somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রমিজ মিয়া

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমিজ মিয়া। চাকুরিজীবী, সৎ, সাংসারিক মানুষ। বেতনের টাকায় কোনো রকমে সংসার চালিয়ে প্রতিমাসে কিছু জমা করার চেষ্টা করেন। কোনো মাসে জমা হয়। কোনো মাসে হয়না। ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছে। দায় অনেক। দায়িত্ব অনেক। গত এক বছরের জমানো টাকা দিয়ে ছেলেকে একটা ভালো মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছেন। কম্পিউটার কিনে দেয়ার সাধ্য নেই। ফোনে ছেলে অনলাইনে ক্লাস করে। ছোট মেয়েরও ক্লাস অনলাইনে হয়। কিন্তু রমিজ মিয়ার দুজন কে দুটো ফোন কিনে দেয়ার সামর্থ্য নেই। বাপ জড়তা অনুভব করেন। শেষ কবে স্ত্রীকে নতুন শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন- মনে পড়েনা। জুতোর তলি ক্ষয় হয়ে গেছে। বউ নতুন জুতো কেনার কথা বললে- রমিজ মিয়া বলেন- পুরোনো জুতোয় পায়ে আরাম পাওয়া যায়। ঘরে বসে স্বামী-স্ত্রী নানা হিসাব করেন। রমিজ মিয়া কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার আগে দৈনন্দিন বাজারে যান। শিং মাছের দাম জিজ্ঞাসা করে পুঁটি মাছ কিনে ঘরে ফিরেন।

রমিজ মিয়ার সংসার এভাবেই চলছে। বড় কোনো স্বপ্ন নাই। শুধু ছেলে মেয়েকে ভালো মানুষ করা ছাড়া। রমিজ মিয়া কাজ শেষ করে- বাসের অপেক্ষায় আছেন। হঠাৎ কি যেন হলো। রমিজ মিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। আশেপাশের মানুষজন ছুটে এলো। ছেলের মোবাইল অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো। কয়েক ঘন্টা পর - রমিজ মিয়া সরকারী হাসপাতালের এক অন্ধকার বারান্দায় চোখ খুলে বুঝলেন-তিনি বেঁচে আছেন।


ডাক্তাররা জানালেন- রমিজ মিয়ার শরীরে বেশ কয়েকটি কলকব্জা ঠিক নাই। সরকারী হাসপাতালের ভয়াল অবস্থা। হাসপাতালেরই চিকিৎসা দরকার। প্রাইভেট হাসপাতালের নাম শুনেই রমিজ মিয়া আতঙকিত। তিনি বুঝতে পারলেন ভাগ্য চক্রে তার বেঁচে থাকাটা আসলে নিদারুণ দূর্ভাগ্য। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে বদ্ধ পানি যেমন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। রমিজ মিয়ার সেই অবস্থা হলো। নানা রকমের টেস্ট, এমআরআই, সিটিস্ক্যান, প্রাইভেট হাসপাতালের কয়েক সপ্তাহের বিল দিতে গিয়েই- রমিজ মিয়ার এতো বছরের জমানো টাকা সব শেষ। এখনো আসল চিকিৎসাই শুরু হয়নি। জমা টাকা গেছে। ছেলের মোবাইল ফোন গেছে। ঘরে নামে মাত্র যে ফার্নিচার ছিলো তাও গেছে। সোনার দোকানে বউয়ের যাওয়া আসা শুরু হয়েছে। ধার দেনার জন্য ছেলে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে কোনো কুলকিনারা করতে পারছেনা। জীবন বুঝার আগেই তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব চলে এসেছে। মায়ের সাথে পরামর্শ করে- বাপকে বাঁচাতে যদি ভিটে বিক্রি করে দিয়ে গৃহহীন হতে হয়। তাও হতে হবে। জীবন বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে নতুন ঘর বানানো যাবে। কিন্তু বাপ চলে গেলে আর বাপ পাওয়া যাবেনা।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে রমিজ মিয়া ভাবছেন- তিনি কোনো জুয়াও খেলেননি, শেয়ার মার্কেটেও যান নি, বিদেশে যাওয়ার জন্য সবকিছু খুইয়েও বসেন নি, নদীতে তার ভিটেবাড়িও বিলীন হয়নি, রাতারাতি ধনী হওয়ার বাসনায় কোনো ব্যবসা শুরু করে লসও করেন নি। সারাজীবন ধরে চাকুরি করে গেছেন। সৎ থেকেছেন। এটা হয়তো দেশ সেবা না। দেশ সেবা কি জিনিস সেটাও তিনি ভালো করে বুঝেন না। যারা রাজনীতি করে -তারাইতো দেশের সেবা করে। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় বহনের কারণে একটা সংসার যে একমাসের মাথায় পথে নেমে যায়। দেশ সেবকরা এ কেমন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি করলেন। তিনি কাকে দোষ দিবেন। নিজের ভাগ্যকে ছাড়া। কে ক্ষমতায় আছে, কে ক্ষমতা থেকে চলে গেছে-এটাও তার মাথাব্যথা না। রমিজ মিয়া শুধু বুঝতে চান- যে দেশে একটা রোগই একটা পরিবারকে এভাবে পথের ভিখারি বানিয়ে দেয়। এ কেমন দেশ হলো। এ কেমন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি হলো।


এই শহরে প্রতিদিন এরকম কত শত রমিজ মিয়ারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢুকছেন আর বেঁচে থাকলে একেবারে পথের ভিখারী হয়ে বের হচ্ছেন। সে সব খবর এখন আর কেউ রাখেনা। এইসব সাধারণ খবর কাউকে আর স্পর্শও করেনা। এই সাদামাটা গল্পগুলো ভাইরালও হয়না। কারণ এই গল্পগুলো বড় সাধারণ। এই গল্প গুলো বড় কমন। নিত্যদিনের ঘটনা। মানুষের আগ্রহ সবসময় আনকমন জিনিসের প্রতি। কোন মেয়ে বাইকে চড়ে বরের বাড়ি গিয়েছে- কে পানিতে ডুবে গায়ে হলুদ মেখেছে- কে ন্যাংটি পড়ে রবীন্দ্র নৃত্য দিয়েছে- কে চুল লাল নীল করেছে। এসবের প্রতিই মানুষের আগ্রহ। রমিজ মিয়াদের এইসব জীবন নিয়ে কারো আগ্রহ আর নাই। মাথার উপর ঘড়ঘড় করে ফ্যান ঘুরছে। রমিজ মিয়া একবার ফ্যানের দিকে তাকান। আরেকবার দশতলা হাসপাতাল ভবনের জানালার দিকে চেয়ে নীচের দিকে তাকান। খুব দ্রুত তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সন্তানদের জন্য তার শেষ ভিটে টুকু অন্তত বাঁচাতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×