somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মি. ম্যাকউইলিয়ামসেস ও চোরঘন্টা মূলঃ মার্ক টোয়েন

১০ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের আলোচনা মনোরমভাবে ও স্বচ্ছন্দে আবহাওয়া থেকে ফসলে, ফসল থেকে সাহিত্যে, সাহিত্য থেকে গুজবে, গুজব থেকে ধর্মে মোড় নিচ্ছিলো; এরপরই তা আকস্মিকভাবে চোরঘন্টায় যেয়ে থামে। তখনই প্রথমবারের মত মি. ম্যাকউইলিয়ামসেস কোনোরকম আগ্রহ দেখান। যখনই আমি তার মুখে এরকম কোনো আভাস দেখি, আমি সেটার প্রতি সম্মান দেখিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাকে তার হৃদয়ের ভার হালকা করার সুযোগ করে দেই। তিনি যথেষ্ট অরুচি নিয়ে বললেনঃ

“চোরঘন্টার উপর আমি আর এক পয়সাও খরচ করতে রাজি না মি. টোয়েন- এক পয়সাও না- কেন সেটা বলছি। আমরা যখন আমাদের বাড়ির কাজ শেষ করছিলাম তখন মিস্ত্রীর অলক্ষ্যে কিছু টাকা বেঁচে গিয়েছিলো। সেটা দিয়ে আমি একটা ফায়ার-প্লেস বানাতে চেয়েছিলাম, ফায়ার-প্লেসের প্রতি আমার আকর্ষণ সব সময়ই একটু বেশী। কিন্তু মিসেস ম্যাকউইলিয়ামসেস বললেন- না, বরং একটা চোরঘন্টা কেনা যাক। আমি এই আপোসে রাজি হলাম। ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার, যখন আমি কিছু একটা চাই আর মিসেস ম্যাকউইলিয়ামসেস ভিন্ন কিছু চান, তখন আমরা সব সময় সেই জিনিসটাই কিনি যেটা মিসেস ম্যাকউইলিয়াম চান- এটাকেই তিনি আপোস বলেন। যাই হোক, নিউ ইয়র্ক থেকে লোক এসে এ্যালার্ম লাগিয়ে তিনশ পঞ্চাশ ডলার পকেটস্থ করে আমাদের আশ্বস্ত করলো যে এখন থেকে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। তাই হয়েছে- অন্তত প্রথম এক মাস। তারপর এক রাতে ধোঁয়ার গন্ধে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমাকে বলা হলো নিচে যেয়ে দেখতে। মোমবাতি জ্বালিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমেই এক চোরের মুখোমুখি হলাম, তার হাতে কিছু টিনসামগ্রী যেগুলোকে সে অন্ধকারে রুপার মনে করেছে। সে তামাক খাচ্ছিলো। আমি বললাম, ‘ এই ঘরে ধূমপান করা নিষেধ’। উত্তরে সে বললো যে সে একজন আগন্তুক, এই ঘরের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সে একেবারেই অজ্ঞ। এই ঘরের মতো আরো অনেক ঘরেই সে চুরি করতে গেছে কিন্তু আগে কখনো তাকে মানা করা হয়নি। আর তার অভিজ্ঞতা বলে যে এই নিয়মগুলো তার মতো চোরদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

“আমি বললাম, ‘এটাই যদি রীতি হয় তাহলে চালিয়ে যাও, যদিও এটা বলতেই হচ্ছে যে সুবিধা একজন চোরকে দেয়া হচ্ছে তা থেকে একজন বিশপকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এটা অনৈতিক সমাজেরই পরিচয়। যাই হোক, আর সব বাদ দিলেও রাতের এই সময়ে সবার অলক্ষ্যে, গোপনে এই বাড়িতে ঢোকার উদ্দেশ্য কি, তাও চোরঘন্টা না বাজিয়ে?’

