somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Relativity of Wrong

০৩ রা মে, ২০১১ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকাঃ আইজ্যাক আসিমভকে বলা হয় গ্র্যান্ডমাস্টার অফ সায়েন্স ফিকশান। তবে তিনি শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী না, অনেক প্রাঞ্জল বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধও লিখেছেন। একবার এক পত্রলেখক তাঁর একটি প্রবন্ধের সমালোচনা করলে তিনি তার জবাবে The Relativity of Wrong প্রবন্ধটি লেখেন। বেশ আশাবাদী একটি প্রবন্ধ!সেটা অনুবাদ করার একটা অপচেষ্টা চালিয়েছিলাম। লেখা উৎসর্গ করলাম সেসব টিচারদের যারা পার্শিয়াল মার্কিং করেন না :P :P X((

The Relativity of Wrong

কিছুদিন আগে একটা চিঠি পেয়েছি একজন পাঠকের কাছ থেকে। চিঠির প্রথম লাইনেই তিনি উল্লেখ করেছেন যে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে মেজর, কিন্তু আমাকে বিজ্ঞান শেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না একজন সাহিত্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ঠিক কিভাবে আমাকে নতুন করে বিজ্ঞান শেখাবেন, তবে আমি আমার অজ্ঞানতা সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন, এবং যদ্দুর সম্ভব নতুন জিনিস শিখতে আগ্রহী, তাই চিঠিটা পড়া চালিয়ে যেতে লাগলাম।তার অভিযোগ আমার কোন এক রচনায় আমি উল্লেখ করেছি যে আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন কিনা আমরা মহাবিশ্বের মূল সূত্রগুলো ধরে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।



আমি অবশ্য বিস্তারিত যুক্তিতর্কে যাইনি, আমি যা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে এখন আমরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূলসূত্রগুলো সম্পর্কে কমবেশি অবগত। মহাকর্ষ এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের অন্তর্গত সম্পর্ক নিয়ে ১৯০৫-১৯১৬ এই সময়টাতে অনেক আলোকপাত করা হয়েছে। তাছাড়া সাবঅ্যাটমিক পার্টিক্যালস এবং এদের বৈশিষ্টাবলী কোয়ান্টাম তত্ত্ব দিয়ে খুব ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে ১৯০০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে। গ্যালাক্সী এবং গ্যালাক্সীপুঞ্জগুলো যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মৌলিক গাঠনিক উপাদান সেটাও ১৯২০-১৯৩০ সময়কালের গবেষণায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এই গবেষণাগুলোর সবই কিন্তু হয়েছে বিংশ শতাব্দীতে।



তরুণ ইংরেজীর স্কলারটি আমাকে আমার উদ্ধৃতি দিয়েই বলেছেন যে প্রায় প্রতি শতাব্দীতেই মানুষজন ধারণা করত যে তারা সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্যটি ধরতে পেরেছে, এবং প্রতি শতাব্দীতেই সেসব ধারণা ভুল-ও প্রমাণিত হয়েছে।. এথেকে তিনি আমাকে উদাহরণ দিতে চেয়েছেন যে আধুনিক ধারণা- সেটাও একসময় ভুল প্রমাণিত হবে। তিনি আমাকে সক্রেটিসের উদ্ধৃতিও দিয়েছেন, প্রাচীন গ্রীসের ডেলফিতে যখন দৈববাণী হয়েছিল যে সক্রেটিস-ই সবচে জ্ঞানী ব্যক্তি তখন সক্রেটিস বলেছিলেন “আমি যদি আসলেই জ্ঞানী হয়ে থাকি তবে তার প্রধান কারণ হচ্ছে যে আমি জানি যে আমি আসলে কিছুই জানি না! পত্রলেখক সম্ভবত এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আমি একটি অকাট মূর্খ, যেখানে সক্রেটিস বলেছেন তিনি কিছুই জানেন না; সেখানে আমি অনেক জানার দাবি করছি।



