somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-ফ্রেন্ড : পর্ব-১

০১ লা মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

বিছানায় ডানকাত হয়ে কনুইয়ের ওপর ভর করে অর্ধ-শুয়ে আছে শাহিদ। ডান হাতে রিসিভার তুলে কানের কাছে ধরা, বাম হাতের শাহাদাৎ আঙ্গুলে চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ ক্র্যাডলটি বসিয়ে রাখে, আবার সে ছেড়ে দেয়। মনে তার প্রচুর দ্বিধা। জীবনে এটাই যে প্রথম তা-ও নয়, তবু তার দ্বিধার অন্ত নেই। অপর প্রান্তে যদি সত্যি সিত্যই একটা মেয়েকণ্ঠ মিষ্টি স্বরে বলে ওঠে জ্ঞহ্যালোঞ্চনতখন সে কী বলবে? এর আগে বেশ কয়েকবার সে এমন অপরিচিত নম্বরে ফোন করেছিলনঅপর প্রান্ত থেকে ভেসে এসেছেন স্লামালেকুম, রমনা থানা থেকে সেকেন্ড অফিসার ফারুক বলছিনঅমনি সে জ্ঞস্যরি, রং নাম্বারঞ্চ বলে ক্যাচ করে লাইন কেটে দিয়ে ধপ করে রিসিভার নামিয়ে রেখে ঘেমে উঠেছে। কখনো বা দরাজ গম্ভীর গলায় কোন এক পুরুষকণ্ঠ লম্বা স্বরে টেনে টেনে বলে উঠেছে জ্ঞহ্যালোঞ্চ, সে ভীত কণ্ঠে মিনমিন করে বলেছে, এটা কি ষ্টেডিয়াম মার্কেট? অপর প্রান্তে জি না, রং নাম্বার বলে লাইন কেটে দিয়েছে। আরেকবার এক কর্কশ নারীকণ্ঠ চেঁচিয়ে উঠলো, হ্যালো.......। শাহিদ দ্বিধান্বিত স্বরে জিঞ্চাসা করলো, এটা কি সুমনা রহমানের বাসা? কাষঠস্বরে কানফাটানো জবাব মেলেনজ্বে।
তাঁকে একটু দেয়া যাবে?
উনি তো বাড়িত নাইক্যা।
কোথায় গেছেন?
উনার ছোট নাতির মুসলমানি তো, সেইখানে বেড়াইতে গেছে।
আর কোন কথা নয়, সে মহাবিরক্ত হয়ে লাইন কেটে দেয়।
এ রকম দোটানার মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ সে টেলিফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করলো। তারপর সকল ভাবনার অবসান ঘটিয়ে ডায়াল করলোঃ ৭৪১৭০৯৯।
রিং যেতে থাকেনক্রিংক্রিংনক্রিংক্রিন। রিং বাজার মতো তার হৃৎপিণ্ডও ধপধপ করে বাজতে থাকে। সাতটি রিং বাজার পর অপর প্রান্ত থেকে রিসিভার তুলে একটা অদ্ভুত মিষ্টি কণ্ঠ মৃদু জড়তাগ্রস্ত স্বরে বলে উঠলো, হ্যালো স্লামালাইকুম। মুহূর্তক্ষণের জন্য শাহিদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলনতার কণ্ঠও প্রায় রুদ্ধ হয়ে এলো।
মেয়েটি আবার মোলায়েম স্বরে বলে ওঠে, হ্যালোনহ্যালো।
অত্যন্ত কাঁপা স্বরে শাহিদ বলে, স্লামালাইকুম, এটা কি ৭৪১৭০৯৯?
মেয়েটি নরম ও ধীর গলায় টেনে টেনে বলে, জ্বি। কাকে চাই প্লিজ?
কাকে চাই আমি ঠিক জানি না। তবে আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? বেশি নয়, খুব অল্প সময়ের জন্য?
আপনার কথাগুলো কিন্তু ব- অদ্ভুত। এটা কি বোকার মতো বলা হলো না যে আপনি কাকে চান তা জানেন না? মেয়েটির কণ্ঠস্বর সামান্য রূঢ় হয়।
আই এ্যাম এক্সট্রেমলি সরি দ্যাট আই এ্যাম এ ফুল। দুঃখিত স্বরে শাহিদ বলে।
ইটস ওকে। কিন্তু এ নামবারটি কোথা থেকে পেলেন বলুন তো?
আপনি নিশ্চয়ই জানেন কোথা থেকে পেয়েছি। জানেন না?
সিওর হতে পারছি না। বলুন না প্লিজ, কোথা থেকে পেয়েছেন?
বলছি। কিন্তু বলবোই বা কেন? আমিই তো একমাত্র এবং প্রথম মানুষ নই যে আপনাকে ফোন করছে।
প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড, আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইন্টারেস্টেড নই।
আই এ্যাম স্যরি। কিন্তু অন্তত এটুকু শুনবেন তো এ নাম্বারটি কোথা থেকে পেলাম?
