somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্লোবালাইজেশান (বিশ্বায়ন-পর্ব ২)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Globalization তথা বিশ্বায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যা সমস্ত বেষ্টনী বা বন্ধন উৎপাটিত, অপসারিত ও অগ্রাহ্য করে একটিমাত্র প্রধান ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যে “একত্রীকরণ”-কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় যা বিশ্বের সমস্ত দেশ, জাতি, এর সংস্কৃতি, রীতিনীতি, প্রথা, ধর্ম, মূল্যবোধ, বাণিজ্য-অর্থনীতি, দেশ বা জাতিসমূহের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা এবং চিন্তা-চেতনাগুলোর একটি একক ও সার্বজনীন রূপরেখা সৃষ্টি করে।

প্রকৃতপক্ষে বিশ্বায়ন একটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া যা সমস্ত জাতির মধ্যে ক্রিয়াশীল হয়ে মানবজাতিকে একে অপরকে একত্রিত করে একটি বিশ্বজনীন মাত্রায় অর্থাৎ মানবজাতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো ও প্রকৃতিকে একটি অভিন্ন রুপ প্রদান করে।আর এটি বর্তমান সময়ে তীব্রভাবে ক্রিয়াশীল হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনিরুদ্ধ বিপ্লবের অগ্রযাত্রার ফলশ্রুতিতে- যা জাতি, দেশ, গোত্র, বর্ণ, ধর্ম কিংবা সমাজের সকল সীমানার বাঁধ ভেঙে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের সকল মানুষকে ক্রমশ আরও নিকট থেকে নিকটতর অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় পারস্পারিক যোগাযোগ স্থাপনের বিস্ময়কর পথগুলোর মাধ্যমে (ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক বা স্যাটে্লাইট) আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বের সকল মানুষ আজ পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

বর্তমানে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার রীতিনীতি যে অজেয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তা মূলত তাদের বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শীর্ষতম উৎকর্ষতার কারণেই। সেইসাথে তারা শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

যেহতু Globalization এর প্রধান দুটি নিয়ামক -১) যোগাযোগ শক্তি, ২)শিল্প ও বাণিজ্যেক নিয়ন্ত্রণ।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও স্নায়ুযুদ্ধের পতনের পর পশ্চিমা বিশ্ব বাদবাকি বিশ্বকে শাসনের ক্ষেত্রে অজেয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।আর গোটা বিশ্বব্যাপী তাদের তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি কায়েমের মাধ্যমে তারা ভালোভাবেই সক্ষম হয়েছে নতুন ধরনের নীতি বাস্তবায়ন করতে।এটাই হল নব্য সাম্রাজ্যবাদ নীতি।এরই মাধ্যমে তারা অর্জন করেছে তাদের লক্ষ্যমাত্রায় অর্থ-সম্পদ এবং এটা নিশ্চয়তা বিধান করেছে তাদের অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহের সেই অভিমুখে যার কেন্দ্রগুলো লন্ডন কিংবা নিউইয়র্ক। আর এ সমস্ত কিছু সম্ভব হচ্ছে বিশ্বব্যাপী তাদের বিস্তৃত Corporate Network ও বিশাল Multinational (বহুজাতিক) কোম্পানিগুলোর কার্জকলাপ দ্বারা। যেমন- chevron, Royel Dutch Shell, BP Unilever , HSBC, Bata, coca cola, Nat-Geo, CNN ইত্যাদি। তাছাড়া ক্লাব ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রিয়া অঙ্গনেও আজ তাদেরই নিয়ন্ত্রণ।
সন্দেহ নেই যে ‘একত্রীকরণের’ এই জোয়ারে মানবজাতির বিভিন্ন অংশের পারস্পারিক সংযুক্ততায় এবং পরস্পরের সংস্কৃতি, চাহিদা ও মূল্যবোধের সাথে পরিচিত ও লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্ব রূপান্তরিত হয়েছে ক্রমবিকাশমান একটি একক বিশ্ব-ভূখণ্ডে।পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি গ্লোবাল গ্রামে। বিশেষ করে Online Network সীমানাবিহীন করবার ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে একটি অভিন্ন সংযোগে প্রোথিত করেছে।যার কারণে সুদূর ও নিকটতর প্রান্তের ঘটনা প্রবাহ একই সংযোগ মাধ্যমে পৃথিবীর সকল স্থানে প্রবাহিত হয় এবং স্থান-কালের আপেক্ষিকতা যেখানে কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনা। দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তের মানুষে মানুষে সংযোগ স্থাপনে এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে –হোক সেটা সংস্কৃতিক বিভাগে কিংবা অর্থনীতি কিংবা বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতায়। এখানে মানচিত্র কোন বাঁধা নয়। অজ্ঞাত সংস্কৃতি, আইন-কানুন, জীবন পদ্ধতি বা মূল্যবোধগুলো ক্রমশ প্রবিষ্ট হচ্ছে অন্য কোন দেশ বা জাতির মধ্যে। আমরা ঘরে বসেই পৃথিবীর দূর প্রান্তের অজানা কোন সংস্কৃতিকে আজ জানতে পারি ও ভাগাভাগি করতে পারি। এখানে কোন বর্ডার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়না। যার ফলে এক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ অপর সংস্কৃতির সাথে প্রভাবিত বা তাড়িত হয়ে একটি অভিন্ন ও অপ্রতিরোধ্য সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সৃষ্টি করেছে।

