somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-ফ্রেন্ড : পর্ব-২

০২ রা মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই

পরের দিন একই সময়ে শাহিদকে আবারো টেলিফোনের নেশায় পেয়ে বসলো। আসলে তার এই নেশা তো গতকাল থেকেই। প্রথমবার টেলিফোন করার পর থেকেই সে খুব অস্থির সময় কাটাচ্ছে।
বুকের ভিতর কাঁপন নিয়ে শাহিদ ডায়াল করলো।
রিং যায়নক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিং।
চারবার রিং বাজলো। তারপরন হ্যালো স্লামালাইকুমনতিশার মধুঝরা কণ্ঠস্বর মোলায়েমভাবে ভেসে আসে। শাহিদের সারা শরীর জুড়ে ঢেউ খেলে যায়। সে কিছু বলতে পারে না।
হ্যালো----তিশা আবার ডাকতেই শাহিদ সম্বিৎ ফিরে পায়।
হ্যালো স্লামালাইকুম। ভালো আছেন? শাহিদ নরম স্বরে জড়তাগ্রস্তভাবে জিঞ্চাসা করে।
হ্যাঁনতিশা একটু লম্বা করে উত্তর দেয়।
আপনি বোধ হয় আমার ওপর রেগে আছেন, তাই না? শাহিদ জিঞ্চাসা করে।
শুনুন ভাই, আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি। সামনে জুলাইয়ে আমার মাস্টার্স ফার্স্ট পার্ট পরীক্ষা তো, প্রচুর পড়া বাকি। ফোনে প্রেমালাপ করার মতো আমার এখন যথেষ্ট ~েধর্য্য আর সময় নেই।
স্যরি, আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।
এখন রাখি তাহলে, ঠিক আছে?
প্লিজ প্লিজ, আর একটা মিনিট মাত্র, রাখবেন না প্লিজ।
ওওওহ্, বলুন। তিশার কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ে।
আপনি কোন্ সাবজেক্ট পড়ছেন?
তিশা রেগে ওঠে। বলে, দেখুন ভাই, আমি এ পর্যন্ত আপনার সাথে প্রচুর ভদ্র ব্যবহার করেছি, আপনি যেসব ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিঞ্চাসা করছেন এগুলো জানার কি আপনার কোন দরকার আছে? আমিই বা বলবো কেন? এসব জেনে কী করবেন আপনি? আমি আগেই আপনাকে বলেছি যে ইন্টারনেটে যা দেখেছেন ওগুলো সব ভুয়া, আমি দিইনি। একটা ছেলে আমাকে খুব ভালোবাসতো, ঐ যে বলেছিলাম না রূপকথার রাজপুত্রের কথা, সেই রাজপুত্রই পরে আমার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ও ছিল একটা মদখোর, ওর আরেকটা বউ ছিল, সেই বউকে ভালো লাগেনি বলে তালাক দিয়েছিল, তারপর আমার পেছনে লেগেছিল। আমি অমন একটা নষ্ট পুরুষের বউ হতে যাবো কোন্ দুঃখে? আমার কি আর বর জুটবে না? যাই হোক, সেই কুলাঙ্গার ছেলেটাই এখন আমার নামে আজেবাজে কথা চারদিকে ছড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেটে আমার ঠিকানা আর ফোন নম্বর ঢুকিয়ে দিয়ে আমার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলছে।
আপনি ছেলেটার নামে কেইস করছেন না কেন?
কেইস করে কি আমি চারদিকে রটিয়ে দিব যে বিয়ের আগে আমি রসিয়ে রসিয়ে চুটিয়ে চুটিয়ে ঐ বদমাশটার সাথে প্রেম করেছি? আমাকে তো স্বামীর ভাত খেতে হবে, নাকি?
আপনার স্বামী কী করেন?
কিচ্ছু করে না।
আচ্ছা, না বলবেন না বলুন।
আপনার এক মিনিট সময় কিন্তু শেষ। রাখি।
প্লিজ, আরেকটা প্রশ্ন।
ও-কে, শেষ প্রশ্ন। এটার উত্তর দিয়েই আমি রেখে দিব। তারপর আর একটা কথাও শুনবো না।
আমি মেনে নিলাম।
প্রশ্নটা কী?
আপনার নামটা কি জানতে পারি?
আমার নাম দিয়ে কী করবেন?
পরস্পর কথা বলতে কি সম্বোধনের প্রয়োজন পড়ে না?
এতোক্ষণ ধরে কতো কথা বললেন, এতে কি কোন সমস্যা হয়েছে?
তারপরও, এই যে এতো কথা বললাম কিন্তু নামটাই জানা হলো না, তাতে কি পরিচয়টা ফাঁকা রয়ে গেল না?
আমি তো আপনার নাম জানতে চাইনি।
চান না কেন? আমাকে আমার নাম জিঞ্চাসা করুন।
আপনার নাম কী?
আমার নাম বাটপার।
তিশা প্রচণ্ড শব্দ করে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতেই বলে, আপনি অকপটে অনর্গল মিথ্যে বলতে পারেন তা আমি গতকালই বুঝতে পেরেছিলাম।
কীভাবে?
কীভাবে? আপনি বলেছেন আপনার বয়স ৫৫। অথচ আপনার কণ্ঠস্বর শুনে আপনাকে ১৫ বছরের বালক মনে হয়। বলেই সে আরো জোরে শব্দ করে হাসতে থাকে।
শাহিদ বলে, এটা আপনার ভুল ধারণা। আমি ১২ বছরের কিশোরকে দেখেছি ৬০ বছরের বুড়োদের গলায় কথা বলে, আবার ৬০ বছরের বুড়োকে দেখেছি ১০ বছরের বাচ্চার মতো চিকন স্বরে মিনমিন করে কথা বলতে।
ও-প্রান্তে তিশা অনবরত হেসেই চলছে। সে বলে, কতো অবলীলায় আপনি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলে যাচ্ছেন, আমি কেবলই ভাবছি আর অবাক হচ্ছি।
ম্যাডাম, আপনি কি কম গেছেন?
ওওও, তাহলে স্বীকার করছেন যে এতোক্ষণ আপনি মিথ্যে বলেছেন?
স্বীকার করছি। তবে খুব বেশি বোধ হয় বলিনি, মাত্র একটা কি দুটো।
কেন মিথ্যে বলেছেন?
যে কারণে আপনি বলেছেন।
আমি কোন মিথ্যে বলিনি।
এটাও একটা ডাহা মিথ্যে।
হোয়াট? আপনার স্পর্ধা কিন্তু মিস্টার বেড়েই চলছে। মুখের ওপর চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছেন।
স্যরি, ঘাট হয়েছে।
ওহ্, আপনার এই জ্ঞঘাটঞ্চ শব্দটা আমার আরো অসহ্য লাগে। পুরুষ মানুষের মুখে মেয়েলি কথা। শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দেয়।
আই এ্যাম এক্সট্রেমলি স্যরি মাই ডিয়ার ম্যাডাম।
আই উড বি এক্সট্রেমলি হ্যাপি ইফ ইউ কুড টেল মি ইয়োর নেইম।
আই এ্যাম রনি।
সিওর?
সিওর।
কাল জিঞ্চাসা করলে আবার জনি বলবেন না তো?
সেটা কালই দেখা যাবে।
দেখা যাবে।
কাল কি ঠিক এই সময়ই------?
ও গড----তিশা প্রায় চিৎকার করে বলে ওঠে, আই উইথড্রো মাই ওয়াড্র্স, নো মোর টেলিফোন, নো মোর টক্স। লেট ইট বি দ্য লাস্ট চ্যাট।
ইউ আর সো হার্শ্!
হ্যাঁ, আমি খুবই কঠিন একটা মেয়ে।