“সে একটু হতবুদ্ধি হয়ে গেলো, লজ্জা পেয়ে বললো, ‘আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি জানতাম না বাড়িতে একটা চোরঘন্টা লাগানো আছে, না হলে অবশ্যই বাজাতাম। দয়া করে আমার বাবা-মাকে এটা জানাবেন না, তারা বৃদ্ধ ও দূর্বল, খ্রিস্টীয় সভ্যতার পবিত্র প্রথার এরূপ আপাত দায়িত্বজ্ঞানহীন লঙ্ঘন বিষন্নভাবে বিস্মৃত বর্তমান এবং পবিত্র ও গহীন অনন্তকালকে সংযুক্তকারি নাজুক সেতুটাকে নৃশংস্রভাবে পৃথক করতে পারে। আপনার কাছে কি একটা দিয়াশলাই হবে?’

“আমি তাকে বললাম, ‘তোমার অনুভূতি সম্মানের যোগ্য; কিন্তু যদি আমার মতামত চাও তাহলে বলতেই হবে যে উপমাতে তোমার দক্ষতা খুবই সামান্য। তোমার হাঁটুর কাঁপাকাঁপি সামলাও; আমার মতে এরকম আগুন শুধু এই দিয়াশলাইয়ে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কাজের কথায় ফিরে আসিঃ তুমি কিভাবে ভিতরে ঢুকলে?’

‘দো’তলার জানালা দিয়ে’।

“সেটাই হবে। তাকে টিনসামগ্রীগুলোর বন্ধকীর মূল্যে দিয়ে দিলাম, তাতে বিজ্ঞাপন খরচ অনেক কম হবে, তারপর তাকে বিদায় দিয়ে, জানালা বন্ধ করে রিপোর্ট করার জন্য হেডকোয়ার্টারে প্রত্যাবর্তন করলাম। পরের দিন সকালে চোরঘন্টার মিস্ত্রীকে ডেকে পাঠালাম, সে এসে এ্যালার্ম না বাজার কারণ ব্যাখ্যা করলো- একতলা বাদে বাড়ির আর কোনো অংশই এ্যালার্মের সাথে সংযুক্ত ছিলোনা। এটা চরম নির্বুদ্ধিতারই পরিচয়, যুদ্ধে কেউ শুধু পায়ে বর্ম পরলে সেটা না পরাই উত্তম। এরপর বিশেষজ্ঞ দো’তলায় এ্যালার্ম লাগিয়ে, আরো তিনশ ডলার আদায় করে চলে গেল। যাই হোক, একরাতে আমি এক চোরকে তিনতলা থেকে রকমারি সামগ্রী নিয়ে মই দিয়ে নামতে দেখলাম। আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিলো বিলিয়ার্ড কিউ দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়া; অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করলাম, সে ছিলো আমার ও কিউইয়ের তাকের মধ্যে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়াটা ছিলো যুক্তিযুক্ত; আমি নিজেকে সংযত করলাম এবং আপোস করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবারও আগের মূল্যেই জিনিসগুলো দিয়ে দিলাম, শুধু শতকরা দশ পয়সা হারে কিছু কেটে রাখলাম মইটার জন্য, কারণ মইটাতো আমার ছিলো। পরের দিন আবার বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠালাম। সে আরো তিনশ ডলার নিয়ে তিনতলা এ্যালার্মের সাথে যুক্ত করে দিলো।

“ইতিমধ্যেই এ্যালার্ম বার্তা দূর্দান্ত মাত্রা পেয়েছে। ওয়ার্ডরোবতুল্য এই যন্ত্রটিতে বিভিন্ন ঘর ও চিমনির সাতচল্লিশটা নামের ফিতা লাগানো। আমাদের খাটের মাথার উপর লাগানো ঘন্টাটি একটি জামবাটির সমান। একটি তার দিয়ে আমাদের ঘর থেকে আস্তাবলে কোচোয়ানের বালিশের পাশে আরেকটি ঘন্টা যুক্ত করা হয়েছে।