যাই হোক এসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে নতুন নয়। আজ থেকে প্রায় পচিশ বছর আগেও জন ক্যাম্পবেল আমাকে বেশ ভুগিয়েছে। তার কথার প্রতিপাদ্য-ও একই ছিলো। যে সব থিয়োরি কোন না কোন সময় ভুল প্রমাণিত হয়। আমি তখন জন কে উত্তর দিয়েছিলাম যে দেখো একসময় মানুষ ভাবতো পৃথিবী সমতল , তাদের ধারণা ছিল ভুল। এরপর ভাবা হলো পৃথিবী গোলাকার, দেখা গেলো সে ধারণাও ভুল। এখন তুমি যদি বলতে চাও “পৃথিবী সমতল” সেটা যেমন ভুল ; “পৃথিবী গোলাকার” সেটাও একই মাত্রার ভুল তাহলে বলতেই হবে যে তোমার ভুল-সংক্রান্ত চিন্তাধারাতেই গলদ আছে।



মূল সমস্যাটা হচ্ছে আমরা ঠিক বা ভুল দুটো ব্যাপারকেও খুব পরম(Absolute) হিসেবে দেখি। যখন একটা ব্যাপার সম্পূর্ণ সঠিক মনে হচ্ছে না, তখন তাকে আমরা পুরোপুরি ভুল হিসেবে ধরে নিই। তবে আমার কাছে মনে হয় ঠিক বেঠিক দুটোই fuzzy idea , আর সেটা ব্যাখ্যা করার জন্যই আমার আজকের লেখার সূচনা।



প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি শুরুতে উল্লেখিত সক্রেটিসের “I know Nothing” এই উক্তিটিকে এড়িয়ে যেতে চাই। এটা এত বেশি ব্যবহৃত হয়েছে,এটা এখন cliché হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে একেবারে কিছুই জানেনা। একটা বাচ্চাও জন্মের পর থেকে অনেক কিছু শেখে। সক্রেটিসের উক্তিটিকে একেবারে সরলীকরণ করে ফেললে ভুল হবে, তিনি জ্ঞান বলতে আরো বিমূর্ত একটা ধারণাকে বুঝিয়েছেন। যে যেসব বিমূর্ত ধারণা নিয়ে মানুষে মানুষে বিতর্ক হয় ,সেসব বিতর্কে প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ অজানা অযাচিত ধারণা নিয়ে তর্ক করা উচিত- এই ছিল তার ধারণা( কি একগুঁয়ে দাবী!)

Justice কিংবা virtue র বিষয়ে আলোচনা করার সময় তিনি ধরে নিতেন যে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না, বরং অন্যদের কাছ থেকে শিখতে চান। (এটাকে বলা হয় Socratic Irony- কারণ তিনি এইসব বিষয়ে অন্যদের চেয়েও অনেক বেশি জানতেন।)



এখন প্রশ্ন হচ্ছে “সঠিক” এবং “ভুল” এর ধারণাটা আমরা কখন থেকে পাই? আমার মনে হয় এটা শুরু হয় অল্পবয়স থেকেই, বিশেষত যখন ছোট বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করে এবং সেসব স্কুলের শিক্ষকদের জ্ঞান তুলনামূলকভাবে কম থাকে। বাচ্চারা স্কুলে বানান করা কিংবা পাটিগণিত শেখে, এবং সেখান থেকেই আপাত 'পরম' ধারনার উদ্ভব ঘটে। যেমন ধরুন, আপনি Sugar বানান করবেন কিভাবে? যদি S-u-g-a-r হয় তাহলে বানানটা ঠিক, আর অন্য কোন ভাবে লিখলেই সেটা ভুল। তেমনি ২+২=৪ হলেই কেবল যোগটা সঠিক, আর যেকোন ভাবেই সেটা ভুল।



একেবারে Exact উত্তর দেয়া, কিংবা পরম “সঠিক” বা “ভুলে”র ধারণা, চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন কমিয়ে দেয় এবং সেটা ছাত্র শিক্ষক উভয়ের জন্যই সচরাচর সন্তোষজনক হয়। এই কারণেই সম্ভবত ছাত্র শিক্ষক সবাই রচনামূলক অপেক্ষা ছোট প্রশ্নোত্তরের পরীক্ষা নিতে পছন্দ করেন। বেশিরভাগ ছাত্রই শূন্যস্থান পূরণ অপেক্ষা বহুনির্বাচনী প্রশ্নকে বেশি পছন্দ করে। তবে আমার মনে হয় এই ধরনের পরীক্ষা দিয়ে একজন ছাত্র একটা বিষয়ের কতটুক বুঝল সেটা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এগুলো বরঞ্চ সে কত ভালো মুখস্ত করতে পারে বা মনে রাখতে পারে তার একটা উপায় মাত্র। আপনি যদি ধরে নেন “ভুল” এবং “সঠিক” দুটোই আপেক্ষিক ব্যাপার, তাহলে আমার এই কথাটার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবেন।



মনে করুন দুই জন ছাত্রছাত্রীকে Sugar বানান করতে বলা হলো। একজন বললো p-q-z-z-f আরেকজন বললো s-h-u-g-e-r. দুটো বানানই ভুল, কিন্তু এটা বললে কি ভুল হবে যে প্রথম বানানটার ভুলের মাত্রা দ্বিতীয়টার চেয়ে বেশি?