মানুষকে এভাবে আঘাত দিয়ে আপনি কী মজা পান?
আমি কাউকে কখনো আঘাত দিই না। কেউ যদি মনে করে যে আমি তাকে আঘাত দিয়েছি তাহলে আমার কিছু করার নেই।
ওহ্, কী হৃদয়হীনা এক মেয়ে যে আপনি! আপনার স্বামী নিশ্চয়ই সব সময় আপনার ভয়ে তটস্থ থাকে। তাই না?
ভয়ে তটস্থ থাকবে কেন?
না, এমনিই বলছি, যে রাগ আপনার মধ্যে!
সত্যিই আমার খুব রাগ। রাগলে আমি মাটিতে পা আছড়ে কাঁদতে থাকি। সেই ছেলেবেলা থেকেই, এখনো তা রয়ে গেছে। বাড়ির চৌদ্দ গুষ্টি মিলে আমার ভজন না করলে আমার সেই রাগ থামে না।
আচ্ছা তিশা----
হোয়াট?
স্যরি, অনুমতি না নিয়েই আপনার নামটা উচ্চারণ করে ফেললাম।
তিশা হেসে ওঠে। তারপর বলে, কারো নাম উচ্চারণ করতে যে অনুমতির প্রয়োজন পড়ে জীবনে এই প্রথম শুনলাম।
তাহলে অনুমতি পেয়েছি বলেই ধরে নিতে পারি। তাই নয় কি?
কিন্তু ওটা আমার নাম না।
তাহলে?
ওটা কারো নামই না। আমাদের চৌদ্দ গুষ্টিতে কারো নাম তিশা ছিল না।
আশ্চর্য।
আশ্চর্য কেন?
নাম লেখা ভিন্ন মেয়ের, অথচ ফোন নম্বর আপনার। আশ্চর্য না?
এটা বুঝতে পারলেন না?
ধরতে পারছি না, মাথায়ই ঢুকছে না।
না পারলে না পারুন। ওওওফ, কথা বলতে বলতে টায়ার্ড হয়ে গেছি।
আপনার নামটি বলুন না প্লিজ।
আমার নাম মিমি। হয়েছে? খুশি হয়েছেন?
কী যে খুশি হয়েছি তা বোঝাতে পারবো না।
আমাকে বোঝাতে হবে না।
আপনি বড় নিষ্ঠুর।
এ নিয়ে কম করে হলেও পাঁচবার বলেছেন।
আপনি এতো নিষ্ঠুর কেন বলুন তো?
আমি জানি না এতো কিছু।
অথচ আপনি জানেন না, আপনার প্রথম দিনের সেই কণ্ঠস্বর এখনো আমার কানে অবিরাম বাজে। গতকাল সারারাত সারা স্বপ্ন জুড়ে শুধু দেখেছি আমি আপনার সাথে কথা বলছি। ঘুম ভেঙ্গে গেলে তখনো শুনি আমার কানের কাছে আপনার কণ্ঠস্বর মধুর ধ্বনির মতো বাজছে।
ফোনে মিমির চাপা হাসির শব্দ ভেসে আসে। সে বলে, আপনি কে বলুন তো? আপনি কি একজন কবি?
আমি যদি কবি হতাম খাতার পাতা ভরে ফেলতাম আপনার নামে কবিতা লিখে। কিন্তু আমি লিখতে পারি না।
এখন শুরু করুন।
কার জন্য লিখবো? কাকে নিয়ে লিখবো?
আপনার প্রেমিকাকে নিয়ে লিখুন।
আমার প্রেমিকা কি আমার কবিতা শুনবে? সে এক হৃদয়হীনা নারী।
এএএ----ইই, মিমি ধমকে উঠে বলে, আজেবাজে বকবেন না কিন্তু।
স্যরি।
আপনি কি প্রেম করেছেন কখনো?
হ্যাঁ----
কটা করেছেন?
মাত্র একটা।
সেটা কার সাথে, আপনার স্ত্রীর সাথে?
নো ম্যাডাম, আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে তার স্বামীর সাথে।
মিমি সশব্দে হেসে ওঠে। বলে, যা অদ্ভুত অদ্ভুত কথা না আপনি বলেন!
আপনার কথা দিনভর শুনতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা, আপনি কবিতা ভালোবাসেন না?
ওওউ, সবচাইতে দুর্বোধ্য একটা বিষয়।
কিন্তু কবিতাই পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট বিনোদন, মানেন? দুঃখে কবিতা, সুখে কবিতা, সংগ্রামে, বিজয়ে সর্বত্রই কবিতা। পুরো জীবন জুড়েই কবিতা, জীবনটাই কবিতা।
আপনি খুব সাংঘাতিক হাই সাউন্ডিং এ্যাবস্ট্রাক্ট কথা বলছেন। এসব তত্ত্ব আমার মাথায় ঢোকে না।
আপনাকে ছোট দু-লাইনের একটা কবিতা শোনাই?
আমাকে শোনাবার যেহেতু এতোই শখ, তাহলে শোনান।
থাক, শোনাবো না।
বাব্বাহ্, অভিমানও আছে দেখছি। স্ত্রীর সাথে অভিমান করেন না?
হ্যাঁ করি।
আপনার কবিতার লাইন দুটো শুনি?
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে একদিন বরুনা বলেছিল, যেদিন তুমি আমায় সত্যিকারে ভালোবাসবে সেদিন আমারও বুক হতে এমনি আতরের গন্ধ বেরুবে।
সামান্য নীরবতা। তারপর শাহিদ জিঞ্চাসা করে, অর্থটা বুঝতে পেরেছেন?
পারবো না কেন? ছ্যাকা খাওয়া কবিতা, কঠিন ছ্যাকা খেয়েছেন তা বোঝাই যায়।
বলুন তো কার লেখা?
একটা বোকাও বলে দিতে পারবে এটা কার লেখা।
কিন্তু আপনি খুব বুদ্ধিমতি, আপনার জন্য একটা কুইজ, আপনি বলুন এটা কার লেখা।
আপনি লিখেছেন! আপনি ছাড়া কি অন্য কেউ এরূপ জ্বালাধরা কবিতা লিখবে?
শাহিদ হাসে।
মিমি বলে, আমাকে যতোটা বোকা ভাবছেন আমি ততোটা বোকা নই, তার চেয়ে একটু বেশি বুদ্ধিমতি।
আচ্ছা বেশ, একটা কথার জবাব দিন। রাতে ফোন করলে কি মাইন্ড করবেন?
খবরদার খবরদার, ও-কাজ কক্ষণো করবেন না।
কেন?
এগারোটার পরপরই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের সময় কেউ ফোন করলে তাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
তাহলে কাল এ সময়?
না ভাই, আপনি একজন বিবাহিত পুরুষ হয়ে খামোখা কেন আমাকে বিরক্ত করবেন?
তাহলে পরদিন?
না, তাও না। আচ্ছা, আপনি কি জানেন আমাদের কতোক্ষণ ধরে কথা হচ্ছে?
হ্যাঁ জানি, প্রায় ৪০ মিনিট।
এভাবে কথা বললে তো আপনি ফতুর হয়ে যাবেন।
আপনার জন্য আমি ভিখারি হতেও প্রস্তুত।
মিমি হাসে। বলে, একদম হাবুডুবু খাচ্ছেন দেখি!
আপনার কি একটুও মায়া হয় না?
আমার কোন দয়ামায়া নেই।
কী নিষ্ঠুরই না আপনি!
ওওউউফ, আবার সেই একই শব্দ। কানে জ্বালা ধরে গেল এই একই কথা শুনতে শুনতে। নাহ্, এই শুনুন, এখন আমার হাজব্যান্ড বাসায় ফিরবে, এসে যদি এই পরকীয়া দেখে তাহলে আজই আমাকে ঝাড়ু মেরে ঘরের বার করে দেবে।
আমার ওপর আপনার ভরসা নেই?
দেখুন, আমরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছি।
স্যরি।
এখন রাখতেই হচ্ছে। স্যরি, মাইন্ড করবেন না, রেখে দিচ্ছি। খোদা হাফেজ।
শাহিদ খোদা হাফেজ বলার আগেই রিসিভার রেখে দিল মিমি। একটা প্রচণ্ড ভালো লাগা দোলা দিয়ে যায় তার মনে, আবার অতৃপ্তির জ্বালাও তেমনি আগুন জ্বালতে লাগলো।