“একটা ছোট ত্রুটি না থাকলে আমরা আরামেই থাকতাম। প্রতিদিন সকালে রাঁধুনি রান্নাঘরের দরজা খুলতো, এবং এই কাজটি করার সময় ঘন্টাটি বেজে উঠতো। প্রথম যখন এটা হলো আমার মনে হচ্ছিল কিয়ামত সন্নিকটে। এসময় আমি বিছানায় ছিলাম না, এমনকি বিছানার আশেপাশেও না। ঘন্টার প্রথম প্রভাব হলো তা আপনাকে হলের দিকে ছুড়ে ফেলবে, তারপর দেয়ালের সাথে আছড়ে মারবে, আপনি ব্যাথায় শরীর বাঁকিয়ে ফেলবেন, অবশেষে গরম চুলার ঢাকনির উপর রাখা মাকড়শার মত আপনার দেহ মোচড়াবে যতক্ষণ না কেউ এসে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। সত্যি কথা বলতে কি, এমন কোনো কলরব নেই যা কোনোভাবে এই ঘন্টার ভয়াবহ কলরবের সাথে টেক্কা দিতে পারে। যাই হোক, প্রতিদিন সকাল পাঁচটায় আমরা এই বিপর্যয়ের শিকার হতাম, এবং প্রতিদিন আমাদের তিন ঘন্টার ঘুম হারাম হতো। এটা বলে দেয়া জরুরী যে যখন এই বস্তুটা আপনাকে জাগাবে, সেটা শুধু আপনাকে শুধু ঘুম থেকেই জাগাবে না; সবভাবেই জাগিয়ে দিবে, আপনার চেতনা থেকে শুরু করে সব, এবং অবশেষে আপনি টানা আঠারো ঘন্টার অনিদ্রার জন্য প্রস্তুত- আপনা জীবনের সবচেয়ে কল্পনাতীত আঠারো ঘন্টার অনিদ্রা। একবার এক আগন্তুক আমাদের এখানে মৃত্যুবরণ করে, তাকে সাহায্য করার জন্য আমরা তাকে সারারাত আমাদের ঘরে রাখি। সেই আগন্তুক কি বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছিলো? জ্বী না; সে যথেষ্ট অনাড়ম্বর ও তৎপরভাবে সকাল পাঁচটায় চলে গিয়েছিলো। আমি খুব ভালো করেই জানতাম যে সে যাবে। সে তার জীবন বীমা সঙ্গে নিয়েই মরেছিলো, এবং বাকি জীবনটা স্বচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে ছিলো, তার নিখুঁত মৃত্যুর প্রমান যথেষ্টই ছিলো।

“যাই হোক, এই দৈনিক অনিদ্রার কারণে ধীরে ধীরে আমরা মলিন হয়ে যাচ্ছিলাম; আবার বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠালাম, সে তারগুলো ঘরের বাইরে নিয়ে সেখানে একটা সুইচ লাগিয়ে দিল, এ কারণে আমাদের খানসামা সবসময়ই একটা ছোট ভুল করত- সে রাতের বেলা সুইচটা বন্ধ করে ভোরে রাঁধুনি রান্নাঘরের দরজা খোলার ঠিক আগে সেটা আবার চালু করত এবং এহেতু আমরা আবার ঘরের অন্যপাশে আছড়ে পড়তাম, এবং মাঝে মাঝে কেউ না কেউ জানালা ভেঙ্গে বাইরে ছিটকে পড়তে বাধ্য হত। সপ্তাহের শেষে আমরা উপলব্ধি করলাম যে সুইচের ব্যাপারটা সম্পূর্ণই অলীক ও বেকার। আমরা আরো আবিষ্কার করলাম যে একদল চোর আমাদের বাড়িতে বসতি গেড়েছে- যদিও সেটা কিছু চুরি করার জন্য নয়, সত্যি কথা বলতে কি চুরি করার মত কিছু ছিলোও না, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো পুলিশের প্রবল তাড়ার মুখে আত্মগোপন করা, তারা বিচক্ষণভাবে উপলব্ধি করেছিলো যে গোয়েন্দাদের মাথায় এটা কখনই আসবে না যে আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাতভাবে চোরঘন্টা সুরক্ষিত বাড়িতে একদল চোর আশ্রয় নিতে পারে।