অথবা ধরুন কেউ sugar লিখতে বলায় লিখলো s-u-c-r-o-s-e কিংবা C12H22O11 প্রচলিত অর্থে দুটোই ভুল, কিন্তু প্রতিবার ভুল করার সময় আপনি চিনি বিষয়ে ‘চিনি’র বানানের বাইরেও চিনি বিষয়ক জ্ঞানের পরিচয় দিচ্ছেন।



এখন ধরুন একজন ছাত্রকে প্রশ্ন করা হলো তুমি কতভাবে sugar বানান করতে পারো?(প্রত্যেকটার পিছনে যুক্তি প্রদর্শনসহ)। স্বভাবতই ছাত্রকে এ নিয়ে অনেক চিন্তা করতে হবে এবং এ থেকে বুঝা যাবে যে তার জ্ঞানের পরিধি কতটুকূ। একইভাবে উত্তরটা মূল্যায়ন করার সময় শিক্ষককেও চিন্তা করতে হবে যে তার ছাত্র কতটুকু কম বা বেশি জানে । এবং সেইভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। বলা বাহুল্য দুজনের কারোরই মূল্যায়ন পছন্দ হবে না।



আবার ধরুন কিষান বললো ২+২= বেগুনী আর নয়ন বললো ২+২= ১৭। দুটোই ভুল উত্তর। কিন্তু এখানে এটা কি বলা যায় না যে কিষানের উত্তরটা বেশি ভুল?

অথবা মনে করুন আপনি বললেন ২+২= পূর্ণসংখ্যা, তাহলে আপনি কি ভুল বলেছেন? কিংবা ২+২= জোড় পূর্ণসংখ্যা। আপনার উত্তরটা বরং আগের চেয়েও ভালো হলো। অথবা যদি বলেন=৩.৯৯৯৯ তাহলে কি আপনি দাবী করতে পারবেন না যে আপনার উত্তরটা প্রায় সঠিক?

এখন যদি মূল্যায়নকারী চান যে তিনি শুধুমাত্র ২+২=৪ লিখলেই সেটাকে সঠিক ধরে নেবেন আর ভুল করলে ভুলগুলোর মাত্রা বিশ্লেষণ করবেন না। তবে কি সেটা বোঝার ব্যপ্তির (Understanding) উপর একটু অন্যায় সীমা টানা হয়ে যাচ্ছেনা?



অথবা হয়তো রিচার্ড বললো ২+২= ১১, তাই শাস্তিস্বরূপ তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন, তবে সাথে একটা চিরকুট লিখে দিলেন ‘তোমার উত্তরটা সঠিক, তবে ৩-ভিত্তিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করলে”



একবার এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হলো আমেরিকার চল্লিশতম প্রেসিডেন্ট কে? সে উত্তর দিল কেউ না স্যার।কারণ আমেরিকার চল্লিশতম প্রেসিডেন্ট নেই। শিক্ষক বললেন “না ! তোমার উত্তর ভুল, রোনাল্ড রিগান আমেরিকার চল্লিশতম প্রেসিডেন্ট”।



ছাত্র প্রতিবাদ করলো “আমার কাছে যে বই আছে তাতে আমি পড়েছি জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে রোনাল্ড রিগ্যান পর্যন্ত আজ পর্যন্ত উনচল্লিশ জন ব্যক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাহলে চল্লিশতম আসবে কিভাবে?”



