somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চলেপথিক
আমি মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, কারণ মুক্তচিন্তা হলো এমন এক প্রকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যা বলে যে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ , মতামত গঠনের ক্ষেত্রে প্রথা, অন্ধবিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় ।

ইসলাম একটি রাজনৈতিক মতবাদ

১১ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় কিস্তিঃ-
নবীর আত্মীয়স্বজনরা যখন নবীর দাফন-কাফনে ব্যস্ত ঠিক সে সময় নবীর সাহাবীরা নতুন একজন নেতা নির্বাচনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করেন । নবী যেহেতু কাউকে তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে যাননি তাই সর্বসম্মতিক্রমে নবীর সবচেয়ে যোগ্যতম সাহাবী ‘ আবু বকর‘ কে মদিনা রাষ্ট্রের শাসক ও খলিফায়ে রাসুলুল্লাহ হিসাবে নিযুক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে আত্মীয়তা নয় যোগ্যতাকেই নেতা হওয়ার মাপকাঠি হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে ।
আবু বকর হচ্ছেন পৃথিবীর ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র নায়ক । আবু বকরের ক্ষমতা লাভের মধ্য দিয়ে খিলাফত নামক নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে যা ইতিহাসে খিলাফতে রাশিদুন নামে পরিচিতি লাভ করে । এই সময় এই ইসলামিক রাষ্ট্রের নানা জায়গায় বিদ্রহের ঘটনা ঘটে আবু বকর তাঁর কোঠর হস্তে তা দমন করেন । বিদ্রহ দমনের পর আবু বকর বিজয় অভিযান শুরু করেন। তিনি ৬৩৩ সালে তাঁর সবচেয়ে রণকুশলী সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ কে সাসানিয় সাম্রাজ্য আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন । তিনি রোমান সিরিয়া আক্রমণের জন্যও আলাদা সেনাদল পাঠান এবং ৬৩৪ সালে খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে দুই ফ্রন্টেই বিজয় অর্জিত হয় ।

সে বছরই আবু বকরের মৃত্যুর পর তাঁরই নির্বাচিত উত্তরসূরি উমর বিন খাত্তাব খলিফার দায়িত্ব লাভ করেন এবং পূর্বসুরির শুরু করা বিজয় অভিযান চালিয়ে যান । ফলে ৬৪৩ সাল নাগাদ মেসেপটনিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিশর সহ সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্য ইসলামিক রাষ্ট্রের অধিকারে চলে আসে । খিলাফতের সীমানা বৃদ্ধির ফলে উমর এর জন্য রাজনৈতিক কাঠামো দাঁড় করান। তিনি সরকারী কাজকর্ম পরিচালনার জন্য দেওয়ান সৃষ্টি করেন। সামরিক বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন ও খরচের আওতায় আনা হয় । এর আগ পর্যন্ত মুসলিম বাহিনীর সকল সৈনিকই ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী তারা প্রত্যকে ইসলাম
প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াই করেছেন । খলিফা উমরই তাদের নিয়মিত সৈন্যবাহিনি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তীতে এই বাহিনীই ইতিহাসে রাশিদুন বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে ।

অধিকৃত ভূখণ্ডে তিনি অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেননি এবং পারসিয়ানদের মত সরকারকে কেন্দ্রীভূতও করেননি । তিনি তার প্রজাদের নিজস্ব শাসন বজায় রাখার সুযোগ দেন। তবে সব বিজিত রাজ্যেই খলিফা কতৃক নিয়োগকৃত একজন গভর্নর(আমির) ও একজন রাজস্ব কর্মকর্তা (আলিম) থাকতেন। সাধারণত সেনাপতিদের মধ্য থেকেই গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হতো । তিনি সাহাবীদের পেনশন দেওয়া শুরু করেন কারণ তারা ধর্মীয় অধ্যায়নে নিয়োজিত থাকতেন এবং নিজ নিজ লোকদের মধ্যে নেতৃত্ব দিতেন । তারা মাদ্রাসা শিক্ষাকে ইসলামের কুরআন এবং হাদিসের গবেষণা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেন।

