এক)পূর্বসূরিরা দিয়ে গেছে। নিজে দিচ্ছেন। ষাট/সত্তর/আশি বছর ধরে একজন নাগরিক যে রাষ্ট্রকে শ্রম দেয়,ট্যাক্স দেয় ,খাজনা দেয়। সে রাষ্ট্র মাত্র তিনমাস তার নাগরিককে ভরণ পোষন করতে পারেনা। এটা দুনিয়ার সব রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা।
দুই ) বিশ লক্ষ মানুষ আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ সকাল পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ বারো হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। আমেরিকার মতো এতো উন্নত দেশে এমন মহামারীর একমাত্র কারণ হলো- প্রশাসনিক নজিরবিহীন ব্যর্থতা।
তিন) কিন্তু এতো ব্যর্থতার পরও মানুষের অন্ধ অনুকরণ সহজে দুর হয়না। ফলে, জর্জিয়ার প্রাইমারীতে বাংলাদেশি সব ডেমোক্রেট প্রার্থীরা হেরেছেন। দুঃখ পেয়েছি।
চার) কাজের যদি সঠিক সমন্বয় না থাকে তবে অর্থেরও অপচয় হয়। প্রাণেরও ক্ষয় হয়। এ্যভারেজ প্রতি জনের জন্য $১২০০ ডলার করে দেয়ার পরও মানুষ ঘরে থাকেনি। বেসিক ব্যয় নির্বাহ করেছে ঠিক, কিন্তু বেশিরভাগই সৈকতে গিয়েছে- বিলাসপণ্য কিনতে গিয়ে-ইচ্ছেমতো ঘুরাফিরা করে রোগ ছড়িয়েছে। সরকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। জনগন রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
পাঁচ) হুজুরের ওয়াজ, পাদ্রীর প্রিচিং কিংবা গরমে ভাইরাস মরে যাবে, ঠান্ডায় ভাইরাস নরম হবে-ইত্যাদি কথার বাইরে সত্যিকারভাবে যারা ভায়োরলজি নিয়ে কাজ করেন-তারা বলেছেন-ভ্যাকসিন বের হতে তিন চার বছরের ও বেশী সময় লাগতে পারে। তাই, ভ্যাকসিন মানুষকে বাঁচাবেনা। সিস্টেমই মানুষকে বাঁচাবে।
ছয়) ওদের কথা সত্যি হয়েছে। বাংলাদেশে যেমন ভ্যাকসিন নেই, আমেরিকায়ও নেই, নিউজিলান্ডেও নেই, ভিয়েতনামেও নেই। কিন্তু শুধুমাত্র সঠিক সিস্টেমের কারণেই নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশ আর ভিয়েতনামের মতো উন্নয়নশীল দেশ মহামারি থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে।
সাত) নিউজিলাণ্ডে দেখুন, করোনা থেকে বাঁচতে মন্দিরে পুজাও হয়নি, মসজিদে প্রার্থণা/দোয়াও হয়নি। কেউ গলায় তাবিজও পরেনি, কেউ আঙ্গুলে পাথরও ধারণ করেনি, ভ্যাকসিনও বের হয়নি। কিন্তু সঠিক কার্যপ্রণালি অনুসরণের কারণে নিউজিলান্ড এখন করোনামুক্ত দেশ। নিউজিলান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- করোনায় মারা যাওয়ার চেয়ে সুচিকিৎসার অভাব আর সঠিক কার্যপ্রণালীর অভাবই মানুষকে মেরে ফেলবে।
আট) আপনি যদি শুনেন কেউ অসুস্থ হয়েছে। এতে সবাই দোয়া কামনা করে। আমরা বলি- রোগীর আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করছি। দোয়ার শক্তি অস্বীকার করার উপায় নেই। "পাওয়ার অব প্রেয়ার" নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারি আছে। অনেক বই লেখা আছে। কিন্তু কেউ যদি থানায় ফোন করে বলে- আমার ঘরে ডাকাত হানা দিয়েছে। সাহায্য করুন। তখন থানা থেকে পুলিশ ফোর্স সাথে সাথে পাঠিয়ে না দিয়ে যদি বলে- চিন্তা করবেন না- আমাদের প্রার্থণা আপনার সাথে আছে। তাহলে কাজ হবেনা। ওয়েল সেইডের চেয়ে ওয়েল ডানের গুরুত্ব সবসময় বেশী।
নয়) ফার্মেসি, হাসপাতাল, রোগী, ডাক্তার, মোড়ে মোড়ে ল্যাব থাকার নাম মুনাফাব্যবস্থা "চিকিৎসাব্যবস্থা" না। চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ব্যাপার।
দশ) সুরা নজমে চমৎকার একটা কথা আছে। সেটা হলো- "মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে " (৩৯)। একথা বলা হয়নি- মানুষ যা দোয়া করে-তাই সে পায়। মানুষ বলতে শুধু মুসলমানকেও বুঝানো হয়নি। একেবারে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- সব মানুষের কথা। এই মানুষ ইহুদি হোক, খৃষ্টান হোক, হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, নাস্তিক হোক , আস্তিক হোক।- মসজিদ ওসমানে এইরকম কথাগুলো বলেছিলেন-একজন ইসলামিক স্কলার। সম্ভবত মিশরে উনার বাড়ি। উনার নামটি ভুলে যাওয়ায় খুব আফসোস হচ্ছে। অত্যন্ত ছোট বাক্যে এমন শক্তিশালী এবং অর্থবহ কথা কোরআনে আমরা তোতা পাখির মতো পড়েছি। কিন্তু অনুসরণ করিনি। নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম করেছে- ওরা ফল পেয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:০৮