পরদিন সন্ধ্যায় বৃষ্টিহীন প্রবল ঝড় হলো। ঝড়ের তান্ডবে অনেক ডালপালা ভেঙ্গে ছুটে এসে জানালায় লাগলো, জানালার একটা কাঁচও ভাঙ্গলো; তড়িঘড়ি জানালা বন্ধ করতে গিয়ে ধুলোয় চোখ ভরে গেল, দমকা বাতাসে সপাট করে জানালা ছুটে এসে আঙ্গুলও মচকে গেল শাহিদের। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। অন্ধকার ঘরে নিজেই বিছানা-বালিশ ঝেড়ে বালু ছাড়ালো, তারপর একটা মোম জ্বেলে বিছানায় সটান শুয়ে পড়লো সে।
ধীরে ধীরে টেলিফোনের নেশা চাঙ্গা হতে থাকে। ঘরময় ভ্যাপসা গরম, তার মনে অশান্তির জ্বালা, নেশার তীব্র যন্ত্রণা।
মিমিদের ওখানে কি ঝড় হয়েছে? বিদ্যুৎ চলে গেছে? শাহিদ শুয়ে শুয়ে ভাবে। মিমিদের বাসা গেন্ডারিয়াতে। ৫৩, দীননাথ সেনরোড। অবশ্য এটা যে সত্যিকারের ঠিকানা তা না-ও হতে পারে। শাহিদদের বাসা মিরপুর-১১ নম্বরে। মিরপুর ও গেন্ডারিয়ার মাঝখানে দূরত্ব প্রচুর, দু-জায়গায় কাকতালীয়ভাবে একই সময়ে লোড শেডিংয়ের সম্ভাবনা খুব কম। তবে ঝড় হলে ব্যাপ্তি বেশি হয়, তখন হয়তো অর্ধেক কিংবা সারা শহর জুড়েই লোড শেডিং পড়ে যায়।
লোড শেডিং হলে শাহিদের জন্য একটু সুবিধা আছে ~েবকি, অন্তত সে নিজে তাই ভাবছে। অন্ধকারে ঘরের কাজ-কর্মের জন্য মিমিকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হবে না, ফোনে রিং বাজা মাত্র রিসিভার তুলে বলবে, হ্যালো স্লামালাইকুম। একটা সম্ভাবনার কথা সে খুব ভাবছে। হয়তো শাহিদের মতোই সে এখন কাত হয়ে ফোনের পাশে বসে আছে। ওপরে যতোই রাগ দেখাক আসলে মনে মনে সে নিশ্চয়ই তার সাথে কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে বুঁদ হয়ে থাকে। তার এই বিশ্বাস আরো বদ্ধমূল হয়েছে গতকালের ঘটনা থেকেন হ্যাঁ, ঘটনাই বলা যায়ন্সর্বশেষ মাত্র একটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে লাইন কেটে দিবে বললেও রসিয়ে রসিয়ে ৪০ মিনিটেরও ওপরে কথা বলেছে মিমি।
চুম্বকের একটা ধর্ম আছেন্সমমেরুতে বিকর্ষণ, বিপরীত মেরুতে আকর্ষণ, যে-কথা ইতোমধ্যে সে মিমিকে বলেও বসেছে। চতুর ও বুদ্ধিমতি মেয়েরা সর্বদা জ্ঞবিপরীত মেরুরঞ্চ ~ে~~বশিষ্ট্য বহন ও প্রয়োগ করে, যাতে গর্দভ ছেলেগুলো মেয়েদের দিকে প্রচণ্ড বেগে ধাবিত হয়। মিমি নিশ্চয়ই সেরকম মেয়ে, শাহিদকে সে নাচিয়ে দেখছে, নাচাচ্ছে।
শাহিদ অবশ্য নিজেকে গর্দভ মনে করে না, সে গর্দভ সেজে এর শেষ দেখতে চায়। মিমির মধুঝরা কণ্ঠস্বর তাকে এখনো ঘোরের জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
খুব আয়েশ করে ফোন করলো শাহিদ। রিং যেতে থাকে। অল্প কয়েকবার রিং বাজার পরই রিসিভার তুলে খুব ব্যস্তভাবে মিমি বলে উঠলো, হ্যালো স্লামালাইকুম।
শাহিদ টেনে টেনে বলেঃ
এখানে ঝড় উঠেছিল, বিদ্যুৎ নেই,
দুঃসহ গরম, জ্বলছি অন্তর্দহনে,
শিয়রে ম্লান মোম-শিখা, এ বিষণ্ন সময়ে
একটু প্রশান্তি আমি খুঁজি দূর-আলাপনে।
তীক্ষ্ণ ও কঠিন ঝাঁঝালো স্বরে মিমি বলে উঠলো, আপনার কবিতা শোনার মতো সময় আর ~েধর্য্য আমার নেই। তারপরই সে খ-স করে রিসিভার নামিয়ে রাখে। নিষ্ঠুর শব্দটি ভীষণ বেগে এসে শাহিদের বুকের মধ্যে আঘাত হানেনতার বুকের মাঝখানটা গ্রীষেমর বৃষ্টিহীন মাঠের মতো ফেটে চৌচির হয়নপ্রচণ্ড একটা চোট লাগে। মনটা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায়। কী রহস্যময় এক মেয়েনতার মনের খবর বোঝা কী দায়, কখনো তার মুখে খই ফোটে, মনের ভিতরে তখন আশা জাগে, কখনো সে নিষ্ঠুর হৃদয়হীনা, কী এক রহস্যময় নারী!
শাহিদের সাথে কথা বলতে কি মিমির একটুও ভালো লাগে না? কখনো মনে হয় ভালো লাগে, কখনো মনে হয় সে অতিশয় বিরক্ত। এমনকি কোন যৌবনবতী নারী আছে যে কখনো কোন এক যৌবনপ্রাপ্ত পুরুষের সাথে কথা বলে সুখ পায় না? হোক সে বিবাহিতা, কিংবা কুমারী, এটা তো নারীর অন্তরের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষানএকজন পুরুষের সাথে কথা বলা, গোপনে গোপনে ভিজে যাওয়া। গত দুটো দিন মিমির সাথে কথা বলে শাহিদের কী যে ভালো লেগেছেনকিন্তু মিমিরও কি তেমনি ভালো লাগেনি? শাহিদ ভেবে ভেবে কোন কূল পায় না। নারীরা সত্যিই বড় বিচিত্র, কঠিন তাদের মনের খোঁজ পাওয়া।

