somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনীয়তা

১৭ ই মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিরা মানে রাজাকার,আলবদর বা আলশামস যাদের আমরা সভ্য ভাষায় যুদ্ধপরাধী বলি তাদের বিচার এখন এক বার্নিং ইস্যু। এদের বিচার হবে কি হবেনা হওয়া উচিত কি উচিত না তা নিয়ে চলছে বিস্তর বিতর্ক।যা আমার চোখে সময়ের অপব্যাবহার।এই সময়ে পড়া হল ইবুক "ফিরে দেখা ৭১"।বেশী দিন হয়নি ব্লগজগতে এসেছি।তাই বইটা পড়তে পড়তে মনে হল এক বার সামুতে এক ব্লগার কিখেছিলেন,

"যুদ্ধপরাধের নামে এইসব বুড়ো মানুষদের শুধু শুধু হেনস্থা করার কোন মানে হয়না"

তিনি আরও বলেন এক আওয়ামি নেতার আত্মীয়ের কথা যিনি রাজাকার।সুতরাং তার বিচার হবেনা।কিন্তু এই প্রজাতির মানুষেরা ভুলে যান মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দলের অবদান থাকলেও মুক্তিসংগ্রাম আওয়ামীলিগের সম্পত্তি নয়।তাই আত্মীয় তত্ব এখানে খাটবেনা।এধরনের কথা প্রচারের অর্থ মানুষকে বিভ্রান্ত করা ব্যাতীত আর কিছু নয়।আর জার্মানীর ন্যুরেমবার্গে যেখানে ৯৬ বছরের যুদ্ধপরাধীদের বিচার হচ্ছে সেখানে ১৯৭১ এ দেশে নিজ দেশ নিজ মানুষের বিরুদ্ধে সত্যের বিরুদ্ধে দাড়ানো হায়েনাদের বিচার হবেনা সেটা কি করে হয়??তাছাড়া এই বিচার না হলে জাতি হিসেবে আমাদের বিভক্তি বা দায়মুক্তি কোনটাই ঘটবেনা।একটি চক্রের মাঝে আটকা পড়ে যাব আমরা।তাই "ফিরে দেখা ৭১"এর বিভিন্ন অংশের সাহায্যে আমি বলব আমার মতে যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা সময়ের দাবী যা আমরা নানা কারণে শুনিনাই বা শুনলেও কর্ণপাত করিনাই।
প্রথমেই যুদ্ধপরাধ কি?


"War crimes are "violations of the laws or customs of war"; including "murder, the ill-treatment or deportation of civilian residents of an occupied territory to slave labor camps", "the murder or ill-treatment of prisoners of war", the killing of hostages, "the wanton destruction of cities, towns and villages, and any devastation not justified by military, or civilian necessity"."



