somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চলেপথিক
আমি মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, কারণ মুক্তচিন্তা হলো এমন এক প্রকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যা বলে যে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ , মতামত গঠনের ক্ষেত্রে প্রথা, অন্ধবিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় ।

বঙ্গবন্ধু কে লেখা খোলা চিঠি

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বঙ্গবন্ধু , আজ বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকী উদযাপন করছে আপনার বাঙ্গালী জাতি আর উৎসবপ্রিয় বাঙ্গালী তার অতীতের সব দুঃখ, কষ্ট, বেদনা ভুলে বিভোর হয়ে যায় সব আনন্দেই । আর স্বাধীনতার আনন্দ বলে কথা বাঙ্গালীর সে স্বপ্ন তো আজকের নয় । সেই মোগল আমল থেকে বৃটিশ আমল বারভুঁইয়া থেকে সূর্যসেন পর্যন্ত কত ভাবেই না বাঙ্গালী সংগ্রাম করেছে । কত ময়ের বুক খালি হয়েছে , কত জন যে ফাঁসিতে ঝুলেছে , কত সহস্র নেতা কর্মী কারাভোগ করেছে তার কোন হিসেব নেই । সেই অধঃরা স্বাধীনতাটাই কি না ৭১ এ আপনার হাত ধরে পেয়ে গেলাম ।

বঙ্গবন্ধু , বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে ১৯৪৭এ স্বাধীন পাকিস্তানের দাবীতে আপনিও লড়েছিলেন । "হাতোমে বিড়ি মুখোমে পান লেড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান “ এমনই এক আজব শ্লোগান দিয়ে অর্জিত স্বাধীন পাকিস্থানের মোহ কাটতে খুব বেশী সময় আপনার লাগেনি । অতিদ্রুতই আপনি বুঝতে পেরেছিলেন বৃটিশদের কাছ থেকে পাওয়া এই স্বাধীনতা বাঙ্গালির আশা আকাংখ্যা পূরণে কোন ভূমিকা রাখবে না । সে উপলব্ধি থেকেই আপনার নতুন ভাবে পথচলা, আর একজন শেখ মজিবুর রহামান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রা । যে কাহিনী বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে । কারণ আমি বিশ্বাস করি ইতিহাস মানুষকে সৃষ্টি করে না মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে, আর আপনি হচ্ছেন এমনি এক কাব্যিক ইতিহাসের মহানায়ক ।
প্রিয় বঙ্গবন্ধু , আপনার ৩রা মার্চের সেই অসাধারণ ভাষণের মাত্র এটুকই বাঙ্গালী ধারণ করেছিলো । “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেতে হবে, জয় বাংলা”। আর তার নতিজাতো আপনি নিজ চোখেই দেখেছেন আমরা মাত্র নয় মাসে দেশকে মুক্ত করে ছেড়েছি । ৯০হাজার বর্বর পাকিস্থানি সৈন্যকে আমরা অক্ষত ছেড়ে দিয়েছি শুধু মাত্র আপনার জীবনের বিনিময়ে ।

বঙ্গবন্ধু ,২৬শে মার্চ এর সে কালো রাতে বাংলার আওয়াল, বৃদ্ধ, বণিতা, কবি কিশোর সুকান্তের মতই জেগে উঠেছিলো সুতীব্র চিৎকারে । উত্তলিত মুষ্টিবদ্ধ হাত সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞায়, তীব্র ভাষায় জানিয়ে দিয়ে ছিলঃ-“বন্ধু এবার বিদায়, জালিয়ানওয়ালায় যে পথের শুরু সে পথেই আমাকে পাবে, জালালাবাদের পথ ধরে ভাই ধর্মতলার পরে, দেখবে ঠিকানা লিখা প্রত্যেক ঘরে, ক্ষুব্দ এদেশে রক্তের অক্ষরে “ । সে দিন দল মত নির্বিশেষে অকাতরে জীবন দিয়েছে বাংলার ছাত্র , কৃষক, স্রমিক ,সাধারণ জনতা । স্ম্রম হারিয়েছে অগণিত বাংলার মা বোনেরা তারপরও আমরা আত্মসমর্পণ করিনি বঙ্গবন্ধু । আমরা লড়েছি, চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত । কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সে লড়াই আপনি দুই নয়নে দেখতে পাননি । আপনি বেঁচে আছেন কি না তাও আমরা জানতাম না, অবশ্য তাতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি । আপনার সুযোগ্য চার সাহাবী অন্তান্ত সাহসিকতার সাথে আপনারি নামে স্বাধীনতার এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন । সমস্যা যে টুকু হয়েছে