মাদ্রাসা শিক্ষার প্রথম প্রথিষ্ঠান ছিলো মক্কার সাফা পর্বতের পাদদেশে যায়েদ বিন আকরামের বাড়ীতে, সেখানে স্বয়ং নবী ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তাঁর কয়েকজন অনুসারী । হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে-নববির পূর্ব পার্শে স্থাপিত মাদ্রাসা আহলে সুফফা নামে পরিচিত । সে কালে মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীতে ছিলো কোরআন, হাদিস, ফারাযেজ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বংশ শাস্ত্র, তাজবিদ, অশ্ব চালনা, যুদ্ধবিদ্যা , হস্তলিপি বিদ্যা , শরীরচর্চা ইত্যাদি । পরবর্তীতে এই সব মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরাই শরীয়তের নীতিনির্ধারক হিসাবে আবির্ভূত হন ।
৬৪৪ সালে ইতিহাসের অন্যতম এই রাষ্ট্র নায়ক আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারাত্তক ভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। উমর মৃত্যুর পূর্বে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য ৬ সদস্যের একটি কমিটি নিয়োগ দেন কমিটির সকলে ছিলেন কুরাইশ বংশের এবং তাদের মধ্য থেকে একজন কে খলিফা হিসাবে নিতে বলে যান । কমিটি বাছাই এর সময় শেষ পর্যন্ত উসমান ও আলীকে সাম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে রাখে। এর মধ্যে আলী ছিলেন বনু হাসিম গোত্রের সদস্য যা মুহাম্মদের নিজের গোত্র। সে সাথে তিনি ছিলেন তাঁর চাচাত ভাই, জামাতা ও তাঁর ইসলাম প্রচারের সময় থেকে সঙ্গী আর উসমান ছিলেন উমাইয়া গোত্রের সদস্য । কমিটি উসমানকে পরবর্তী খলিফা হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন ।

উসমান ইবন আফফান ১২ বছর খলিফা হিসাবে শাসন করেন। শাসনের প্রথমদিকে তিনি সহজে শাসন পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে । এই সময় মিশরীয়রা তাঁর বিরোধিতা শুরু করে এবং আলীর প্রতি নিজেদের দৃষ্টি নিবন্ধ করে । অভ্যান্তরিন এসব সমস্যা সত্ত্বেও উসমান উমরের বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখেন । রাশিদুন সেনাবাহিনী বাজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও সম্পূর্ণ সাসানীয় সাম্রাজ্য জয় করে পূর্বে সিন্দু নদ পর্যন্ত পৌছে যায়। এই ভাবেই যাযাবর আরব বেদুঈনরা এক বিশাল সম্রাজ্যের অধিকারী হয়ে উঠে ।

এই সময় সাম্রাজ্যে বিদ্রহ দেখা দেয় এই বিদ্ররহ অবরোধে রূপ নেওয়ায় উসমান গৃহযুদ্ধ এড়ানর জন্য সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং আলোচনার আগ্রহ দেখান। বিদ্রহিদের প্রতি তাঁর নম্র ব্যবহার তাদের সাহস বাড়িয়ে দেয় এবং তারা জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে কুরআন পাঠরত অবস্থায় তাঁকে হত্যা করে । তৃতীয় খলিফা উসমানের হত্যাকাণ্ডের পর মদিনার সাহাবীরা আলী ইবন আবী তালিব কে খলিফা মনোনীত করেন । ক্ষমতা লাভের পর আলী তাঁর রাজধানী মদিনা থেকে সরিয়ে বর্তমান ইরাকে অবস্থিত মুসলিম গেরিসন শহর কুফায় নিয়ে যান ।