সচেতভাবেই হোক কিংবা অবচেতনভাবেই এখানে বলা বাহুল্য যে, সারা দুনিয়ার মানুষ আজ এক সার্বজনীন রীতিনীতি বা মূল্যবোধের দিকে ধাবিত হচ্ছে।(এর কারণ আমরা অন্য পর্বে বিশদভাবে আলোচনা করবো)।
তবে এটা ভাবা অনুচিত যে- এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে এই বিংশ কিংবা একবিংশ শতাব্দীতে। বরং বিশ্বায়নের জন্ম হয়েছে একটি সূদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যার চূড়ান্ত বিস্ফোরণ আজাকের আন্তর্জাতিক বিশ্ব। এই প্রক্রিয়াটির সূচনা বুঝতে হলে একটু ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করা প্রয়োজন।

একটু পেছনে ফিরে তাকাই- আরব শাসিত স্পেনের সময়কালে। যারা একসময় প্রজ্বলিত করেছিল বিজ্ঞান ও সভ্যতার আলোকছটা যা পরবর্তীতে গোটা ইউরোপকে আলোকিত করেছিল এবং একইসাথে বিশ্বজাগরণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। অথবা বলা যায় ইসলামের খেলাফতের রাজধানী বাগদাদের কথা। পৃথিবীময় যা সৌন্দর্য্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার কেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল এবং যা সেই সময়ের অন্য সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপর চরম আগ্রাসন চালাতে সক্ষম হয়েছিল।যার ফলে আরবদের সেই সময়ের উন্নত রীতিনীতি ও সংস্কৃতি ভারতবর্ষকেও আন্দোলিত করেছিল। এবং আরবরাও তখন উদার চিত্তে তাদের মূল্যবোধের আইনের মানদণ্ড বজায় রেখে ভিন্ন সংস্কৃতিকে আপন করে নিতে এতোটুকু কার্পণ্য করেনি বা পাপও মনে করেনি।

উদারহরন স্বরূপ আমরা বলতে পারি নবম শতকে আব্বাসিয় খলিফা মামুনের কথা যিনি গ্রীক বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের পাণ্ডুলিপি অনুবাদের কাজে হাতে দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজনীন একত্রীকরণের প্রক্রিয়াটি তখন থেকেই শুরু এবং আরবদের এই আগ্রাসন ছিল মূলত একটি আন্তর্জাতিক লক্ষ্য ও চেতনাকে ধারণ করে। এবং তারা এতে সফলও হয়েছিল। যার ফলে পশ্চিমে স্পেন ও পূর্বে হিন্দ পর্যন্ত একটি শক্তিশালী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির একটি সার্বজনীন রূপরেখা পরিগ্রাহ করেছিল যা সারা দুনিয়াকে আন্দোলিত করেছিল। তারা পেরেছিল তাদের বিশ্বাসভিত্তিক মতাদর্শের মানদণ্ডে একটি আন্তর্জাতিক বিশ্বরাষ্ট্রের সেভ ও সার্বজনীন মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে। তারা পেড়েছিল একটি বিশ্বজনীন সংস্কৃতি ও জীবনব্যা্বস্থার রূপরেখা অংকন করতে। কিন্তু যখনই তাদের বিশ্বাসভিত্তিক আন্তর্জাতিক চেতনা আরবী্য জাতীয়তাবাদ ও ট্র্যাডিশনের ফ্রেমে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, যখন তাদের পূর্ব-পুরুষের ত্যাগ-বিসর্জনের মানুষিকতা অনর্থক অপচয় ও মাত্রাতিরিক্ত ভোগ-বিলাসে অভিভূত হয়ে পড়ে- ঠিক তখনই তাদের মহান আন্তর্জাতিক চেতনার দেয়াল ধসে পড়ে। তবে তা রাতারাতি ধসে পড়েছে বিষয়টি এমন নয়। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল ৯ম শতাব্দী থেকে শুরু করে ১৬-শতক পর্যন্ত তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-কলায় যে উৎকর্ষতা তারা অর্জন করেছিল- ধীরে ধীরে তাদের সেই অগ্রগতি থামে যায়। যার ফলে পরবর্তীকে পৃথিবীবাসীর পরিবর্তিত সময়ের চাহিদাকে কেন্দ্র করে কোন উন্নত সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মান ও প্রভাব তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। যার ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চাবিকাঠি পরবর্তীতে পশ্চিমারাদের দখলে চলে যায় এবং রেনেসাঁ বিপ্লবের পর পশ্চিমারা তাদের বস্তুবাদী ও সেকুলার দৃষ্টিভঙ্গিতে আরেকটি ভিন্ন গ্লোবাল জীবনব্যবস্থার মানদণ্ড সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

