somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনাকে যে গানটি অহরহ শোনাতাম

০৭ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার পিসি অন থাকা মানে অবিরাম গান বাজতে থাকা।

অহনার সাথে যখন খুব বেশি বেশি কথা হতো, দীর্ঘ সময় ধরে, মাঝে মাঝে সে বলতো, তোর কাছে কি তোর গানই বড়, নাকি আমি বড়?
তুইই বড়। আমি ইন্সট্যান্টলি বলতাম।
তাহলে তোর গান বন্ধ কর। একটুসখানি ঝিম মেরে বসে থেকে গম্ভীর স্বরে অহনা অনুজ্ঞা করতো।
কিন্তু আমি ভলিয়্যুম আরো বাড়িয়ে দিয়ে বলতাম, তুই এই গানটা শোন্‌। এমন মাধুর্যমাখা গান তুই জীবনেও শুনিসনি। তারপর, মোবাইলটা পিসির স্পিকারের সামনে বসিয়ে রাখতাম, যতোক্ষণ গানটা বাজতো। গান শেষ হলে কানের কাছে মোবাইল নিতে গিয়েই দেখতাম লাইন কেটে দিয়ে অহনা পগার পার।
এরপর অভিমান করে অহনা আর কল করতো না; যে মেয়ে প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে মিস্‌ডকল দেয় আর মিস্‌ডকল দিতে দিতে মোবাইলের বাটন ক্ষয় করে ফেলে, সেই মেয়েই একটানা দু-তিনদিন ধরে আর মোবাইলই অন করে না।

ওর সাথে গান আর কবিতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আর বিতণ্ডা হতো; মোবাইলেই। মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রতি মিনিটে ২৫ পয়সা কলরেট করেছিল আমাদের কল্যাণের কথা ভেবে। হেন কোনো গান নেই যা ওর জানা নেই, কি সুর, কি তার অন্তরা। আমার পড়া হেন কোনো কবিতা নেই যা ওর আজও পড়া হয় নি; আর ও যেসব কবিতা পড়েছে আর আমি তা পড়ি নি, তার তালিকা অনেক অনেক দীর্ঘ। কথায় কথায় ও রেফারেন্স টেনে বলতো, তুই কি ঐ বইটা পড়েছিস?
কোন্‌টা?
মেমসাহেব?
না?
মেঘনাদবধ?
না?
বঙ্কিমচন্দ্রের সব বই পড়েছিস?
না।
রবীন্দ্রনাথ? বিদ্যাসাগর? শরৎচন্দ্র?
শরৎচন্দ্রের অর্ধেকের মতো পড়েছি।
হুমম! এই পড়া নিয়েই তুই বই লেখা শুরু করেছিস?
আমি তো হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই বাদ রাখি নি।
তুই একটা বাচ্চা পুলা। হুমায়ুন আজাদের বই পড়েছিস?
অল্প কয়েকটা।
তুই এক কাজ কর, আগামী ১০ বছর তুই লেখালেখি বন্ধ রাখ। এই দশ বছরে এদের বইগুলো আগে পড়। পড়াশোনা না করে লিখিস বলে তোর লেখা মাকাল ফলের মতো।
আমি ক্ষেপে গিয়ে বলি, ঐ পণ্ডিতনি, তুই তো অনেক পড়েছিস, তাহলে আমার মাকাল ফলের মতো একটা ফল প্রডিউস করে দে।
তখন তো তোর কপাল পুড়বে।
আচ্ছা, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কার লেখা যেন?
অহনা হেসে দিয়ে বলতো, তুই কি আমাকে টেস্ট করছিস?
বল্‌ না।
কেন, রবীন্দ্রনাথের লেখা।
তাহলে শূন্যস্থান পূরণ কর : ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে.... এর পরের লাইনটা কী?
অহনা চুপ করে থাকে।
কী, পারিস না?
স্যরি রে, জাতীয় সঙ্গীত আমার পুরোটা মুখস্থ নেই।
পণ্ডিতনি! খুব তো ঝাড়লি এতোক্ষণ। তোর তো দেখি 'ষোল আনাই মিছে।'
তোর কি পুরোটা জানা আছে?
শুধু জানাই না, পুরোটা সুর করে গাইতেও পারি।
আমাকে একটু শোনা না ভাই!
আমি পুরোটা গাই : আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি....