শান্তা মেহরিনের সাথে তার যোগাযোগটাও একটা অদ্ভুত রহস্যে ভরা।
ইন্টারনেটে চ্যাট ওয়েবসাইটে ঢুকলে সব সময়ই কয়েকটা কমন নাম সেখানে ভেসে থাকতে দেখা যায়, যেমন সজনী, চম্পাবতী, সেলিনা, রুমা, সোমা, অনামিকা, কলাবতী, কলাপাতানবাংলাদেশি সবকটা ওয়েবসাইটেই এই কমন নামগুলো সর্বদা ভাসমান এবং বিরাজমান। শাহিদ চ্যাটরুমে ঢুকলে এ নামগুলোতে একবার-দুবার করে নক করেনহ্যালো, হাউ আর ইউ? তোমার কি ঘুম নেই? অন্য কোন কাজও নেই, একমাত্র চ্যাটিং ছাড়া? কিন্তু ওগুলো থেকে কোন উত্তর সে অদ্যাবধি পায়নি। অন্যান্য ফিমেল চ্যাটারের সাথে অবশ্য তার চ্যাট হয়েছে। একদিন সহসা মেহরিন নামটির ওপর নক করতেই সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পাওয়া গেল এবং তার সাথে বেশ চ্যাট হলোঃ