তা ছিল আপনার আপনজনদের মাধ্য থেকে নেতৃত্বের উত্তরাধিকারের প্রশ্নে, যার কু-ফল গোটা জাতিকে আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু , আমরা তো ৭কোটি বাঙ্গালী আপনার নির্দেশ সঠিক ভাবেই পালন করেছিলাম । কিন্তু আপনি এটা কি করলেন, দেশে আসা মাত্রই প্রধান মন্ত্রীর কঠিন দায়িত্বটি কাঁধে তুলে নিলেন ? এই পদটি তো বরাবর আপনারই ছিল , সে ৭১এর ৩রা মার্চ থেকে আপনিই তো বাংলাদেশের অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী । আমার ব্যক্তিগত ধারণা আপনি যদি আর কোনদিন বাংলাদেশে ফিরে নাও আসতেন তাহলে এই পদটি হয়তো আজীবন অস্থায়ীই থেকে যেতো । তা হলে এত তাড়াহুড়োর কি প্রয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধু ? আপনি তো পাকিস্তানে কোন পাঁচতারকা হোটেলে অথিতি হিসাবে ছিলেন না । ছিলেন কারাগারে একজন বন্দী রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে যার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল ফাঁসির মঞ্চ । জানি মৃত্যু ভঁয়ে ভিত ছিলো না কখনও আপনার সিংহ হৃদয় । কিন্তু জেলখানার প্রতিটা মুহূর্ত যে আপনি কাটিয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায় তাতে তো কোন ভুল নেই । কারণ আপনার সোনার বাংলা, আপনার বাংলার মানুষ আর আপনার রাজনৈতিক সহকর্মীদের কি পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সেটি আপনার জানা ছিল না ।
এরি মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় আনেক রক্ত গড়িয়ে গেলো আপনিও মুক্ত হলেন । পাকিস্তানের কারাগার থেকে সরাসরি লন্ডন হয়ে দিল্লী, এসেই মিসেস ইন্দ্রাগান্ধিকে আপনার প্রথম প্রশ্ন ভারত তার সেনাবাহিনী কবে ফিরিয়ে নেবে ? আহ , কি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আপনার ঝানু রাজনীতিবিদ মিসেস ইন্দ্রাগান্ধি পর্যন্ত ভড়কে গেলেন । এমন একটি প্রশ্নের জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না , অথচ তাঁকে বলতে হল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নেওয়া হবে । তিনি তাঁর কথা রেখে ছিলেন, তবে এটি তাঁর কতটা মহানুভবতা ছিল জানি না । কিন্তু ভারতীয় সেনাকর্মকর্তারা যে বাংলদেশ দখলে রাখাতে আগ্রহী ছিলেন না এই ব্যপারটি অন্তত সুস্পষ্ট ছিল । পাকিস্তানীরা না বুঝলেও ভারতীয়রা ঠিকই বুঝেছিলও এটা মুজিবের বাংলা, এটাকে হজম করা খুব সহজ ব্যপার হবে না । আপনিও নির্ভাবনায় ফিরে এলেন আপনার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় আর এসেই অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর গুরু দায়িত্বভারটা তুলে নিলেন নিজের চওড়া কাঁধে ।
তাও আবার এমন এক সময়ে যখন বিধ্বস্ত পুরো বাংলা, চারি দিকে মৃত মানুষ , বাংলার বাতাসে বারুদ আর পোড়ামাটির ঝাঁজাল গন্ধ , বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা , খালি ফসলের মাঠ , কৃষকের গোলায়ও এক ফোটা ধান নেই , আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্তনাদ আর নির্যাতিতা নারীদের আহাজারিতে ভরে আছে গোটা দেশ । এমনই এক পরিস্থিতিতে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসে আপনি হয়তো কিছুটা রোমাঞ্চিত ছিলেন । তাই বলে একটুখানি বিশ্রাম কি আপনার প্রয়োজন ছিল না বঙ্গবন্ধু ? কোথায় বিশ্রাম, কোথায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত একবার খুজে দেখা তাদের, যাদের আপনি রেখে গিয়ে ছিলেন ২৬শে মার্চের কালো রাতে পূর্ব পাকিস্তানে । যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে কি ভাবে তারা একটি আধুনিক সুশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল । সে বীরগাঁথা তাদের মুখ থেকে শুনতে , কৈ আপনিতো একবারের জন্যও এলেন না তাদের কাছে !