অহনার মুগ্ধতা আমায় কি যে অনুপ্রেরণা দিত! যে জিনিসটা ওর জানা নেই, অথচ আমি জানি, তা ওকে জানিয়ে আমি দিগ্বিজয়ীর সুখ পেতাম, আর তাতে ওর মুগ্ধতা বেড়ে যেত তরতর করে, আমার প্রতি। আমার ভাঙা আর অনভিজ্ঞ কণ্ঠে 'আমার সোনার বাংলা' শুনে অহনা বললো, গানটা এর আগে এ্যাসেম্বলিতে অনেক শুনেছি। রেকর্ডেও শুনেছি। কিন্তু এর আগে এতো' সুন্দর' লাগে নি। তুই খুব চমৎকার গেয়েছিস।

এই গানটা শুনেছিস?
কোন্‌টা?
যেটা সবসময় তোকে শোনাই?
তুই তো কতো গানই আমাকে শোনাস। কোন্‌টার কথা বলবো?
তুই একটা কালা।
কেন? কেন বললি একথা?
কারণ, ইদানীং এই গানটা প্রায় রাতদিন ধরেই বাজিয়ে থাকি। আর এটা তোর কানে 'ঢুকলো' না?
অসভ্য'র মতো কথা বলছিস কেন?
স্যরি।
নে, গানটা আবার শোনা।
আমি গানটা আবার শোনাই।

গান শুনে অহনা যথারীতি মুগ্ধ হয় আর অবাকও হয়। বলে, এ গানটা আমি তোর কাছেই প্রথম শুনলাম। আরেকবার শোনা তো। আমি আরেকবার পিসিতে গানটা শোনাই, আর তৃপ্তিতে আপ্লুত হয়ে উঠি।

কার কণ্ঠ রে?
শিল্পীর নামটা জানা নেই।
সন্দীপন?
আমি তো সন্দীপনের কণ্ঠ চিনি না। ওর গান শোনা হয় নি।
পবন দাশ বাউলও হতে পারে।
আমি তাঁর গানও শুনি নি।
তুই কার গান শুনেছিস?
এতো ঝাড়ি মারিস কেন, কথায় কথায়? তুই কি ঝাড়ুদার?
অহনা নরম হয়ে বলে, গানটা আমার খুব খুব খুবই ভালো লাগলো। আরেকবার ছাড় তো।

এভাবে অনেক অনেক বার, অনেক অনেকদিন শিল্পীর নাম না-জানা এ গানটা আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। একদিন অহনা জিজ্ঞাসা করে, তোর মনে কি খুব দুঃখ?
কেন?
এই গানটা যে এতো শুনিস, তাই বললাম। আমার মনে হয় জীবনে কেউ তোকে ঠকিয়েছে, বা ঠকাচ্ছে। যাই হোক, মনে কোনো দুঃখ রাখবি না, বুঝলি?
হুম!
পিসিতে গানটা ছেড়ে দিই, সুরের ভুবনে হারিয়ে যেতে যেতে কাউকে-না-বলা দুঃখটা ভুলে যেতে চেষ্টা করি।



তোরে রাং দিল কি সোনা দিল, তুই পরখ কইরে দেখলি না
গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা

গুরু দিল খাঁটি সোনা
রাং বইলে তোর জ্ঞান হইল না, ওরে দিনকানা
ওরে উপাসনা বিনে কি তোর মিলিবে রে রুপাসোনা
গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা
তোরে রাং দিল কি সোনা দিল

চণ্ডীদাস আর রজকিনী
তারা প্রেমের শিরোমণি, রাং কইরাছে সোনা
তারা এক প্রেমেতে দুইজন মইলো, এমন মরে কয়জনা
গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা
তোরে রাং দিল কি সোনা দিল, তুই পরখ কইরে দেখলি না
গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা



ডাউনলোড
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×