“কিন্তু গ্রোভার ক্লীভল্যান্ড দুই দুই বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন, আলাদা আলাদা সময়ে; ১৮৮৫-১৮৮৯ এবং ১৮৯৩-১৮৯৭ সালে। কাজেই তিনি একই সাথে ২২-তম এবং ২৪-তম প্রেসিডেন্ট। এই হিসেবে রোনাল্ড রিগ্যান যদিও উনচল্লিশতম ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন , একই সময়ে তিনি আমেরিকার চল্লিশতম প্রেসিডেন্ট।“ শিক্ষকের জবাব।



ব্যাপারটা কি কৌতুকের উদ্রেক করে না? কেন একজন ব্যক্তিকে দুইবার বিবেচনা করা হবে। শুধুমাত্র প্রথার কারণে। ছাত্র যদিও তার উত্তরটা খুব একটা ভুল দেয় নি তবুও তার ভুলটা ভুলই। যেমন সে যদি বলতো চল্লিশতম প্রেসিডেন্টের নাম ফিদেল কাস্ত্রো! তবে সেটাও ভুল উত্তর হতো । আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষকের কাছে দুটো ভুলের মাত্রাই সমান এবং তিনি দুটোর জন্যই শূন্য নম্বর দেবেন।



কাজেই আমার সাহিত্যিক বন্ধু যখন বলতে চাচ্ছেন প্রাচীন বিজ্ঞানীগণ ভুল তত্ত্ব দিয়েছেন তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে তাদের তত্ত্বে ভুলের মাত্রাটা কেমন ছিলো? সবাই কি একই পরিমাণ ভুল করেছিলেন?.



প্রাচীনকালে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী আসলে সমতল । তার মানে এই নয় যে তখনকার মানুষ বোকা ছিল কিংবা তারা আজেবাজে বিষয়ে বিশ্বাস করতো। তারা যে বিশ্বাস করত যে পৃথিবী সমতল তার পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। পৃথিবীতে অনেক জায়গাই আছে পুরোপুরি সমতল যেমন: উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর পাড়ের এলাকার কথা যেখানে প্রথম ঐতিহাসিক মানব সভ্যতা( সুমেরীয় সভ্যতা- তাদের নিজস্ব বর্ণমালা ছিল) বিকশিত হয়েছিল। সম্ভবত এ থেকেই সুমেরীয়দের ধারণা হয়েছিল যে পৃথিবী সমতল; যদি পাহাড়-পর্বত কিংবা গিরিখাদ নদী এগুলো না থাকতো তবে পৃথিবীকে সমতলই বলা যেত।



এই ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হতে শুরু করলো ৩৫০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে যখন অ্যারিস্টটল এই তত্ত্ব সম্পর্কে সন্দেহগুলো একত্রিত করলেন। দেখা গেলো বেশ কিছু তারকা যেগুলো দক্ষিণ গোলার্ধে বেশ ভালো করে দেখা যায় সেগুলো উত্তর গোলার্ধে গেলে আর দেখতে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপর যে পৃথিবীর ছায়া পড়ে সেটা একটা বৃত্তচাপের মত হয় , যদিও সেটা সরলরৈখিক হবার কথা। তৃতীয়ত, পৃথিবীতে যখন জাহাজ চলে একটা সময় সেটা দিগন্তরেখার ওপারে হারিয়ে যায়, যদিও পৃথিবী সমতল হলে তাকে দেখতে পাওয়ার কথা ছিল।



এই তিনটা প্রশ্নের একটারও সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যাচ্ছিল না, যতক্ষন না ধরে নেয়া হলো যে পৃথিবী গোলাকার। তাছাড়া অ্যারিস্টটল ধারণা করতেন যেকোন কঠিন পদার্থই একটা সাধারন কেন্দ্রবিন্দুকে কেন্দ্র করে চলমান থাকে । সেক্ষেত্রে পৃথিবীর গোলাকার ধরে নেয়াটাই সবচে যুক্তিযুক্ত ছিল। কারণ একটা নির্দিষ্ট আয়তনের বস্তু যদি গোলাকার হয় তবেই কেবল তার কণাগুলোর পক্ষে কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা সম্ভব। অ্যারিস্টটলের একশো বছর পর দার্শনিক এরাটোস্থেনিস খেয়াল করলেন যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একই বস্তুর ছায়ার দৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন হয়।(অক্ষাংশের ভিন্নতার কারণে-যদিও পৃথিবী সমতল হলে সর্বক্ষেত্রে একই দৈর্ঘ্য পাওয়ার কথা ছিল) এই দৈর্ঘ্যের পার্থক্য থেকে তিনি পৃথিবীর পরিধি পরিমাপ করলেন, ২৫০০০ মাইল।

এত বড় একটা গোলকের বক্রতা প্রতি মাইলে .০০০১২৬। সংখ্যাটা এক হিসাবে বেশ ছোট , প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি। ০ এবং .০০০১২৬ এর মধ্যে পার্থক্য পরিমাপ করার মত যান্ত্রিক উপায় সে যুগে ছিল না বলেই পৃথিবী যে সমতল নয়, গোলাকার সে ধারণায় পৌছতে এতদিন সময় লেগেছিল।



