কাজী হাসান
বরেণ্য চিত্রপরিচালক, নাট্যকার, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী আবদুস সাত্তার এর আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট আশুলিয়াস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর ও স্ত্রী, ২ ছেলে, ৩ মেয়ে, নাতি-নাতনী ও অসংখ্য পরিজন ও শুভাকাঙ্খী রেখে যান।
সংস্কৃতিজন আবদুস সাত্তার ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ শহরের জমিদার পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজস্ব মহলে 'তোতা ভাই' নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি অসংখ্য নাটক রচনার পাশাপাশি ৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবির নাম ‘কাজলরেখা’। তাঁর পরিচালিত ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ অভিনয়শিল্পী রাজিব এর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি। যে ছবিতে তাঁর নাম ছিলো ওয়াসিমুল বারী। অভিনেতা হিসেবে তিনি সে সব ছবিতে ছিলেন তার মধ্যে সাতভাই চম্পা, অশান্ত ঢেউ, স্মৃতি তুমি বেদনা, কসাই, কাজলরেখা, গুনাইবিবি, রাখে আল্লাহ মারে কে, ফয়সালা, চাচা ভাতিজা, বদনসিব উল্লেখযোগ্য। টেলিভিশন নাটকেরও একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন আবদুস সাত্তার। তাঁর অভিনীত নাটকের মধ্যে সকাল সন্ধ্যা, মাটির কোলে, পার্ল, কাঠের মানুষ ভন্ডুল, এখন জোয়ার, এখানে নোঙর, সময় অসময় উল্লেখযোগ্য।
নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বিটিভির বিভিন্ন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের নাটিকায়ও অভিনয় করতেন তিনি। ঈদের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আনন্দমেলা’য় তাঁর উপস্থিতি থাকতো সবসময়। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন। নব্বই দশকে বিটিভির আরেক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘শুভেচ্ছা’য় ‘ভুলভুল ভাই’ নামে একটি মজার চরিত্রে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি।
ষাটের দশকের মধ্যভাগে আবদুস সাত্তার রচিত ‘ত্রিরত্ন’ নাটকটি ছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা এ দেশের প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ টেলিভিশন এ প্রচারিত প্রথম নাটকটিও তাঁর রচিত। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। চলচ্চিত্র তৈরিকালীন সময়ে অর্থ সংকটের কারণে তিনি দুই বার তাঁর বাড়ি বিক্রি করে দেন। তাঁর মামাতো ভাই মেহেদী হাসান খান বাবু তাঁর ওপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। আমরা 'সোনারং' থেকে তাঁর ওপর একটি প্রামাণ্যগ্রন্থ প্রকাশনার কাজে হাত দিয়েছি।
আমার স্মৃতিতে আবদুস সাত্তার একজন জাদরেল অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনির্মাতা। আশির দশকে আবদুস সাত্তার নির্মিত চলচ্চিত্র 'রাখে আল্লাহ মারে কে?', মামুনুর রশীদ এর 'এখানে নোঙর' কিংবা বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত শিশুতোষ নাটক 'কাঠের মানুষ ভন্ডুল' এ তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও আমার চোখে ভাসে।' ১৯৯৬ সালে আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো 'মাসিক বিক্রমপুর' পত্রিকার জন্য তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার।
৪র্থ প্রয়াণবার্ষিকীতে সংস্কৃতিজন আবদুস সাত্তার এর পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদন করছি গভীর শ্রদ্ধা!
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:৫১