তোমার ভাল নাম কী?
শান্তা মেহরিন।
চমৎকার নাম।
ধন্যবাদ । তোমার নাম জানতে পারি কি?
অবশ্যই। শাহিদ কামাল।
নাশিদ কামালের ভাই?
গায়িকা নাশিদ কামালের কথা বলছো?
হুম।
তিনি আমার প্রিয় গায়িকা। কিন্তু তাঁদের সাথে আমাদের কোন আত্মীয়তা নেই।
নেভার মাইন্ড।
তুমি কী করো?
পড়ালেখা করি।
কোন্ ক্লাসে?
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
কলেজ?
লালমাটিয়া কলেজ।
কোন গ্রুপে পড়ো তুমি?
সায়েন্স।
এস.এস.সি. কোন্ স্কুল থেকে পাশ করেছো?
স্যরি, আমাকে শীঘ্রই উঠতে হবে।
কেন?
বাবা আমার ঘরের দিকে আসছেন।
তুমি এখন বাসা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছো?
এর কোন উত্তর এলো না, তার বদলে নিচে লাল অক্ষরে ভেসে উঠলোনমেহরিন চ্যাটরুম থেকে প্রস্থান করেছে।
এর ঠিক তিন দিন পর অন্য আরেকটা চ্যাট ওয়েবসাইটে কাকতালীয়ভাবে শান্তা মেহরিনের সাথে চ্যাট হলো।

আমাকে চিনতে পারছো? আমি শাহিদ কামাল।
তুমি ইটালি থেকে বলছো, তাই না?
স্যরি, আমি বাংলাদেশ থেকেই বলছি। এই তো মাত্র তিন দিন আগে চ্যাটরুমে তোমার সাথে দেখা, তোমার বাবা ঘরের দিকে আসছিলেন, তুমি দ্রুত চ্যাটরুম ছেড়ে চলে গেলে। মনে পড়ে?
হিমম---এ রকম তো অবশ্য প্রায়ই হয়, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। এনি ওয়ে, তুমি ভালো আছো তো?
হ্যাঁ। তুমি?
আমিও, ধন্যবাদ।
তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে?
পড়ালেখা মানে?
তুমি এইচ.এস.সি. সেকেন্ড ইয়ার পড়ছো না?
নোওউপ।
কিন্তু তুমি সেদিন তাই বলেছিলে।
স্যরি, আমি কখনো আমার পড়ালেখার কথা কাউকে বলি না।
তোমার নামটা কি বলবে?
কেন? এনি কনফিউশন?
আমি মিলাতে পারছি না।
অলরাইট, আই এ্যাম শান্তা মেহরিন।
এক সময় লালমাটিয়া কলেজে পড়তে, তাই না?
ঠিক তাই। কিন্তু জানলে কী করে?
সেদিন বলেছিলে।
নোওউপ।
তুমি কী করো?
আমি একটা জব করছি।
কী ধরণের জব?
বিমানে।
তুমি কি বিমানবালা?
আমার স্পেসিফিক পেশাটা কাউকে বলি না।
আমার অনুমান তুমি বিমানবালা অথবা কাষ্টমস অফিসার। ঠিক?
স্যরি, বলতে পারবো না।
তোমার কোন মোবাইল আছে?
আছে। তোমার?
আমার মোবাইল নেই, তবে ল্যান্ডফোন আছে । ৮১২৩৪৪১।
ও-কে।
নোট করেছো?
হিমমম।
তোমার নামের পাশে যে সংখ্যাটা ওটা কি তোমার মোবাইল নম্বর?
চমৎকার!
কী?
তোমার বুদ্ধি।
কেন?
আমার মোবাইল নম্বরটা ধরতে পারলে। আজ পর্যন্ত অন্য কেউ পারেনি।
প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। তবে এটা কাকতালীয়। প্রকৃতপক্ষে আমি খুবই বোকা।
অসম্ভব।
বিশ্বাস হয় না?
তুমি খুব ভালো ইংরেজি লিখছো।
এ দ্বারা বুদ্ধির পরিমাপ হয় না।
স্যরি, আমাকে উঠতে হবে।
কেন, খুব তাড়া?
আমার ডিউটির সময় হয়ে গেছে।
আমি কি কখনো মোবাইলে ফোন করতে পারবো?
আমি তোমার ফোন উপভোগ করবো।
এখনই করি?
নো প্লিজ, এখন আমি মোবাইল বন্ধ রাখবো।
আবার কি চ্যাটরুমে দেখা হবে?
হতে পারে।
কবে, কখন?
এটা নিশ্চিত বলতে পারছি না। তবে আমাকে খুঁজে বের করে নিও।
কাল এমন সময় কি আশা করতে পারি?
বলতে পারছি না। স্যরি, আমি উঠছি। বাই।
সঙ্গে সঙ্গে নিচে লাল লেখা ভেসে উঠলো।

