কয়েকদিন থেকেই দেখছি কয়েকটি গ্রুপে রোনালদো ফেনোমেনকে নিয়ে বাজে পোস্ট দিচ্ছে! মেসি সমর্থকরা বলে বেড়ান রোনালদো সেই লেভেলের খেলোয়াড় না যা মেসি করে গেছে। আবার ক্রিশ্চিয়ানো সমর্থকরা বলে বেড়ান ফেনোমেনন এর চাইতে কম্পলিট প্লেয়ার সিআর সেভেন।
মেসি সেরা না ক্রিশ্চিয়ানো!
৭ বছর ধরে শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে, এখন শুরু হয়ে গেছে ফেনোমেনকে নিয়ে।
পরিসংখ্যান দিয়ে যদি সব কিছু হত, তাহলে জিদান কোন খেলোয়াড়ই না। যার গোল ১২৫ ... হেতে আবার কিংবদন্তী কিভাবে হয়?
পরিসংখ্যান দিয়ে সব কিছু হত তাহলে পেলের সাথে ম্যারাডোনার তুলনা বড্ড বেমানান। ৩ টা বিশ্বকাপের মালিক, যার ক্যারিয়ারে ১২০০+ গোল, খেলোয়াড় থাকাকালে যার কোন খারাপ রেকর্ড নাই। অপর দিকে ম্যারাডোনাকে দেখেন, ৪০০+ গোল, বিশ্বকাপে হাত দিয়ে গোল করা, ডোপ সেবনের দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ তাকে আবার পেলের সাথে তুলনা করে কোন সাহসে?
কারণ একটাই, আর সেটা হল দুইজনই বিশ্বকাপের নায়ক। পেলে সারাজীবন সান্তোসের হয়ে খেলেছেন। সান্তোসের হয়ে হাজার গোল করেছেন, সব শিরোপা জিতেছেন। সান্তোস এমন কোন নামিদামী ক্লাব ও ছিল না, সেই সান্তোসে খেলে পেলে এখন ফুটবলের রাজা, যদি তিনি কোন বিশ্বকাপ জয় না করতে পারতেন তাহলে ওনার হাজার গোলের কোন মুল্যই থাকতো না। পেলের নাম মানুষ ভুলে যেত। ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের কালো দাগের চাইতে ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতেছে তা সবাই মনে রেখেছে।
মেসি, সিআর সেভেনদের আজ অনেক রেকর্ড! একদিন কেউ না কেউ এই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়বে, সেই দিন ভুলে যাবে আজকের ফুটবল রাজাদের্। এখন যারা বলছেন ফেনোমেনন থেকে মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো সেরা তারা একটু ভাল করে পড়বেন।
আমি ফিরে যাচ্ছি ১৯৯০ দশকে।
৯০ দশক থেকে শুরু করে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ডিফান্ডারদের স্বর্ণ যুগ বলা হয়। মানে আপনি যদি সর্বকালের সেরা ডিফেন্ড একাদশ গঠন করেন তাহলে ১০ জনই জায়গা করে নিবে ৯০ দশক থেকে ২০০৭ সালের ডিফান্ডারা।
প্রমাণ তো ক্যানভারো যিনি প্রথম ডিফেন্ডার হয়ে ফিফা ব্যালন পান। কার্লোস 2002 সালে ফিফার সেরা তিনে। যেখানে এখনকার যুগের কোন ডিফেন্ডার এখনো সেরা দশেও আসতে পারে নাই। মেসি, ক্রিশ্চিয়ানোরা এখন যেই লেভেল গোল করতেছে সেই লেভেলের গোল লিমার অনেক অনেক আছে। লিমা মাঝ মাঠ থেকে ৫-৬ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ফিনিশিং গিয়ে যেইসব গোল গুলো মিস করছে তা হিসেব করলে মেসি ক্রিশ্চিয়ানোর গোলের আধা হবে।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে আমার বয়স ৯ বছর তখন থেকেই আমি ব্রাজিল সাপোর্টার্। ২০০২ সাল থেকে আমি মাদ্রিদ সাপোর্টার্। তখন দেখতাম কোন ফরওয়ার্ড বা স্ট্রাইকারা ডিফেডারদের বোকা বানাতো তখনই পুরা গ্যালারিতে হাততালি দিত। আর এখন ডিফেন্ডারা গোল করে এসিস্ট্ করে। আলভেজ আর মার্সেলো যে স্কিল, ড্রিবলিং গুলো দেই একজন ভালো ফরওয়ার্ড ও তা করতে পারে না ! লিমা যখন তুখোড় ফর্মে ছিল তখন তার এক বছরে গোল সংখ্যা ৪৫-৪৬
আর এখন মেসি, রোনালদো, নেইমার, ইভ্রারা ৫০ + গোল করে ফেলে।
আরেকটা কথা লিমা ফুটবলের একমাত্র খেলোয়াড় যার পায়ে ৩ বার অপারেশন করার পরও খেলা চালিয়ে গেছে। যার ক্যারিয়ারে অর্ধেক ইনজুরিতে বসেই কাটিয়েছে। ইনজুরি থেকে ফিরে ফর্মে ফিরতে অনেক কঠিন, আমার ভাগ্য ভাল আমি লিমা, মেসির খেলা দেখে এই পোস্টটা করতে পেরেছি। আপনি হয়তো লিমার খেলা ইউটিউবে দেখছেন আর ক্রিশ্চিয়ানো -মেসির ক্লাবের অর্জনের গুলো দেখে সেরা নিয়ে লাফালাফি করতেছেন।পৃথিবীর একমাত্র খেলোয়াড় যিন ইন্টার মিলান, এসি মিলান,বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদে এবং জাতীয় দলে খেলে সফল হয়েছেন। লিমার দুই পায়ের দিকে তাকালে আপনার চোখে পানি চলে আসবে। কত ভয়ঙ্কর ছিল সেই আমলের ডিফেন্ডারা ভাবলেই মাথামুথা ঘুড়ায়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৯