somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়না ভারত যুদ্ধ এবং অন্যান্য

২২ শে জুন, ২০২০ সকাল ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক) চায়না, স্বর্গ -নরক বিশ্বাস না করলেও যুদ্ধের ক্ষেত্রে বলেছে- ভারতের বিশজনকে নরকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বেশী বাড়াবাড়ি করলে মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় চায়না ভারত দখলের ক্ষমতা রাখে। আর ভারত বলেছে- এই যুদ্ধে ভারতের বিশজন শহীদ হয়েছেন আর চায়নার ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে সবসময় নিজের দেশের লোকেরা শহীদ হয় আর অন্য দেশের লোকেরা নিহত হয়। নিজের দেশের সৈন্য মারা গেলে স্বর্গে যায়। অন্য দেশের নরকে যায়। এই বিশ্বাসের ট্রাপে মানুষের ইমোশনকে বন্দী করে সমরনায়করা যুদ্ধ বাঁধান।

ভারত-চায়নার হাতাহাতি যুদ্ধের পর- ভারতে তর্জন হচ্ছে, গর্জন হচ্ছে, ডেমোনেস্ট্রাশন হচ্ছে। "চায়না পণ্য বয়কট করো" -স্টিকার কপালে লাগিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যে শ্লোগানগুলো হচ্ছে- সে স্টিকারগুলো চায়না তৈরি করে ভারতে সাপ্লাই দিচ্ছে। কিমকে জিং ভেবে কিমের কুশুতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে- ভারতবাসী। মানুষ যখন এসব কাজ করে- তখন সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ওরা করে নিজ দেশটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। শশী থারোর বলেছেন- উন্মাদনা আর দেশপ্রেম এক নয়। ভালোবাসতে গিয়ে যেন নিজ দেশের অকল্যাণ না হয়। অন্য দেশের সাথে যুদ্ধের প্রতিবাদে নিজ দেশের মাল সম্পদ নষ্ট করলে নিজ দেশেরই ক্ষতি হয়।

জাপানে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপের পরও কেন জাপানের রাস্তায় আমেরিকার বিরুদ্ধে কোন শ্লোগান হয়নি, ভাঙ্গচুর হয়নি- আমেরিকা মুর্দাবাদ বলে শ্লোগান হয়নি। এক আমেরিকান এই প্রশ্নটি এক জাপানীকে করলে- জাপানী জবাব দেয়- শ্লোগান আর প্রতিবাদ করে -রায়ট করে নিজ দেশের সম্পদ ভাঙ্গচুর করলেই শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভ করা যায়না। বরং এটা হলো- শত্রু মোকাবিলা করার সবচেয়ে দূর্বল দিক এবং বোকামি। এই বোকামিটা তারাই করে যারা আদতে কিছু করার ক্ষমতা রাখেনা। লক্ষ লক্ষ আমেরিকান মানুষ দৈনন্দিন কাজে যাওয়ার জন্য যে গাড়ীগুলো ব্যবহার করে সেই টয়োটা, হোন্ডা, নিশান ছাড়াও আজকে হোয়াইট হাউসের ভিতরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফোন করার জন্য যে ফোনটি ব্যবহার করেন- সেই প্যানোসনিক টেলিফোন আর খবর দেখার জন্য যে টেলিভিশনে চোখ রাখেন সেই সনি ব্রাণ্ডের টেলিভিশন- জাপানের তৈরি। আমেরিকার বোমার বিরুদ্ধে এটাই আমাদের ভিক্টোরি- এটাই আমাদের রিটালিয়েশন।

দুই) আর্মেনিয়া -আজারবাইজান, রাশিয়া-ইউক্রেন, কম্বোডিয়া-থাইল্যাণ্ড, সিরিয়া-তুরস্ক, ইসরাইল, সৌদি, লেবানন, মরক্কো-স্পেন, সুদান সহ প্রায় ৪৪ দেশের মাঝে এই মুহুর্তে সংঘাত, সংঘর্ষ চলছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও নেপাল -ভারতে কনফ্লিক্ট হয়। মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও আফগানিস্তান- পাকিস্তান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘার্ষ হয়। একই ভাষার - একই এথনিক গোষ্টীর মানুষ হওয়ার পরও নর্থ-কোরিয়া- সাউথ কোরিয়ায় যুদ্ধ উন্মাদনা শেষ হয়না । খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও পোলাণ্ড আর চেক রিপাবলিকের বৈরিতা কবে শেষ হবে -কেউ জানেনা। একই বর্ণের হওয়ার পর ইরিত্রিয়া-ইথোপিয়ায় যুদ্ধ বাঁধে। তাই, শুধু ধর্মের জন্যও না, ভাষার জন্যও না, জাতীয়তার জন্যও না, বর্ণের জন্যও না। যুদ্ধ হয় কেবলি মাত্র নিজস্ব ক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখার জন্য। লোভের জন্য। স্বার্থের জন্য।

যুদ্ধ মানেই মৃত্যু। যুদ্ধ মানেই হয় ক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখা না হয় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করা। কোনো এক মনীষী যেমন বলেছিলেন- যুদ্ধের পর শান্তিচুক্তি হয়- শান্তিচুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রনায়কদের মাঝে করমর্দন হয়, সেনাপতির ড্রেসে গৌরবের নতুন ব্যাজ যুক্ত হয়। ছবি হয়, খবর হয়। আর এসবের বাইরে- দুই বর্ডারের দুই পাশে কোনো এক বৃদ্ধ অসহায় বাবা, কোনো এক দুঃখি মা তার সন্তানের জন্য, কোনো এক হতভাগী গৃহবধু তার স্বামীর জন্য আর পৃথিবীর কোনো কিছু বুঝতে না শিখা এক অবুঝ শিশু তার পিতার আদরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সেই পিতা কখনো লাশের কফিনের ভিতরে ফিরে- আবার কখনো তার আর ফিরা হয়না। স্বজনহারা দুঃখী মানুষের এই খবরও আর কেউ রাখেনা। যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রনায়কদের সন্তানেরা ফ্রন্ট সোলজার হয়ে যুদ্ধের ময়দানে যাবেনা, কফিনের ভিতর লাশ হয়ে ফিরবেনা। ততদিন পর্যন্ত যুদ্ধ উন্মাদনাও বন্ধ হবেনা।




সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×