আর এসব কির্তী যারা করে তারা হল যুদ্ধপরাধী।উপরে লেখা উইকিপিডিয়াসুত্রে পাওয়া সংজ্ঞানুযায়ী '৭১ এর পাকিস্তানী সেনা আর তাদের এদেশী্য দোসরেরা তাই যুদ্ধপরাধী এবং তাই তাদের বিচার হতে হবে সত্যকে আর ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার জন্য।
প্রথমেই অনেকেই বলে ৭১ এ এত মানুষ মারা যায়নাই।কিছু মানুষ মারা যায় তাদের অধিকাংশ রাজাকার যা পুরা ভাঁওতাবাজি।এপ্রসংগে একটি শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় মাহবুবুর রহমানের বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭ -৭১ এ দেখা যায় ৬৯এ বাংলার জনসংখ্যা ৬৯৮ লাখ।১৯৭৪ এ তা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আনুসারে ৮০১ লাখ হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবে ছিল প্রায় ৭৪৬ লাখ যা প্রায় ৩৭ লাখ কম। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে ৩০লাখ মানুষের মৃত্যু অতি বাস্তব সম্মত।
একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর রাজকার ও আলবদরেরা যে পরিমান গণহত্যা চালায় তা কোন এক পোস্টে বলা সম্ভব না তাই আমরা কয়েকটা গণহত্যা সম্পর্কে বলব আর বোঝার চেষ্টা করব পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য মানবহত্যার ব্যাপকতা :
ঢাকার গণহত্যা:
২৫ শে মার্চ থেকে মূলত গণহত্যার কালরাত শুরু হয়।হানাদারেরা এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকদের বাসভবন ঘেড়াও করে।তারা জোতির্ময়গুহঠাকুরতা,ডঃমুনিরুজ্জামান,তার দুই আত্মীয় ওএক প্রতিবেশী যুবককে নিয়ে গুলি করে।জোতির্ময়গুহঠাকুরতা বেঁচে থাকলেও বিনা চিকিতসায় তার মৃত্যু হয়।
ইকবাল হলে গণহত্যা:
হানাদারেরা কামানা,রকেট লান্চার,মর্টার নিয়ে ইকবাল হলে আক্রমণ করে। সকাল বেলা গোলাগুলি থামে ।ইকবাল হলে পড়ে থাকে এক স্তুপ লাশ।অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দেয়াল টপকে হলে আশ্রয় নেয় যাদের অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করে হানাদারদের গুলিতে।
জগন্নাথ হলেও চলে গণ হত্যা। মূলত তৎকালীন সকল আন্দোলনের সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর হানাদারদের ছিল প্রচন্ড ক্ষোভ। তাই তারা সব আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হলে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।রুমেরুমে তল্লাশি চালায়।কাউকে বেদম মারধোর করে বা কাউকে শুরুতেই ব্রাস্টফায়ার করে নির্মম ভাবে মেরে ফেলা হয়।গণহত্যার সুবিধার জন্য হলের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।হলের ২৯ নং কক্ষে বাস করত সুনিল ও হরিহর দাস।সেদিন ছিল আরেক অতিথি।তাদের তিনজনকে রুমেই ব্রাস্টফায়ার করা হয়।শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য রুমে গ্রেনেড চার্জ করা হয়।আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যান হরিহর।২৭ তারিখ (মার্চ) কারফিউ তুলে দিলে এক দোকানী তাকে মেডিকেলে দিয়ে আসে।২৬ তারিখ হানাদারেরা ৫ জন মানুষকে দিয়ে হলের রুম থেকে লাশ সরায়।তাদের দিয়ে মাঠে বিশাল গর্ত খুড়ে লাশ চাপা দেয়।তারপর তাদেরও গুলি করে হত্যা করে।শহীড মিনারের পাছনে বধ্য ভুমিতে বেড়িয়ে রয় মানুষের হাত ও পায়ের আঙুল।২৬শে মার্চ সকালে তারা হাউস টিউটর অনুচ্ছেপায়ন ভট্টাচার্য,বিধান রায় কে নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলে।পুরো হল থেকে বেড়োতে থাকে মৃত মানুষের অশরীরী গন্ধ।দেয়ালে চাপা চাপা রক্তের দাগ। বাতাসে মানুষের আহাজারি,বারুদের গন্ধ- ঢাকা হয়ে যায় প্রেতপুরী।এমনকি রোকেয়া ছাত্রীহলেও হামলা চালায় হায়েনারা।অসংখ্য ছাত্রীরা ছাদ থেকে লাফ দেয় আব্রু রক্ষার্থে। এক রাতেই হানাদারদের হাতে মারা পড়ে প্রায় ১ লাখ মানুষ।[১]

জিন্জিরা হত্যাকান্ড:
২রা এপ্রিল সকালে নরপশু ব্রিগেডিয়ার বশীরের নেতৃত্বে কালিন্দি,শুভাড্যা, জিন্জিরায় চলে গণহত্যা।গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়।প্রতিটি মা বোন ধর্ষিত হয়।শহর থকে আসা মানুষেরা মারা যায়।রাস্তায় পড়ে থাকে অগণিত মানুষের লাশ।নদীতে ভাসে লাশ।মান্দাইল ডাকের সড়কের সামনে নরপশুরা হত্যা করে একসাথে ৬০ জন মানুষকে।কালিন্দীর এক বাড়িতে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় এগারো মা-বোনকে।[১]


একাত্তরে নারী নির্যাতন:
একাত্তরে নারীর উপর চলে নির্যাতন।পৃথিবীতে এমন নির্যাতনের ঘটনা বিরল।আমি ভালো লিখতে পারনা।তাই সাহায্য নিলাম সামুর ব্লগার একরামুল হক শামীমের একটি লেখার।অসাধারণ তথ্যবহুল লেখাটির বেশকিছু অংশ তুলে দরছি আপনাদের সামনে।

