somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা দিবসে সমুদ্রের বুক থেকে একজন নিঃসঙ্গ মেরিনারের চিঠি অথবা হাহাকার

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় পরীর বাচ্চা,
জানি না দিনের কোন সময় এই লেখা তুমি পাবে। আমার এখানে এখন কেবল সূর্য উঠছে। লাল সূর্য। গভীর সমুদ্রের বুক থেকে। মনে হচ্ছে যেন ঠিক এই মুহূর্তে আমার মতই নিঃসঙ্গ।


প্রিয়া, খুব ইচ্ছা ছিল অন্তত আজকের দিনটা তোমার সাথে থাকতে। কিন্তু কী করবো বল? লাস্ট পোর্টে সাইন অফ করতে পারি নি। ৫ মাসের কন্ট্রাক্ট তাই ৬ মাসে গিয়ে ঠেকছে। আমার খুব ই কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উড়ে এসে তোমার বুকে পড়ি। কিন্তু তা তো আর হবার নয়।
এর আগে প্রতিটা ভালবাসা বার্ষিকীতে তোমার পাশে ছিলাম। যেভাবেই হোক দিনটা আমরা এক সাথে উদযাপন করেছিলাম। আমি জানি আমাকে পাশে না পেয়ে তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ আমাকে তুমি মাফ করে দিয়ো আর কোন রাগ রেখো না আমার উপর লক্ষ্মীটি। হয়তো একলা ঘরে একটা কেক নিয়ে একা একা বসে আছো। ভাবছো লাস্ট পোর্টে সাইন অফ না হবার কথা তোমাকে মিথ্যা বলেছি। আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীর দিনের মত সারপ্রাইজ হয়ে তোমাকে কিছু না জানিয়ে উপস্থিত হব। তোমাকে জড়িয়ে ধরে একসাথে আমাদের ভালবাসা দিবসের কেক কাটবো। বিশ্বাস কর সোনা আমারও ঠিক এমনি ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম তোমাকে না জানিয়ে হুট করে চলে এসে তোমার অবাক হয়া আর চোখ বেয়ে টলটল করে নেমে আসা জলের আনন্দধারা দেখবো। হাহ! তা আর হয়ে উঠলো না।


আচ্ছা দেশে কি এখন খুব বৃষ্টি হচ্ছে? সেদিন ফোনে বলছিলে অনেক বৃষ্টি, আমাকে মিস করছ। কথাটা শুনার পর একরাশ শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। তোমার সাথে কথা বলার পরই ব্রিজের উইংসে গিয়ে অনেক্ষন নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হয়ত কান্নাও করেছিলাম। ঠিক মনে আসছে না।
জানো আমাদের রিলেশনের পর থেকে তোমার দেয়া ৫৬ টা চিঠি আমি এবার আসার সময় জাহাজে নিয়ে এসেছি। যখন ইচ্ছা করে তখনি একটা চিঠি লটারির মত করে সিলেক্ট করে পড়ি। কিছু সময়ের জন্য সম্মোহিত হয়ে যাই। মনে হয় যেন আমার পাশে বসে তুমি আমাকে চিঠি পড়ে শোনাচ্ছ। তোমার শরীরী উপস্থিতি টের পাই চিঠি গুলোর মধ্যে। নিঃসঙ্গ জীবনে এখন এগুলোই আমার অনেক বড় বন্ধু। আর একটা বন্ধু বিভিন্ন সময়ে তোলা আমাদের ছবি আর ভিডিও গুলো। সিলেটে পাহাড়ে ঘুরার সময় ছবি তোলার থা বলে তোমার অজান্তে একটা ভিডিও করেছিলাম। তোমাকে ছবি তোলার জন্য রেডি হতে বলছিলাম আর তুমি দুষ্টামি করছিলে শুধু। প্রযুক্তির কল্যাণে সেই ৫ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটা আমার ল্যাপটপে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায়ই এটা দেখি। নিজের অজান্তে তোমার কাছাকাছি চলে যাই। জাহাজের দুলুনি, সমুদ্রের বাতাসের একটানা শোঁ শোঁ শব্দ আর নোনতা গন্ধে বাস্তবে ফিরে আসি। লোহার জাহাজের কঠিন বাস্তব।
আমি অবশ্যই তোমার জন্মদিনের আগে ফেরার চেষ্টা করবো। কোম্পানির সাথে আজও কথা হয়েছে ক্যাপ্টেনের মাধ্যমে। যে করেই হোক নেক্সট পোর্টে আমার রিলিভার ম্যানেজ করে পাঠাবে। পোর্ট থেকে বের হয়ে প্লেন ধরেই সোজা তোমার কাছে চলে আসবো। আর আজকের দিনের কষ্টটা যাতে ভুলে যাও সেই ব্যবস্থা করবো। ছয় সত্যি। মানে ডাবল তিন সত্যি।

আমাদের সুন্দর দিনের জন্য অনেক দোয়া করবে আল্লাহর কাছে। একটু পর ই ডিউটিতে চলে যেতে হবে সোনা। নিজের যত্ন নিয়ো। আর ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া কোর।
ইতি,
তোমার ভালবাসা।
১৪ জুলাই।



পাঠকদের জন্যঃ সবার ভালবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি হয় না। আমার ভালবাসা দিবস ১৪ জুলাই। বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসেবে চিঠিটা শেয়ার করিনি। শেয়ার করেছি আমাদের ভালবাসার ৬৭ তম মাস সেলিব্রেট করতে। কি করবো?? বছর গুলো মিস হওয়ার অনেক চান্স থাকে। তাই মাস ই সেলিব্রেট করা লাগে। আর চিঠির সকল চরিত্র ও ঘটনা বাস্তব। সব প্রেমিক মেরিনারের একান্ত মনের কথা শেয়ার করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×