এসময় জনগণের মধ্য থেকে উসমান হত্যার বিচারের জন্য দাবী উঠতে থাকে। এই সুযোগে যুবাইর ইবনুল আওয়াল, তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ ও মুহাম্মদ এর বিধবা স্ত্রী আয়শা বিনতে আবু বকর এর অধিনে একটি বড় আকারের সেনাবাহিনী বিদ্রহ করে লড়াইয়ের জন্য এগিয়ে যায় । বিদ্রহিরা বসরা অধিকার করে এবং প্রায় ৪০০০ লোককে হত্যা করে এরপর আলী এগিয়ে যান এবং খলিফার সেনাবাহিনী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয় । আলী বা তালাহ ও জুবায়ের কেউই লড়াই এর জন্য আগ্রহী ছিলেন না তবুও রাতের বেলা দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায় ।

কথিত আছে আলীর অনুসারীদের মধ্যে যারা উসমানকে হত্যা করেছিল তারা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয় । এটি ইতিহাসে মুসলিমদের মধ্যে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ যা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত । যুদ্ধে আলীর অধীন বাহিনী বিজয়ী হয় এবং বিরোধ মিটিয়ে ফেলা হয় । এই যুদ্ধে মুহাম্মদ(দঃ) এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী তালহা ও যুবায়ের নিহত হয় । আয়শাকে আলীর পুত্র হাসান এর সাথে মদিনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এই ঘটনার পর উসমান হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আবারও গুঞ্জন উঠে । এবার উসমানের আত্মীয় মুয়াবিয়া এ দাবী তুলেন তিনি ছিলেন সিরিয়ার গভর্নর । আলী এবং মুয়াবিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গেলে আলীর সেনারা খিলাফতের একটি বড় অংশ মুয়াবিয়ার কাছে হারিয়ে ফেলে । ৬৬১ খৃস্টাব্দে ইবনে মুলজাম নামে এক খারাজি আলী কে হত্যা করে ।

আলীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ও মহাম্মদের দৌহিত্র হাসান ইবনে আলী খিলাফতের জন্য মনোনীত হলেও খলিফা হতে পারেননি । মুসলিমদের বিবদমান দুই দলের মধ্যে বিবাদ নিরসনের জন্য তিনি মুয়াবিয়ার সাথে চুক্তিতে আসেন । মুয়াবিয়া খিলাফতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং সমাপ্তি ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা খিলাফতে রাশিদুন এর । মুয়াবিয়ার হাত ধরে উমাইয়া খিলাফতের মাধ্যমে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী রাজতন্ত্রের । তখন রাশিদুন খিলাফতের সীমানা পৌছে যায় পূর্বে সিন্ধু নদ ও উত্তরে আমু দরিয়া পর্যন্ত ।

রাশিদুন খেলাফতের খলিফারা প্রত্যকে ছিলেন এক একজন সম্রাট কিন্তু তাঁরা কখনও নিজেদের সম্রাট হিসামে ঘোষণা দেননি। তাঁদের জীবনযাপনও ছিলো একজন সাধারন নাগরিকের মত । খলিফা উমর কর্তৃক নিয়োগকৃত বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরদের প্রতি তাঁর যে ৫টি নির্দেশ ছিলো তা থেকেই অনুমান করা যায় উনারা কি পরিমাণ মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন । যেমন (১) তুর্কি ঘোড়ায় চড়তে পারবেনা ( সে আমলে এই ঘোড়া ছিল আভিজাত্যের প্রতীক) (২) জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিধান করতে পারবেনা (৩) আচালা আটার রুটি খেতে হবে(সাধারন মানুষ যা খায়) (৪) সদর দরজা সবসময় খোলা রাখতে হবে (যাতে করে জনগণ যে কোন ফরিয়াদ নিয়ে তার কাছে আসতে পারে) এবং (৫) দরজায় কোন পাহারাদার থাকবেনা ( ফরিয়াদি যাতে বাধা প্রাপ্ত না হয়) । রাশিদুন আমলে খলিফাদের এরূপ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকাটাও একে একে তিনজন খলিফার আততায়ীর হাতে নিহত হয়ার একটি কারন ।
উল্লেখ্য যে এ তিন জন খলিফার কেউই ধর্মীয় কোন কারণে নয়, শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারনেই খুন হন। ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ, নবীর প্রতি ভালবাসা ও আল্লাহভিতি কোন কিছুই মুহাম্মদের প্রধানতম এই তিন সাহাবী ও বিশ্বের শ্রেষ্টতম এই শাসকদের হত্যা করা থেকে কতিপয় মুসলমানকে বিরত রাখতে পারেনি । রাশিদুন খিলাফতের আয়ুকাল ছিলো ৬৩২ থেকে ৬৬১ খৃষ্টাব্দ যা মাত্র ২৯ বৎসর। তখন পর্যন্ত নবী মুহাম্মদের গায়ের গন্ধ মদিনার বাতাস থকে বিদায় নেয়নি, অথচ এই সময়ের মধ্যেই তাঁর অতি প্রিয় তিন তিনজন সাহাবী খুন হয়ে গেলেন শুধু মাত্র ক্ষমতার দ্বন্ধে ।

