দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে অবস্থিত শরসিনা দরবার শরীফ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট এলাকা জুড়ে আছে তাদের ভক্ত আশেকান। সন্দেহ নেই নদী বিধৌত ঐ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে এই দরবার শরীফের অসামান্য অবদান আছে। কে জানে তারা যদি ঐ এলাকায় ইসলামের ব্যাপক প্রসার না ঘটাতেন, তাহলে ৪৭ এর দেশভাগের সময় বরিশাল, ফরিদপুর ও খুলনা অঞ্চল বোধ হয় ভারতের পেটেই চলে যেত।
কিন্তু ইসলাম প্রচারের প্রয়োজনেই হোক বা নিজেদের দাম বাড়ানোর জন্যই হোক, তারা প্রচলন করেছেন কিছু সুস্পষ্ট বিদাতের - তার মধ্যে একটি বিদআত হল মাগরিবের পরে আওয়াবিন নামের ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়া।
আমি বুঝতে পারিনা, কোথা থেকে কিভাবে এই নামাজের প্রচলন হল। সর্বকালেই মাগরিবের সময়টা হল মানুষের ব্যস্ততার সময়। কাজেই দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এই সময়ের নামাজ সংক্ষিপ্ত করা বাঞ্ছনীয়। সেই চিন্তা করেই আল্লাহতায়ালা তিন রাকআতের সংক্ষিপ্ত সালাত আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রাসূল (সা) এর হয়তবা তিন রাকাত পড়ে মন ভরেনি, তাই আরও দুই রাকাত পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি। আমরা যেহেতু রাসুল (সা) কে অনুসরণ করা আমাদের সংস্কৃতির অংশ বানিয়ে নিয়েছি, তাই আমরাও দুই রাকাত যোগ করে নেই।
কিন্তু শর্ষীনা দরবার শরীফ বলতে গেলে এর পরের ছয় রাকাত আওয়াবিন পড়াকে ফরজ করে নিয়েছে। শর্ষীেনার যে কোন মুরীদ আশেকান, তার যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন - এই ছয় রাকাত পড়বেই। এই করতে গিয়ে অন্যের অসুবিধা হল কিনা, বা নিজের কোন জরুরী কাজ বাদ পরে গেল কিনা, তার কোন তোয়াক্কাই করবেনা। আমার প্রচন্ড বিরক্ত লেগেছিল যখন খুলনা থেকে সোহাগ পরিবহণের একটি বাসে ঢাকা আসছিলাম। ধামরাইয়ের কাছাকাছি এসে একটা মসজিদের সামনে এসে গাড়ি থামায় আমার অনুরোধে। আমরা ৫/৬ জন যাত্রী নেমে গেলাম মাগরিবের নামাজ পড়তে - যার মধ্যে একজন জুব্বা পড়া ব্যক্তিও ছিল। পাঁচ মিনিটের মাথায় আমরা সবাই গাড়িতে এসে উঠলাম, ঐ জুব্বা পড়া ব্যক্তির আর খবর নেই। আরও ঝাড়া ১০ মিনিট পরে হেলে দুলে দুনিয়া উদ্ধার করে তিনি গাড়িতে এসে উঠলেন। এর কোন মানে হয়?
এনটিভির ইসলামী সাওয়াল জওয়াব থেকে নেয়া
প্রশ্ন : আমার মা মাগরিবের নামাজের পর আওয়াবিনের ছয় রাকাত নামাজ পড়েন। আমি জানি, কোরআন-হাদিসে এই নামাজের কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু মা আমার কথা শোনেন না। এটি যদি বেদাতের পর্যায়ে যায়, তাহলে কীভাবে মাকে বিরত রাখব?
উত্তর : মাগরিবের নামাজের পরে আওয়াবিনের নাম দিয়ে যে ছয় রাকাত নামাজ পড়া হয়, এটি রাসুলের (সা.) হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি।
তবে কোরআন ও হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই, এই বক্তব্য শুদ্ধ নয়। হাদিসে এই নামাজের বর্ণনা রয়েছে, কিন্তু সেটি সনদের দিক থেকে খুবই দুর্বল, গ্রহণযোগ্য নয়।
সেক্ষেত্রে তিনি নফল নামাজের নিয়ত করে ছয় রাকাত বা আট রাকাত নামাজ পড়তে পারেন, সেটিই উত্তম হবে। সালফে সালেহীনদের আমল দ্বারা এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা মাগরিব এবং এশার ওয়াক্তে নফল নামাজ আদায় করতেন। তাই এই দুই ওয়াক্তে যদি কেউ নফল নামাজ পড়তে চান তাহলে পড়তে পারেন, এটি জায়েজ রয়েছে।
কিন্তু এটি তখনই বেদাত হবে যখন নির্দিষ্ট করে নেওয়া হবে। যিনি মাগরিব এবং এশায় সালাতুল আওয়াবিন নাম দিয়ে ছয় রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবেন তিনি বেদাতের খাতায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:২৭