গণিতের যুবরাজ- রামানুজন কোনো রকমে কষ্ট করে ১৯০৩ সালে টেনেটুনে মেট্রিক পাশ করলেও কলেজ আর উর্ত্তীর্ণ হতে পারেন নি। পরীক্ষায় ফেলে করেছিলেন- তাও গণিতে। পরবর্তীকালে এই রামানুজন সারা জীবনে প্রায় ৪০০০ অঙ্কের ফরমুলা-থিওরেম আর কনজেকচার (অনুমান) আবিষ্কার করেন। শুধু তাই না গণিতের মতো রুক্ষ একটা বিষয়কে একেবারে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান। তাঁর পরিবার এতো বেশী দরিদ্র ছিলো- কাগজ কিনে অঙ্ক কষার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিলোনা। তাই, কুড়িয়ে পাওয়া কাগজে, ধার করে চেয়ে নেয়া কাগজে তিনি অঙ্ক কষতেন। অঙ্কের নিত্য নতুন সূত্র আবিষ্কার করা তাঁর জীবনে নেশার মতো হয়ে ওঠেছিলো।
রামানুজন-এর আবিষ্কার আজ ব্যাবহৃত হচ্ছে কম্পুটার প্রোগ্রামিং-এ, ইন্টারনেট সিকিউরিটিতে। রামানুজনের কাজের ওপর ভিত্তি করে ‘অ্যাবেল প্রাইজ" দেয়া হয়। (অঙ্কে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয় না। ‘অ্যাবেল’ প্রাইজকেই পৃথিবীতে অঙ্কের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে ধরে নেওয়া হয়) ১৯১৮ সালে রামানুজন রয়্যাল সোসাইটি অফ লন্ডন’ র ফেলো নির্বাচিত হন।
আমেরিকার মহাকাশবিজ্ঞানী ও লেখক, ক্লিফোর্ড স্তোল একবার মন্তব্য করেছিলেন, সুরের ভুবনে যেমন মোজার্ট, পদার্থবিদ্যাতে আইনস্টাইন, অঙ্কের আঙ্গিনাতে তেমনি রামানুজন। রামানুজনের জীবনকে নিয়ে প্র্রায় ৪০০ পাতার যে বইটা রবার্ট ক্যানিগেল লিখেছিলেন তা হল ‘দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’। বাংলা করলে যা দাঁড়ায়,- সেই মানুষটা, যিনি অসীমকে জেনেছিলেন। হয়তো সেইজন্যেই গণিতের এই মহান রাজপুত্র মাত্র ৩৩ বছরে বয়সে অসীমের পথে পাড়ি জমান। প্রায় ৪০০০ এর বেশী অঙ্কের সূত্র যিনি পৃথিবীবাসীকে দিয়ে গেলেন-সেই রামানুজন একবার বলেছিলেন-
"তাঁর কাছে একটা অঙ্কের সমীকরণের কোন মুল্য নেই যদি না তা কোন ঈশ্বর ভাবনার প্রকাশ না ঘটায়।"
আহা! এই মানুষটি এতো সংক্ষিপ্ত জীবন না পেয়ে যদি আরো কিছুদিন পৃথিবীতে থাকতেন- তাহলে হয়তো আরো কত অজানা আবিষ্কার এই পৃথিবীবাসীকে উপহার দিয়ে যেতে পারতেন। মাত্র ৩৩ বছরে আপনি চলে গেলেন ,কিন্তু আপনার গণিত বিশ্বজোড়া পৃথিবীর পাঠশালায় অমর হয়ে থাকবে।
(এই লেখার অনেকাংশই বেদদ্যুতি চক্রবর্তী'র আর্টিকেল থেকে নেয়া হয়েছে।)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৬