দুদিনে অবশ্য মেহরিনের দুটি পরিচয় পাওয়া গেছে, প্রথমদিন বলেছিল সে ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে, আজ বলেছে সে বিমানে চাকরি করে। অথচ তার চ্যাটিং নিকনেমে কোন পার্থক্য নেইনমেহরিন ০১৭১৩০২০৩১। প্রথম দিন অবশ্য শাহিদের মনে পড়েনি যে নামের সাথে যুক্ত এতো বড় সংখ্যাটা আসলে তার মোবাইল নম্বর।
জ্ঞএখনই ফোন করিঞ্চ বলে শাহিদ নিশ্চিত হতে চেয়েছিল যে ওটা সত্যিই মেহরিনের নম্বর কিনা, কিংবা সে শান্তা মেহরিন কিনা। যদিও সে এখনই ফোন করার কথা বলেছিল কিন্তু আদতে তা করতো না, কারণ, তার মোবাইল ফোন নেই। এ দ্বারা অবশ্য ফোনের প্রতি মেহরিনের আগ্রহের পরিমাণটাও আন্দাজ করা গেছে। তবে সে মোটামুটি নিশ্চিত যে মেয়েটি তার আসল পরিচয় প্রথমদিন গোপন করেছিল ঠিকই, কিন্তু আজ আর গোপন রাখতে পারেনি। তবে মাত্র তিনদিন আগের চ্যাটের কথা কি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেল সে? ভুলে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। প্রতিদিন কতো জনের সাথে কতো ধরণের চ্যাট হয়, কার সাথে কী কী চ্যাট হলো তা মনে রাখা মোটেও সম্ভব নয়। এখানেই শাহিদের মনে প্রশ্ননতাহলে কি সে একেক জনের কাছে একেক রকম পরিচয় দিয়ে থাকে? এতে তার লাভ কী? মেহরিনের সাথে কথা বললেই জিনিসটা পরিস্কার হয়।
কিন্তু কোথা থেকে ফোন করা যায়? টেলিফোন বুথে প্রেমালাপ যেমন লাভজনক হবে না, তেমনি জমবেও না। সে পরদিন বন্ধু খান ইমুর সাথে দেখা করেই ওর মোবাইল ফোনটা হাতে তুলে নেয়। তারপর রিং করেন০১৭১৩০২০৩১।
রিং যেতে থাকে।
অপর প্রান্তে মেহরিনের জ্ঞহ্যালোঞ্চ ভেসে আসে। শাহিদ রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। বলে, হ্যালো স্লামালাইকুম, মেহরিন বলছেন?
জ্বি বলছি। কে বলছেন প্লিজ?
শাহিদ কামাল বলছি। চিনতে পারছেন তো?
মেহরিন দ্বিধান্বিত স্বরে বলে, চিনতে পারছি না যে।
গতকাল ইন্টারনেটে চ্যাট করলাম, রাতে, মনে পড়ে?
স্যরি, আমি তো কখনো ইন্টারনেটে বসি না ভাই।
কিন্তু আমি তো ইন্টারনেট থেকেই এ নম্বরটা পেলাম।
নাম এবং নম্বর ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো কখনো ইন্টারনেট ব্রাউজ করি না।
স্যরি, আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।
ইটস ওকে।
ম্যাডাম, আপনার সাথে কি মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলা যাবে?
কেন ভাই, কোন প্রয়োজন আছে?
প্রয়োজন নেই, তবে প্রয়োজন ছাড়া কি আমাদের ফ্রেন্ডশীপ হতে পারে না?
প্লিজ মাফ করবেন, ফ্রেন্ডশীপ করবার বয়স আমার নেই।
স্যরি, রাখি, কেমন?
মহিলা মাঝবয়সী, নাকি তরুণী বোঝা গেল না। কণ্ঠস্বরে কোন অতিরিক্ত আকর্ষণ কিংবা মাধুর্য নেই, তারপরও খুব গুছিয়ে কথা বলেন এবং সেটা শাহিদের ভালো লাগলো। যথেষ্ট ভদ্রভাবেও কথা বলেছেন। তবে তিনি কী করেন সেটা জানা গেল না, জিঞ্চাসা করলে হয়তো বলতেনও। সন্দেহের এক মহাসমুদ্রে সে হাবুডুবু খেতে লাগলো, নাম নম্বর সবই ঠিক আছে, কিন্তু মিলছে না।
পনর দিনের মাথায় রাত আটটার দিকে শাহিদ আরেকবার ফোন করে। অনেকক্ষণ ফোন বাজার পর মেহরিন ফোন ধরেন। তাঁর গলার আওয়াজের সাথে একটা ছোট বাচ্চার কান্নার শব্দ শোনা যায়।
হ্যালো।
হ্যালো স্লামালাইকুম। মেহরিন বলছেন?
জ্বি বলছি। আপনি?
আমি শাহিদ কামাল। দিন পনর আগে একবার ফোন করেছিলাম। আপনি ভালো আছেন?
জ্বি, ধন্যবাদ। কিছু বলবেন? আপনাকে ঠিক চিনতে পারিনি এখনো।
আপনাকে আমার সব পরিচয়ই খুলে বলবো। আপনার সাথে কি এক মিনিট কথা বলতে পারবো?
হ্যাঁ, বলুন।
আমি আসলে বুঝতে পারছি না যে আপনার ফোন নম্বরটা কীভাবে আমার কাছে এলো। আপনি কি সত্যিই ইন্টারনেটে চ্যাট করেন না?
আরে ভাই, সবই ঠিক আছে, কিন্তু আমি ইন্টারনেটে কখনো ঢুকি না।
তাহলে নম্বরটা আমি কীভাবে পেলাম?
সেটা আমি কী করে বলবো?
কাঁদছে কি আপনার বাচ্চা?
আমার বাচ্চা না, আমার নাতনি।
ম্যাডাম, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত এবং লজ্জিত।
ইটস ওকে।
শাহিদ ঘেমে উঠেছিল। ইন্টারনেটের সেই শান্তা মেহরিনের সাথে সে আর কোনদিন যোগাযোগ করেনি।