“আবার বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠানো হলো, এবং এবার সে সবচেয়ে চমকপ্রদ পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিল- সে ঘন্টাটা এমনভাবে লাগালো যে রান্নাঘরের দরজা খুলতেই ঘন্টা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো সন্দেহ নেই যে এটা অতি উত্তম একটি পরিকল্পনা, এবং পরিকল্পনা বিচারেই সে টাকা খসিয়ে যায়। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই ফলাফলটা আভাস করতে পারছেন। থমাসের দূর্বল স্মৃতিশক্তির উপর ভরসা না করে আমি নিজেই রাতে শোবার সময় ঘন্টাটা চালু করে দিতাম; এবং লাইট বন্ধ হতেই সকালে রাঁধুনি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে চোরগুলো রান্নাঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে ঘন্টা বন্ধ করে দিত। আপনি বুঝতেই পারছেন আমরা কত শোচনীয়ভাবে বাস করতাম। মাসের পর মাস আমাদের কোনো সংগী জোটেনি। বাড়িতে একটা অতিরিক্ত বিছানাও ছিলোনা; সবই ছিল চোরদের দখলে।

“অবশেষে আমি একটা প্রতিকার বের করলাম। বিশেষজ্ঞ আমার বুদ্ধিতে সাড়া দিয়ে তার নিয়ে গিয়ে আস্তাবলে আরেকটি সুইচ বসিয়ে দিল যাতে কোচোয়ান ঘণ্টাটা চালু ও বন্ধ করতে পারে। এটা বেশ ভাল কাজে দিল; কিছু দিনের শান্তি নিশ্চিত হল, আমরা আবার সঙ্গীসাথীদের সাথে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে লাগলাম।

“কিন্তু শীঘ্রই এই হতচ্ছাড়া ঘন্টা নতুন প্যাঁচ লাগালো। এক শীতের রাতে ঘন্টার আকস্মিক কর্কশ শব্দে আমরা বিছানা থেকে ছিটকে পড়লাম, আমরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘন্টা বার্তার কাছে যেয়ে আলো জ্বালিয়ে দেখি সেখানে লেখা ‘নার্সারী’, মিসেস ম্যাকউইলিয়াম তৎক্ষণাৎ বেঁহুশ হয়ে পড়লেন; তাকে দেখে আমিও প্রায় তার অনুগামী হয়ে গিয়েছিলাম। আমি শটগানটা নিয়ে কোচোয়ানের দিকে তাক করে থাকলাম, এর মধ্যেই ভয়াবহ ঘন্টাটা বেজে যেতে থাকলো। আমি জানতাম কোচোয়ানের ঘরের ঘন্টাটা তাকেও ছিটকে ফেলে দিয়েছে, এবং সেও ধাতস্থ হওয়া মাত্র কাপড় পড়ে তার বন্দুক নিয়ে হাজির হবে। আমি যখন বুঝলাম এটাই উপযুক্ত সময় তখন চুপিসারে নার্সারীর পরের ঘরটাতে গেলাম, এবং জানালা দিয়ে নিচে উঠানে বন্দুক নিয়ে সুযোগের জন্য অপেক্ষারত কোচোয়ানকে দেখতে পেলাম। তারপর আমি লাফ দিয়ে নার্সারীতে যেয়ে গুলি চালালাম এবং একই সাথে আমার বন্দুকের লাল ঝলক দেখে সেও গুলি চালালো। আমরা উভয়ই সফল; আমার গুলি একটা চারাগাছকে উপড়ে ফেলে দিল, এবং তার গুলি আমার পেছনের চুলগুলো ছুঁয়ে চলে গেলো। আমরা আলো জ্বালালাম, ফোন করে ডাক্তার ডাকলাম। কিন্তু চোরের কোনো নাম-গন্ধই ছিলোনা, এমনকি কোনো জানালাও জোর করে খোলার চেষ্টা করা হয়নি। শুধু একটা জানালার কাঁচ ছিলোনা যেটা দিয়ে কোচোয়ানের গুলি ভিতরে ঢুকেছে। খুবই অদ্ভুত ব্যাপার- মাঝরাতে চোরঘন্টা নিজে নিজেই বেজে উঠেছে যদিও আশেপাশে প্রতিবেশীদের কারো বাড়িতেই চোর ঢুকেনি!

