পাক আর্মির উপর প্রথম গুলিটা করেছিলেন তিনি।কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৩৯ বছর
পরও তার নাম জানেননা আমাদের প্রজন্মের অনেকেই।মুক্তিযোদ্ধার কোন তালিকাতেও
নেই তার নাম।লুৎফুন্নেসার প্রথম আত্মজীবনিতে তার উল্লেখ আছে:
বংশালে নাদের নামে এক ছেলে ছিল।নাদের তার বন্ধুকে নিয়ে
একটি বন্দুক নিয়ে ছাদ টপকে ইসা ব্রাদার্সের উপর থেকে পাকিস্তানী বাহিনীর
উপর গুলি চালায়।এই নাদের ই কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর উপর
প্রথম গুলিটা চালায়।
ঢাকার সর্বত্র এক পরিচিত নাম ছিল নাদের।ভালো নাম ইব্রাহিম।জগন্নাথ কলেজের
সায়েন্স ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি।নাদের এর শৈশবের সঙ্গী ও সহযোদ্ধা
নায়ক ফারুকের কাছে জানা যায় তিনি ই নাদের কে নিয়ে এসেছিলেন এই পথে।২৫
মার্চ একটি ওপেল গাড়ীতে করে আরেক বন্ধু মাসুমকে নিয়ে ফারুকের বাসায় আসেন
নাদের।গাড়ীর বুট খুলে দেখান অস্ত্র।এক পান্জাবির সাথে নাদেরের খাতির
ছিল।অর্থের বিনিময়ে তার মাধ্যমেই এসব নিয়েছিল নাদের।২৫ শে মার্চ রাতে
নাদের প্রথম গুলি চালায় বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের উপর।রাত আনুমানিক ১২টার
দিকে আরও কয়েক সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তানি সাজোয়া বহরের উপর হামলা চালায়
নাদেররা।হতাহত হয় অনেক হানাদার সদস্য।কিন্তু হানাদারদের অত্যাধুনিক
অস্ত্রের সামনে দাড়াতে না পেরে তারা চলে যায় সাভার এলাকায়। সেখান থেকে
মিরপুরের মুন্সিবাড়িতে আস্তানা গাড়ে নাদের বাহিনী।কিন্তু হানাদারদের মধ্যে
রেখে যায় আতঙ্ক।
প্রায় মাস ২ পর আর্মেনিয় গির্জায় অস্ত্রের জন্য অপেক্ষা করছিল
নাদের।কিন্তু সেই পান্জাবীর ষড়যন্ত্রে পাক বাহিনির কাছে আহত অবস্থায় ধরা
পড়ে নাদের।(হায় বাঙ্গালী সবসময়ই বেকুবের মত বন্ধু বাছে যারা পিছনে ছুরি
মারতে ওস্তাদ।)সহযোদ্ধাদের থেকে জানা যায় অমানুষিক নির্যাতনের পর মারা হয়
তাকে। তারপরও শেষ নিঃশ্বাস ফেলা পর্যন্ত সে বলতে থাকে:
আমি জয় বাংলার লোক।আমি জয় বাংলার
লোক।
বঙ্গবন্ধু তার মাকে বলেছিলেন সোনার অক্ষরে লেখা হবে তোর ছেলের নাম।কথা
রাখতে পারেননি বা তার সময় পাননি তিনি।
পাক আর্মির উপর গর্জে উঠেছিল প্রথম যে স্টেনগান আজ তার নাম নেই আমাদের
ইতিহাসে।আমরা যে বড় ব্যাস্ত ঘোষক নিয়ে...কিন্তু সত্য নাকি ফিরে ফিরে
আসেই..।আমরা তার অপেক্ষায় রইলাম...
তথ্যসুত্র : সতীর্থ উদয়..।