somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ বুকের উপর হাত বাঁধাঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের হাদীস নিয়ে ধুম্রজাল

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।

একজন দাবি করেছেন, সহীহ ইবনে খুযাইমাতে উল্লেখিত সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম … তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।

-সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯

এই হাদীসটির রাবী মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেননি, তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন মুয়াম্মাল ইবনে সাঈদকে। কিন্তু আমি অনেক ইন্টারনেটে অনেক লিখাতে পড়েছি মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকেই তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন। দয়া করে কি ব্যাখ্যা করবেন কোনটা সঠিক ?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” একথার দাবিতে অটল থেকে বুকের উপর কোন দলীল পেশ করতে সক্ষম নন। তাই এক্ষেত্রে চালাকীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

কুরআন ও সহীহ হাদীসই যদি কেবল দলীলযোগ্য হয়, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্যের অনুসরণ যদি শিরক পর্যায়ের তাকলীদ হয়ে থাকে, তাহলে সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসটি তাদের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে কি সহীহ সাব্যস্ত করিয়েছেন?

যদি না করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ যে হাদীসকে সহীহ বলেননি, সে হাদীসকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের রেফারেন্স ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্য দিয়ে সহীহ বলাটা কি উক্ত মুহাদ্দিসের অন্ধ তাকলীদ নয়?

আমরা বিজ্ঞ মুজতাহিদের তাকলীদ করলে শিরক, আর তারা করলে সেটি কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল হয় কি করে?

মুখে মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল মানার স্লোগান, আর কাজেকর্মে উম্মতীর বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়াই অন্ধভাবে মেনে নেয়ার নাম আর যাই কিছু হোক, কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ নয়, বরং ধোঁকাবাজী।

বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীল যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা কোথাও পেলেন না নিজেদের উদ্ভাবিত থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” অনুপাতে। তখন প্রথমেতো কুরআন ও হাদীসের দলীল ছাড়াই মুহাদ্দিসীনে কেরামের তাকলীদ করে সহীহ ইবনে খুজাইমার হাদীসটিকে সহীহ বলা শুরু করলেন।

কিন্তু যখনি আমরা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যে, যারা ইমাম বুখারী রহঃ এর সকল মন্তব্যকেই চূড়ান্ত ও হক বলে বিশ্বাস করে থাকে, তারা উক্ত বর্ণনাটির একজন রাবী মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে ইমাম বুখারী রহঃ “মুনকারুল হাদীস বলে মন্তব্য করার পরও মানেন কি করে? তখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা নতুন বুদ্ধি বের করলেন। সেটি হল, মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলকে মুয়াম্মাল বিন সাঈদ বানিয়ে দিলেন।

এ এক আজীব চালাকী।

চলুন, দেখি ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ কেই কি “মুনকারুল হাদীস” বলে মন্তব্য করেছেন নাকি না? সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম তাদের স্বীয় কিতাবে কি লিখেছেন?



আল্লামা মিজ্জী রহঃ লিখেছেন- وقَال البُخارِيُّ: منكر الحديث. তথা ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তিনি [মুআম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ] মুনকারুল হাদীস। {তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল, বর্ণনা নং-৬৩১৯}



ইমাম যাহাবী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল মুনকারুল হাদীস।

আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭,

তারীখুল ইসলাম, বর্ণনা নং-৩৮০,

সিয়ারু আলামিন নুবালা, বর্ণনা নং-১৫৪৬,

জিকরু মান তাকাল্লামা ফীহি, বর্ণনা নং-৩৪৭,

মিযানুল ইতিদাল, বর্ণনা নং-৮৯৪৯।



ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮, লিসানুল মিযান, বর্ণনা নং-৪৯৮৭}



আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {মাগানিয়ুল আখয়ার, বর্ণনা নং-২৪১৯}



আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ইয়ামানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {খুলাসাতুল তাহযীবু তাহযীবিল কামাল}

এতগুলো গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণ এতসব কিতাবে ইমাম বুখারী রহঃ এর মন্তব্যটি নকল করেছেন। ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে নয়, মুয়াম্মাল বিন সাঈদ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন, এমন কথা কোন পূর্ববর্তী কোন গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমাম কি বলেছেন?