“বিশেষজ্ঞকে ডাকলে সে যথারীতি এসে উপস্থিত হয় এবং ব্যাখ্যা করে বোঝায় যে এটা ছিলো একটা ‘ফলস এ্যালার্ম’। সে বলে এটা খুব সহজেই সারা যাবে। সে নার্সারীর জানালা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে, একটি লাভজনক অংক আদায় করে বিদায় নেয়।

“ফলস এ্যালার্মের জন্য আমদের কি ভোগান্তি হয়েছে তার বিবরণ দেয়ার দক্ষতা কোনো কলমের নেই। পরের তিন মাস যখনই এ্যালার্ম কোনো ঘর নির্দেশ করেছে আমি বন্দুক হাতে সেখানে ছুটে গেছি, সাথে যুদ্ধসাজে সজ্জিত আমার কোচোয়ান। কিন্তু সেখানে গুলি করার কিছুই ছিলোনা- জানালাগুলো সব বন্ধ ও নিরাপদ। প্রতিবারই আমরা পরের দিন বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠাতাম, সে বিশেষ সেই জানালাগুলো ঠিক করে দিত যাতে আমরা সপ্তাহখানেক শান্তিতে থাকতে পারি, এবং সবসময়ই এরকম একটা বিল পাঠাতোঃ

তার.....................$ ২.১৫
রাবারের নিপল........$ .৭৫
দুই ঘন্টার শ্রম.........$ ১.৫০
মোম....................$ .৪৭
টেপ.....................$ .৩৪
স্ক্রু.......................$ .১৫
রিচার্জিং ব্যাটারী.......$ .৯৮
তিন ঘন্টার শ্রম........$ ২.২৫
দড়ি.....................$ .০২
শূকর চর্বি..............$ .৬৬
জলাশয় সার..........$ ১.২৫
৫০ স্প্রিং তার.........$ ২.০০
রেলভাড়া...............$ ৭.২৫

“কিছুদিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে- তিনশ-চারশ বার ফলস এ্যালার্মের শিকার হবার পর স্বাভাবিক বুদ্ধিবলে আমরা তাতে সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেই। সত্যি, যখন বাড়ির এপার থেকে ওপারে আছড়ে পড়ি তখন শান্তভাবে উঠে এ্যালার্ম বার্তা পরীক্ষা করে, কোন ঘর নির্দেশ করছে তা লক্ষ্য করি; তারপর ঘরটি এ্যালার্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিছানায় ফিরে যাই যেন কিছুই হয়নি। এরপর বিশেষজ্ঞকে আর ডেকে পাঠাই না, ঘরটি স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেই। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ধীরে ধীরে সবগুলো ঘরই এ্যালার্ম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এবং পুরো যন্ত্রটাই অকেজো হয়ে যায়।

“এরকম অনিরাপত্তাতেই সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটে। এক রাতে চোরেরা চোর ঘন্টাটাই চুরি করে নিয়ে যায়! হ্যাঁ, মশায়, গোঁটাটাই উপড়ে ফেলে; স্প্রিং, ঘন্টা, এ্যালার্ম বার্তা, ব্যাটারি, সব, একশ পঞ্চাশ মাইল লম্বা তার; পুরোটা ঝেড়ে মুছে নিয়ে যায়, সত্যি...আমি শপথ করে বলছি এক বিন্দুও অবশিষ্ট রাখেনি।