তবে মনে রাখতে হবে এই ক্ষুদ্র পার্থক্যটুকুর গুরুত্বও অনেক বেশি।পৃথিবীর ম্যাপ নিখুঁতভাবে তৈরী করা যেত না যদি না পৃথিবীকে গোলাকার না ধরা হত। বড় বড় সমুদ্রযাত্রার জন্য যে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন সেটাও পাওয়া যেতো না। তাছাড়া সমতল পৃথিবীর ধারনা আরো দুটো চিন্তার উদ্রেক করে যে,

হয় পৃথিবী অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত কিংবা এর একটা প্রান্ত আছে। অন্যদিকে গোলাকার পৃথিবীর ধারণা থেকে বলা যায় এটা একই সাথে সসীম এবং প্রান্তবিহীন!

কাজেই সমতল পৃথিবীর ধারণাতে গাণিতিক ভুলের মাত্রা যদিও বেশ কম তবুও সেটা পরিত্যাগ করতে হয়েছে।



কিন্তু পৃথিবী কি আসলেই গোলাকার?

না, গাণিতিকভাবে চিন্তা করলে পৃথিবী পুরোপুরি গোলাকৃতিও না।কারণ এর ব্যাস উত্তর-দক্ষিণে যত, পূর্ব পশ্চিমে তত নয়।

পৃথিবী যে পুরোপুরি গোলাকার নয় এই ধারণার উৎপত্তি হল কিভাবে? টেলিস্কোপের ব্যবহারের শুরুর দিকেই সূর্য এবং চাঁদ যে গোলাকার সেটা বেশ স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল। অথচ যখন বৃহস্পতি আর শনি গ্রহকে আরো ভাল টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা হলো তখন এটা দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল যে এই দুটো গ্রহের একটার অবয়বও পুরোপুরি বৃত্তাকার নয় বরং উপবৃত্তাকার। এ থেকে বোঝা গিয়েছিল যে শনি কিংবা বৃহস্পতি একটাও বিশুদ্ধ গোলক নয়।

আইজ্যাক নিউটন সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিকে প্রমান করেছিলেন যে একটা বিরাট বস্তু অভিকর্ষের টানে গোলাকার ধারণ করতে পারে যদি বস্তুটা স্থির হয়। আর সেটা যদি ঘূর্ণায়মান হয় তবে কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে বস্তুর কণাগুলোকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে যেতে চাইবে এবং নিরক্ষরেখা বরাবর তার প্রভাবটা বেশি হবে। এই ব্যাপারটা ঘূর্ণনের গতির উপর নির্ভর করবে। শনি এবং বৃহস্পতি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঘূর্ননশীল। পৃথিবী তার চেয়ে অনেক আস্তে ঘোরে, কিন্তু ঘূর্ণনের প্রভাবটা তার মধ্যেও থাকবে। পৃথিবীর বক্রতা আঠারোশ শতাব্দীতে মাপা হয় এবং তাতে দেখা যায় নিউটনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।



পৃথিবী দুই পাশে বেশ বিস্তৃত, আর মেরু অঞ্চলে কিছুটা সমতল। একে তাই Sphere না বলে Oblate Spheroid (কমলালেবুর আকৃতি যার দুপাশে চাপা) বলাই শ্রেয়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে পৃথিবীর ব্যাস সব স্থানে সমান হবে না। সবচে বড় ব্যাস হবে বিষুবরেখা বরাবর কারণ এখানেই পৃথিবী সবচে প্রশস্ত। এই বিষুবীয় ব্যাস হচ্ছে ১২,৭৫৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরু পর্যন্ত ব্যাস হচ্ছে ১২,৭১১ কিলোমিটার।



এই দুটো প্রান্তীয় মানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ৪৪ কিলোমিটার। তার মানে পৃথিবীর বিশুদ্ধ গোলকাকৃতি হওয়া থেকে বিচ্যুতির পরিমান হচ্ছে ৪৪/১২,৭৫৫ =.০০৩৪, যা ১ এর ১/৩ অংশের মত।



