কাকভোরে সদর আলী মারা গেলেও পড়সিরা জানলো
এর অনেক পরে। তার জন্য এখন আর
কাঁদবার কেউ নেই, তাই কোনো আহাজারি শোনা গেলো না।
কেবল দু চার জন আফসোস করলো, আহা, বংশের শেষ বাতিটাও নিভলো!
কতিপয় প্রতিবেশী চাঁদা তুলে দাফনের কাপড় কেনার প্রস্তুতি নিতেই
সহৃদয় মাতব্বর হলেন আবির্ভূত :
'আমার গেরামে চাঁদা তুলে দাফনের কাপড় কেনা?
আমি তো বেঁচেই আছি, এখনো মরি নি।
ওরে ও সদর...।' দরদ ও আবেগে মাতব্বরের কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়।
অবশেষে দাফন সম্পন্ন হলো
মাতব্বরের বিধবা মায়ের ধবল শাড়িতে (যদিও সে শাড়ি পুরনো
ও ছেঁড়া। তাতে আর কী যায় আসে?
লাশের কি নতুন কাপড়ের সাধ আহ্লাদ আছে ?)
তারপর উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ মৃতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন :
'বড় ভালো লোক ছিল গো সদর, তাকে কোনোদিন কেউ মিথ্যে
বলতে শোনে নি...।'
'কামলাদের দলে সে ছিল সবচাইতে সেরা।'
'রিকশা মালিকের পাওনা পরিশোধেও তার মতো আর কেউ
নিয়মিত ছিল না, অথচ দেখুন, একটা টাকাও সদর আলী কখনো
বেশি ভাড়া আদায় করে নি।'
মাতব্বর সাহেব রুমালে অশ্রু মুছে বলেন, 'এমন কাজের ছেলে
এ গাঁয়ে আর কি দ্বিতীয়টি হয়!'
গাঁয়ের তাবৎ মানুষ বেমালুম ভুলে রইলেন আরেকজন সদর আলীর
কথা- আধ পাগলা, নির্বোধ আর মাতৃ-পিতৃহীন বলে
যাকে কেউ কন্যাদান করলো না,
অসীম সাহসে যে সদর আলী
সর্বাগ্রে ছুটে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধার দলে সশস্ত্র ময়দানে,
কেউ বললো না, 'বড় একজন সাহসী যোদ্ধা ছিল গো
আমাদের গাঁয়ের ছেলে সদর আলী।'
*২০০০
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০২