আল-কুরআনে ও মুহাম্মদ(দঃ) এর হাদিসে জাতিগত সমতা ও ন্যায় বিচারের ব্যপারে উল্লেখ করা আছে এবং বিদায় হজ্বের ভাষণেও তিনি এই কথা বলে গেছেন । তিনি গোত্র ও জাতিভিত্তিক পার্থক্যকে নিরুৎসাহিত করেছেন । কিন্তু মুহাম্মদের মৃত্যুর পর পুরানো গোত্রীয় ভেদাভাদ আবার মাথাচারা দিয়ে উঠে। পরবর্তীতে ক্ষমতার এ লড়াই ইসলাম ধর্মকেই দুই ধরায় বিভক্ত করে দেয় এর একটি ধারা সুন্নি ইসলাম এবং অপর ধারাটি শিয়া ইসলাম হিসাবে পরিচিতি লাভ করে ।
শিয়া হলো ঐতিহাসিক বাক্য “ শিয়াতু আলী “ এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ আলীর অনুগামীরা । শিয়া মতবাদের মূল ভিত্তি হলো তারা বিশ্বাস করে মুহাম্মদ(দঃ) আলীকেই খিলাফতের জন্য মনোনীত করে গিয়েছিলেন যা উদ্দেশ্য মূলক ভাবে মানা হয়নি । অথচ নবী তাঁর কোন উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে গেছিলেন এমন কোন তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি ।

৬৪৪ সালে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফফানের খিলাফত লাভের পর উমাইয়া পরিবার প্রথমে ক্ষমতায় আসে । তবে এই বংশের শাসনের সূচনা হয় মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কতৃক ৬৬১ খৃস্টাব্দে এক চুক্তির মাধ্যমে মুয়াবিয়ার ক্ষমতায় আসার মাধ্য দিয়ে । মুয়াবিয়া চুক্তির বাইরে গিয়ে তার পুত্র ইয়াজিদ কে খিলাফতের উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে উমাইয়া রাজবংশের সূচনা করেন । অনেক নামকরা মুসলিম ইয়াজিদের ক্ষমতার বিরোধী ছিলেন । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুহাম্মদের একজন সাহাবীর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের এবং ৪র্থ খলিফার পুত্র হুসাইন ইবনে আলী । ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা যেনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তদের সমর্থন নেওয়ার জন্য আবেদন জানায় । এ খবর ইয়াজিদ জানতে পেরে বসরার গভর্নর উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে কুফার জনগণকে হুসাইনের নেতৃত্বে সমেবেত হওয়া থেকে নিবৃত করার দায়িত্ব দেন । জিয়াদ জনতাকে প্রতিহত করতে সমর্থ হন ।