কয়েকটি পরিসংখ্যান
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম জনসভায় বলেছিলেন, দুই থেকে আড়াই লাখ নারী যুদ্ধে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরবর্তীতে এ সংখ্যাটিকেই সরকারি পরিংসখ্যান হিসেবে গণ্য করা শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক বাংলার বানী’র গনহত্যা বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা থেকে জানা যায়, দুই থেকে আড়াই লাখের পরিসংখ্যানটি সে সময়ের সরকারি কর্মকর্তারা অনুমানের ভিত্তিতে তৈরি করেছেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশের ৪৮০টি থানার ২৭০টিই পাকিস্তানী সেনাদের দখলে ছিল। প্রতিদিন গড়ে ২ জন করে নিখোঁজ মহিলার হিসাব অনুযায়ী লাঞ্ছিত মহিলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ।
অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ডা. জিওফ্রে ডেভিস দেশজুড়ে তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতায় এবং উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় চালানো নমুনা জরিপের মাধ্যমে পরিসংখ্যান তৈরি করে জানান, ৪ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি আরো জানান, অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সংখ্যাই ২ লাখ।
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত গবেষণায় দু’লাখ, তিন লাখ ও চার লাখ- এরকম তিনটি পরিসংখ্যানের উল্লেখ রয়েছে। [2]

ভোরের কাগজ বা প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি উপসম্পাদকীয় এর একটি অংশ ও তুলে দিচ্ছি:

"মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত লিখিত সূত্র, সমাজকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানিদের ধারাবাহিক ধর্ষণ উন্মত্ততার সঙ্গে মধ্য এপ্রিল থেকে যুক্ত হতে শুরু করে এদেশীয় দোসর রাজাকার, শান্তি কমিটি, আল বদর ও আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা। এরা বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে আনার পাশাপাশি ধর্ষকে অংশ নিয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্ট, পুলিশ ব্যারাক, স্থায়ী সেনা বাঙ্কার ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজ, সরকারি ভবন ধর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

জানা যায়, একাত্তরে পুরো ৯ মাস পাকিস্তানি সৈন্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থলে, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বাঙালি নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা গণধর্ষণ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্য, স্বামীদের হত্যা করার পর নারীদের উপর ধর্ষণ নির্যাতন চালাতো পাকিস্তানী সৈন্যরা। ৯ থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা কেউই পাকিস্তানী সৈন্য বা তাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সুসান ব্রাউনি মিলার তার গ্রন্থের ৮৩ পাতায় উল্লেখ করেছেন, কোনো কোনো মেয়েকে পাকসেনারা এক রাতে ৮০ বারও ধর্ষণ করেছে। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির “যুদ্ধ ও নারী” গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এক একটি গণধর্ষণে ৮/১০ থেকে শুরু করে ১০০ জন পাকসেনাও অংশ নিয়েছে। একাত্তরের ভয়াবহ ধর্ষণ সম্পর্কে একমাত্র জবানবন্দিদানকারী সাহসিক ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তার সাক্ষাৎকারে (একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি, সম্পাদনা শাহরিয়ার কবির) জানান, “রাতে ফিদাইর (উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা) চিঠি নিয়ে ক্যাপ্টেন সুলতান, লে. কোরবান আর বেঙ্গল ট্রেডার্সও অবাঙালি মালিক ইউসুফ এরা আমাকে যশোরে নিয়ে যেত। যাওয়ার পথে গাড়ির ভেতরে তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। নির্মম, নৃশংস নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে আমার বোধশক্তি লোপ পায়। ২৮ ঘন্টা সঙ্গাহীন ছিলাম”।

পাকিস্তানি সৈন্যদের ধর্ষণের বীভৎসতার ধরন সম্পর্কে পুনর্বাসন সংস্থায় ধর্ষিতাদের নিবন্ধীকরণ ও দেখাশোনার সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী মালেকা খান জানান, সংস্থায় আসা ধর্ষিত নারীদের প্রায় সবারই ছিল ক্ষত-বিক্ষত যৌনাঙ্গ। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিড়ে ফেলা রক্তাক্ত যোনিপথ, দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেলা স্তন, বেয়োনেট দিয়ে কেটে ফেলা স্তন-উরু এবং পশ্চাৎদেশে ছুরির আঘাত নিয়ে নারীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতো।

পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের নারীদের একাত্তরে কতো বীভৎসভাবে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতন করেছে তার ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশী ধরা পড়ে ১৮ ফেব্র“য়ারীর ৭৪ সালে গৃহীত রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একাত্তরে সুইপার হিসেবে কাজ করা রাবেয়া খাতুনের বর্ণনা থেকে। প্রামান্যকরন প্রকল্পের অষ্টম খন্ডে গ্রন্থিত ঐ বর্ণনায় কয়েকটি অংশ: রাবেয়া খাতুন জানান, ‘উন্মত্ত পান্জাবি সেনারা নিরীহ বাঙালী মেয়েদের শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেয় নাই অনেক পশু ছোট ছোট বালিকাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করে ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজনে দুপা দুদিকে টেনে ধরে চড়াচড়িয়ে ছিড়ে ফেলে ছিল। পদস্থ সামরিক অফিসাররা সেই সকল মেয়েদের ওপর সম্মিলিত ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ একদিন তাকে ধরে ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে, পাছার মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ওরা আদন্দ উপভোগ করতো । ’ রাবেয়া খাতুনের আরেকটি বর্ণনায় জানা যায়, ‘ প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশলাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসে ওপর তলা থেকে বহু ধর্ষিত মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত বিকৃত লাশ ওরা পায়ে রশি বেধে নিয়ে যায় এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন মেয়েদের চুলের সঙ্গে বেধে ধর্ষণ আরম্ভ করে দেয়। ’

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরও পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারে আটকে রেখে নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে বাঙালী নারীদের। বিচারপতি কে এম সোবহান প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ ১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে গিয়ে দেখি মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩জুন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা। ’

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, পুরোপুরি পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত পাক আর্মিদের ধর্ষণ-উত্তর অন্যান্য শারীরিক নির্যাতনের ফলে বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, কাউকে কাউকে পাকসেনারা নিজেরাই হত্যা করেছে; আবার অনেকেই নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক ড. রতন লাল চক্রবর্তী ৭২- এর প্রত্যক্ষদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ‘ যুদ্ধের পর পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী, ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশ কিছু নারীকে। তাদের ড্রেসআপ এবং চলাফেরা থেকে আমরা অনেকেই নিশ্চিত জানতাম ওরা যুদ্ধের শিকার এবং ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ’"
[৩]
বুদ্ধিজিবী হত্যা:
একাত্তরে চলে নিষ্ঠুর বুদ্ধিজিবী হত্যাকান্ড।আর একাজে সাহায্য করেন এদেশের ই কিছু নরপশু যারা আলবদর , আলশামস নামে পরিছিত।এরা হত্যা করে বাংলার অনেক কীর্তিমান সন্তানকে।এ ব্যাপারে পরথমেই মনে পড়ে জাফর ইকবাল স্যারের এক ছোট গল্পের কথা। যেখানে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের এক ছেলে(তার ই ছাত্র)।চা পাগল লোকটি মাত্রই চা হাতে নিয়েছিলেন।না খেয়েই চলে যান ছাত্রের সাথে।আর ফিরে আসেননি তিনি।ভদ্রমহিলা ও আর চা খেতে পারেন না।চা যে তার কাছে প্রিয়জন হারানোর এক দুঃসহ স্মৃতি।এমন হাজারো ঘটনা ঘটিয়েছে একাত্তরে পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরেরা।গুম করা হয়েছে তাদের লাশ।রায়েরবাজার বধ্যভুমি এর একটি উদাহরণ।




১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ প্রায় ৬ বছর ধরে চলে ২য় বিশ্বযুদ্ধ। এতে মারা যায় বা হলো কাস্টের শিকার হয় :১১ থেকে ১৬ মিলিয়ন মানুষ।যদি সংখ্যাটা ১১ ও ধরা হয়। তারপরও মিনিটে মানুষ নিধন প্রায় ৪ জন করে।আজ তাদের বিচার হচ্ছে ।ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাছ্ছে। আমদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল প্রায় ৯ মাস।এতে শহীদ প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।ধর্ষিত প্রায় ২ লাখের ও বেশী মা বোন। প্রতি মিনিটে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক মানব হত্যা প্রায় আট জন করে।এই কটা লাইন থেকে বুঝা যায় কি নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমাদের পুর্বসুরিদের।তাই আমাদের প্রতিজ্ণা হওয়া উচিত এসনল খুনি ও তাদের দোসরদের সুষ্ঠু বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো।যদি আমরা তা না পারি তবে শহীদদের আর স্বজনহারাদের অভিশাপময় দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠবে বাংলার বাতাস।আমরা ও কোন দিন মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবোনা।তাই যুদ্ধপরাধীদের বিচার আজ সময়ের দাবী যা মেটাতে না পারলে আমাদের আগামি স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস নিয়ে আবেগ মৌসুমি নাটুকেপনায় পরিণত হবে।
[১] ই বুক- ফিরে দেখা ৭১
[২] একাত্তরে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ-ব্লগার একরামুল হক শামী.
[৩] বীভৎস যৌন নির্যাতন, কিন্তু এড়িয়ে গেছেন সবাই-শেরিফ আল সায়ার।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×