আমি কিন্তু কয়েকবারই জানতে চেয়েছি, আপনি ভণিতা করছেন।
বলছি ম্যাডাম, আপনার নাম্বারটি পেয়েছি ইন্টারনেট থেকে।
আমিও ঠিক তাই আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু কী আশ্চর্য দেখুন?
জ্বি?
আপনার কি বিশ্বাস হয় যে ইন্টারনেটের কথাগুলো সত্যি?
সত্যি নয়?
আসলে যা লেখা আছে তা সবই ভুল।
ভুল? ভুল কথাগুলো তাহলে লিখলেন কেন?
আমি লিখবো কেন? ওগুলো আমি লিখিনি। কে যে লিখেছে তাও বুঝতে পারছি না। গত সাতটা দিন ধরে বদমাশ ছেলেগুলো একের পর এক ফোন করে আমাকে পাগল করে ছাড়লো।
শাহিদ একটু ঢোক গিলে, কারণ মেয়েটির বিবেচনায় সে-ও নিশ্চিত ঐ বদমাশ ছেলেদের দলেই পড়ে। কিন্তু অল্পক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে ফেলে বলে, এটা কিন্তু আপনি ভুল করছেন।
কোন্টা?
ফোন এলে রিসিভার তোলেন কেন? না তুললেই ঝামেলা চুকে যায়।
আত্মীয় স্বজনের ফোন হতে পারে না?
অন্য কাউকে ফোন ধরতে বলুন।
আপনার এ্যাডভাইসটা আমার খুব খাটলো।
কিন্তু আমার খুব ক্ষতি হলো মনে হচ্ছে।
জ্বি?
স্যরি, কিছু না।
আচ্ছা, আপনার কি ইন্টারনেট সম্বন্ধে ভালো জানা আছে?
ভালো তো নেই, তবে চালিয়ে যাবার মতো স্কিল আমার আছে।
আমাকে তাহলে অবশ্যই হেলপ করতে হবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বলুন কি ধরণের হেলপের প্রয়োজন?
ইন্টারনেট থেকে আমার ডিটেইল ইনফরমেশন মুছে ফেলতে হবে।
ওটা কি সত্যিই আপনি করেননি?
আমাকে মিথ্যুক ভাবছেন?
স্যরি, আমি তা বলছি না। কিন্তু তাহলে বোধ হয় আমার দ্বারা আপনাকে হেলপ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কেন?
আপনার ইউজার আইডি ও পাস-ওয়ার্ড লাগবে, লগ-ইন করে আপনার ইন্টারনেট এ্যাকাউন্টে ঢুকতে হবে। অপশন্স লিংকে গিয়ে আপনার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য এডিট করতে হবে, অর্থাৎ ডিলিট করে দিতে হবে।
আপনার কথা কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।
শাহিদ হাসতে হাসতে বলে, তবে আমি কিন্তু একটা জিনিস পরিস্কার বুঝতে পেরেছি।
বলুন তো কী বুঝতে পেরেছেন?
এটা যে সত্যিই আপনি করেননি আমি এখন সে সম্পর্ক সেন্ট পার্সেন্ট কনফার্ম।
কিন্তু কে করলো এটা? তার লাভই বা কী?
আপনি নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী, তাই না?
যাহ্, মোটেও না। মেয়েটি হাসির ঝংকার তুলে বলে, আমার গায়ের রং হাঁড়ির মতো ঝিম কালো।
তাই? বলে শাহিদও হাসতে থাকে।
হাসছেন যে? আমি কি হাসির কিছু বলেছি? মেয়েটি অনুযোগ করে বলে।
মোটেও না।
তাহলে?
তাহলে, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?
করুন।
উত্তর দিবেন তো?
আগে করেই দেখুন না। উত্তর দেয়ার মতো হলে অবশ্যই দিব।
তাহলে করবো না।
ঠিক আছে।
আপনাকে অযথা বিরক্ত করলাম।
আশা করি আর করবেন না।
আপনি কিন্তু বেশ জেদী এবং ভয়ানক নিষঠুর।
এটা অনেকেই বলে।
আর কে কে বলে জানতে পারি কি?
আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই বলে।
আপনি বিবাহিতা?
কেন, ইন্টারনেটে লেখা ছিল না?
ইন্টারনেটে লেখা ছিল, জ্ঞআই এ্যাম এ কলেজ গার্ল, আনম্যারিড, আই ওয়ান টু মেক ফ্রেন্ডশীপ উইথ ওপেন মাইন্ডেড, সমার্ট এন্ড মোষ্ট মডার্ন বয়েজঞ্চ।
মেয়েটি খিল খিল করে হেসে ওঠে। বলে, হাউ ফানি, হাউ ফানি! কে যে এসব লিখে আমার নামেনতার শরীরের চামড়া ছুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
কে লিখেছে আমি জানি।
মেয়েটি কণ্ঠ নরম করে বলে, কে, বলুন তো?
তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দিবেন?
প্রশ্নটা কী?
মাইন্ড করবেন না কিন্তু, একেবারে ব্যক্তিগত প্রশ্ন।
আপনি কিন্তু অনেক ভণিতা করছেন।
সঠিক সঠিক জবাব দিতে হবে।
ও-উ-ফ-স, শুধু শুধু ভণিতা হচ্ছে কিন্তু।
আপনি কি কখনো প্রেম করেছেন?