সহজভাবে বলতে গেলে পৃথিবীকে সমতল ক্ষেত্র হিসেবে চিন্তা করলে এর বক্রতা শূন্য, পৃথিবীকে গোলাকার ধরলে বক্রতা দাঁড়ায় ৮ ইঞ্চি/মাইল)। আর পৃথিবী কে oblate spheroid ধরলে এর বক্রতার পরিমান হয় ৭.৯৭৩ ইঞ্চি থেকে ৮.০২৭ ইঞ্চি। এই যে গোলাকার-উপবৃত্তাকার নতুন সংশোধনটা করা হলো সেটা সমতল-গোলাকার বিচ্যুতি থেকে অনেক কম। সুতরাং পৃথিবী গোলাকার সে ধারণাটা ভুল হলেও পৃথিবী সমতল এ ধারণা থেকে এক্ষেত্রে ভুলের মাত্রা কম।



এমনকি পৃথিবী যে Oblate Spheroid সে ধারণাটাও ঠিক নয়। ১৯৫৮ সালে যখন ভ্যানগার্ড-১ স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হয় তখন পৃথিবীর আকৃতি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে ভালোভাবে মাপা গিয়েছিল। তখন দেখা গেছে পৃথিবী বিষুবরেখার দুই পাশেও সমানভাবে প্রশস্ত নয়!বরং বিষুবরেখার উত্তর অংশের যে স্ফীতি তার চেয়ে দক্ষিণ অংশের স্ফীতি বেশি। তখন পৃথিবীকে নাশপাতি আকৃতি বলা ছাড়া আর কোন উপায় রইলো না। তবে এই বিচ্যুতির পরিমান আগের চেয়ে অনেক কম; ফলে একে মাইলে নয় বরং গজে পরিমাপ করতে হলো! আর বক্রতার পরিবর্তন হলো প্রতি মাইলে এক ইঞ্চির মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ!



অল্প কথায় বলতে গেলে আমার পত্রলেখক বন্ধুটি (যিনি পরম ‘ভুল’ এবং ‘সঠিকে’র জগতে বাস করছেন) তিনি হয়তো কল্পনা করছেন যে পৃথিবী আজ গোলাকার, আগামী শতাব্দীতে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে পৃথিবী কিউবিক, তার পরের শতাব্দীতে আইসোহেড্রন, এবং তার পরের শতাব্দীতে ডোনাটের আকৃতি নিতে পারে!



আসলে একজন বিজ্ঞানী যখন একটা ভালো আইডিয়া পান তখন তিনি সেটাকে অধিক এবং অধিকতর সূক্ষতার সাথে আরো নিখুঁত এবং সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করেন। তাই একটা তত্ত্বকে সরাসরি ভুল হিসেবে না আখ্যায়িত করে সেটাকে অসম্পুর্ণ বলাই যুক্তিযুক্ত।

শুধু পৃথিবীর আকৃতি না, এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে । এমনকি একটা তত্ত্ব যখন বিজ্ঞান জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয় , সেটা সাধারণত পূর্বাপর তত্ত্বগুলো থেকে যথেষ্ট উপাদান গ্রহণ করে। তা না হলে আজ পৃথিবীতে পুরোনো থিয়োরীগুলোর কোন চিহ্নই থাকতো না। নিকোলাস কোপার্নিকাস যখন Geocentric Model থেকে Heliocentric Model এর দিকে ঝুঁকে পড়লেন তখন সবাই ধরে নিয়েছিল যে তিনি একটা নিশ্চিত তত্ত্ব রেখে একটা হাস্যকর ভুল ধারণার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে এটা করার ফলে তার পক্ষে গ্রহগুলোর চলন সম্পর্কিত গাণিতিক হিসেবগুলো করা সহজতর হয়েছিল, এবং ক্রমশঃ তার Heliocentric Model ই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে।



ভৌগলিক পরিবর্তন আর প্রাণীজগতের বিবর্তনগুলো এত ধীরগতিতে হয় যে এটা ভাবা খুবই স্বাভাবিক পৃথিবী শুরুতে যেমন ছিল এখনো তেমন আছে। যদি তাই হতো তবে পৃথিবীর বয়স কয়েক বিলিয়ন বছর নাকি কয়েক হাজার বছর সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর খুব একটা প্রয়োজন থাকতো না। কিন্তু খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে দুটোই খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।এ থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলো পৃথিবী অনেক প্রাচীন। যে কারণে আধুনিক ভূগোল এবং বিবর্তন তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে।যদি এই পরিবর্তনের হারটা আরো দ্রুত হতো তবে এসব থিয়োরী বহু আগেই আবিষ্কার হয়ে যেত।



