somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পর্যালোচনা (রিভিউ): ১২, "বরফ গলা নদী"

০৬ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বই পর্যালোচনা (রিভিউ): ১২
বইয়ের নামঃ বরফ গলা নদী
লেখকঃ জহির রায়হান
ভাষাঃ বাংলা
ঘরনাঃ চিরায়ত উপন্যাস
বইয়ের পৃষ্ঠাঃ ৯৬
বিনিময় মূল্যঃ ১৩২ টাকা
প্রকাশনীঃ অনুপম
ব্যক্তিযোগ অনুযোগঃ ৪.৪/৫

“মা আর কোনো প্রশ্ন করলেন না, ভাতগুলো মজে এসেছে। এখনি নামিয়ে ফেন ঢালতে হবে। তারপর জলের কড়াটা চড়িয়ে দিতে হবে চুলোর উপর।
মরিময় পাকঘরে এসে ঝুঁকে পড়ে বললো, এক কাপ চা দিতে পারবে, মা?”

আহ-হা, বেদনাভরা এক উত্তর, প্রতিত্তর!
সমাজ, নিম্নবিত্ত পরিবার!!

উপরের অংশটুকু প্রিয় লেখক, প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং প্রিয় সৃজনী... জহির রায়হানের অনবদ্য এক উপন্যাস, বরফ গলা নদী, এর অংশবিশেষে। যেখানে তিনি নিম্ন-মধ্যবিত্ত সমাজের বৈচিত্র্যহীন জীবনের ঘটনাবলীর সুশৃঙ্গল ইতিবৃত্ত টেনেছেন, যা বস্তুত এই উপন্যাসের মূল রসদ। জীবন বাস্তবতার লেখক হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়ার এই লেখক অনন্য, সৃষ্টিশীল আরেক সাহিত্যিক, শহীদুল্ল্যাহ কায়সার, এর অনুজের। যদিও এখানে শহীদুল্ল্যাহ কায়সারের কোনো প্রতিরূপ নেই।
সমাজের একটি বাস্তব দর্পনে প্রতিবিম্ব হয়েছে এই উপন্যাস।

একটা পরিবারের শুরু থেকে পথচলা কোথায়, কোথায় এসে শেষ হচ্ছে... লেখক এক লেখনীতে প্রকাশ করেছেন অসাধারণভাবে। লেখকের সৃষ্ট প্রতিটা চরিত্র পাঠকের সামনে উপস্থিত হবে নিজ নিজ ভঙ্গিমায়। জহির রায়হান একাধারে ছিলেন গল্পকার, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং ঔপন্যাসিক। তার সৃষ্ট আরও অনেক উপন্যাস আমরা পড়েছি। মুগ্ধ হয়েছি একাধিকবার। ‘বরফ গলা নদী’ও তার ব্যতিক্রম নয়।

মধ্যবিত্ত পরিবারে নিজের খেয়াল মত বেঁচে থাকা অনেক দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। এখানে বেঁচে থাকতে হলে আগে ভাবতে হয় পরিবারের সবার কথা। এরপর যদি নিজের ভাল থাকার মত কিছু থেকে থাকে তবে তাই নিয়ে বাঁচতে হয়।

মাহমুদ প্রতিবাদী যুবক। অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে পারেনা সে, সবসময় সততার আদর্শে চলে। পত্রিকা অফিসে চাকুরি করতে এসে সে জানতে পারলো, ‘এখানে টিকতে হলে আদর্শ ধরে রাখা যাবে না।’ সব অন্যায় ধামাচাপা দিয়ে, তোষামোদ করে খবর বানাতে হবে। এসব দেখতে না পেরে চাকরিটা ছেড়ে দেয় সে।

অন্যদিকে,

মরিয়ম এক বড়লোকের বাড়িতে সেলিনা নামের এক মেয়েকে পড়াতো। সেলিনার বড়বোনের দেবর মনসুরের সাথে সেখানে পরিচয় হয় মরিয়মের।
হাসিনা এক উচ্ছ্বল কিশোরী। তার চোখে রঙিন স্বপ্ন। যদিও জীবনের চরম দারিদ্র্যতায় তার সব স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যায়, তবুও সে পরাজিত হয় না। জীবন যুদ্ধে নিজের মতো করে রাজ্য জয়ে এগিয়ে যায় উদ্দেশহীন সম্মুখপানে।

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে গেলে অনুভূতির রাজ্যে হারিয়ে যাবো। কারণ, বাংলা সাহিত্যের লেখনিতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যত লেখক, কবি, সাহিত্যিক এসেছেন, আছেন উনাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে হৃদকপটে জায়গা করে নিয়েছেন ‘জহির রায়হান।’ লেখক সম্পর্কে ইন শা আল্লাহ অন্য একদিন কাব্যপাঠ বা সাহিত্যপাঠ লিখবো!

উপন্যাসটা শেষ করে ঝিম ধরে বসে থাকলাম। মনে হচ্ছে আমার ভেতরে নিদারুণ কষ্টের বরফ জমে গেছে! বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই লাল বাড়িটি। চাকচিক্যে মোড়া নাগরিক সভ্যতার এক শহরেরই কোন কোনে, অন্ধকার, দুর্গন্ধময় গলি ভেতরে পলেস্তারা খসে পড়া লাল দালানে থাকেন হাসমত আলী ও তার পরিবার।

স্যাঁতসেঁতে, পুরানো ফুটো ছাদ, করুণ চোখের মরিয়ম কিংবা একবুক আশা নিয়ে থাকা হাসিনা। হাসমত আলীর স্ত্রী সালেহা বিবি। দুই ছেলে মাহমুদ আর খোকন । মাহমুদ পরিবারের বড় ছেলে। খুব কম বেতনে চাকরী করে একটি পত্রিকা অফিসে। বড়লোকরা হয়ে ওঠে তার চক্ষুশূল।

মাহমুদের বন্ধু শাহাদত, বন্ধুপত্নী আমেনা, নাঈম। সর্বমোট ডজনখানেক চরিত্রের উপস্থিতি আছে এই উপন্যাসে। জীবনের কিছু চরম সত্য যে আড়াল করতে হয়, তার পুরোপুরি ভুক্তভোগী হচ্ছে স্বামী-সোহাগ বঞ্চিতা মরিয়ম।

বাস্তবিক অর্থে, কিছু কিছু অনুভূতি কখনোই প্রকাশ করা যায় না। এই উপন্যাসটি পড়ে বুকের মধ্যে এমন উথালপাতাল অনুভূতি হয়, যা সত্যিকার অর্থে প্রকাশ করা অসম্ভব!

কথাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী জহির রায়হানের ‘বরফ গলা নদী’ উপন্যাসটি সাহিত্যপ্রেমীদের পড়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি.....
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৪৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×