মেয়েটি শব্দ করে হেসে ওঠে।
শাহিদ আবার জিঞ্চাসা করে, আপনাদের কি প্রেম করে বিয়ে হয়েছে?
মেয়েটি হাসতে হাসতে বলে, আমার মতো একটা কুচকুচে কালো মেয়ের সাথে কে প্রেম করবে, বলুন?
বিশ্বাস করতে পারছি না।
কেন?
একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
কী রকম?
আপনাদের বিয়েটা কবে হয়েছে?
কী জ্বালা, এতো সব ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর কি দেয়া যায়? আপনার সাথে আমার চেনা নেই জানা নেই, অথচ কতো কিছু জিঞ্চাসা করছেন। আমিও কী বোকা দেখুন, আপনি যা যা জিঞ্চাসা করছেন, আমি তোতা পাখির মতো সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। আর না ভাই, আমি এখন ফোন রাখবো।
ঠিক আছে, রাখুন। তবে আমি কি আবার ফোন করতে পারবোনঅর্থাৎ আমি অনুমতি চাইছি।
ফোন করে কী লাভ, কোন লাভ আছে? আমি একটা বিবাহিতা মেয়ে, বাচ্চা কাচ্চা স্বামী সংসার নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকিননা না না, সম্ভব না। আমি রাখছিনএই রাখলাম।
প্লিজ, আর একঢু~নপ্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
ওহ্নকী জ্বালায় যে পড়লাম রে বাবা!
আপনার ছেলেমেয়ে কয়টা?
আমার কোন ছেলে নেই, পাঁচটা মেয়ে আছে। হয়েছে?
জ্বি, হয়েছে।
এবার তাহলে গুডবাই।
গুডবাই।
আর শোনেন, আশা করি অন্তত আপনি আর কোনদিন ফোন করবেন না। ব- ফেড আপ হয়ে গেছি।
আমার উপদেশটা মনে রাখবেন কিন্তু।
চেষ্টা করবো। কিন্তু জনাব, আমি ছাড়া যে ফোন ধরার ঘরে আর কেউ নেই।
কেন, আপনার মেয়েরা ধরবে।
ওহ্, ওরাও কি আমার মতো ঝামেলায় পড়বে না? আমি কি পুরুষ মানুষকে চিনি না?
বাসায় কি কাজের লোক বা বুয়া নেই?
হ্যাঁ আছে, কিন্তু এ বাসায় নেই, আমার স্বামীর বাসায় আছে।
ওওওওনএটা তাহলে আপনার বাপের বাড়ি?
জ্বিইইইই----।
কবে এসেছেন?
সপ্তাহ খানেক হলো।
কদ্দিন থাকা হবে?
আর বেশিদিন না, পরশুই চলে যাবো।
আবার কবে আসা হবে?
ঠিক নেই। একমাসও যেতে পারে, দুমাস, ছয়মাসও যেতে পারে।
আপনি খুব নিষ্ঠুর।
হ্যাঁ, আমি খুবই নিষ্ঠুর। আমার স্বামী আমাকে ডাইনি বলে ডাকে।
আপনি প্রতিবাদ করেন না?
এই পুরুষ শাসিত সমাজে কি পুরুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে টেকা যায়?
আপনার কণ্ঠস্বরটা কিন্তু অদ্ভুত মিষ্টি।
মেয়েটি আবার শব্দ করে হাসতে থাকে। শাহিদ বলে, আপনার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
বাব্বাহ্। দরদ উথলে উঠছে দেখছি? মেয়েটি টিপ্পনি কাটে।
যার বউয়ের এমন মিষ্টি কণ্ঠস্বর, সে কী করে তার বউকে ডাইনি বলে?
আচ্ছা, আমাকে এতো পটিয়ে আপনার লাভ কী?
নাহ্, আমি তো আপনাকে পটাচ্ছি না। যা সত্যি আমি শুধু তাই বলছি। আপনি জানেন না আপনার কণ্ঠে কী আশ্চর্য মাধুর্য আছে।
মেয়েটির মন নরম হয়ে আসে। সে মুগ্ধ ও গাঢ় স্বরে বলে, অথচ জীবনে কতোবারই না কতো অপমান সইতে হয়েছে আমাকে। আপনার মতো কেউই কখনো এমন করে বলেনি।
তাহলে নিশ্চয়ই আমি একটা ধন্যবাদ পেতে পারি! শাহিদ কৌতুক করে বলে।
আপনি জানেন, জীবনে কতোগুলো ছেলেকে আমি পটানোর চেষ্টা করেছি?
মেয়েরা কখনো ছেলেদেরকে পটানোর চেষ্টা করেছে এটা আমি কোথাও শুনিও নি, দেখিও নি। তবে এটা সচরাচর ছেলেদের একটা নিজস্ব পেশা।
মেয়েটি হেসে উঠে বলে, আপনি খুব সুন্দর করে কথা বলেন।
আপনি ছেলেদেরকে পটাতে পারেন না এ কথাটা কিন্তু ঠিক নয়। আমি যে সুন্দর করে কথা বলতে পারি আমার জীবনে কোন মেয়ে কোনদিন এ কথা বলেনি। আপনার এই একটা কথায়ই কিন্তু আমি সারাজীবন আপনার কাছে ঋণী থাকবো।
আপনি কখনো প্রেম করেননি?
