somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'একাত্তরের চিঠি' বইয়ের দুটি চিঠি এবং confusion(অলৌকিক ভুল?)

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রদ্ধেয় সম্পাদনা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি ৩৩ পৃষ্ঠায় এবং ৭৩ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত দুটি চিঠির প্রতি।

১ম চিঠি
৩৩ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত মুক্তিযোদ্ধা বিপ্লবের(যার পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি) লেখা চিঠিটি, যে চিঠির প্রাপক তাঁর মা(যার পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি) এবং চিঠিটি মুক্তিযুদ্ধকালে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে প্রকাশিত জাগ্রত বাংলায় প্রকাশিত হয়। চিঠিটি পাঠিয়েছেন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষুবিজ্ঞান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চিঠিটি লেখার তারিখ ১৫ই জুলাই'৭১।

২য় চিঠি
৭৩ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত মুক্তিযোদ্ধা দুলালের(যার বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি) লেখা চিঠিটি, যে চিঠির প্রাপক তার মা(যার পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি) এবং চিঠিটি মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত জাগ্রত বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো, যেটি ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে প্রকাশিত হত। চিঠিটি পাঠিয়েছেন এস এ কামাল, সম্পাদক, জগ্রত বাংলা। চিঠিটি লেখার তারিখ ০৪।১০।১৯৭১।

যে ব্যাপারে আমার confusion তা হলো দুটি চিঠিই পুরোপুরি ভিন্ন দু'জন লেখকের(মুক্তিযোদ্ধার) এবং বইয়ে প্রকাশিত মূল হাতে লেখা চিঠি দেখেও বোঝা যায়, দুটি চিঠির লেখক মোটেই এক নয়। কিন্তু চিঠি দুটি বলতে গেলে পুরোটাই হুবহু মিলে যায়।
চিঠি দুটির মিলে যাওয়া লাইন গুলো আমি নিচে উল্লেখ করলাম।


১ম চিঠিঃ মাগো, আজ মনে পড়ছে বিদায়বেলায় তোমার হাসিমুখ। সাদা ধবধবে শড়িটায় বেশ মানিয়েছিলো তোমায়।

মেঘের ফাঁকে সেদিনকের পূর্ব দিগন্তের সূর্যটা বেশ লাল মনে হয়েছিলো।

ওর এক একটা কিরণচ্ছটা পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে এক একটা বাঙালি। অগ্নিশপথে বলীয়ান, স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত। মাগো, তোমার কোলে জন্মে আমি গর্বিত। শহীদের রক্ত রাঙা পথে তোমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে তুমি এগিয়ে দিয়েছো। ক্ষণিকের জন্যও তোমার বুক কাঁপেনি, স্নেহের বন্ধন দেশমাতৃকার ডাককে উপেক্ষা করতে পারেনি।

মা, তুমি শুনে খুশি হবে তোমারই মত অসংখ্য জননী তাঁদের স্নেহ ও ভালোবাসার সম্পদ পুত্র-সন্তান, স্বামী, আত্মীয়, ঘরবাড়ি সর্বস্ব হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়নি; বরং ইস্পাতকঠিন মনোবল নিয়ে আজ অগ্নিশপথে বলীয়ান। মাগো, বাংলার প্রতিটি জননী কি তাদের ছেলেকে দেশের তরে দান করতে পারে না? পারে না এ দেশের মা বোনেরা ছেলে ও ভাইদের পাশে এসে দাঁড়াতে?

সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এ দেশের মায়ের কোলের শিশুরা মা-বাবার কাছে বিস্কুট-চকলেট চাইবে না জেনো, চাইবে রিভলবার পিস্তল। সেদিনের আশায় পথ চেয়ে আছে দেশের প্রতিটি সন্তান। যেদিন বাংলার স্বাধীনতা সূর্যে প্রতিফলিত হবে অধিকারবঞ্চিত, শোষিত, নিপীড়িত বুভুক্ষু সাড়ে সাত কোটি জাগ্রত বাঙালীর আশা, আকাঙ্ক্ষা। যে মনোবল নিয়ে প্রথম তোমা থেকে বিদায় নিয়েছিলাম তা আজ শতগুনে বেড়ে গেছে, মা।