প্রিয় বঙ্গবন্ধু , এই অসম যুদ্ধে কে প্রাণ দিলো আর কে বেঁচে থাকলো একবারও কি আপনি তা জানার চেষ্টা করেছিলেন ? কেউ একজন কানে কানে বলে দিলো আপনিও ঘোষণা করে দিলেন ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে । যা বিগত ৪৪বছরে বাংলাদেশের কোন সরকারই প্রকৃত হিসাব বের করার চেষ্টা করেনি । আপনার কি একবারও মনে হয়নি মাত্র একটি ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে যে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী মৃত্যুকে তাদের পায়ের ভৃত্ত বানিয়ে এই অসম যুদ্ধে লাল সবুজের পতাকাটা ছিনিয়ে নিয়ে এলো , সে হত্যভাগ্য সাধারণ মানুষগুলোর কথা ?
হয়তো ভেবেছেন তাদের জন্য শোষণমুক্ত সোনারবাংলা গড়ে তুলবেন, সুদে আসলে ভরিয়ে দেবেন চির দুঃখী এই বাংলামায়ের আঁচল । আপনার এমন ইচ্ছায় হয়তো কোন ছলনা ছিলো না , কিন্তু আমরা সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ গুলো যে বড় আশাহত হয়েছি । ৭১এ লাখো বাঙ্গালীর রক্ত ঝরিয়ে যে স্বপ্ন আপনি দেখালেন ৭৫এ নিজের জীবন দিয়ে সে স্বপ্ন নিজেই ধূলিসাৎ করে দিলেন , এ কেমন আত্মত্যাগ? আপনিতো বাঙ্গালী মুসলমান পরিবারেই জন্ম নিয়েছিলেন তাই তো মধ্যযুগের ইসলামের ইতিহাস আপনার অজানা থাকার কথা নয় । ইসলামী খেলাফতের বিখ্যাত তিন খলিফা নিজ বাসগৃহেই নির্মম ভাবে খুন হয়েছিলেন আর মুসলমানরাই এই হত্যাকাণ্ড গুলি ঘটিয়ে ছিল। এর কারণ গুলোও আমাদের অজানা নয় , এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ ছিল অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা । আপনি তো খলিফায়ে রাশেদিন এর আমলের কোন খলিফা ছিলেন না । তবে কেন এত অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আপনার ৩২নম্বরে বসবাস, এটা কি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকার অভিপ্রায়ে ? বাংলার গণমানুষের কাছ থেকে তো আপনি সে দিনই বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছিলেন । যে দিন আপনি প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিলেন আর তার সাথে প্রটোকল, চাটুকার আর ষড়যন্ত্রকারীদের ঘেরাউ এর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেলেন ।

বঙ্গবন্ধু ,ক্ষমতায় বসে আপনি চিন্নিত করতে ব্যর্থ হলেন সদ্য স্বাধীন এ দেশে কে আপনার বন্ধু আর কে আপনার শত্রু । যারা আপনার অবর্তমানে সফলতার সাথে স্বাধীনতার এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিল তাদের অনেকের কাছ থেকেই আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হল । যে মুক্তিযোদ্ধারা আপানাকে প্রানের চেয়েও বেশী ভালবাসত তাদের আপনি নিরস্ত্র করে ছেড়ে দিলেন। আর সুযোগ বুঝে যড়যন্ত্রকারিরা কাটা ঘুড়ীর মত দিকভ্রান্ত আমাদের সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ললাটে এঁটে দিল ডাকাত আর হাইজাকারের তকমা ।
আপনার প্রিয় শিস্য সিরাজুল আলম খান এর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এর সব মেধাবী তরুণরা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বেরিয়ে গিয়ে সৃষ্টি করলো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ । আর আপনাকে বোঝান হল বামপন্থিরাই দেশের প্রধান শত্রু । আপনি তা বিশ্বাস করলেন আর দমন পীড়ন চালালেন বামপন্থিদের উপর । আপনার মনোযোগ সরে গেল ডানপন্থীদের থেকে এই সুযোগে সংগঠিত হয়ে গেলো স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি । আপনি আলবদর রাজাকারদের বাঁচিয়ে রাখলেন , মেরে ফেললেন দেশপ্রেমিক বামপন্থি রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের । বঙ্গবন্ধু বামপন্থিরা আর যাই করুক অন্তত আপনাকে স্বপরিবারে হত্যা করতো না আর বাংলাদেশও আজ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়তো না । অথচ ৭৫ এ আপনি সেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকেই গেলেন , কিন্তু বড় দেরি করে ফেললেন ।
