somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার সঞ্চয় - একটি অনুপ্রেরণাদায়ক ছোটগল্প

১১ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে বাবা আমার অফিসের শেষ কর্মদিবস শেষ করে বাসায় আসলেন। সেই চিরচেনা, প্রশান্তিময়, হাসিমাখা ,একজন বিজয়ী মানুষের মুখ।
কিন্তু আমাদের সবার মন খারাপ। খুব খারাপ, খুব বেশী খারাপ।বাবা যে আমাদের জন্য একেবারে কিছুই করলেন না। এতো বছর চাকুরি করে একেবারে শূণ্য হাতে বাবা ঘরে ফিরলেন।

ছোট বোন বললো-
বাবা, তোমার কি কোনো সন্চয় নেই? এখন আমাদের চলবে কেমন করে?

আরে তোদেরতো কিছুই বলিনি। যদি হেরে যাই। সেই ভয়ে আগে কিছু বলিনি। তাই মনে করলাম, যেদিন সত্যিকারের বিজয়ীর বেশে বাড়ী ফিরবো, সেদিনই তোদের আমার সব সন্চয় দেখাবো। আজ আমার বিজয়ের দিন। আজ আমার বড় আনন্দের দিন। আমার চেহারায় দেখতে পাচ্ছিস না, কি বিজয়ীর হাসি আমার মুখে লেগে আছে। আজকে আমি দিগবিজয়ী আলেকজান্ডার।তোদের বাবা আলেকজান্ডার।

সুদীর্ঘ চাকুরিজীবনের বিশাল সন্চয় দেখাবার জন্য আমাদের নিয়ে পরদিন বাবা বেড়িয়ে পড়লেন।

বাবা'র পরনে একটা ভালো শার্ট নেই। মুজা খুঁজতে গিয়ে দেখলাম মুজার কয়েকজায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। এতোদিন এসব খেয়াল করিনি। আজ বাবার সাথে যাবো। তাই সবকিছু মন দিয়ে দেখছি।
বাবা, প্যান্ট পড়লেন দেখলাম-খুব শক্ত করে কোমড়ে একটা গিট্টু দিলেন। কেমন ঢোলাডালা প্যান্ট।

বাবাকে বললাম, বাবা।
একি অবস্থা ! তোমার দেখি একটি ভালো শার্ট নেই, প্যান্ট নেই। মুজার কয়েক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে।

বাবা বলেন, বড় কোনো সন্চয় করতে হলে যে এরকমই হয়। একটু কৃপণতা না করলে কি এতোবড় সন্চয় করতে পারতাম। চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজকে তোদের আমার সব অর্জন দেখাবো।

এবার, অন্যরকমের এক আনন্দে আমাদের মন ভরে গেলো। যাক, বাবা হয়তো এতোদিন আমাদের কিছু বলেননি। আজকে বাবার অর্জিত সম্পদ দেখবো। দারুন ভালো লাগছে মনে।

অতঃপর নিয়ে গেলেন, ব্যাংকে । হাসিমুখে বাবার এ্যাকাউন্ট দেখালেন। আমার কৌতুহল বাড়তে লাগলো। কিন্তু এ আমি কি দেখলাম।
ব্যালেন্স যে কিছুই নেই , সব শুণ্য।

আমরা খুবই মন খারাপ করে বাড়ী ফিরলাম।
বাবার মুখে কিন্তু সেই আগের মতো বিজয়ীর হাসি।

বাবা, বললেন , দেখলি- সুদীর্ঘ ৩৪ বছরের চাকুরি জীবনে কত বিশাল বড় সন্চয় করেছি।

আমি বললাম- বাবা, ব্যাংকে কিছুই নেই, গ্রামের সেই পুরানো বাড়ি, কোনো গাড়ি নেই। সেই রিকসায় চড়া। তোমার একটা ভালো জামা নেই। তোমার জুতোর রঙ দেখে বুঝা যায়না, এটা একসময় কালো ছিলো। এই হলো তোমার বিশাল সন্চয়। মাথা খারাপ হলো তোমার?আর খালেক চাচাকে দেখো, ঠিক তোমার মতো চাকুরি করলেন।ঢাকা শহরে বাড়ি, দামী গাড়ি। শপিং মলে নিজস্ব দোকান। এখন বলো -কারটা সন্চয়, তোমারটা না কি খালেক চাচার টা? আর ব্যাংকে শুন্য সন্চয় নিয়ে তুমি নিজেকে আলেকজান্ডার ভাবছো, বাবা?

বাবা, বললেন- ৩৪ বছর শুধু বেতনের টাকায় সংসার চালিয়ে কোনো সম্পদের মোহে আর লোভে না পড়ে এই যে এতটুকু পথ পাড়ি দিলাম-নিজের বিবেকের ঘরে এর চেয়ে বড় সন্চয় আর কী হতে পারে?

দারিদ্রের টানাপোড়নে প্রতিনিয়ত জর্জরিত হয়েছি, কিন্তু লোভ আর অসততার সাথে এতটুকু আপোষ করিনি , এর চেয়ে বড় বিজয় আর কি হতে পারে?

তোদেরকে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় নিজের পায়ে দাঁড় করাতে শিখেয়েছি, এর চেয়ে বড় সাফল্য আর অর্জন কি হতে পারে?

আর আমি জানি, আমার বেতনের টাকা কতটুকু । সেই হিসাবে কেউ যদি এ টাকা থেকেই গাড়ী , বাড়ি এসব কিছু করে ফেলে, তবে আমি বলবো-
সেটা সন্চয় নারে, সেটা হলো হলো জীবনের সবচেয়ে বড় সংশয় ।

ফেসবুকেও পড়তে পারেন
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:০৬
৩৮টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×