কিংবা ধরা যাক বিংশ শতাব্দীর সবচে বড় দুই তত্ত্ব “আপেক্ষিকতা” আর “কোয়ান্টাম মেকানিক্সের” কথা।

নিউটনের গতিসূত্র এবং মহাকর্ষীয় সূত্রগুলো প্রায় সঠিক এবং সেগুলোকেই পরম হিসেবে ধরে নেয়া যেত যদি আলোর গতি অসীম হত। কিন্তু আলোর গতি সসীম, যে কারণে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সমীকরণে আলোর গতি’কে বিবেচনা করা হয়েছে, যেগুলো কিনা নিউটনের গতির সমীকরণেরই বিবর্ধিত, পরিশোধিত ও সাধারণ রূপ।



এখানে তর্ক উঠতে পারে সসীম এবং অসীমের মধ্যে যে পার্থ্যক্য সেটাও অসীম; কাজেই নিউটনের সূত্রগুলো পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেল না কেন?



আলো যদি অসীম গতিতে ভ্রমণ করতো তবে তার এক মিটার দূরত্ব পেরোতে সময় লাগতো শূন্য সেকেন্ড, আলোর গতি যখন আমরা সসীম বিবেচনা করছি তখন সময়টা দাঁড়ায় 0.0000000033 সেকেন্ড। এই যে পার্থক্যটুকু সেটাই আইনস্টাইন সংশোধন করেছেন।



কনসেপচুয়ালী চিন্তা করতে গেলে এই সংশোধনটা আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও পৃথিবীর বক্রতার সংশোধনের চেয়ে কোনভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই পার্থক্যটুকু না থাকলে অতি দ্রুতগামী সাবঅ্যাটমিক পার্টিক্যালগুলোর আচরণ এরকম হতো না, পার্টিক্যাল অ্যাক্সিলারেটরগুলোও কাজ করতো না, আমরা পেতাম না নিউক্লিয়ার এনার্জি , তারামন্ডলীও জ্বলজ্বল করে জ্বলতো না।



কোয়ান্টাম পূর্ববর্তী যুগের যে সীমাবদ্ধতাটা ছিল তা হলো এটা বিশব্রহ্মান্ডের “Grainness” কে অনুমোদন করে নি। সকল শক্তিকে অবিচ্ছিন্ন(Continuous) ধরে নেয়া হয়েছিল। এবং ভাবা হত একে যতখুশী ভাগে বিভক্ত করা যায়।



কিন্তু দেখা গেল যে শক্তি মোটেও অবিচ্ছিন্ন নয়, বরং কোয়ান্টা নামক বিচ্ছিন্ন শক্তির প্যাকেটের সমষ্টি! যার পরিমান নির্ভর করে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের উপর। প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মান যদি ০ আর্গ-সেকেন্ড হতো তবে শক্তি অবিচ্ছিন্ন বা কন্টিনিউয়াস হতো। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে প্ল্যাংকের ধ্রুবকের মান 0.000000000000000000000000066 আর্গ-সেকেন্ড !!!(কোন মানে হয় ;) শূন্য থেকে এর পার্থক্য এতই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শক্তি সম্পর্কিত আলোচনায় এর ভূমিকা অল্পই। কিন্তু যখনি আমরা সাব অ্যাটমিক পার্টিক্যাল নিয়ে আলোচনা করতে যাই তখন এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানটাও যথেষ্ট বড়, যে এটা নিয়ে হিসেব করার সময় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিশেষ অনুসিদ্ধান্ত ছাড়া হিসেব করা রীতিমত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তত্ত্বসমূহের সংশোধনের পরিমাণ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে দিনে দিনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে আসছে।



গ্রীকরা সর্বপ্রথম অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের ধারণার প্রচলন করে তারা জানতো না যে পৃথিবী গোলাকার; অথচ ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার বেশ ভালো মানচিত্র পর্যন্ত তৈরী করতে পেরেছিল। আমরা আজও অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ ব্যবহার করি,যদিও আমরা জানি পৃথিবী গোলাকার।



