আমি রাজাকার কে ঘৃণা করি..... আমি ইসলাম কে সবার আগে ভালবাসি..... আমার দেশ সব কিছুর ওপরে..... ধর্ম পালন বোকাদের কাজ..... ধর্ম মানেই বর্বর..... আমার ধর্ম আমি পালন করব..... ধর্ম নিয়ে কিছু বললে ছাড় দেয়া হবে না..... বাংলা সংস্কৃতির গলা রোধ করা হচ্ছে..... সংস্কৃতি মুক্ত, রক্ষণশীলতা আদিমতা..... আমার বাংলা নাটক পছন্দ..... আমার হিন্দি..... আমার ইংরেজি..... আমার চাইনিজ, আমার জাপানি....................
তুমি ভারতের কুত্তা..... তুমি পাকির কুত্তা..... তুমি ইহুদি নাসারাদের দালাল ..... তুমি অন্ধকার যুগের.....
আমার নেতা মহান..... তোমার নেতা জঘন্য মানুষ..... আমার দলই দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়.....
এই ২০০০ সালের আগেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল এক চ্যানেল, অল্প কিছু পত্রিকা কেন্দ্রিক। নানা বর্ণের, নানা ভাষার সংস্কৃতি, জীবন দর্শন, ইতিহাস জানার মত এখনকার নেট, অসংখ্য চ্যানেল ছিল না।
মোটামুটি বলতে গেলে একমাত্র সঙ্গী ছিল বই। তাও এখনকার মত অত সহজলভ্য ছিল না।
মূল কথা সেই সময়ে শিক্ষার হার ছিল অনেক কম। তার ভেতরে বই এর প্রতি আগ্রহীদের সংখ্যা যে খুব ব্যাপক ছিল না, তা সহজেই অনুমেয়।
বলা যায়, সম্ভবত দেশীয় সংস্কৃতি আর ধর্মের সামঞ্জস্যে একটা মিশ্র চর্চা চলত সব খানেই। হয়ত কিছুটা আঞ্চলিক ভিন্নতা নিয়েই। দেশের মানুষের চিন্তার সমতায় খুব বড় রকমের পার্থক্য ছিল না।
ইন্টারনেট, মোবাইল, স্যাটেলাইট চ্যানেল আর মার্কেটিং এর এ যুগে একেক জন মানুষ ইচ্ছা অনিচ্ছায় ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে পছন্দ অপছন্দের তথ্যে সাথে পরিচিত হচ্ছে। একেক জনের মস্তিস্ক একেক ভাবে গড়ে উঠছে। ছোট ছোট মতের গোষ্ঠী গড়ে বাড়ছে। গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে চলছে রেষারেষি।
এদিকে সংস্কৃতির পরিবর্তনে ধারায় উন্নয়নশীল অর্থনীতির দোলায় বাড়ছে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির আবির্ভাব।
চাকরী মুখি শিক্ষা ব্যবস্থায় শুরু হয়েছে কে কত শিক্ষা গিলতে পারে সেই চর্চা। জানার চেষ্টা হয়েছে বাধা গ্রস্থ। ক্ষমতালোভী এক শ্রেণীর রাজনিতিক দের প্রভাবে অসুস্থ রাজনীতির চর্চা মানুষের এই আত্মকেন্দ্রিকতায় যুগিয়েছে পানি। তাদের দুর্নীতি পরায়ণ ব্যবস্থায় মামা- মামুর ব্যবহারে নব্য চাকরী প্রার্থীদের ও চাকরী প্রাপ্তদের মাঝে ও বুনছে দুর্নীতি পরায়নতার বীজ।
মনোবিজ্ঞানের টার্ম অনুযায়ী, যে যা বেশি দেখে, অবচেতনে তাতেই প্রভাবিত হয়।
সাধারণ মানুষ নিজ বাস্তব অভিজ্ঞতার বাহিরে কল্পনা করতে পারে না তেমন এ কারনে। হয়েছে তাই। যে যত টুকু সামনে পেয়েছে তাই গিলেছে। সমাজের আত্মকেন্দ্রিক সফলতার চর্চামুখি গতিতে হয়েছে প্রভাবিত। জীবনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে চোখে দেখা মোহে। স্বপ্ন দেখতে ও ভুলে গেছে। তলিয়ে দেখে, কেন???
ভ্রান্ত আত্মোপলব্ধির প্রতিযোগিতায় গড়ে উঠছে হাজার মত। সমমনাদের বন্ধুত্ত। নিজ মত ভিন্নতায় ধৈর্যহীন মনের হিংসাত্মক বিদ্বেষ।
এই সুযোগে নিজ স্বার্থে কোন জ্ঞানী গোষ্ঠী অপরিপক্ক সমাজকে নানা ভাবে করছে বিভ্রান্ত।
হয়ত কেও ভালর জন্য ও চেষ্টা করছেন মানুষের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও বিবেক কে জাগাতে।
আবার চুপ থাকা জ্ঞানীর কাজ ভেবে কোন জ্ঞানী চুপ করে আছেন।
লাভের লাভ হচ্ছে ওই ঘৃণ্য স্বার্থলোভী শ্রেণীর। বিশৃঙ্খলা চলছেই একই তালে।
এক্ষেত্রে কারা জ্ঞান পাপী, কারা জ্ঞানগুণী- বিচার করতে পারছি না আমরা। হচ্ছি বিভ্রান্ত। গোষ্ঠী গুলো আবার দাবি করছে তারা জানে।
একে অন্য কে দোষারোপ করে আবার মেতে উঠছে মাতাল বিশৃঙ্খলায়।
আবার নানা জন নানা দলে বিভক্ত হচ্ছি। কখন ও মাঝে মাঝে কিছু বলছি। কখন ও উগ্রভাবে। কখন ও শুধু মনে মনে কোন গোষ্ঠীর মত কে সমর্থন করে।
নিজ পছন্দের ধর্মের ধারা, সংস্কৃতির ধারা, দর্শনের ধারা অনুযায়ী চলছি নিজ নিজ পছন্দের মানুষ গুলোর সাথে।
এভাবে কি সত্যি ই মুক্তি মেলে????
বিশেষ দিন সম্পর্কে তেমন আগ্রহ খুঁজে পাই না।
তবু ও সবাই কে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
সবার ভবিষ্যৎ হোক সুন্দর ও নিরাপদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৮