হ্যাঁ, করেছি।
সেই মেয়েটিও কি কখনো বলেনি?
সে বলবে কেন? আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম। সে তো আর আমার প্রেমে পড়েনি।
ভেরি স্যাড। কিন্তু কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।
আসলে অনেক অবিশ্বাস্য কথা আছে যা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এবং এ থেকেই কিন্তু জ্ঞঅবিশ্বাস্যঞ্চ কথাটির উৎপত্তি হয়েছে।
ওওওম্মা, আপনি বাংলা ভাষার গবেষক কেউ নন তো?
না হে ভাই, আপাতত আমি একজন মেয়ে-গবেষক।
ওওও, আপনি তাহলে আমার ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন বুঝি?
আসলে ঠিক গবেষণা নয়, আমার কী যে ভালো লাগছে আপনাকে বোঝাতে পারছি নানআপনার কণ্ঠস্বরে মনে হয় অমৃত আছে!
আপনাকে আবারো অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্যবার ধন্যবাদ। কিন্তু জনাব, আমাকে এখন পটিয়ে কোন লাভ আছে? যখন সময় ছিল তখন কেউ পটাবার ছিল না।
আমি কিন্তু আবারো বলছি, আপনাকে আমি মোটেও পটাচ্ছি না। আপনার সাথে কথা বলতে আমার খুবই ভালো লাগছে, তাই বলছি।
আমাকে কখনো দেখেননি বলে এতো ভালো লাগছে। দেখলে একটা কথাও বলতেন না।
এটাও অবিশ্বাস্য। কোন ছেলে কোন মেয়ের সাথে যে কথা বলতে চায় না তা আমি কখনো শুনিনি।
আপনি বিশ্বাস করছেন না, অথচ আমার জীবনেই এ রকম ঘটনা ঘটেছিল।
কী রকম?
আমাকে দেখাবার জন্য আমার দুলাভাই একবার একটা ছেলেকে নিয়ে এলো। ছেলেটার চেহারা রূপকথার রাজপুত্রকেও হার মানায়। ওকে দেখে আমি পাগল হয়ে গেলাম। আমার পড়ার ঘরে ছেলেটাকে বসিয়ে দিয়ে দুলাভাই চালাকি করে বাইরে চলে গেল। আমি খুব নার্ভাস হয়ে উঠতে থাকলাম। কিন্তু ছেলেটা অত্যন্ত শুকনো মুখে আমার নাম কী, কোন্ ক্লাসে পড়ি, রাঁধতে জানি কিনা তা জিঞ্চাসা করে বেরসিকের মতো উঠে বাইরে গিয়ে সিগারেট টানতে লাগলো।
তারপর?
জানালা দিয়ে আমি ছেলেটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েরা ছেলেদের সিগারেট খাওয়া একদম চোখে দেখতে পারে না। কিন্তু ওর সিগারেট খাওয়ার ভঙ্গি আর সমার্টনেস দেখে ডলি সায়ন্তনীর গানটার কথা মনে পড়ে যায়। আমি মনে মনে গাইতে থাকি জ্ঞহে যুবক...ঞ্চ। বার কয়েক ছেলেটার সাথে চোখাচোখি হলো। কিন্তু ওর চোখেমুখে কোন আবেগ নেই, উচ্ছ্বাস নেই। বলুন তো ছেলেরা এমন হয় কেন?
ছেলেটার কথা শুনে তার প্রতি আমার প্রচণ্ড ঈর্ষা হচ্ছে।
তারপর শুনুন না কী হলো। ও একটা বড় এনজিওতে চাকরি করতো। একদিন ওর অফিসে ফোন করলাম। হ্যালো বলে ও আমার পরিচয় জানতে চাইল। নার্ভাস অবস্থায় আমার পরিচয় দিলাম। কিন্তু আমাকে সে চিনতেই পারলো না। আমি কি বলতে পারি যে কিছুদিন আগে আপনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন? হঠাৎ আমার দুলাভাইয়ের নাম বলি। বলি, আপনি অমুকের সাথে আরেকবার বেড়াতে আসুন না। এবার মনে হলো সে অতি কষ্টে চিনতে পারলো। কিংবা এতোক্ষণ চিনেও না চেনার ভান করে থাকতে পারে। তারপর বলে কী, শোন, আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি। কোন জরুরি কিছু কি বলার আছে? না থাকলে এখন রাখি, কেমন? বলেই আমাকে জবাব দেবার সুযোগ না দিয়েই ধপ করে রিসিভার নামিয়ে রাখে।
আসলে যারা পাষণ্ড তারাই মেয়েদেরকে বেশি আকৃষ্ট করে।
এ কথা বললেন কেন?