তবে প্রকৃতপক্ষে মধ্যযুগের শেষ পর্যায়েই বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া চালু হয়ে হয়েছিল- যখন আরবরা একটি আন্তর্জাতিক চেতনা ও মতাদর্শকে বাস্তবায়ন করতে বিশ্বব্যাপী একটি বিপ্লব ঘোষণা করে। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল সারা দুনিয়ার মানুষকে একটি একক ও সার্বজনীন জীবনব্যবস্থার আনুগত্যের আওতায় আনা (ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় জিজিয়ার মাধ্যমে)। মূল চেতনাটি ছিল স্রষ্টার যমিনে তারই প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা (থিওক্রেসি)। বিজাতীয় বা ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসীদের সাথে তাদের সার্বজনীন চুক্তি ছিল এই যে -
“এসো সেই কথায় আমরা একমত পোষণ করি যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে একক ও সমভাবে সার্বজনীন। তা এই যে-আমরা এক আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারও আনুগত্য করবনা। প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বে অন্য কাউকে আমরা আল্লাহ্‌র সমতুল্য মনে করবনা। এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে হুকুমদাতা হিসেবেও মানবনা। এর পরও কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে, বল- তোমরা সাক্ষী থাক যে আমরা আল্লাহ্‌র অনুগত।[আল-কুরআন-৩:৬৪]।”
জাতিধর্ম গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য এটি একটি আন্তর্জাতিক বা সার্বজনীন একত্ববাদের এক বৈপ্লবিক আহবান। কারণ পৃথিবীর প্রায় সকল ঐশী কিতাবই মূলত আমাদের এক ও অদ্বিতীয় সর্বময় প্রভুর প্রভুত্বকে স্বীকার করবার ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেই অদ্বিতীয় ঈশ্বরেরই দাসত্ব বা অনুগত্যে করবার নির্দেশ প্রদান করে।
তাদের লক্ষ্য ছিল সমগ্র বিশ্বের মানুষকে অন্যায়, অত্যাচার, জাতিগত অহমের লড়াই-সংগ্রাম ও সকল প্রকার দাসত্বের শৃঙ্খল-নির্যাতন থেকে মুক্ত করে সাম্য, ন্যায়-বিচার ও শান্তির পথে পরিচালিত করা। সমস্ত মানব জাতিকে গোলামীর সংকীর্ণতা থেকে প্রশস্ততার দিকে এবং এক স্রষ্টার আনুগত্য স্বীকার করাবার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক ও সার্বজনীন সমাজ ব্যবস্থা ও ভ্রাতৃত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা।আর এই দর্শনের মানদণ্ডে কোন বর্ডার-মানচিত্র, বর্ণ-গোত্র, ভাষা, জাতীয়াতাবাদ কোন বাঁধা হতে নয়। এমনতর দুনিয়ায় কারও মর্যাদার মানদণ্ড কোন বিশেষ ভূখণ্ডের অধিবাসীর জন্য সুনিদৃষ্ট নয়। হোক সে আরব কিংবা অনারব, বাইজেন্টাইন কিংবা পার্সিয়ান। শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হবে শুধুমাত্র স্রষ্টার সন্তুষ্টি, ধার্মিকতা ও নীতিনিষ্ঠতার মানদণ্ডে (তাকওয়া)।
সুতরাং সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা কতবড় বিপ্লবী ও গ্লোবাল চেতনা ছিল তা কিছুটা অনুধাবন করা সম্ভব যদি আমরা সেই যুগের রোমান ও পার্সিয়ান সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের দিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। রোমান সাম্রাজ্যে শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু অভিজাত শ্রেণী মর্যাদার অধিকারী ছিল যারা সকল ধনসম্পদ ও সুযোগ সুবিধার অধিকারী ছিল।

দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক যারা সাম্রাজ্যের অধীনে কঠোর পরিশ্রম করে আর্থিক বুনিয়াদ শক্তিশালী করবার কাজে নিয়োজিত থাকতো। কিন্তু অতিরিক্ত করের বোঝায় জর্জরিত থাকায় তাদের শ্রমের ফসল খুব সামান্যই তারা ভোগ করতে পারতো। এই দুর্ভাগা দাস্য শ্রেণী যাদের স্বাধীন কোন সত্ত্বার স্বীকৃতি ছিলোনা আর না ছিলো কোন মানবিক অধিকার। মালিকের হাতেই ছিল জীবন-মরণের ভাগ্য। তাদের সমগ্র জীবন অতিবাহিত হতো শুধুমাত্র মালিকের খেয়াল-খুশির আনুগত্য করতেই। একটি পশুর চেয়ে কোন অংশেই উৎকৃষ্ট ছিলোনা তাদের জীবন। স্পেনে মুসলিম আগ্রাসনের পূর্বে গথিক রডারিকের শাসন আমলেও দাসদের দাস্য জীবনের এই একই ধরনের লোমহর্ষক চিত্র পরিলক্ষিত হয়!!
আর পারসিক সভ্যতা ও এর সাম্রাজ্যের অধীনস্ত জনগনের অবস্থা বাইজেন্টাইন দাসদের থেকে ব্য্যতিক্রম ছিলোনা। এই দুই প্রধান সাম্রাজ্য ছাড়া (রোমান ও পারস্য) তৎকালীন দুনিয়ার অন্যান্য অংশের যেমন- ভারতবর্ষ ও চীনের অবস্থাও ছিল প্রায় অভিন্ন। সবখানেই শক্তিমানরা দুর্বল ও অসহায়দের প্রভু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। যদিও তারাই (দুর্বল ও অসহায়) সংখ্যায় বেশি ছিল তথাপিও তাদের প্রভুরা নিজেদের নির্দয়, কঠোর ও শক্তিশালী বাহিনীর সুবাদে সহজেই নিজেদের প্রভুত্ব কায়েম রাখতে সক্ষম ছিল। তবে এমন কোন চেতনা তখন পর্যন্তও তাদের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়নি যে তারা তাদের দীর্ঘকালের দাস্যজীবনের মানুষিক ও বাহ্যিক শৃঙ্খল ভেঙে বিশ্বব্যাপী কোন বিপ্লব সংগঠিত করতে উদীপ্ত হবে।

মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই হচ্ছে মহানবী (সাঃ) এর মাধ্যমে ইসলামের আবির্ভাব যা প্রজ্বলিত এমন এক বৈপ্লবিক চেতনা দ্বারা যা আরব উপদ্বীপের সীমানা অতিক্রম করে রোম ও পারস্যের বিশাল শক্তিশালী সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূলে আঘাত হানতে শুরু করে, আর সেই সাথেই মানবজাতির একইসূত্রে (বিশ্বায়নের) প্রোথিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। অচিরেই তা এমন তীব্রতর রূপ ধারণ করে যে রোমের অধিকাংশ অঞ্চল ও পারস্যের সমগ্র অঞ্চল ইসলামী তুফানের পদতলে সমর্পিত হয় এবং স্পেন বিজয়ের (৭১১-৭৫০ খৃষ্টাব্দে) পরে যা সমগ্র ইউরোপের জন্য ত্রাস সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তৎকালীন বিশ্বের অর্ধেক ভূখণ্ডে একটি অভিন্ন চেতনা ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা কায়েমের সময় থেকেই আধুনিক যুগের সূচনা হয়। ইসলামী প্রেরণার আলোক ছটা ও সার্বজনীন চেতনার শক্তি এর আয়ত্ত্বাধীন ভূখণ্ডগুলোকে এবং এর অন্তর্বর্তী জনগনকে এক অভিন্ন আদর্শ ও মানদণ্ডের পতাকাতলে অঙ্গীভূত করে। আর এখান থেকেই শুরু হয় একটি আন্তর্জাতিক জীবনপদ্ধতির বা বিশ্বায়নের। তবে সেটা ছিল বিশ্বাসভিত্তিক আন্তর্জাতিকবাদ। আর পশ্চিমারা আজকে যে গ্লোবাল জীবন ব্যবস্থা কায়েমে সক্ষম হয়েছে তার মূল চেতনা বস্তুবাদী সেকুলার সাম্রাজ্যবাদ। আমরা এই যুগেই বসবাস করছি। আর আজ আমরা এই বস্তুবাদী গ্লোবাল গ্রামেরই বাসিন্দা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×