এ শুধু আমার নয়, প্রতিটি বাঙালি পাঞ্জাবি হানাদার লাল কুত্তাদের দেখলে খুনের নেশায় মাতোয়ারা হয়ে উঠে। তাই তো বাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে এক মহাশক্তি ও দূর্জয় শপথে বলীয়ান মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে। তোমাদের এ অবুঝ শিশুগুলোই আজ হানাদার বাহিনীকে চরম আঘাত হানছে। পান করছে হানাদার পশুশক্তির রক্ত। ওরা মানুষ হত্যা করে। আমরা পশু (ওদের) হত্যা করছি।

মা, মাগো। দুটি পায়ে পড়ি, মা। তোমার ছেলে ও মেয়েকে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে ঘরে আটকে রেখো না। ছেড়ে দাও স্বাধীনতার উত্তপ্ত রাজপথে। শহীদ হবে, অমর হবে, গাজী হয়ে তোমারই কোলে ফিরে আসবে, মা।
মাগো, জয়ী আমরা হবই। দোয়া রেখো।
জয় বাংলা।


২য় চিঠিঃ মাগো, আজ মনে পড়ছে বিদায় নেবার বেলায় তোমার করুণ হাসিমুখ। সাদা ধবধবে শড়িটায় বেশ মানিয়েছিলো তোমাকে। সেদিনের পূর্ব দিগন্তের সূর্যটা বেশ লাল মনে হয়েছিলো।

ওর প্রতিটা কিরণচ্ছটা পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে অগ্নিশপথে বলীয়ান, স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত এক একটা বাঙালি সন্তান। মাগো--তোমার কোলে জন্মে আমি ধন্য। শহীদের রক্ত রাঙা পথে তোমার আদুরে ছেলেকে এগিয়ে দিয়েছে। ক্ষণিকের জন্যও তোমার বুক কাঁপেনি, স্নেহের বন্ধন--দেশমাতৃকার ডাক উপেক্ষা করতে পারোনি। মা, তুমি শুনে খুশি হবে তোমারই মত অসংখ্য জননী তাঁদের স্নেহ ও ভালোবাসার ধন-পুত্র-স্বামী, আত্মীয়-সর্বস্ব হারিয়েও শোকে মুহ্যমান হয়নি; বরং ইস্পাতকঠিন মনোবল নিয়ে আজ অগ্নিশপথে বলীয়ান।
মাগো, বাংলার প্রতিটি জননী কি তাদের ছেলেকে দেশের তরে দান করতে পারে না--পারে না এ দেশের মা-বোনেরা ভাইদের পাশে এসে দাঁড়াতে?
তুমিই তো একদিন বলেছিলে, সেদিন বেশি দূরে নয়-যেদিন এ দেশের শিশুরা মা-বাবার কাছে বিস্কুট-চকলেট না চেয়ে চাইবে পিস্তল-রিভলবার। সেদিনের আশায় পথ চেয়ে আছে বাংলার প্রতিটি সন্তান, যেদিন বাংলার স্বাধীনতা সূর্য প্রতিফলিত হবে, অধিকারবঞ্চিত, শোষিত, নিপীড়িত, বুভুক্ষু সাড়ে সাত কোটি জাগ্রত বাঙালীর আশা-আকাঙ্ক্ষা। যে মনোবল নিয়ে প্রথম তোমা থেকে বিদায় নিয়েছিলাম, তা আজ শতগুনে বেড়ে গেছে।
শুধু আমার নয়, প্রতিটি বাঙালি খুনের হানছে মাতোয়ারা। তাই তো বাংলার আনাচকানাচে এক মহাশক্তিতে বলীয়ান তোমার অবুঝ শিশুগুলোই আজ হানাদার বাহিনীকে চরম আঘাত হেনেছে--পান করছে হানাদার পশুদের তাজা রক্ত। ওরা মানুষ হত্যা করছে--আর আমরা পশু হত্যা করছি।
মা, মাগো। দুটি পায়ে পড়ি মা। তোমার ছেলে ও মেয়েকে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে ঘরে আটকে রেখো না। ছেড়ে দাও স্বাধীনতার উত্তপ্ত রক্তপথে। শহীদ হয়ে অমর হব; গাজী হয়ে তোমারই কোলে ফিরে আসব মা।
মাগো--জয়ী আমরা হবই। দোয়া রেখো। জয় বাংলা।

ব্যাপারটা কি confusing নয়? এটা কি কোনো অলৌকিক ভুল?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ২:১৫
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×