জানেন না, চুম্বকের সমমেরুতে বিকর্ষণ, বিপরীত মেরুতে আকর্ষণ? আপনি যদি ছেলেটার প্রতি এতো আগ্রহ না দেখাতেন তাহলে দেখতেন উল্টো সে-ই আপনার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তো।
আমি আসলে এসব বুঝি না। আমি খুবই একটা বোকা মেয়ে। তাই আরো একদিন বেহায়ার মতো ফোন করলাম, ওদের বাসায়। ভয়ে ভয়ে ছিলাম কে না কে আবার ফোন ধরে। দেখি, না, সেই ধরলো। এবার কোন ভণিতা না। আমাকে প্রথমেই চিনতে পারলো। কিন্তু জ্ঞএকটু ধরোঞ্চ বলে করলো কী, আমাকে লাইনে রেখে সে পাক্কা দশ মিনিট বাথরুমে কাটিয়ে এলো। তারপর বলে, আমাকে জরুরি কাজে একটু বের হতে হচ্ছে। পরে ফোন করবো, কেমন?
পরে করেনি ফোন?
আপনি পাগল হয়েছেন? সে মনে করেছিল তার গলায় ঝুলে পড়বার জন্যই আমি উঠে-পড়ে লেগেছিলাম। আগে আমার এই জিনিসটা মাথায় ঢোকেনি। যখন ঢুকলো তখন এতো খারাপ লেগেছিল নিজের ওপর, কী বলবো?
আপনার জন্য আমার অশেষ সহানুভূতি রইল।
দেখুন, আমি কতো বোকার বোকা। আপনার সাথে আমার কোন পূর্ব পরিচয় নেই অথচ ভরভর করে আমার ব্যক্তিগত কতো কথা বলে ফেললাম। আচ্ছা, আপনি কী করেন?
ম্যাডাম, মনে যদি ব্যথা না নেন, আমার পেশাটা আমি সব সময়ই উহ্য রাখি। আমি বিশ্বাস করি যে পেশা নয়, মানুষ হিসাবে আমি কতোখানি মানুষ সেটাই আমার বড় পরিচয়। তবে কথা দিলাম, আপনার কাছে একদিন সত্য প্রকাশ করবো। কিন্তু আজ এ প্রশ্নটার উত্তর দিতে চাচ্ছি না।
আচ্ছা, ঠিক আছে, এতো বড় লেকচারের দরকার কী? আজ কেন, আর কক্ষণোই দিতে হবে না। রাখি, খোদা হাফেজ।
প্লিজনআর একটা প্রশ্ন।
আর একটা প্রশ্নও না। আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আপনি কিন্তু আমার একটা মাত্র প্রশ্নেরই জবাব দিতে চাননি।
স্যরি, আমার ঘাট হয়েছে। আসলে আমি বেকার তো, তাই এ কথা বলতে লজ্জা হয়।
বেকার কেন, চাকরি ধরেন?
কোথায় চাকরি পাবো? দেশে কি চাকরি আছে?
তাহলে বিদেশে যান।
বিদেশে যেতে টাকা লাগে না? আমার তো ভাতই জোটে না।
কিন্তু এদিকে যে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে দেধারছে মেয়ে মানুষের সাথে চ্যাট করে যাচ্ছেন, আর টাকা উড়াচ্ছেন?
আমি কিন্তু খুব একটা চ্যাট করি না।
যে লোক ইন্টারনেটে এতো পাকা সে লোক চ্যাট করে না, আপনি বলবেন আর আমি তা বিশ্বাস করবো?
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, যেটা সত্যি আমি সেটাই বলেছি।
আচ্ছা, আপনার বয়স কতো?
৫৫ বছর।
মিথ্যে কথা।
মিথ্যে কেন?
আপনার বয়স পঁচিশের ওপর হতেই পারে না।
কীভাবে বুঝলেন?
বুঝলাম আপনার কণ্ঠস্বর শুনে।
আমার চেহারা দেখেও কিন্তু অনেকে এ কথা বলেন।
কী বলেন?
যেমন, আমার ছোট নাতিকে নিয়ে যখন স্কুলে যাই তখন সবাই মনে করে যে ওটা আমার ছেলে। লজ্জার কথা না, বলুন? হাসছেন যেন্সাংঘাতিক মেয়ে তো আপনি, হেসে খুন হচ্ছেন, আমি কি হাসির কিছু বলেছি?
আপনি খুব রসিক মানুষ।
আপনিও খুব মিষ্টি মেয়ে।
এটা আপনার ব- চাপা মারা হলো। আমি দেখতে মোটেও মিষ্টি নই।
কিন্তু আপনি যতো যা-ই বলুন না কেন, আপনার কণ্ঠস্বরটা কিন্তু অপূর্ব। জন্মের সময় আপনার মুখে এক ড্রাম মধু ঢালা হয়েছিল।
মেয়েটি খিল খিল করে হাসতে থাকে। শাহিদ বলে, আপনি খুব হাসেন।
কিন্তু আপনি মোটেও হাসেন না। আপনি কি গোমড়ামুখো?
খুউব।
মেয়েটি আবার হাসতে থাকে। তারপর বলে, আচ্ছা, আপনি এতো কম হাসেন কেন?
জানি না। আপনি খুবই চঞ্চল, তাই না?