সুমেরীয়রা সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিল যে আকাশে গ্রহ নক্ষত্র পর্যবেক্ষন করে এদের গতিবিধির পূর্বাভাস দেয়া যায়। যদিও তারা পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র ধরে নিয়েছিল। তাদের সেসব গণনা অনেক পরিশোধিত হয়েছে, কিন্তু মূলনীতিগুলো অনেকাংশেই অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব, যদিও বিশাল দূরত্ব এবং অতিন্দ্রীয় গতির বেলায় অসম্পূর্ণ , কিন্তু সৌরজগতের ক্ষেত্রে সেটা বেশ ভালো ভাবেই কাজ করে। হ্যালির ধূমকেতু আবির্ভাব কিন্তু নিউটনের সূত্র মেনেই বের করা যায়। সকল ধরনের রকেট সায়েন্স নিউটনের সূত্র মেনে চলে, ভয়েজার ২ মহাকাশযান ইউরেনাস গ্রহে পৌছতে যে সময় লেগেছিল সেটা নিঊটনের সূত্র থেকে বেশ ভালোভাবে পরিমাপ করা গিয়েছিল। এর কোন ক্ষেত্রেই নিউটনের তত্ত্বের সাথে আপেক্ষিক তত্ত্বের কোন ব্যত্যয় হয় নি।



উনবিংশ শতাব্দীতে, যখন কেউ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কথা চিন্তাও করে নি, সেসময় তাপগতিবিদ্যার সূত্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (শক্তির নিত্যতা এবং এনট্রপির চিরন্তন বৃদ্ধি) তাছাড়া অন্যান্য নিত্যতার সূত্র যেমন ভরবেগ ও কৌনিক ভরবেগের সংরক্ষণ এবং চার্জের নিত্যতা সূত্র,কিংবা ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চৌম্বকীয় সূত্র সেগুলোও তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এবং কোয়ান্টাম থিয়োরি আসার পরও সেগুলোতে কোন পরিবর্তন হয়নি।



স্বভাবতই, আমার বিজ্ঞ পত্রলেখক বন্ধুর কাছে একেবারে স্থূলতম দৃষ্টিকোণ থেকে যেসব তত্ত্বকে ভুল মনে হচ্ছে সেগুলো কে সূক্ষতর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আর পুরোপুরি ভুল মনে হবে না, বরং অসম্পূর্ণ মনে হবে।



যেমন কোয়াণ্টাম থিয়োরি কিছু “Quantum Weirdness” এর সুচনা করেছে যেগুলো বাস্তবতার প্রকৃতির(Nature of Reality) উপরই আঘাত হানে এবং বেশ কিছু দার্শনিক প্রশ্নের উদ্ভব ঘটিয়েছে। হতে পারে আমরা এখন এমন একটা অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছি যেখানে মস্তিষ্ক আর বিষয়বস্তুগুলোকে Perceive করতে পারছে না। কিংবা হয়তোবা কোয়ান্টাম থিয়োরিতেই কিছু ফাঁকফোকর রয়ে গেছে যেগুলো আবিষ্কার হলেই এসব Weirdness দূর হয়ে যাবে।



তাছাড়া কোয়ান্টাম থিয়োরী এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা যায়নি। তবে কোয়ান্টাম থিয়োরী এই সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে যে স্বীকৃত চার ধরণের বলের মধ্যে তিনটিকে একত্রিত করে আরেকটি নতুন গাণিতিক মডেল সম্ভবত দাড় করানো যাবে। এবং তারপর যদি কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় তবে আমরা সত্যিকারের Unified Field Theory পেতেও পারি।

যদি এর সবগুলোই করা সম্ভবপর হয় তাহলে এটা হবে এ পর্যন্ত জানা সকল তত্ত্বের আরেকটা সূক্ষতম পরিশোধন যেটা আমাদের জ্ঞানের সীমানাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। বিগ ব্যাং এবং সৃষ্টিরহস্যকে উন্মোচন করবে, গ্যালাক্সি এবং সুপারনোভা গুলোর সৃষ্টি এবং বিবর্তন সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের জবাব দেবে। বলা যায় এই তত্ত্ব সকল প্রশ্নপিপাসুকেই সন্তুষ্ট করতে পারবে।



কিন্তু তাতে অদ্যাবধি আমরা যা জানি সেগুলো তখন মিথ্যা হয়ে যাবে না।বরং সেগুলোর উন্নততর ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হবে। সুতরাং আমি যদি দাবী করি আমরা এমন এক শতাব্দীতে বাস করছি যখন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে তাহলে মনে হয় আমার দাবীটা খুব একটা অন্যায় ভাষণ হবে না।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১১ রাত ১:০৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×