এই কর্মসূচিটি আপনি ৭২এ দেশে ফিরেই বাস্তবায়ন করতে পারতেন । আপনার বজ্রকঠিন কন্ঠে ঘোষণা দিতে পারতেন আজ থেকে সব আন্দোলন সংগ্রামের অবসান হয়েছে । মুজিব বেঁচে থাকতে আমার বাংলার মানুষ আর রাজপথে রক্ত দেবে না । আসুন দলমত নির্বিশেষে আমরা সকলে মিলেমিশে এই দেশ পরিচালনা করি, যত দিন না আমরা একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি । বাংলার সমস্ত মানুষ আপনার এমন সিদ্ধান্ত নত মস্তকে মেনে নিত ।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু ,সদ্য স্বাধীন দেশে একটি জাতীয় সরকার গঠন না করে আপনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বসে গেলেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পরিষদে । যদিও তারা সবাই ছিলেন এই দেশেরই অধিবাসী কিন্তু আপনিসহ তারা সবাই নির্বাচিত হয়েছিলেন ৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের অধীনে পাকিস্তানী পার্লামেন্টের জন্য । যেখানে পূর্ব পাকিস্তান নামক কোন রাষ্ট্রেরই আর অস্থিস্ত নেই সেখানে সে দেশের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অস্থিস্ত কিভাবে থাকে তা আমার বোধগম্য নয় । যাহোক ১৯৭৩ এ যেয়ে আপনি নির্বাচন করলেন যেটি ছিল স্বাধীন দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন । সে নির্বাচনে আপনার দল আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, নির্বাচনটি একদম নিষ্কলঙ্ক ছিল এমন কথা বলা যায়নি । আমি মনে করি এই কাজটি করা হয়েছিল যাতে করে আওয়ামী লীগ এর বাইরে কেউ যেন সরকার পরিচালনায় অংশ নিতে না পারে । অথচ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল এটা যেমন সত্যি তেমনই একটি চরম সত্য হচ্ছে এ দেশের আপামর জনগণও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল । যাদের একটি বিরাট অংশই আওয়ামী লীগ এর কর্মী সমর্থক ছিলো না । এর ফলে সবাইকে বঞ্চিত করে কেবল আওয়ামী লীগ এর নেতা কর্মীরাই হালুয়া রুটি খাবে এমন একটা ম্যসেজ জনগণের মাঝে পৌছে যায় । এটিকে আরও পূর্ণতা দেয় পরিবহন ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কারণে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য সামুগ্রি ও খদ্য শস্য দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে পৌছাতে না পারা । ত্রান কাজে নিয়জিত ব্যক্তিবর্গের অদক্ষতা ও অসততার ফলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ , যাতে অসংখ্য মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায় । আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়া জাল পেঁচিয়ে শরীর ঢেকে রাখা বাসন্তীর ছবির মত ঘটনাগুলো মারাত্মক ভাবে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে ।