কিন্তু কীভাবে বুঝলেন?
আপনার শরীরটাও হালকা পাতলা, ঠিক বলেছি?
কী আশ্চর্য, এসব বুঝলেন কীভাবে?
যারা চঞ্চল তারা খুব হাসে।
আপনি কি দেখতে খুব ভারি?
কেন?
যারা দেখতে ভারি, তারা খুবই কম হাসে।
ঠিক বলেছেন। কিন্তু আমার শরীর মোটেও ভারি নয়।
আচ্ছা, আপনি বিয়ে করেছেন কবে? হাসি থামিয়ে মেয়েটা জিঞ্চাসা করে।
বলবো কেন?
এমনিই।
আপনি?
অনেক আগে।
বলা যায় না?
সেই অনেক অনেক দিন আগের কথা। বলেই মেয়েটি খিল খিল করে হেসে ওঠে।
আপনার হাসিটা আমাকে পাগল করে দেয়। শাহিদ হাসতে হাসতে বলে।
তাই? তাহলে তো আপনাকে অতি সত্বর পাবনা যেতে হবে।
কেন?
আরো জোরে হেসে দিয়ে সে বলে, ওওওম্মা, তাও জানেন না?
আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
কেন?
আহা, একটা মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশীপ হচ্ছে, আর তাকে দেখবো না?
কে বলেছে আপনার সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ হচ্ছে?
কেন, হলে অসুবিধা আছে?
আপনার বউ জেনে ফেললে খবর আছে, দ্যা নিউজ এ্যাট টেন।
মোটেও না।
আপনার বউ আপনাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবেন?
অবশ্যই। আমি তো কোন অপরাধ করছি না।
মোটেও না! একটা পরস্ত্রীর সাথে আপনি চুটিয়ে কথা বলবেন আর আপনার স্ত্রী তা শুনে মজা পাবেন, এটা কেউ বিশ্বাস করবে?
বিশ্বাস না করার কী আছে? আমার বউয়ের এতোগুলো বয়ফ্রেন্ড আছে, সেজন্য আমি কি তাকে খেয়ে ফেলছি?
আপনার বউয়ের বয়ফ্রেন্ডও আছে?
অবাক হবার কী আছে? পুরুষ মানুযের যদি গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে, মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকবে না কেন?
কিন্তু আমাদের দেশে মেয়েদের, বিশেষত বিবাহিতা মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকার কালচারটা আন-ইউজুয়াল।
কিন্তু আমাদের পরিবারে এটা খবুই ইউজুয়াল ব্যাপার স্যাপার।
আচ্ছা, আপনার ছেলেমেয়ে কজন?
আপনার?
ওহ্, কী যে জ্বালা! আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো আমাকেই সেই প্রশ্নটা ফেরত দিচ্ছেন। নাহ্, আর না, অনেক কথা হয়েছে। এই রাখলাম। খোদা হাফেজ। বাইনগুডবাই।
সত্যিই খুব নিষ্ঠুর আপনি।
নিষ্ঠুর কি আপনিও নন?
অবশ্যই নই।
এ কথা আপনার মুখে সাজে না। এ পর্যন্ত আপনার সম্পর্কে যা যা জানতে চেয়েছি আপনি তার কিছুই বলেননি।
এটা ঠিক বলেননি।
মানে?
প্রথমত আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানতে চাননি।
ওহ্, এতো মিথ্যেও বলতে পারেন?
দ্বিতীয়ত, আমার সম্পর্কে আপনার কিছু জেনেই বা লাভ কী?
ও-কে, কোন লাভ নেই, স্যরি, আপনাকে প্রশ্ন করাটা আমার মস্ত ভুল হয়েছে। যেহেতু কোন লাভ নেই তাহলে আর কোন কথা বলারও দরকার নেই। রাখলাম। গুডবাই ফর এভার।
খট করে রিসিভার রেখে দেয়ার শব্দ হয়। শাহিদের বুকের ভিতরে প্রচণ্ড একটা চোট লাগে, তার অন্তর জ্বলতে থাকে। আরেকবার ফোন করলে কেমন হয়? শাহিদ ভাবে। মেয়েটি শেষের দিকে এসে বেশ বিরক্ত হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় আর কোন ফোন করা যায় নানএতোক্ষণ তো যা হোক ভালোয় ভালোয় টকঝাল মিষ্টি কথা বলা হয়েছে, ঠা-া রসিকতা হয়েছে, গালি গালাজ যে করে বসেনি সেটাই সবচেয়ে সুখকর ও উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা। এটা একটা উপভোগ্য পুরস্কারও বটে।
আরেকবার ফোন করবে কী করবে না এ নিয়ে শাহিদের মনের মধ্যে প্রচুর দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলতে থাকলো। এমনও হতে পারে যে মেয়েটি নিশ্চিত ধরে নিয়েছে শাহিদ পুনরায় ফোন করবেই, কাজেই সে গালে হাত দিয়ে অধীর আগ্রহে এখন ফোনের পাশে বসে আছে।
শাহিদ রিসিভার উঠিয়ে কানের কাছে ধরে, ডান হাত বাড়িয়ে ধীরে ধীরে ডায়ালিং ডিজিটের ওপর হাত রাখে, তারপর একে একে টিপে ৭, ৪, ১,৭, ০, ৯, ৯। রিং বাজবার অপেক্ষা করতে থাকে আর ঢিভ ঢিভ করে তার বুক কাঁপতে থাকেনমেয়েটির কণ্ঠস্বর তার প্রাণের ভিতরে গেঁথে গেছে, শাহিদের আশংকা, এই কণ্ঠ যদি ঝাঁঝালো তিক্ত স্বরে ভর্ৎসনা করে বলে বসেনআপনি একটা নির্লজ্জ! আবার ফোন করেছেন কেন?
