আমার কাছে কবিতা মানে অনেক বৃষ্টি ঝরে- এক মুঠো রোদ্দুর। বিমূর্ত স্মৃতীর একঝাক তৃষ্ণা। আমার মায়ের ঘামে ভেজা শরীরের- ছেড়া আঁচলের হলুদের গন্ধ। পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। সব দূয়ার হতে প্রত্যাখাত হয়ে তাই কবিতার জীর্ণ বুকেই মুখ গুজি- পরম মমতায়। রাজনীতি সমাজ আর মূখোশে মানুষের উৎসব থেকে নতমুখে ফিরে এসে কবিতার অতলে ডুব দিয়ে নিজেকে আড়াল করি। সুখের অবগানে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি কবিতায়- নিশ্চিন্তে।
আমার কোন রাজনৈতিক আদর্শের আনুগত্য নেই । জীবনের খসখসে বাস্তবতায় হতাশার ঢেউ যখন উপচে পড়ে, সমস্ত পথচলায়- খেয়ালি বেঁচে থাকা তার বৈসাদৃশ্য খুঁচিয়ে রক্ত ঝরাই। অযথাই সহ্য করি- সে জ্বলন। যাদের ভালোবাসি- কখনও সখনো তাদের দীনতাকে প্রবচন করি- যুক্তির মারপ্যাঁচে। বিতর্কে ভাসাই- প্রশ্নের চাবুকে। তাতে স্বজনের সংখ্যাটা, সামান্য থেকে সামান্যতর হয়- কেবলই। ভুল বুঝাবুজির মনন আর মগজে শুধুই ঠোক্কর খায়। যেমন সুযোগ পেলেই সুহৃদ স্বজনের কোন পোষ্টে অযাচিৎ মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে তাদের মন:কষ্টের কারন হই। দলমত নির্বিশেষ সবার বেলায়ই- এই কাজটা করে ফেলি। তবে আপনজন বলে যাদের মান্য করি, সুহৃদ বলে যাদের দাবী করি- কেবল তাদের বেলায়ই এ অনধিকার চর্চাটা আবাদ করি। তাতে বরং দুরত্বটাই দীর্ঘ হয় তাদের সাথে।
নটরডেমে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতিটা ঘৃনা করা শুরু এবং তা প্রচন্ডভাবেই। রাবিতে পড়ার সময় যেদিন আমার রুম থেকে নিজের দরকারি টেবিল ফ্যান ও সখের টেপ- রেকর্ডারটা খোয়া গেলো, সেদিন সহপাঠি হেডমওয়ালা বন্ধুদের কাছে বিচার দিতেই তারা চোরটাকে পাকড়াও করে প্রচন্ড মারধর করলো। তারা ছিল ছাত্রদল ক্যাডার। দূর্ভাগ্যক্রমে চোরটি ছিল তখনকার বাস্তবতায় আমি যে জলে বাস করতাম- সে জলের কুমির। মানে শিবিরের ইসলামী ছাত্র শিবির। একথা জানাজানি হতেই শুনলাম, আমাকে সাইজ করার জন্য শিবির হন্যে হয়ে খুঁজছে। তখন ভয়ে টানা একমাস সেই সহপাঠি ছাত্রদল ক্যাডার বন্ধুদের আশ্রয়ে থেকে নিজের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা। আপাত দৃষ্টিতে তাতে পিঠটা বাঁচলেও ক্যারিয়ারটা আর নিরোগ দেহে সুস্থতায় বাঁচানো গেল না। তখন থেকেই রাজনীতির প্রতি ঘৃণা হারালাম- অনার্সে ফার্স্ট ক্লাসটাও। সেই থেকে হারানোর শুরু। রেল- লাইন সমান্তরাল জীবনের বিশুদ্ধ বেঁচে থাকা, চেনা পরিমন্ডলের স্নিগ্ধ বাতায়ন, মায়ের ঘামে ভেজা শরীরের ছেড়া আঁচলে লেপ্টে থাকা- হলুদের গন্ধ, বুক পকেটে সযত্নে আগলে রাখা বাবার স্বপ্ন, অলীন্দের ভাঁজে আগলে রাখা সোনালী ভবিষ্যত, ঘুম ভাঙ্গা ভোর, আবেগী রাতে জেগে আঁকা বিমূর্ত বাতাসের পোয়াতী জোছনা, কিছুই আর অবশিষ্ট রইলো না- হারাবার।
এরপর নিজেকে আর নিজের ভীতর ধরে রাখতে পারিনি। তৎকালীন শিবিরের মুর্তীমান আতংক রূপে নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করার মিশন শুরু করলাম। এক সময় তাতে সফলও হলাম। তাতে নিজের স্বাভাবিক জীবনের ধূলোমাখা পথটা -আর সহজাত রইলো না।
এরই তীর বেয়ে- মায়ের মৃত্যু, বাবাকে হারানো, প্রমিকাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে কোর্ট- ম্যারেজ, সংসার- সন্তান এভাবেই......। সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। জীবনের এই চড়াই- উৎরাাই ক্রান্তিতে একমাত্র কবিতাই আমাকে পাখীর নীড়ের মতো চোখ মেলে- কাছে ডেকে, ক্লান্তির ঘাম মুছে বলেছিলো- " এতদিন, কোথায় ছিলেন....!"
কবিতার কাছে- এ ঋন আমার আমৃত্যু শোধবার নয়। বিশুদ্ধ প্রাণের উৎসব- আয়োজনে, বেঁচে থেকো কবিতা- কবিকে বাদ দিয়ে নয়.......!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৬