ঈদের নামাজ পড়িনি, দু রাকাত নফল নামাজ পড়েছি
এবারের মতো এতো নির্মল, প্রশান্তিময় , সুস্থির রমজান এর আগে জীবনে কখনো পালন করিনি। ঘরের থাকার এমন অপূর্ব সুযোগ এর আগে এমনিভাবে ধরা দেয়নি। চারদিকে ছিলো এক আত্মিক শান্তির পরশ। তাড়াহুড়া ছিলোনা, হুড়োহুড়ি ছিলোনা। চারদিকে অনৈতিক, অনৈসলামিক ইফতারি পার্টিগুলোর দৌরাত্ম্য ছিলোনা। ইফতার পার্টিতে ভাষককে মিথ্যা ভাষণ দিতে হয়নি, মানুষকে মিথ্যা কথা শুনতে হয়নি, হুজুরকে মিথ্যা দোয়া করতে হয়নি, ইফতারি প্যাকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়নি, অপচয়ের মহামারি হয়নি।
নিবিড় শান্তিময় পরিবেশে অগনিত মানুষ পরিবারের সাথে নামাজ, তারাবি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ঘরের একটা রুমকে মসজিদ বানিয়ে পিতা ইমাম হয়েছেন। সন্তান-স্ত্রী ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে -এক আধ্যাত্মিক বন্ধন তৈরি করেছেন। বাহিরের ব্যস্ততা না থাকায়- অনেকেই মরচে পড়া নিজের পাঠাভ্যাসকে আরেকটু শানিত করার সুযোগ পেয়েছেন।
ইট-পাথর, কংক্রিটের মসজিদেতো যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। করেও। সুদখোর, ঘুষখোর, চোর , ডাকাত এমনকি গরু, ছাগলও মসজিদের আঙ্গিনায় প্রবেশ করে। কিন্তু নামাজের ভিতর খুব কম মানুষই প্রবেশ করতে পেরেছে। মানুষ নিজে কত অসহায়। সেটা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরে-এবার অগণিত মানুষ মনের তাগিদেই সত্যিকারের নামাজের ভিতর প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে।
ঈদ মানে শুধু ছয় তাকবিরের সাথে দুরাকাত নামাজ পড়াই নয়। ঈদের সাথ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলোও দারুনভাবে জড়িত। ময়দানে একজনের সাথে আরেকজনকে নিবিড়ভাবে দাঁড়াতে হবে, বিশুদ্ধ হৃদয়ে নামাজের পর একজন আরেকজনের সাথে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করতে হবে, যে পথে নামাজে গিয়েছেন, সে পথে না ফিরে আত্মীয় পরিজনের সাথে দেখা করে ফিরতে হবে। যার যতটুকু সামর্থ্য সে অনুযায়ি সবার সাথে বসে আহার, প্রাশন করতে হবে। এগুলোর কোনো কিছুই যখন হলোনা -তখন শুধু স্পেশ মেনটেন করে দুরাকাত ঈদের নামাজ পড়ার জন্য মনটা টানেনি।
৫.৩৪ মিলিয়ন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই কয়দিন আগেও যারা পৃথিবী থেকে ঠিক আমার মতো, আপনার মতো বেঁচেছিলেন। জীবনের কত স্বপ্ন দেখেছিলেন। অগনিত মানুষ ঠিক এই মুহুর্তে কেউ আইসিইউতে, কেউ ভেণ্টিলেটরে, কেউ ডাক্তার না পাওয়ার অসহায়ত্ব নিয়ে প্রতি মুহুর্ত পার করছেন। রাব্বুল আলামীন তার রহমতের বদৌলতে নিজেকে যে এদের একজন করেননি- তার সেই অফুরন্ত নেয়ামতের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতায় ঈদের জামাতে যেহেতু ঈদের মতো করে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারিনি , তাই ঘরে থেকেই দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি।
জানিনা, ভুল করেছি না শুদ্ধ করেছি। যদি ভুল করে থাকি- দয়াবান, ক্ষমাশীল আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২০ রাত ২:৫৮