পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক(ডি.আই.জি) এস.এম.মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছেন আমেরিকায়। সম্প্রতি সেখানকার ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে একটি কোর্সে অংশ নিয়ে তিনি পাকিদের বর্বরতার উপাখ্যান তুলে ধরলে তাকে চ্যালেঞ্জ করেন পাকিস্তানের এক জেনারেল।
পরে একাত্তরের রণাঙ্গণের বীর সেনানী পুলিশের হাইপ্রোফাইল এ কর্মকর্তা সেই সময়ে পাকিদের বীভৎস অত্যাচার, নারী নির্যাতন ও ভয়াল নৃশংসতার দৃশ্যপট ভিডিও ক্লিপসের মাধ্যমে দেখালে কুপোকাত হয়ে ‘থ’ মেরে যান ওই পাকি জেনারেল। হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়ার পর কোর্সে অংশ নেয়া বাদ বাকী ৪১টি দেশের প্রতিনিধিরা সেই জেনারেলকে লজ্জা দিয়েছিলেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারের বাংলোতে ‘ঈদ আনন্দ সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজের বক্তৃতায় চমকপ্রদ এসব তথ্য উপস্থান করেন তিনি। সেই পাকি জেনারেলের নাম উল্লেখ না করে এ সময় তিনি বলেন, ‘সেইদিন পাকিস্তানের ওই জেনারলকে সবাই লজ্জা দিয়েছিলেন।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হকের সভাপতিত্বে এ ঈদ আনন্দ সন্ধ্যা শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব মুজিবুর রহমান ফকির, জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আ’লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, র্যাব ১৪’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) এনামুল আরিফ সুমন, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম তারা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহাম্মদ আল মামুন, প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সভাপতি আফছার উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আহাম্মেদ প্রমুখ।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডি.আই.জি) এস.এম. মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, গত পহেলা জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত আমেরিকার ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে আমি একটি কোর্সে গিয়েছিলাম। যাবার সময় দেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর ধর্ষণের মতো বর্বরতা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে হেফাজত ও বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের ভিডিও ক্লিপস নিয়ে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ৪২টি দেশের ৪৬ জন ওই কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে আমি ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন ডিআইজি ছিলাম। আমি আমার দেশের হেরিটেজ, ইতিহাস বলার সময় ৭১’র পাক বাহিনীর বর্বরতার কথা বলেছিলাম। সেই সময় পাকিস্তানের একজন জেনারেল আমাকে অপমানজনক কথা বলেন।
আমি জাম্প করে উঠে বলেছিলাম, আমার কাছে ডকুমেন্টস আছে। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমার বাবা হয়তো ধর্ষণ করেছে, মানুষ হত্যা করেছে বলেই তুমি অস্বীকার করেছ। তোমাদের অত্যাচারের কারণে আমিও যুদ্ধে গিয়েছিলাম। তাদের চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, বলেন এস.এম.মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।
অমিত দৃঢ়তা নিয়ে ডিআইজি বলেন, অনেক কথা বলার পর আমাদের কোর্স ডিরেক্টর, যিনি নেপাল ও বাংলাদেশে ১১ বছর কাজ করেছেন, তিনি আমাকে সাপোর্ট করেন। পরে আমি ভিডিও ক্লিপস দেখাতে শুরু করলাম। এরপর পাকিস্তানের জেনারেল আর কথা বলেননি। সবাই তাকে লজ্জা দিয়েছেন। আমি একজন বাঙালি হিসেবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছি। এটা সেখানে খুব আলোচিত হয়েছে।
ময়মনসিংহবাসীর প্রতি নিজের প্রগাঢ় ভালবাসার কথা উল্লেখ করে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের এ উপমহাপরিদর্শক আরো বলেন, আমি ময়মনসিংহের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল। এ মাটিকে আমি পবিত্র ও পুণ্যময় বলে মনে করি। তারা আমার আত্মার আত্মীয়। মিডিয়ায় আমি আমার নিজের জেলা গোপালগঞ্জের খবর বাদ দিয়ে আগে ময়মনসিংহের খবর দেখি।
সম্প্রপ্রতি ময়মনসিংহে জাকাত ট্র্যাজেডিতে ২৭ জন মানুষ মারা গেছে। আমার মনে হয়েছে নিজের আত্মীয় মারা গেছে।এ বিষয়টি আমাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে- বলেন এস.এম. মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।
সৌজন্যে-বাংলানিউজ২৪.কম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৫৫