শান্তা মেহরিনের পর তানিয়ার সাথে বেশ কিছুদিন ই-মেইলে যোগাযোগ হয়েছিল। তানিয়াকে ইন্টারনেটে পাওয়ার ব্যাপারটা অবশ্য বেশ রোমাঞ্চকর ছিল।
ইমুর কাছ থেকে জ্ঞআই-ফ্রেন্ডসঞ্চ নামক নতুন একটা ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়েই শাহিদ ওটায় ঢুকেছিল। সেখানে প্রথম পৃষ্ঠায় বন্ধুত্ব, বিয়ের জন্য সঙ্গী খোঁজার সার্চ ইঞ্জিন ছিল। ১৮ থেকে ৩০ বৎসর বয়সী বাংলাদেশি মেয়েদের সার্চ দিতেই যে দীর্ঘ তালিকাটি তার সামনে ভেসে উঠলো তা দেখে শাহিদ পাগল হয়ে গেল। সে একেকটা মেয়ের পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত পড়ে আর যারপরনাই উত্তেজিত হতে থাকেনজ্ঞনির্মল বন্ধুত্বের জন্য সত্যনিষ্ঠ, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছেলেদের চাইঞ্চ। জ্ঞসাহিত্য যারা ভালবাসেন, সঙ্গীত যাদের নিত্যসঙ্গী, এমন মননশীল সংস্কৃতিমনা যুবকদের সাথে বন্ধুত্বে আগ্রহীঞ্চ। এতোসব শাহিদ পড়ে আর মনে মনে পাগল হয়ে ওঠে।
প্রায় দেড়শোটি মেয়ের কাছে ই-মেইল করা হলো।
একই নামের অবশ্য একাধিক মেয়ে রয়েছে। কেউ ছাত্রী, কেউ নতুন পেশা খুঁজছে, কেউবা ইতোমধ্যে পেশা গ্রহণ করেছে।
গোটা বিশেক মেইল অবশ্য প্রাপকের কাছে না পৌঁছে ডেলিভারি ফেইলিইওর হিসাবে ফেরত এলো। অনেকে বহুদিন আগেই ই-মেইল একাউন্ট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে, নির্ধারিত সময় শেষে তা ইনভ্যালিড হয়ে গেছে। কেউবা হয়তো ই-মেইল একাউন্টটি শুদ্ধভাবে ঢোকায়নি।
মাস খানেকের মধ্যেও কারো কোন জবাব না পেয়ে শাহিদ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে যে-সব নাম-ধাম-বৃত্তান্ত দেয়া আছে আসলে তা সবই ভুয়া। কিন্তু তারও দিন দশেক পরে যখন তানিয়া নামক মেয়েটির একটা জবাব এলো তা দেখে শাহিদ ভীষণ রোমাঞ্চিত ও আশ্চর্য হলো। তানিয়া লিখেছেঃ

হাই,
আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে তুমি আমার কাছে মেইল করেছো। আরো খুশি হয়েছি যে তুমি আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাও। আসলে ব্যাপারটা হলো কী, আমি তোমার মেইল পেয়ে একটু বিব্রতবোধ করছি এবং লজ্জিত বোধও করছি। কেননা, তুমি যেখান থেকে আমার নামটা সংগ্রহ করেছো ওখানে আমি নিজে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করিনি। আমার একটা দুষ্ট~ু বোনঝি আছে, ও এবার ঢাকা ভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্সে ভর্তি হয়েছে। তো, সেই দুষ্টু রাহা (ওর নাম রাহা) গোপনে, আমাকে একেবারেই না বলে আমার নামটি ঢুকিয়ে দিয়েছে। ব্যস, তোমার মেইলটা পেয়ে গেলাম।
আমার লাইফ ডিটেইলসে যে লেখা আছে জ্ঞউপযুক্ত এবং ব্যক্তিত্ববান যুবকের সাথে বিয়ে সম্ভবঞ্চ ওটা আসলে ওর একেবারেই বানানো। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। কেবল একটা চাকরিতে ঢুকলাম তো। ক্যারিয়ারটা ঠিক মতো গড়ে উঠুক, তারপর বিয়ের কথা ভাববো। এটাই কি সঠিক সিদ্ধান্ত নয়?
আমি তানিয়া আহমেদ চৌধুরী। গুড লাক।

মেইলটা পড়ে শাহিদ মনে মনে হাসলো। তারপর একটা সুন্দর উত্তর লিখলো।

হ্যালো অপরিচিতা, তানিয়া আহমেদ চৌধুরী,
আপনার সুন্দর মেইলটি আপনার প্রতি আমার আগ্রহ দুর্বার করে তুলেছে। আপনি কোথায় চাকরি করছেন তা কিন্তু বলেননি। তবে, এ মুহূর্তে বিয়ের কথা না ভেবে চাকরি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইছেন এজন্য আপনাকে আমি সাধুবাদ জানাই, খুব কম মেয়েই এতোখানি সাহস ও সংযম প্রদর্শন করতে পারে।
একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে, আপনার দুষ্টু বোনঝি কি সারাক্ষণ শুধু ইন্টারনেটেই পড়ে থাকে? আমার তো মনে হয় সে সারাদিন ইন্টারনেটে পড়ে থাকে আর আপনার নামে গন্ডায় গন্ডায় একাউন্ট খুলতে থাকে। বিষয়টি পরিস্কার করে বলছি। আপনার নামে ওয়েবসাইটে পাঁচটি একাউন্ট খোলা আছে। পাঁচটি একাউন্টে ব্যক্তিগত পাঁচটি বৃত্তান্তে পাঁচ রকমের বক্তব্য দেয়া আছে। যেমনঃ

