গল্পটা বরং শুরু করা যেতো এভাবে—
এই বোলে কাগজটা দখল কোরে নেয় চারু
পুরোনাম চারু মিত্র—
হেমন্তের রোদ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
'চওড়া ঠোঁটে আপনাকে বড্ড বেমানান লাগে বুঝলেন
ওতে আমার ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থাকে
সে অবশ্যি আপনি বুঝবেন না'
পাটীগণিতের ফাঁকে আমি ক্যালকুলাস বোঝার সাহস করি না
চেপে যাই—
চারু'দের বাসায় আমার টিউশনির বয়স তিন
চারু'র উনিশ
আর আমার?
ছাব্বিশ নাকি ছত্রিশ?
সময় করে হিসেব করা যাবে একদিন।
সাইকেলে কোরে আসতে হতো আমাকে
দু'কিলোমিটার মাত্র—
অথচ দু'পা দুরত্বে কখনই দ্যাখা হয়নি তাঁর চোখ
জানা হয়নি কোনো শীতে সেখানে আষাঢ়-শ্রাবণ আসে কি না!
বহুদিন অলক্ষে আবৃত্তি শুনেছি
'আবার বছর কুড়ি পরে......'
চারু 'জীবনানন্দ'কে ভালোবাসতো
আর আমি চারু'কে।
( সেসব বলা হয়নি কোনদিন )
সে ফ্রক ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পড়তে শুরু করে—
আমার সাইকেলটা দিন দিন পুরনো হতে থাকে;
ব্যাক্তিগত ডায়েরীতে সে কারও নাম লিখতে শুরু করে—
আমি মায়ের জন্য অ্যাসপিরিন আর ইনসুলিন লিখে রাখি;
চারু'র বারান্দায় এক দুর্লভ অর্কিড প্রার্থনা করে আকাশ।
আমার হাতের পরিসীমা সামান্য—
লোকে জেনে ফেললে আমার টিউশনি চলে যাবে
মায়ের ঔষধ চলে যাবে
সাইকেলটা অকেজো হয়ে পড়বে
আমার হাসি-কান্না, আকাশ স-ব চলে যাবে।
তাকে বলা হয় না—
তাকে বলা হয় না তাঁর অসাবধানবশত ওড়না সরে গেলে
আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি
বলা হয় না—
আমার বিছানায় শীতকাল চলছে গত এক যুগ ধরে
বলা হয় নি—
বহুদিন গোলাপ হাতে এনে দরজার বাইরে রেখে এসেছি।
আচমকা টিউশনিটা ছেঁড়ে দিতে হলো
চারু মিত্রের সাথে দ্যাখা নেই প্রায় কুড়ি বছর
আরও কুড়ি বছর কেটে যাবে শাদা কাগজটা পৌঁছতে—
'চারু মিত্র' কবিতাটি শেষ করা হয় না।
ঘরোয়া আড্ডায় বন্ধুরা তাকে নিয়ে কথা বলে
বলে কবিতার কথা,
আমি বিব্রত হই না
কিছু কবিতা অশেষ থাকুক।
কবিতাটা শেষ করা হলো না,
এই দুঃখ নিয়ে চারু মিত্র'কে ডেকে আনি ধীরে
রাতের বয়স বাড়লে জীবনানন্দ আবৃত্তি করি
আবৃত্তি করি চারু মিত্রকে—
“সোনালি সোনালি চিল- শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে—
আবার বছর কুড়ি পরে......সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!”
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৮