কিন্তু শাহিদের মনে আবার সাহসও জাগে, এ মেয়ে নিশ্চয়ই এতোখানি যাবে না, বেজায় ভদ্র, শিষ্ট ও মিষ্টভাষিণী সে, তারও নিশ্চয়ই শাহিদের কথাগুলো শুনতে ভালোই লেগেছে, তা না হলে প্রথমবার অপরিচিত কণ্ঠস্বর পেয়েই সে খুট করে রিসিভার নামিয়ে রাখতো।
পি-প-স পি-প-স পি-প-স।
শাহিদ হাফ ছেড়ে বাঁচে, লাইন ক্লিয়ার পাওয়া যায়নি। তার বুক এখনো কাঁপছে, আবেগ ও শংকিত অস্থিরতায়।
রিসিভার নামিয়ে রেখে সে লম্বা দম ছাড়ে, বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে ওপরে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফ্যানটি ঘুরছে লো স্পীডে, বিকালে বৃষ্টি হয়ে গেছে বলে এমনিতেই ঘরটা ঠাণ্ডা। অথচ গতকাল সন্ধ্যায় এমন সময়ে গরমে ছটফট করছিল সে, ফুল স্পীডে ফ্যান ছাড়লে কী হবে, মনে হচ্ছিল ফ্যানের সেন্টার থেকে গরমের পিন্ড ফ্যানের সাথে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।
সুন্দর একটা ভালোলাগা শাহিদের সারা মন প্রাণ জুড়ে। এমন একটা চমৎকার মেয়ের সাথে সারাজীবন টেলিফোনে কথা বলে কাটিয়ে দেয়া যায়। মেয়েটি যখন ঝাঁঝালো স্বরে রেগে কথা বলেছে তা শুনতেই ওর সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছে। যৌবন এমনই, মেয়েদের রাগ দেখলে অনুরাগ শতগুণ বেড়ে যায়।
যুগপৎ শাহিদের মনটা ছটফট করতে থাকলো। হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় মেয়েটির নাম জানা হয়নি। ইন্টারনেটে অবশ্য নাম লেখা ছিল তিশা। ওটা ছদ্মনাম না আসল নাম তা বোঝার উপায় নেই।
ইন্টারনেটে অবশ্য আসল নাম খুব কমই ব্যবহার করা হয়। অতএব তিশা তার ছদ্মনামই হবে। তবে এটা যদি সত্যি সত্যিই কোন জ্ঞসত্যিঞ্চ নাম হয়ে থাকে তবুও এই মেয়েটির নামই যে তিশা সে ব্যাপারেও কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যায় না। তিশা এর বড় বোন বা ছোটবোনও হতে পারে, হতে পারে চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো বোন বা বান্ধবী।
শাহিদের ভুল ভাঙ্গে, এই মেয়েটিই তিশা। কেননা তিশা বলেছে সে নিজে ইন্টারনেটে তার নাম ঢোকায়নি, অন্য কেউ যড়যন্ত্র করে তা করেছে।
আবার রিসিভার তুলে আয়েস করে ডায়াল করতে থাকে শাহিদ, এখন মনের দ্বিধা ও জড়তা অনেক কেটে গেছে। সে ভাবে, মেয়েটি ধমকে উঠলে উঠবে, সে আমাকে খারাপ ভাবলে ভাবুক, আরেকবার আরেকটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে দোষ কোথায়?
