কোরবানির ঈদের দিন ভোরবেলা হঠাৎ মনে হলো; আচ্ছা, পাড়ার কে কত বড় গরু কোরবানি দিচ্ছেন একবার দেখে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। বের হয়ে প্রতিবেশী পাড়া-মহল্লা ঘুরে সবচেয়ে দামি দু'টি গরু আর গোটা চারেক খাসি যার উঠানে বাঁধা দেখলাম তিনি আদতে একজন বেকার মানুষ; দৃশ্যমান কোন পেশা নেই। ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতা!
আচ্ছা, তাহলে তিনি কী রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন ঠিকাদার? নির্বাচন কমিশনার? কারা পরিদর্শক? দুদকের পরিচালক? ডিসি-মিসি? বড় পুকুরিয়ার কয়লা হাওয়া করে দেওয়া কেউকেটা? নাকি........................!!!!
নাকি নতুন হাজার কোটির মালিক হওয়া কোন পাঠা থুক্কু টাইকুন? যিনি টাকার জোরে মিনিস্টার, সচিব, পাবলিকদের নিজের মুরিদ করে রেখেছেন? তিনি চাইলেই এমপি/মিনিস্টার হতে পারেন; প্রয়োজন মনে করলে যে কাউকে পৃথিবী ছাড়া করতে পারেন। এমনও হতে পারে তিনি যখন গরু আর খাসির গলায় ফুলের মালা ঝুলিয়ে তাদের কপালে ক্রয়মূল্য লিখে বাড়ি ফিরছিলেন তখন কেউ একজন (একাধিকও হতে পারে) গরুর দাম বেশি হয়ে গেছে বলে মুচকি হাঁসি দেওয়ায় অপমানে গরুটি বাড়ির সামনে বেঁধে রেখেছেন; আবার এমনও হতে পারে খাসিটাকে পাঠা বলায় এটি সত্যিকারের খাসি তা প্রমাণ করতে ফুটপাতে বেঁধে রেখেছেন।
লেখতে লেখতে হঠাৎ মনে হলো, আরে তিনি তো পশুপ্রেমীও হতে পারেন! এই বিষয়টি আগে খেয়াল হলো না কেন? রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করে গরু-পাঠাদের চলাচলা/বাসস্থান করার নাগরিক অধিকার আছে তা-ই তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া তাদের আত্মা শীতল রাখতে ফ্যানের বন্দবস্ত করা উচিৎ; পুরাতন নয় নতুন সামিয়ানা টাঙানো উচিৎ তা পাবলিককে দেখিয়ে দেওয়া; গরু আর পাঠা নেহায়েত পশু নয় এজন্য পায়ের তলায় মখমলের কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া। তিনি হয়তো বিশ্বাস করেন, "জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।"
তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের কোন ব্যবস্থা আছে বলে চোখে পড়ছে না; তবে বিশ্বাস করি, প্রয়োজনে রাস্তার মাঝখানে গর্ত করে হলেও তা কার্যকর করা হবে। হাজার হোক বিবেক বলেও তো একটা বিষয় আছে, তাই না?
আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিরাট বড় বুকের পাটার এই পাঠা ঈদের আগে কোনভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন না; এমন মহান ব্যক্তিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এডিস মশার কোন ক্ষমতা নেই তার ত্রিসীমানায় ভেতরে প্রবেশ করার।
জয়হোক, পাঠাদের।।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।