প্রথমঃ হাই, আমি গান পছন্দ করি। অবিবাহিতা। কলেজে ২য় বর্ষে পড়ছি। সংস্কৃতিমনা কিন্তু সমার্ট যুবকদের সাথে বন্ধুত্বে আগ্রহী।
দ্বিতীয়ঃ হ্যালো, আমি তানিয়া, ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। টিভি দেখা, বই পড়া আমার শখ। এখনো বিয়ে করিনি। ভার্সিটিতে ২য় বর্ষ। যে কারো সাথে নিস্কলুষ বন্ধুত্বে আগ্রহী।
তৃতীয়ঃ আমি তানিয়া রহমান। যে কোন কিছু হতে পারে। সুপুরুষরা আমাকে সর্বদাই আকর্ষণ করে।
চতুর্থঃ উপযুক্ত এবং ব্যত্তিত্ববান যুবকের সাথে বিয়ে সম্ভব।
পঞ্চমঃ আমি জীবনকে উপভোগ করতে চাই, যে কোন উপায়ে। কোন সাহসী যুবক আছেন কি? কিংবা পুরুষ?

বিভিন্ন সহানে এরূপ বিচিত্রভাবে নাম ছড়ানোর রহস্যটা কি জানতে পারি?
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
দ্রুত উত্তরের প্রত্যাশায়নশাহিদ কামাল।

তিনদিনের মাথায় তানিয়ার জবাব এলো।

হ্যালো শাহিদ কামাল, কিংবা যেই হোন না আপনি, আপনার মেইল আমাকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করেছে। প্রথম মেইলে আমি স্পষ্ট জানিয়েছিলাম যে রাহার দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এ কাজটি করা হয়েছিল। আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেছেন, সঙ্গে আরো চারটি মেয়ের ব্যক্তিগত মন্তব্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু জনাব, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে আমার নামটা তানিয়া আহমেদ চৌধুরী এবং আমার পুরো নামের সাথে অন্য কারো নামেরই কোন মিল নেই? কেউ তানিয়া মাসুদ, কেউ তানিয়া রহমান, কেউ শুধু তানিয়া। অতএব আমার সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য একেবারেই মেনে নিতে পারছি না। বলুন তো কে আপনি, এরূপ মিথ্যে অভিযোগের সাহস আপনার কোত্থেকে এলো?

মেইলটি দেখার পর শাহিদ পুনরায় ওয়েবসাইট খুলে পাঁচটি পৃথক জায়গায় তানিয়ার পার্সোনাল প্রোফাইল ভালো করে দেখে নিল। তারপর উত্তর পাঠালোঃ

হ্যাঁলো তানিয়া আহমেদ চৌধুরী,
আপনার মেইলের জন্য এবারও আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ওয়েবসাইটে পাঁচটি পৃথক অথচ অভিন্ন তানিয়ার প্রোফাইল দেখে এবং আপনার মেইল পড়ে আমি খুউব বিসিমত হচ্ছিনএটা কি করে সম্ভব হলো? হ্যাঁ, সেটাই বলছিনপাঁচটি পৃথক জায়গায় তানিয়া আহমেদ, তানিয়া আহমেদ চৌধুরী, তানিয়া মাসুদ, তানিয়া রহমান ও তানিয়া নামক পাঁচটি মেয়ের প্রোফাইল দেয়া আছে। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, এটা কীভাবে সম্ভব হলো যে তাদের প্রত্যেকেরই জন্ম তারিখ অভিন্ন, বাসার ঠিকানাটাও একই। একই বাসায় একই দিনে পাঁচটি মেয়ের জন্ম হলো, তাদের নিক নেইমটাও রাখা হলো অভিন্ননতানিয়ানএর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কি হতে পারে? আপনিই বলুন, এটা কি কখনো সম্ভব? কীভাবে সম্ভব?
অতএব, আমি সুনিশ্চিত, পাঁচটি তানিয়া আসলে একটি অভিন্ন সত্তা। আপনি যে-ই হোন না কেন, আপনার অন্তরে কোন সুপ্রবৃত্তির অবস্থিতি নেই বলেই আমার বিশ্বাস। আমি আরো সুনিশ্চিত যে, আপনার বোনঝি রাহাটাও অন্য কেউ নয়, স্বয়ং আপনিই।
আমার ধারণা আপনি একটা কলগার্ল। তাহলে এতো ভণিতা কেন, সোজাসুজি অফার দিলেই পারতেন?
অজস্র ধন্যবাদের পরনশাহিদ কামাল।

তানিয়ার উত্তর ছিলঃ

আপনার সর্বশেষ মেইলটা পড়ার পর থেকে আমি তীব্র অন্তর্দহনে জ্বলছি। আমার এ যন্ত্রণা কোনদিন শেষ হবে না, কেউ দেখবে না।
আপনার সকল অভিযোগ আর অপবাদ মাথা পেতে নিচ্ছি।
কিন্তু আপনি একটা পাষণ্ড।

এরপর শাহিদ বহুবার দীর্ঘ জবাব পাঠিয়েছে, ক্ষমা চেয়েছে, অনুশোচনা প্রকাশ করেছে, কিন্তু তানিয়ার কোন জবাব আসেনি।

পরের পর্ব

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×