এরই মধ্যে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর দ্বারা শহরাঞ্চলে অবাঙ্গালীদের সম্পদ দখল । গ্রামগঞ্জে ভারত থেকে দেশে ফিরে না আসা হিন্দু শরণার্থী পরিবারগুলোর বাড়ীঘর দখল । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শেখ ফজলুল হক মনি কর্তৃক ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তরুণদের নিয়ে গঠিত বিশেষ এলিট ফোর্স বিএলফ এর সদস্যেদের নানামুখি তৎপরতা ও সুযোগ সুবিধা, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে । ৭১এর ১৬ই ডিসেম্বরের পর রাজাকার আল-বদরদের পরিত্যাক্ত অস্ত্র সংগ্রহের মাধ্যমে কতিপয় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব । তাদের দ্বারা অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি এবং সেটি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে আপনার প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থাও ক্রমাগত কমতে থাকে ।

পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের সরকারে আত্মীয়করণের ফলে জনপ্রশাসন ও সামরিকবাহিনীর মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভক্তি । ফলে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই । সদ্য স্বাধীন একটি দেশে সামরিকবাহিনী পূর্ণগঠন প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল হওয়া সর্তেও রক্ষীবাহিনী নামে আরেকটি নতুন বাহিনী গঠন করা । রক্ষীবাহিনীর পোশাক তৎকালীন ভারতীয় সেনা বাহিনীর পোশাকের সাথে মিলিয়ে রাখা । জাসদ এর নেতা কর্মীদের উপর রক্ষীবাহিনীর নির্মম দমন পীড়ন আর নির্যাতন। এসব কিছু দেশবাসী ও সেনাসদস্যরা ভাল ভাবে গ্রহণ করেনি । জাসদ এর অধিকাংশ নেতা কর্মীই ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মেধাবি ছাত্র ও নীতিবান তাই দেশের সাধারণ জনগণের কাছে তারা ছিল বেশ জনপ্রিয় । সে সময়কার সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী এই মেধাবী তরুণদের ছাত্রলীগ ধারণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মুলত আজ আওয়ামী লীগ অযোগ্য নেতা কর্মীরদের ভারে বিব্রত ।
বঙ্গবন্ধু , আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্র পরিচালনায় আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না তাই ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে । কিন্তু আপনি অভিজ্ঞতা অর্জনে এত বেশী সময় নিয়ে নিয়েছেন যে , এরই মধ্যে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো হয়ে গেছিলো, অপেক্ষা ছিল শুধু মোক্ষম সুযোগের । সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা আর জনগণের সাথে আপনার বিচ্ছিন্নতা, আপনার কতিপয় নিকট আত্মীয়দের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আপনার উদারতার সুযোগে কিছু মানুষের অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ এটিকে তরান্বিত করে, ফলে ঘটে যায় ১৫ই আগষ্টের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা । অভিশপ্ত সেই কালো রাতে হারিয়ে যায় স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শেখ মজিবুর রহামান। আর বাঙ্গালী জাতি চিরতরে হারিয়ে ফেলে গণমানুষের নেতা তাদের বঙ্গবন্ধু , তাদের প্রিয় মুজিব ভাইকে ।