কেউ বলেননি, সবাই মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কেই ইমাম বুখারীর মন্তব্যটির নিসবত করেছেন। মুআম্মাল বিন সাঈদের কথা কেউ বলেননি।

একথা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, বর্তমানের নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা নিজেদের দলীলহীন মাসআলা প্রমাণের জন্য এতসব গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণের অবস্থানকে ভুল সাব্যস্ত করার হীন কর্মকান্ডে নেমেছেন।

আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীস নামধারী এসব ভ্রান্তদের চক্রান্ত থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন।

একটি মজার কথা

একই ব্যক্তি যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইদের মাসআলার খেলাফ হন, তখন তিনি জঈফ ও অগ্রণযোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যান, আবার উক্ত ব্যক্তিই যখন নিজেদের পক্ষের কোন মাসআলার দলীল হন,তখন তিনি কি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে যান সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।

প্রথমে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির সনদটির দিকে আমরা একটু দৃষ্টি বুলিয়ে নেইঃ

مؤمل عن سفيان عن عاصم بن كليب عن ابيه عن وائل بن حجر

অনুবাদ-মুআম্মাল সুফিয়ান ছাওরী রাহ থেকে, তিনি আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।

এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কয়েকটি ধুর্ততা লক্ষ্য করি।

ধুর্ততা নং-১

সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত হাদীসটির সূত্রে মুআম্মাল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান সওরী রহঃ থেকে, আর সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করেছেন।

আর এ সূত্রটিকে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সহীহ সনদ বলে প্রচার করছেন।

অথচ একই ধরণের সনদ তথা সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা সম্বলিত রফয়ে ইয়াদাইন রুকুতে গমণ ও উঠার সময় ছেড়ে দেয়ার বর্ণনা যখন আমরা আবু দাউদ, তিরমিজী ও নাসায়ী থেকে পেশ করি। তখন তারা বলে এ সনদ দুর্বল। কারণ সুফিয়ান সওরী রহঃ নাকি মুদাল্লিস। আর তিনি“আন” শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদীসটি দুর্বল।

অথচ সহীহ ইবনে খুজাইমার মাঝে সেই সুফিয়ান সওরী রহঃ যখন “আন” শব্দের মাধ্যমে আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করছেন তখন এ হাদীস তাদের গলার মালা হয়ে গেল। এখন কোথায় গেল “আন”বললে জঈফ হয়, বা সুফিয়ান সওরী রহঃ মুদাল্লিস সম্বলিত বক্তব্য?

ধুর্ততা নং-২

রুকুতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ীর হাদীসটিকে তারা পরিত্যাজ্য আরেকটি কারণে বলে থাকে, সেটি হল, উক্ত হাদীসটির সনদে আসেম বিন কুলাইব “মুনফারিদ” তথা একাকী বর্ণনাকারী। আর আসেম বিন কুলাইব যখন মুনফারিদ হন, তখন তিনি দলীলযোগ্য হন না।

কিন্তু মজার বিষয় হল, সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত সনদটিতেও আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ। এরকম বর্ণনা ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে আর কারো সূত্রে নেই। তাহলে তিরমিজী, নাসায়ী ও আবু দাউদের রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়া সম্বলিত হাদীস আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ হওয়ার কারণে দলীলযোগ্য না থাকলে সহীহ ইবনে খুজাইমাতে আসেম বিন কুলাইবন মুনফারিদ হওয়া সত্বেও দলীলযোগ্য হয়ে গেলেন কিভাবে? বড়ই আশ্চর্য ভাইদের মানসিকতা!

ধুর্ততা নং-৩

সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত হাদীসটির পরেই বর্ণিত হয়েছে কাছাকাছি সূত্রে আরেকটি হাদীস। সেটি হল,

عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ الْجَرْمِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّ وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ أَخْبَرَهُ قَالَ: قُلْتُ: ” لَأَنْظُرَنَّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ يُصَلِّي قَالَ: فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ، قَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ،

আসেম বিন কুলাইব তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বর্ণনা করেন, ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ দেখছিলাম তিনি কিভাবে নামায আদায় করেন, তখন আমি দেখলাম, তিনি দাঁড়ালেন, তারপর তাকবীর দিলেন, তারপর উভয় হাত উঠালেন কানের লতি পর্যন্ত। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৮০}

আসেম বিন কুলাইব, তার পিতা, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর সূত্রে প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীসটি উল্লেখ করা হল, সেটির নং হল, ৪৭৯, আর একই সূত্র তথা কুলাইব তার পিতা, পিতা হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাঃ নামাযে কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন।

অথচ কথিত আহলে হাদীসরা মহিলাদের মত কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠায়। কান পর্যন্ত হাত উঠায় না। এ হাদীসটির মুখালাফাত করে থাকে। এক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে গলার মালা বানানো, আরেক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে বাদ দিয়ে দেয়ার নাম কি সহীহ হাদীসের উপর আমল না মনের পূজা?

ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস না বললেও উক্ত হাদীস কথিত আহলে হাদীসদের দলীল হতে পারে না। কারণ ২টি। যথা-

১ম কারণঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈল মুনফারিদ

আসেম বিন কুলাইব, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে। এ সূত্রের মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর নামায সংক্রান্ত একাধিক সূত্র এসেছে।

কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করছি-



عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنِي سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ

আব্দুল্লাহ বিন ওয়ালীদ, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে,তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৭১}



حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،

শারীক বর্ণনা করেন আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৬৮}



حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ

আব্দুর রাজ্জাক তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৫৮}



عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،

আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯১২}



حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،

বিশর বিন মুফাদ্দাল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭২৬}



عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي عَائِشَةَ عَنْ عَاصِم بْنِ كُلَيْبٍ، عَن أَبيهِ، عَن وَائِلِ بْنِ حُجْر، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ،

মুসা বিন আবী আয়শা থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪৮৯}



قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،

কুতাইবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১২৬৩}



ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ

ইবনে ফুযাইল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}



شُعْبَةُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ

শুবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}

১০

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ

আবু ইসহাক আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।

{সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭০৫}

মাত্র ১০টি সূত্র উল্লেখ করলাম। এরকম আরো অসংখ্য সূত্রে উক্ত বর্ণনাটি এসেছে। কিন্তু কোথাও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের সূত্রে এসেছে বুকের উপর কথাটি।

তাই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধা বলার ক্ষেত্রে মুনফারিদ। আর সমস্ত জরাহ তাদীলের ইমামগণ একমত যে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল প্রচুর ভুল করতেন। সুতরাং একথা সহজেই বুঝা যায় যে, উক্ত বর্ণনাটিতে বুকের উপর কথাটি তিনি হয়তো ভুলেই বলেছেন। নতুবা আর কারো সূত্রে একথা আসেনি কেন?

মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ ভুল করে উক্ত বর্ণনাটি আনতে পারেন। দলীল মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট-

১-

ইবনে সাদ রহঃ বলেন, তথা তিনি সিকা তবে প্রচুর ভুল করেন। {আততাবকাতুল কুবরা, বর্ণনা নং-১৬৫৬}

২-

মুহাম্মদ বিন হিব্বান রহঃ বলেন, তিনি প্রায় ভুল করতেন। {আসসিকাতুল লিইবনে হিব্বান, বর্ণনা নং-১৫৯১৫}

৩-

আল্লামা খতীব বাগদাদী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর করতেন। {তারীখে বাগদাদ-৬}

৪-ইমাম আবু হাতেম রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলজারহু ওয়াততাদীল, বর্ণনা নং-১৭০৯}

৫-

আল্লামা যাহাবী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলকাশশাফ, বর্ণনা নং-৫৭৪৭}

৬-

ইমাম আবূ জুরআ রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭}

৭-

ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮}

২য় কারণঃ হাদীসটির বর্ণনাকারীই উক্ত হাদীসের বিপরীত আমল করেন

একথা সহজেই অনুমেয় যে, যিনি কোন কথা বর্ণনা করার পর উক্ত কথার বিপরীত কাজ করে থাকেন,তার কাছে তার বর্ণিত কথাটি আমলযোগ্য বা জরুরী নয় বলেই পরিস্কার বুঝা যায়।

আর সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসের সূত্রের একজন রাবী হলেন, হযরত সুফিয়ান সওরী রহঃ। আর খোদ তিনিই বুকের উপর হাত বাঁধার মতকে গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নাভির নিচে হাত বাঁধতেন।

ইমাম নববী রহঃ শরহে মুসলিমে উল্লেখ করেছেন- وقال ابو حنيفة وسفيان واسحاق بن راهوية وابو اسحاق المروازى من اصحابنا يجعلهما تحت سرته তথা ইমাম আবু হানীফা রহঃ,সুফিয়ান সওরী রহঃ, ইসহাক বিন রাহুয়া রহঃ এবং আমাদের আসহাবদের মাঝে আবু ইসহাম মারওয়াজী রহঃ বলেন যে, উভয় হাতকে নাভির নিচে বাঁধতে হবে। {শরহে মুসলিম লিননববী-১/৭৩}

বর্ণনাকারী খোদ নিজেই যখন স্বীয় বর্ণনার খেলাফ আমল করেন, তখন উক্ত বর্ণনা আমলহীন তা স্পষ্টতই বুঝে আসে।

সুতরাং একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, আসলে বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীলই নেই। যা কিছু কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করে বেড়ান, তা সবই তাদের নিজেদের তৈরীকৃত থিউরী অনুপাতেই ধোঁকাবাজী সাব্যস্ত হয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের ফিতনা থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযাত করুন। আমীন।



(ধন্যবাদ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×