মাটি কাটার কাজ বন্ধ, কোথাও কোনো কাজ নেই। পায়ের গোড়ালিতে সমস্যা বলে রিকসাও চালাতে পারিনা।তাই আমার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হয় পাথর ভাংগা, নয় মাটি কাটা।
এ কয়দিন কোথাও কোনো কাজ নেই, অবুঝ শিশুদুটো না খেয়ে আছে।ওদের চেহারা দেখলে বুকের মাঝে পাথর ভাংগার শব্দ হয়, কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যায়।বৃদ্ধা মায়ের নিষ্পলক চাহনি দেখলে বুকের ভিতর হাহাকার জাগে।
অতঃপর সুখবর এলো। আবার কাজ হবে। বিকেল গিয়ে কাজের জায়গা দেখে আসলাম। ভোর থেকে কাজ শুরু।
কিন্তু কাজের জায়গা দেখে আমার আর কাজে যেতে ইচ্ছা হলোনা। বউ জেদাজেদি করলো। মা, কঠোর হলো। কেন আমি কাজে যাবোনা? বাচ্ছা দুটোর ক্ষুধা বেড়েই চলছে।
মাকে বললাম, মাগো, নিজে সন্তান হয়ে তোমার কবরতো গো মা কুঁড়তে পারিনা। বলো ,মা কীভাবে তোমাকে জীবন্ত কবর দেই।
কেমন করে তোমার বুকের ওপর সন্তান হয়ে মাটি চাপা দেই।
যে স্তন্য পান করে মাগো বড় হয়েছি, সেখানে পাথর টুকে টুকে কেমন করে তোমার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেই , বলো মা।
আমার সন্তান না খেয়ে থাকুক, আমার বউ বস্ত্রহীন হোক, কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তোমার জীবন্ত কবরে মাটি চাপা দিতে পারি না গো মা।
মা বলেন, এসব কি বলিস।
বলি, মাগো, তুমিও আমার মা, আর যে নদীর পাড়ে আমার আজন্ম বেড়ে ওঠা সেই তিতাসও আমার মা। মাগো তুমি কি জানোনা , নদী হলো মা।
বলো মা, সে নদী মাতার বুকের মাঝ বরাবর কেমন করে মাটি চাপা দেই।
তুমি যখন ব্যথায় কষ্ট পাও সে আর্তনাদ শুনি , নদী মাতার নিঃশব্দ গোঙানি ও হয়গো মা। শুধু বিবেকের কান খাড়া করে শুনতে হয়।
© আরিফ
এবার লিংকটি দেখুন।