বঙ্গবন্ধু , সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে এই হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধাদেরই দ্বারা । শুধু এটি কেন, ১৫ই অগাস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত এদেশে যতগুলো অভুথ্যান সংগঠিত হয়েছে তার সব গুলোতেই দেখা গেছে মুক্তিযৌদ্ধারাই একে অপরকে হত্যা করেছে । অথচ বহাল তবীয়তে বেঁচে আছে পাকিস্তান ফেরত সামরিক বেসারিক কর্মকর্তা আর স্বাধীনতা বিরোধীরা । বাংলার মুক্তি সংগ্রামের এই বীর সন্তানদের এমন করুন পরিণতি বোধহয় সেক্সপিয়ারের কোন ট্র্যাজিক উপন্যাসেও খুজে পাওয়া যাবে না । এমন কি বাংলাদেশ যাতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য শেষ মুহূর্তে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী কারাবন্দী জাতিয় চার নেতাকে । বাঙ্গালী আটকে যায় পাকিস্তানী স্টাইলের সামরিক শাসনের যাঁতাকলে । আবারও আন্দোলন , সংগ্রাম , মিছিল অবশেষে নূর হোসেনদের রক্তের বিনিময়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা ।

বঙ্গবন্ধু, আপনিতো জীবনের ওপারে গিয়ে স্বস্তিতেই আছেন আর আমাদের রেখে গেছেন সুবিধাবাদী এক রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিপাকে । আপনার প্রিয় বাংলায় আজ আর কেউই নিয়মাতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে না । এ দেশ এখন নীতির চেয়ে কৌশল বড় , আদর্শের চেয়ে সুবিধা বড় , দেশের চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে নেতা বড় কালচারে আক্রান্ত । আজ আপনার সংগ্রামী বাংলায় কোন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মীকে হারিকেন দিয়েও খুজে পাওয়া যায় না, সুবিধাবাদী নেতা আর তাদের অনুগত ক্যাডারে সয়লাব গোটাদেশ । যে অসাম্প্রদায়িক বাংলার স্বপ্ন আপনি দেখেছিলেন আজ সেই বাংলার সিংহদ্বারের কড়া নাড়ছে বিষাক্ত অজগর । বাংলার বাতাস ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে তার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে। অনিশ্চিৎ ভবিষ্যৎ , গন্তব্যহীন যাত্রায় অন্তমুখি যুবসমাজ , বিভ্রান্ত তারুণ্য আজ মোবাইল ফোন আর ইয়াবা , ফ্যন্সিডিলের নেশায় খুজে বেড়ায় মুক্তির পথ । কে তাদের আশা দেবে , কে তাদের ভরসা দেবে , কাকে তারা বিশ্বাস করবে ? বুদ্ধিজীবীরা বিভক্ত , মুক্ত চিন্তা আর স্বাধীন মতপ্রকাশে সরকারী বেসরকারি আক্রমণে দিশেহারা বিবেগবান মানুষ, আর গণতন্ত্রের মানসকন্যা বন্দী পরশ্রীকাতরতায় ।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু , সদ্য স্বাধীন দেশে আপনি যে চোরের খনি আবিষ্কার করেছিলেন তারা এখন প্রমোশন পেয়ে ডাকাতে পরিণত হয়েছে । এ দেশের গরিব জনগণের অর্থ লুণ্ঠন করে তারা এখন বিদেশী ব্যাংক গুলোতে গচ্ছিত রাখে । দামি গাড়ি চড়ে অস্ত্র উঁচিয়ে সদম্ভে প্রকম্পিত করে জনপথ , তাদের সন্তানেরা বিদেশের বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করে আর আপনার গরিব স্কুল শিক্ষকরা আজও বেঁচে থাকার দাবীতে ভিক্ষুকের মত অপমানিত লাঞ্ছিত হয় ঢাকার রাজপথে । ১৫ই অগাস্টের পর থেকে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে পেয়ে বসেছে আপনার প্রিয় মাতৃভূমিকে তা আজও অব্যাহত । আমলা, পুলিশ থেকে বিচারক পর্যন্ত কেউ আর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী নয়। তাদের বেশীর ভাগেই আজ কোন না কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী । তাই তো প্রতিদিন খবর হয়ে আসে ছুড়ে দেওয়া গরলে ঝলসে যাওয়া কমনীয় বঙ্গ ললনার বিকৃত মুখোছবি, ধর্ষিতা কিশোরীর নিষ্প্রাণ দেহ । প্রকাশ্য দিবালোকে যৌন নির্যাতনে অপমানিত নারীর নির্বাক কান্না , খুন আর গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনদের আহাজারি ।