এদিকে হুসাইন সিন্ধান্ত নেন তিনি কুফায় যাবেন, এসময় সমর্থনের অভাবের বিষয়টি তাঁর জানা ছিলো না । তিনি সপরিবারে কুফার পথে অগ্রসর হতে থাকেন। পথিমধ্যে কারবালা নামক স্থানে ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী তাদের কাফেলাকে রুখে দেয় । তারা হুসাইনের পরিবারের সদস্যদের সাথে লড়াই করে সব পুরুষ সদস্যকে হত্যা করে । এদের মধ্যে বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলী ইবনে হুসাইন জয়নাল আবেদিন । অসুস্থার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হলে তিনি লড়াই করতে পারেননি । এই ঘটনা ঐতিহাসিক কারবালার যুদ্ধ বা ইসলামের দ্বিতীয় ফিতনা নামে পরিচিত । এবং এটিও ছিলো ইসলামের ইতিহাসে একটি নিষ্ঠুরতম রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ।

ইতিহাসের নিষ্ঠুর পরিহাস হচ্ছে ৬৩০ সালে মুহাম্মদ এর মক্কা বিজয়ের পর তিনি ১০জন ব্যতীত মক্কাবাসী সকলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তখন মুহাম্মদ এর প্রধানতম শত্রু আবু সুফিয়ান ও তার স্ত্রী পুত্ররা ইসলাম গ্রহণ করে এবং সাধারন ক্ষমার সুযোগ পায় । আর এই আবু সুফিয়ান এরই পুত্র মুয়াবিয়া বিশাল এই মুসলিম সাম্রাজ্যের মালিক বনে যান এবং পরবর্তীতে তার পুত্র ইয়াজিদের হাতেই নির্মম ভাবে খুন হয় হয় নবী মুহাম্মদ এর আপন স্বজনরা ।

ইতিহাসে এই রাজনৈতিক বাস্তবতা কিন্তু বারবার ফিরে আসে । আমরা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করি দেখতে পাবো ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহামান কতৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়েছিলো, আর কি পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের । জীবন বাজী রেখে যে মুক্তি যৌদ্ধারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ৭১ এ যুদ্ধ করেছিলো, স্বাধীন বাংলাদেশে সেসব সামরিক বেসামরিক মুক্তিযৌদ্ধারাই একে অপরকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে । আর স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী শক্তি ফুলে ফেঁপে সগর্বে অবস্থান করছে ।

৬৬১ সালে ক্ষমতা প্রাপ্ত উমাইয়া খিলাফত ইসলামের দ্বিতীয় খিলাফত, এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে । উমাইয়ারা মুসলিমদের বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখে । সীমার সর্বউচ্চে পৌছালে খিলাফতের মোট আয়তন দাঁড়ায় ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গ মাইল আর জনসংখ্যা আনুমানিক ৩কোটি ৪০লক্ষ।
কিছু মুসলিমের কাছে উমাইয়াদের কর সংগ্রহ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনৈতিক ঠেকে । সে সময় অমুসলিম জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো এবং তাদের বিচারিক কারয্যক্রম তাদের আইন ও ধর্মীয় প্রধান বা নিজেদের নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা চালিত হতো । তবে তাদের কেন্দ্রিয় সরকারকে জিজিয়া কর দিতে হতো । মুহাম্মদ জীবদ্দশায় বলেন যে প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ধর্ম পালন করতে পারবে ও নিজেদের শাসন করতে পারবে । উমর কতৃক গৃহীত মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা উমাইয়া শাসনের সময়ও অব্যাহত থাকে ।
আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেকার বিরোধের কারণে সিরিয়ার বাইরের প্রদেশগুলোতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে সম্পদ ও লোকবল কমে আসায় তৃতীয় মুসলিম । গৃহযুদ্ধের সময় উমাইয়া শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আব্বাসিয় বিপ্লবের ফলে ৭৪৪ খৃষ্টাব্দে উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটে । চলবে -----
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×