ইয়েস, লাইন ক্লিয়ার পাওয়া গেছে, রিং যাচ্ছে, রিং যাচ্ছেনক্রিংক্রিংনক্রিংক্রিংন ক্রিংক্রিংক্রিংনকিন্তু কেউ রিসিভার তুলছে না, রিং বাজছে অনবরতনক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিংক্রিং।
তিশা কি এখন বাড়িতে একা? সে নিশ্চয়ই বাথরুমে ঢুকেছে, ফোন বাজার শব্দ শুনে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেরি হচ্ছে। অথবা সে রান্না ঘরে আছে, অতোদূর টেলিফোনের আওয়াজ গিয়ে পৌঁছে না। রান্নাঘরটা কি এতোই দূরে? হয়তো হাতের রান্নাটা ছেড়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না, ওগুলো গুছিয়েই সে টেলিফোনের দিকে দৌড়ে আসছে।
এতোক্ষণ পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু ১২টা রিং বাজার পর লাইন কেটে যায়।
বাড়িতে কি চাকর-বাকর কাজের ছেলে-মেয়ে কেউ নেই? কিংবা অন্য কেউ? তিশা বাড়িতে একা কী করে থাকে? কী করে সে? এখন কী করছে? ছাদে যায়নি তো? মেয়েরা সন্ধ্যার পরে ছাদে খুব একটা যায় না, যারা যায় তারা বেশির ভাগই বিবাহিতা। অবিবাহিতা মেয়েদের জন্য বিকেলে ছাদে ঘুরে বেড়ানোটা সবচাইতে প্রিয়নকারণ, নিচে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিরাপদ পথ কিংবা পার্ক নেই, অথচ ওরা চায় তরুণেরা ওদেরকে দেখুক এবং ওরাও তরুণদেরকে দেখুক।
শাহিদ আবারো রিং করে।
রিং যাচ্ছে। ক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিংন্দুবার রিং বাজার পরই রিসিভার তুলে অতিশয় তীক্ষ্ণ ও রুক্ষ স্বরে কে এক মহিলা চেঁচিয়ে বলে উঠলো, হ্যালোনহ্যালোন।
শাহিদ একটা ঢোক গিলে, তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো হয়, ভয়ে ও শংকায়। মহিলা আবার বলেনহ্যালো------। শাহিদ আরেকবার ঢোক গিলে বলে, এটা কি মুন্নাদের বাসা?
জ্বি না, রং নাম্বার। বলে দরাস করে রিসিভার রাখে মহিলা। শাহিদের গলা শুকিয়ে গেছে। সে কয়েকবার ঢোক গিলে গলা ভিজায়।
কোথায় গেল তিশা? মাত্র পাঁচ দশ মিনিটের ব্যবধানে সে হাওয়া? নাকি শাহিদের দেয়া উপদেশ সে কাজে লাগাচ্ছেনসে নিজে ফোন না ধরে পাঠাচ্ছে অন্য কাউকে। তাহলে তো মহা মুশকিল, নিজের হাতে নিজের ভাগ্যকে মুছে ফেললো সে। এই দুঃখের কথা কি কাউকে বলা যায়?
এমনও তো হতে পারে যে তিশা সত্যি সত্যিই বাইরে চলে গেছে। যে ফোন ধরেছিল সে হলো কাজের বুয়া। বুয়াদের গলার স্বর এমন খরখরেই হয়।
শাহিদের বুকে অতৃপ্তির আগুন জ্বলতে লাগলো। আরেকবার ফোন করলে কেমন হয়? হয়তো তিশা ছাদেও যায়নি, বাইরেও যায়নি, অন্য কোন কাজে ঘরেই সে ব্যস্ত ছিল। থাকে না? মেয়েদের কতো রকমের গোপন ব্যস্ততা থাকে। সন্ধ্যার পরপরই একটু সাজগোজ করা, যারা বিকেলে বেরোয় না তারা এটা এ সময়েই করেন্সন্ধ্যার পরপর আশেপাশের বাসা থেকে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য কেউ আসতে পারেন, তাঁদের সামনে ঘরের গাউন পরে তো আর উপস্থিত হওয়া যায় না। কারো কারো স্বামী সন্ধ্যার পর দিয়ে ঘরে ফিরেন। স্বামীর জন্য সেজেগুঁজে থাকতে হয়। সারাদিন ভীষণ কর্মব্যস্ততা শেষে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে স্ত্রীর নোংরা বসন-ভূষণ দেখলে কি কোন পুরুষের মেজাজ ঠিক থাকে? ও-সময় স্ত্রীর রমণীয় কমনীয় আর আকর্ষণীয় মুখটি দেখতে পেলে স্বামী বেচারা আমোদে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।
তিশার স্বামীর কথাটা আর মাথায় আনতে চায় না শাহিদ, এটা একটা অবান্তর ভাবনা। ইন্টারনেটে তিশার পার্সোনাল ইনফরমেশন বক্সে ম্যারিটাল স্ট্যাটাসের বিপরীতে পরিষ্কার লেখা ছিলনআনম্যারিড। যদিও বন্ধুত্ব করার কথাই লেখা ছিল কিন্তু শাহিদ জানে শুধু শুধু বন্ধুত্বের জন্য কেউ ইন্টারনেটে ওভাবে নাম ছড়ায় না। তার আড়ালে একটা বিশাল ও মহৎ এবং ~েবষয়িক উদ্দেশ্য লুকানো থাকেনপ্রথমে বন্ধুত্ব, টেলিফোনে আলাপনঘন্টার পর ঘন্টা, ডেটিংনঘন ঘন ডেটিং, শেষ পর্যন্ত সেই মহৎ উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ননবিয়ে-সংঘটন।
অতএব, যতো ঝাড়িঝুড়িই ঝাড়ুক না, তিশা নিঃসন্দেহে একটা অবিবাহিতা মেয়ে। সে যে একটা পাকা শিকারি সে কথাটাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বড়শিতে আধার গেঁথে বারবার মাছের সামনে থেকে সে বড়শি তুলে নিচ্ছে, আধারের লোভে মাছ বড়শিতে ঠোকর দিবেই।
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×