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু , একটি বড় সুখবর হছে আপনার দল আওয়ামী লীগ আজ বাংলার মসনদে আর আপনার প্রিয় কন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী । তিনি এখন আপনার রেখে যাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করছেন তাই দুঃখী জনগণের খবর নেওয়ার সময় নেই । এই সুযোগে বরাবরের মতই আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠী উনার কাঁধে বন্দুক রেখে শিকারে ব্যস্ত । খুনের মামালার আসামীরাও আজ সকাল সন্ধ্যায় দেশবাসীকে মুজিবিয় শুভেচ্ছা বিলিয়ে বেড়ায় । আপনার প্রিয় মুজিব কোট আজকাল অনেকের বুলেট প্রুফ জ্যকেট,
আর আপনার ছবি এখন রক্ষা কবচ । মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সে তো সারিবাদি সালসাকেও হার মানিয়েছে , ১৬ থেকে ৭০ বছরের অনেকেই এখন চেতনার পরশে চাঙ্গা । আর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে আমরা এখন গণতন্ত্রকে খুজে বেড়াই স্যটেলাইট চ্যানেলের ডিজিটাল ফর্মে ।
প্রিয় বঙ্গবন্ধু , এত অপ্রাপ্তির মধ্যেও একটা শান্তনা হচ্ছে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়ে গেছে । আপনি ছিলেন গরিব দেশের একজন গরিব প্রধানমন্ত্রী । আপনার অর্থমন্ত্রী মরহুম তাজউদ্দীন আহাম্মদ ১০০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করতে যেয়ে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার উপক্রম । আর এখন আপনার কন্যার অর্থ মন্ত্রী মুহিত সাহেব ২লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন হাসতে হাসতে । আর এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছে আপনার গফুর , মহেস আর আমেনারা অথচ আজও তারা পেট ভরে খেতে পায়না । যে ২২ পরিবারের শোষণ থেকে বাংলার কৃষক , শ্রমিক কে রক্ষা করার জন্য আপনার দীর্ঘ সংগ্রাম তাদের প্রেতাত্মা থেকে আজ নতুন করে জন্ম নিয়েছে ২২শ পরিবার । বাংলার মেহনতি মানুষের সমস্ত অর্জনই আজ তাদের লালসার আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হতে চলেছে ।

বঙ্গবন্ধু , দেশের দুঃসময়ে আপনাকে বড় মনে পড়ে, এক অদ্ভুত সময় পার করছে আজ আপনার স্বদেশ। এই মুহূর্তে আপনার বিদুষী কন্যাই শুধু পারে দেশকে গণতন্ত্রের রেলগাড়িতে তুলে দিতে । তিনি এখন বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাবান মানুষের মধ্যে ১৩ তম স্থানে রয়েছেন । পেয়েছেন আনেক আন্তর্জাতিক পুরুস্কার, আপনার এই কন্যাটি আপনার মতই সাহসী আর উদারও । তার সাথে যদি একটু দূরদৃষ্টি আর পরমত সহিষ্ণুতা থাকে তা হলে পাঁচবছরেই পালটে যেতে পারে গোটা দেশ । অথচ উনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বিএনপির মত জনপ্রিয় একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও তার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে । আপনি তো চিনেন এই নারীকে আপনার বীর সিপাহশালার মেজর জেনারেল জিয়াউর রহামান বীরউত্তম এর সধর্মিণী তিনি । তার দল বিএনপি’র জন্ম নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন বাস্তবতা হচ্ছে দেশের গণতান্তিক আন্দোলনের আপসহীন এই নেত্রীকে রাজনীতিতে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই । বিএনপি হতে পারে দলছুটদের দল আর বাস্তবতা হচ্ছে গণতান্ত্রিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বিকল্প কোন দলই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে জনপ্রিতা অর্জন করতে পারেনি। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই গণতান্ত্রিক দলগুলোর টিকে থাকা প্রয়োজন , কিন্তু আপনার সুযোগ্য কন্যা কেন যেন এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারছেন না । উনার দমন পীড়ন দেখে মণে হয় তিনি দলটিকে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ন করে ফেলার প্রতিজ্ঞা করে বসে আছেন । আর এই সুযোগে ধিরে ধিরে উত্থান ঘটছে মৌলবাদী শক্তির । যা আরেকটি ৭৫ এর পটভূমি সৃষ্টির পথ পরিষ্কারের আশংকা তৈরি করছে । এমন হলে আগামী দিনের বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার মডেলে রূপান্তরের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু , তারপরও আপনার কন্যা শেখ হাসিনা আর বেগম খালেদা জিয়ার গণতান্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় যে অবদান তাকে এ দেশের মানুষের পক্ষে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই । বাংলাদেশ যখন স্বৈরশাসনের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত, রাজনৈতিক দলগুলো শতধা বিভক্ত , নেতৃবৃন্দদের কেউ কেউ বিভ্রান্ত আর কেউ আপসকামী এমনি এক দুঃসময়ে রাজনীতিতে ঐক্যের প্রতীক হিসাবে আবির্ভূত হন এই দুই নারী । সে থেকে বিগত তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে মহর্ষি এই দুই নারী বাংলাদেশ ও তার জনগণকে আগলে রেখেছেন পরম মমতায় । ক্ষমতায় আরোহণ করে তাঁরা যদি ভুল ভ্রান্তি কিছু করে থাকেন সে দায় অবশ্যই তাঁদের নয় । এর দায় সম্পূর্ণ রূপে বর্তায় তাঁদের চাটুকার রাজনৈতিক সহকর্মী , তাঁদের পরামর্শক , সুবিধাবাদি আমলা , লুটেরা ব্যবসায়ী আর নির্লজ্জ স্বজনদের । কোন ভাবেই আমরা অসম্মান করতে পারি না দেশের চরম দুঃসময়ের এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে । আজও আপনার বাঙ্গালী অকারণে অসম্মান করতে দ্বিধা করে না জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু , আপনাকে অসময়ে বিরক্ত করার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত কিন্তু আমাদের যে বড় দুর্দিন । এই সময় আপনাকে আমাদের ভীষণ প্রয়োজন, কেবল আপনিই পারেন আপনার বিভ্রান্ত কন্যাকে সঠিক পথ দেখাতে । দুই তিন লক্ষ মানুষের নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদি যদি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চাঁদে দেখা দিতে পারেন ! আপনিতো বাংলার কোটি কোটি মানুষের নেতা, আপনি কি পারেন না টঙ্গীবাড়ী থেকে গণভবনে একবার দেখা দিতে ? গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা যদি এমন বিভ্রান্তিতে আক্রান্ত হয় তা হলে যে গণতন্ত্রের পথে বাঙ্গালীর দীর্ঘ অভিযাত্রার এখনেই সলিল সমাধি রচিত হবে । এমন দুঃসময় আমরা আর অতিক্রম করতে চাই না বঙ্গবন্ধু ,আমরা যে বড় বেশী ক্লান্ত ।

সবশেষে , হে বাঙ্গালীর স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্ঠা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন আর কৃতজ্ঞতা । আমরা বিশ্বাস করি আপনার মত মহান মানুষদের কখনও মৃত্যু হয় না । তাই যত দিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন লক্ষ কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ের মণিকোঠায় আপনি জ্বলতে থাকেবেন উজ্জল নক্ষত্রের মত ।
ইতি, আপনার বাংলার অখ্যাত এক আমজনতা ।



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×