“ফার্ম থেকে এ্যালার্ম বদলে দেওয়ার মেয়াদ তখনো ছিলো; কিন্তু তা পেতেও আমাদের টাকা খরচ করতে হল। এ্যালার্ম ফার্ম বললো যে আমাদের এখন উচিৎ হবে এ্যালার্মটা সঠিক জায়গায় বসানো- তাদের নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী জানালায় স্প্রিং বসিয়ে ফলস এ্যালার্মের সম্ভাবনাকে নির্মূল করে দেয়া, এবং এ্যালার্মের সাথে তাদের নতুন প্রস্তাবিত ঘড়ি লাগানো যাতে মানুষের সাহায্য ছাড়াই দিনে ও রাতে এ্যালার্ম নিজে থেকে চালু ও বন্ধ হতে পারে। এটা একটা ভাল বুদ্ধি বলে মনে হল। তারা কথা দিল যে দশ দিনের মধ্যে কাজটা শেষ করবে। তারা কাজ শুরু করলে আমরা গরমের ছুটিতে বাইরে গেলাম। তারাও কিছুদিন কাজ করে গরমের ছুটিতে বাইরে গেলো। এর পরপরই চোরেরা বাড়িতে ঢুকে তাদের গরমের ছুটি পার করলো। শরতে ফিরে দেখি বাড়ি মদের ভান্ডারের মতই ফাঁকা যেন সেখানে রংমিস্ত্রীরা কাজ শেষ করে চলে গেছে। আমরা বাড়ির ফাঁকা জায়গাগুলো ফার্নিচার দিয়ে পূর্ণ করে বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠালাম। সে এসে কাজ শেষ করে বললোঃ ‘এখন থেকে ঘড়িটা প্রতিরাতে দশটায় চালু হবে ও ভোর পৌণে পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যাবে, আপনাদের যেটা করতে হবে তা হল সপ্তাহে একদিন দম দিয়ে রেখে দিবেন- তারপর বাকি কাজগুলো সে নিজে থেকেই করবে’।

“তারপরের তিন মাস খুব শান্তিতে কাটিয়েছিলাম। শুধু বিলের পরিমাণ ছিল আকাশ ছোঁয়া, অবশ্য তা পরিশোধ করার আগে নতুন এ্যালার্মের কর্মদক্ষতা যাচাই করে নেয়ার কথা বলে রেখেছিলাম। তিন মাসের শর্ত দেয়া হয়েছিল। তিন মাস পর বিল পরিশোধ করার পরের দিনই সকাল দশটায় এ্যালার্ম দশ হাজার মৌমাছির সম্মিলিত শব্দের মত বেজে উঠলো। এ্যালার্ম বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা বারো ঘণ্টা পিছিয়ে দিলাম; কিন্তু রাতের বেলা আবার আরেক ঝামেলা, এ্যালার্ম চালু করার জন্য আমাকে আবার ঘড়ির কাঁটা বারো ঘণ্টা এগিয়ে দিতে হল। সপ্তাহখানেক এরকম আগডুম বাগডুম চলার পর বিশেষজ্ঞ এসে নতুন ঘড়ি লাগিয়ে দিয়ে গেলো। কিন্তু যা বাহান্ন তাই তিপান্ন। তার প্রতিটা ঘড়িই এরূপ অসহ্যকরভাবে ত্রুটিপূর্ণঃ দিনের বেলা এ্যালার্ম চালু হয়, কিন্তু রাতে আর হয়নাঃ জোর করে চালু করার চেষ্টা করলে ঘাড় ঘুরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

“এই হচ্ছে আমার চোরঘন্টার ইতিহাস- ঠিক যা যা ঘটেছিলো; এক বিন্দুও বাড়িয়ে বলিনি বা বিরক্তি থেকে বলিনি। জ্বী, মশায়- আমি নয় বছর চোরদের সাথে রাত কাটিয়েছি এবং পুরোটা সময়ই আমার বাড়িতে একটা চোরঘণ্টা ছিলো, সেটা আমার নিরাপত্তায় ততটা কাজে লাগেনি যতটা তাদের নিরাপত্তায় লেগেছে, সম্পূর্ণই আমার খরচে, তারা এক পয়সাও সাহায্য করেনি- আমি মিসেস ম্যাকউইলিয়ামকে বললাম যথেষ্ট হয়েছে; তার পূর্ণ সম্মতিসহ পুরো যন্ত্রটা খুলে তা বদলে একটা কুকুর কিনলাম এবং কুকুরটাকে গুলি করে মেরে ফেললাম। আমি জানিনা এটা সম্পর্কে আপনার কি মতামত মি. টোয়েনঃ কিন্তু আমার মনে হয় পুরো জিনিসটাই বানানো হয়েছে চোরদের স্বার্থ চিন্তা করে। জ্বী, মশায়, চোরঘণ্টা হল যতসব আপত্তিকর জিনিসের সমাহার- আগুন, দাঙ্গা, হারেম, এবং একই সাথে এই সম্মেলনের ক্ষতিপূরণেরও কোনো ভরসা নেই। বিদায়ঃ আমি এখানেই নেমে যাব”।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×